‘ঠিক আছে, তোমার বাবা অসুস্থ, ইনি খবর
দিতে এসেছেন, চেনো একে ?
‘হ্যাঁ, আমার মামাতো দেওর।
‘আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি বাড়ি
যাও।
‘কি হয়েছে
সুপর্ণ?
‘চলো, বলছি।
রাস্তায় ট্যাক্সি
যে পথ ধরে, অপালা বলে "এটা তো আমাদের
বাড়ির পথ নয়"
‘না, আমরা মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি।
‘তোমার দাদা
খবর পেয়েছে?
‘হ্যাঁ, দাদাই তো পাঠালো।
‘বাবার কি
হয়েছে, জানো?
‘স্ট্রোক
‘হা ভগবান।
মা, মা যে কি করছে!
ট্যাক্সি
এসে হাসপাতালের সামনে দাঁড়াতেই নেমে দৌড়ে যেতে গিয়ে বলে " কোন্ দিকে
সুপর্ণ "?
‘এসো
খানিকটা
যেতেই দেখে চেনা অচেনা একদল মানুষ। মা আসেনি, মা কোথায়!
‘বৌদি, তোমার বাবার কিছু হয়নি, মানে, দাদার......
‘কি!!
নীলয়!!! কি হয়েছে???
‘অ্যাক্সিডেন্ট।
‘কখন! আমাকে
নামিয়ে দিয়ে তো গেল!
‘হ্যাঁ, তখনই, অফিসের কাছে
‘কোথায়, কোথায় ও! আমি যাবো ওর কাছে, বলোনা ও কোথায়??
‘ও.টি. তে, তুমি একটু শান্ত হও।
‘কোনদিকে, আমি যাবো ....বলতে বলতেই দেখে বাপীকে ধরে নিয়ে আসছে
দু-তিনজন। দৌড়ে বাপী’বলে কাছে যেতেই কান্নায় ভেঙে
পড়েন অখিলেশ বাবু।
‘বাপী, অপারেশন চলছে.....
‘হ্যাঁ রে হ্যাঁ, চলছে অপারেশন, মর্গে।
‘কি!! কি
বললে বাপী !!! তুমি কি.....
ধর্, ধর্, ওকে, জল জল কানে এসেছিল; জ্ঞান
ফিরতেই দেখে শ্বশুর-বাড়িতে শোয়া, লোকে লোকারণ্য।
মা পাশে বসে অঝোরে কাঁদছে। মুহুর্তে মনে পড়ে, "মা’মাগো’..."।
*****
শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বলেছিলেন অপাকে, ওর যেখানে ভালো লাগে সেখানে থাকতে পারে। বাপের বাড়ি
গিয়ে আর যেন নিজেকে খুঁজে পায়না, তাল-লয়-ছন্দের
সমন্বয়ে তিলে তিলে পূর্ণতার পথে হেঁটেছে যে মাটি আশ্রয় করে, উৎপাটিত শিকড় নতুন মাটিতে সদ্য প্রোথিত, আশ্চর্য ! সেখানেই ফিরে যেতে চায় মন,
কেন !! নীলয়ের স্পর্শ অনুভব করে হয়তো।
বেসরকারী
অফিস,সেটাও স্বল্প সময়ের, চাকরি পাওয়া অসম্ভব, যেটুকু টাকা
পয়সা পাওয়া আর শ্বশুরের পেনশন’এই সম্বল। নানান চিন্তা মাথা
তোলে, এঁদের ছেড়ে যেতেও মন চায়না।
একমাত্র সন্তান-হারা বয়স্ক বেদনাগ্ৰস্থ দুজন, ওদিকে নিজের
বাবা-মা’, তাঁদেরও তো একই পরিস্থিতি।
দৌড়ে গিয়ে যে খবরাখবর নেবে, দূরত্ব অন্তরায়। ভালো লাগে না, চেষ্টা করে চাকরির, আত্মীয়
বন্ধুদের সৌজন্যে এম.এ. সম্পূর্ণ হয়েছে। কাছাকাছি একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের
আপাতত শিক্ষিকা অপালা শিশুদের সান্নিধ্যে জীবনের উষ্ণতা খুঁজে পায় তবে কি এভাবেই
চলবে সারাটা জীবন! আত্মীয়, পরিচিত ওর পুনর্বিবাহের
প্রস্তাব দেয়, আশ্চর্য, অপা দেখে ওর উভয় তরফেই সম্মতি প্রকাশিত,উদ্যোগ নেই। নিজেকে প্রশ্ন করেও দেখেছে, দোলাচলে হৃদয়। নানান ভাবনায় এক অদ্ভুত চিন্তা
মাথায় আসে। সকালের দ্বিতীয় চায়ের কাপ হাতে শ্বশুরের সাথে কথা বলতে ঢোকে , চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে’বাবা, একটা কথা
বলবো?
