___না, বললাম তো না।
___না! কেন না শুনি!?
___ কেনোর কি আছে, আমি আর ঐ কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। ব্যস্।
___পারবো না, ব্যস্!! আমি কিন্তু কথা দিয়েছি মনে রাখা হয় যেন।
___আমাকে জিজ্ঞাসা না করে কথা দিলে
কেন?
___ওরে আমার হরিদাসি এলেন রে! বলেই
রতন বোঝে রাগলে হবে না। শান্ত হয়ে বলে ___ ওরা কত
বড়লোক, মালিক আমার। কারো কাছে শুনে
আমাকে ডেকে বলেছেন, আমি না বলি কি করে!
___উফফ্, থামবে তুমি? এখন এতো
সাধাসাধি আর তখন?? কত আকথা কুকথা শুনেছি, ভুলে গেছ? তুমি বলতেও ছাড়োনি।
___তা তখন এতো উৎসাহ ছিল কেন শুনি! কোন্ রসের নাগর...
___চুপ। একদম চুপ। আর একটা বাজে
কথা বলো যদি ।
___আচ্ছা, আচ্ছা আমার অন্যায় হয়ে গেছে, মাফ চাইছি। হলো তো! এবার রাজি হয়ে যাও।আরে রাজি হলেই তো হবে না, আগে ডাক্তারবাবু দেখে পরীক্ষা করে দেখবেন তবেই না আর ভেবে দ্যাখ্ ভালো ভালো খাওয়া থাকা উপরি পাওনা__তোমার মা না হওয়ার দুঃখ থাকে না, দুটো পয়সাও আসে সংসারে।
___দুঃখ! থাকেনা! সেই, তোমরা চেনো শুধু টাকা।
___আরে চাইলেই কি আবার এ সুযোগ
আসবে?
___চাই না, চাই না এমন সুযোগ।
___হ্হ্যা, তাহলে আর কি, ঘরে বসে
অন্ন ধ্বংস করো।
আশ্চর্য
মানুষ, তখন কত বাধাই না দিয়েছে আর যেই
রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে একেবারে আদা-জল খেয়ে পিছনে
পড়ে। রাগে দুঃখে গা জ্বলে যায় তুলসীর।
বিয়ের পাঁচ বছরেও তুলসী সন্তান-সুখ পায়নি। পেয়েছে লাঞ্ছনা গঞ্জনা, বাঁজা অপবাদ। তাবিজ-মাদুলি ব্যর্থ। ডাক্তারও দেখিয়েছে, আর সেখানেই
হয়েছে সমস্যা। তুলসী সুস্থ অতএব স্বামীকে ডাক্তারবাবু দেখতে চান। শোনামাত্র রেগে যায় রতন।
___কেন, আমি কেন যাবো? আমি কি
বিয়োবো?
___আরে, আমি কি অত কিছু জানি! ডাক্তারবাবুই তো বললেন....
___আমার সময় নেই। যত্তসব......
তুলসী আর
এগোতে পারে না। দূরপাল্লার বাসের কন্ডাক্টর রতন। সবদিন বাড়ি থাকে না তার উপরে আছে নেশা। এভাবেই দিন
কাটছিল। পরিচিত একজন কাজের খবর দেয়। শ্বাশুড়ি অসুস্থ, বাচ্চা ছোট
তাই সারাদিনের জন্য একজন লোক খুঁজছে। তুলসীও ঘরে-বাইরে অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে রাজি হয়। শ্বাশুড়ি, স্বামীও বাধা দেয় না দেখে একটু অবাকও। বৌদি কথা প্রসঙ্গে একজন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার
পরামর্শ দেয়। রতনের হাতে-পায়ে ধরে রাজিও
করায়। দুদিন যেতে হয়েছিল এবং রতন নেশা, অনিয়মিত
জীবন যাপনের ফলে সুস্থতার সাথে বীজ
বপনে অক্ষম জানার পর রত্নকে শত চেষ্টা করেও আর চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে তুলসী পারেনি। রতনও দূরত্ব রেখে চলে সেদিন থেকে।
ওলোটপালোট হয়ে গেল বৌদির এক প্রস্তাবে।
হতভম্ব তুলসী। এমনিতেই'ক'দিন ধরে মনটা ভালো নেই। মেজো ননদের সাধে বাড়ির সবাই গেল, ওকে রেখে
গেল বাড়ি দেখাশোনা করার জন্য। মন খারাপ হয়েছিল খুব কিন্তু কয়েকদিন আগে একটি ঘটনায় এতটাই আহত হয়েছে, ছোট ভাই-বৌ এর সাধ। মা আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন"তুমি বিকালে এসো"।
___কেন মা, ঐদিন আমি ছুটি নেবো, সকালেই চলে
যাব।
___না,না তুমি বিকেলেই এসো।
___মা!! ও, বুঝেছি। ঠিক আছে, আমি যাবো
না।
___রাগ করছিস কেন! আসবিই না কেন!
যায়নি
তুলসী। বোনেরা ফোনে ডাকাডাকি করেছিল, ও শুধু
ভেবেছে ওর বিয়ের আগে দিদি, বড় বৌদির তো বাচ্চা হয়েছে আর আজ ও অপয়া হয়ে গেল!
বৌদির বোনের বাচ্চা হওয়ার সমস্যা। ও নাকি পারে সমাধান করতে। বৌদি যেভাবে বোঝালো তাতে
দোষ নেই কিন্তু রতনকে বলে কি করে। ও দিকে
বৌদি ব্যস্ত, কি যে করে। শোনামাত্র নেশাখোর
রতন
___ক্বি! কি বললি! মা ,ও মা__
___কিরে, চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?
___শোনো, তোমার গুণধর বৌমার কীর্তি শোনো। এই জন্য বাইরে যায়, কি কাজের দ্যাখো.....
___ছি, ছি বৌমা এতবড় কথাটা বলতে পারলে!! অন্যের বাচ্চা
পেটে ধরবে? বা়ঁজা...
___তুলসীর আর সহ্য হয় না, চিৎকার করে বলে"আমি, আমি বা়ঁজা না কে শুনবে?
বাড়ির
লোকজন, আশেপাশের লোকজন, কৌতুহলী মানুষের সামনে তুলসী অসহায়, বৌদির মতো করে বোঝাতে
পারে না যে এতে কোনো দোষ নেই। অবশেষে বৌদির মধ্যস্থতায় প্রধানতঃ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকার লোভে বাড়ির মত মেলে। তুলসীর
বাবা-মাও দু-কথা শোনাতে ছাড়ে না।
ডাক্তার দেখাতেই কয়দিন গেল। কত
কি যে পরীক্ষা তারপর সব দেখে শুনে অবশেষে তুলসী
গর্ভবতী। খাওয়া দাওয়া, ওষুধ-পত্র, নিয়মিত গাড়ি করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া___ সবাই তাজ্জব
হয়ে দেখে। বাঁকা কথাও শোনায় কেবল রতন আশ্চর্য রকম
চুপচাপ। প্রসবের কিছু আগে নার্সিংহোমে ভর্তি করে রাখার কথা ওঠে তখন রতনকে না বলে পারে না তুলসী। এই কয়দিন খুব ভয়ে
থাকতো যদি মারধোর করে।
___একটা কথা ছিল
___আবার কি কথা?
___আমাকে মাস দেড়েক আগে
নার্সিংহোমে ভর্তি হতে হবে।
___তো!! আমি কি করবো?
___না, মানে, তোমাকে বলে
রাখলাম আর কি।
রতন ওর
শারীরিক পরিবর্তন অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখে। তুলসী ভাবে চিকিৎসা করালে তো ও রতনের সন্তানেরই মা হতে পারতো।
___আমি না ডাক্তারবাবুকে আমাদের
সমস্যার কথা বলে ছিলাম।
___হ্যা ,হ্যা স্বামী অপদার্থ পাঁচকান করতেতো ভালোই লাগে।
___কি যে বলো! বললেন এরও চিকিৎসা
আছে। আমরাও মা-বাবা হতে পারি। তবে মেলা টাকার
ধাক্কা।
__হু,তা ঐ টাকাটা কবে দেবে?
___দেবে, সময় হলেই পাবে।
গর্ভাবস্থায়
প্রথম থেকে সবার যা দেখে এসেছে সেগুলো তুলসী যেন অমৃত-সম উপভোগ করে। সুখানুভূতিতে আচ্ছন্ন তুলসী স্ফীত পেটে হাত রেখে
বলে তুই ছেলে না মেয়ে রে! আমি তোকে
সোনাই বলেই ডাকবো যাই হোস না কেন।বৌদিদের সাথে ডাক্তার কথা বলে তুলসীকে দেখে অভিমত প্রকাশ করেন। তাহলে আর দেরি করার দরকার