‘ অ্যা, হ্যাঁ হ্যাঁ বলো না কি.....
‘আচ্ছা বাবা, আমার বাবা-মা, তাঁরাও যদি এবাড়িতে এসে থাকেন তাহলে...
‘ বুঝি, তোমার মনের অবস্থা। আমাদের কথা আর ভেবো না, তুমি ওঁদের কাছে গিয়েই থাকো, একটু থমকে গিয়ে আস্তে আস্তে বলেন ।
‘না,না বাবা, সে কারণে
নয়।
পুজো সেরে
ঘরে ঢুকতেই কথোপকথন রত দুজনকে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন’কি হয়েছে?
‘বসো , তোমার জলখাবার নিয়ে এসে বলছি।
জলখাবার
নিয়ে এসে দেখে ইতিমধ্যে বাবা মাকে বলেছেন।তিনিও একই কথা বলেন
"অপু বাপের
বাড়ি গিয়ে থাকতে চাও! যাও, আর কি বলবো! কত আশা... বলতে
বলতে চোখ জলে ভরে ওঠে।
‘আমার কথাটা
ভালো করে শোনো প্লিজ।
‘বলো
‘দুই বাড়িই
এক পরিস্থিতিতে, দূরত্বও বেশ, তাই ভাবছিলাম সবাই
মিলে যদি এক ছাদের নিচে থাকি!
‘মানে! কি
ভাবে!!
‘আমি বাপীদের
সাথে কথা বলবো। এখানে ডাক্তার, ওষুধ পাওয়া সহজ। আমাদের
বাড়িতে কারো কিছু হলে অনেকটা সময় পথেই যায় আর আমিও তো সবসময় থাকবো না, খবর পেয়ে....
‘ নিজেদের
চেনা পরিবেশ,বাড়ি-ঘর ফেলে কেউ কখনো আসে, তাও আবার মেয়ের শ্বশুর-বাড়িতে!
‘ছেলের
বাড়িতে থাকা গেলে মেয়ের বাড়িতে নয় কেন?
‘দ্যাখো মা, আমার আপত্তি নেই তবে নাটক-নভেলে মিললেও আজও বাবা-মা
মেয়ের বাড়িতে থাকা সম্মানীয় ভাবে না। থাকে, থাকতে বাধ্য
হলে, নিরুপায় হয়ে....
‘নিরুপায়
বলেই তো এটা ভেবেছি। এ বাড়ি এত ফাঁকা লাগে না, একই দুঃখে
কাতর একে অপরের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেবে। আমি তোমাদের ছেড়ে যেতে পারবো না, নীলকেও হারিয়ে ফেলবো, ও যেন
......না,না দায়িত্ব এখন আমার, আমার। ওদিকে বাপী-মাকেও - আমি কোনদিকে যাবো!!
গুম মেরে
থাকা থমথমে পরিবেশ ভেঙ্গে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি সম্মতি দেন।
জানিয়ে দেন ওঁদের তরফ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস।
বাপী-মা শোনামাত্র লাফিয়ে ওঠেন।
‘দূর! তাই
হয় নাকি! ও তোকে আমাদের নিয়ে ভাবতে হবে না! যা হবে, হবে। যেমন কপালে....
‘আচ্ছা, আমার কথাটা তো বোঝার চেষ্টা করো একটু। আকুল আকুতি
জানায় অপা।
‘মামন রে, এটা হয় না। বাড়ির কি হবে? ফেলে রাখবো? ভাড়া
দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, ইচ্ছে করে না।
‘বিক্রি করে
দাও না বাপী।
‘কী! কি
বলছিস কি তুই? মা বলে ওঠেন।
‘দ্যাখো, এ বাড়ি ছেড়ে আমি যেতে পারব না বলে দিলাম।
‘আচ্ছা, একদিন তো বিক্রিই করে দিতে হবে!?
‘সে তুমি যা
ইচ্ছে করো। আমাদের আগে মরতে দাও।
‘মরতে তো
হবেই, সবাইকেই। ম্লান হেসে অপা বলে।
আমার কথা তো সেটা না। তোমরা আমার সাথে থাকলে একটু স্বস্তি পাই এই আর কি!