নেই, পরশু সকালে বলে চলে যান।
___কি হলো তুলসী, ভয় লাগছে? কোন ভয়
নেই।
না, সত্যি আর ভয় নেই। ইঞ্জেকশনের কত ভয় ছিল। আসলে
মাতৃত্বের দুগ্ধধারায় অবগাহন সুখ-সাগরে ভাসিয়ে রাখে
তুলসীকে।
আচ্ছন্ন অবস্থা থেকে মুক্তি
পেয়েই মনে পড়ে ক্রন্দনরত শিশুর আওয়াজ। দ্রুত
উঠে বসতে গেলে হা হা করে ছুটে আসে আয়া।
___বাচ্চাটা....
___ভালো আছে, ঘুমাও।
___মেয়ে হয়েছে না!!
___হ্যাঁ, কথা বলো না, ঘুমাও।
রতনকে ফোন
করে আসার জন্য বারবার বলেছিল তুলসী। তখন ধানাইপানাই করলেও রতন এসেছিল। ছটফট করে তুলসী কিন্তু বাচ্চাটাকে চোখের
দেখাও দেখতে পায়না। নার্স আসে, পাম্প করে বোতলে দুধ নিয়ে যায়, বলে অন্য ওয়ার্ডে আছে। বৌদি আসে দেখতে, তুলসী বাচ্চাটাকে
দেখতে চাইলে জানতে পারে ডাক্তারের বারণ আছে।
___কেন!!
___দেখলে আরও কষ্ট পাবে তাই।
প্রবল এক
ঝাঁকুনিতে স্বপ্নজাল ছিঁড়ে যায়। ট্যাক্সিতে উঠেও তুলসী ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, ওর
নাড়ি-ছেঁড়া ধন ওখানে নেই জেনেও।
___তুমি দেখেছো??
___কি
___মেয়েটাকে?
___অ্যা, হ্যাঁ দেখেছি
___কেমন দেখতে গো?
___ কেমন আবার! একটা কাপড়ের পুটলি
ঐ একটু দেখালো সবাইকে, ওতে আর কি বুঝবো।
টাকা পেয়ে
গেছে রতন, বৌদিরা সন্তান। মেয়াদোত্তীর্ণ
ভালোবাসার তারিখও।আর যোগাযোগ রাখেনি বৌদিদের সাথে।
একরাশ মন খারাপ নিয়ে দিন কাটে তুলসীর। এরই মাঝে রতনের প্রস্তাব।
___আমি অন্য কাজ করবো কিন্তু মিথ্যে
মা আর সাজতে পারবো না।
___সে দেখা যাবে। মেলা ভ্যান ভ্যান
করিস না বলে রাখলাম সাফ কথা, মনে থাকে যেন।
তুলসী বেশ
কিছুদিন ধরে শ্বাশুড়ি, রতনের আচরণে অবাক হচ্ছিল, আজ বোঝে কারণটা।
তুলসীর
মাতৃত্ব বিকিয়ে যায় অর্থে। তবে এবার একটাই শর্ত রেখেছিল তুলসী, ছয়মাস ওর কাছে সন্তান দিতে হবে। মালিকপক্ষ, ডাক্তার কোন ভাবেই টলাতে পারেনি ওকে অবশেষে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী ও বাচ্চার দেখাশোনার
জন্য মালিকের বাড়িতে থাকার অনুমতি
পেয়েছে।
ছেলে হয়েছে
এবার। তুলসী যখন স্তনপান করায় বৌটি এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তুলসী বোঝে ,অনুভব করে ওর যন্ত্রণা। আর্থিক, শারীরিক অভাব
___দু-মুখী দৈন্যতা দুই মায়ের বেদনাকে বেঁধে ফেলে এক
গ্ৰন্থিতে।
সারোগেসি। সারোগেট মায়ের কথা আমরা এখন জানি তবুও
সঠিক ভাবে অর্থাৎ "মা" আর " মা" এর
মাঝে কি কিছুই থাকে না! থাকে, বেদনা মিশ্রিত আনন্দ। সন্তানবতী
হলেও নাড়ির টান কি উপেক্ষা করা যায়! আর এক মায়ের থাকে অসহায়ের
আনন্দ, অক্ষমতার
দুঃখ তবু কোলে পায় সন্তান। আমার স্বল্প বিদ্যায় বিষয়টি
অবতারণা করলাম। ভুল থাকাটাই স্বাভাবিক। সে কারণেই চাইছি
সংশোধন যার থেকে আলোকপ্রাপ্ত হবো আমি, আমরা অনেকেই হয়তো।আইন
আছে, মানবিক
দিককে রক্ষা করে এই পদ্ধতির প্রয়োগে। আইনের ফাঁকও তো আছে সেখানে কি
মাতৃত্ব বিকিয়ে যায়, যাচ্ছে?? এই পদ্ধতিতে মা হতে হলে সঠিক
তথ্য যাদের আয়ত্তে, অনুরোধ শেয়ার করুন সবার জন্য।
আমার এই লেখা তখনই সার্থকতা পাবে, আশায় থাকলাম।
Khub sundor laglo. Prashongik r choto golpeo onekta boro timeline darun laglo. Sudhumatro dialogues diyeo puro golpo bola jai dekhale. Dialogue style er suggestion niyecho dekhe bhalo laglo.
ReplyDelete