‘ঠিক আছে, ভেবে দেখি, হুট্ করে তো
আর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
বাপী মার
আলোচনা, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে বৈঠক, দুপক্ষই যুক্তি মানছে তবে বাড়ি ছেড়ে কেউই যেতে
চায় না। এঁদের জোরালো যুক্তি আছে, বৃদ্ধ বয়সে
হাতের কাছে জরুরী পরিষেবা সুলভে মেলে এখানে, ওখানেই
বাপী-মা পরাস্ত। হাল ছেড়ে দিয়েছিল অপা। ভালো লাগে না, এখানে ওখানে কোনোখানেই না। চাকরির চেষ্টা করে যাচ্ছে, ত্রিশের কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছে বয়স। কেটে গেল পাঁচ
পাঁচটি বছর। সমস্যা শুরু হয়েছে, উভয় পরিবারে অসুস্থতা বাসা
বাঁধছে।দু-দিক তাল রেখে চলতে গিয়ে তালভঙ্গ হচ্ছে বৈকি।
‘আমার কথা তো
তোমরা শুনলে না’
‘তোর ঐ এক
কথা।
‘আমি কি করি
বলোতো?
‘কি বলবো, যেরকম সুযোগ সুবিধা পাস......
‘সেই, আমি যে কি করে সব সামলে চলেছি। এখন না হোক্ এর উপরে
আয়া রাখতে হলে’
‘আমরা গেলে
খরচা নেই?
‘আছে, তোমাদের পেনশন আছে আর বাড়িটা বিক্রি করলে থোক্ টাকা
মিলতো।
‘ও! এই
উদ্দেশ্যে!!
‘ না বাপী, আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। নীলয়ের সামান্য সঞ্চয়
পেয়েছি। বাবার পেনশন আর সামান্য যা আছে জানিনা কিভাবে চলবে আগামী দিনগুলো।
দুই মধ্যবিত্ত
পরিবারের ইতিহাস এক’বৈষয়িক বুদ্ধি জোরালো নয়, সন্তান পরিবারের প্রতি কর্তব্য, মাথা গোঁজার ঠাঁই, লোক লৌকিকতা, সাধ্যমতো আত্মীয়ের পাশে দাঁড়ানো দুটো পরিবারের
বাকী দিনগুলি স্বচ্ছন্দে কাটবে এ আশা দূরাশায় পরিণত আজ।
****
 |
Image Courtesy : Praksh Ghai Through Google |
সেই
বাপী-মাকে আসতেই হলো প্রধানতঃ চিকিৎসার কারণে। বাড়ি বন্ধ করে আসা, চললো আসা -যাওয়া অবশেষে অপুর কথাই গ্ৰাহ্য-উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আত্মীয় সবার সহায়তায়
বাড়ি , ফার্নিচার একান্ত যা রাখা
প্রয়োজন বাকি বিক্রি করে একরাশ মনোবেদনা সঙ্গী করে এসে উঠলেন অপার শ্বশুর-বাড়িতে, এখনও যে মেয়ের বাড়ি স্বীকৃত নয়। অতিথি আপ্যায়ন
করে ঘরে তোলা হলো, অতিথি-সম ব্যবহারও চললো
কিছুদিন। বিজয়ের হাসি হাসতে গিয়ে অপাকে থমকে যেতে হলো’
‘আমরা লাউয়ে
হলুদ দিই না।
‘আমাদের
বাড়িতে তো আড়-বোয়াল ঢোকেই না।
‘আপনি দাদা
বড্ড দেরী করে খান্। এই বয়সে....
‘ হাঃ, হাঃ এ আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, আপনি খেয়ে নিন।
‘না,না সে কথা না
‘আরে তাতে কি
হয়েছে’
‘আমি জি
বাংলা
‘আমি স্টার
জলসা
‘দাদা, কাগজটা, ও পড়ছেন, আমাকে মাঝখানের পাতাটা....
‘আপনি তো
মশাই দারুণ খেলা প্রেমিক।
‘ঐ আর কি, আপনি তো দেখেন না
‘কি দেখবো!
সব গটআপের....
‘না না দাদা, এটা ঠিক....
হা ভগবান!!
স্কুলের
বাচ্চাদের ধমক দিয়ে শান্ত রাখা যায়, এঁদের কি
বলবো!
দুই মহিলা
দুই পরিবেশ থেকে এসে অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজকের আমিতে রূপান্তরিত। পরিচয়’কর্তা-গিন্নি।অপাকে পতিগৃহে পাঠানো ও বরণ করে ঘরে
তোলার পর সবার সাথে মানিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন যাঁরা তাঁরা আজ তুচ্ছ তুচ্ছ
বিষয়ে মনঃক্ষুন্ন, সশব্দে নয়, এটুকুই বাঁচোয়া তবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উভয়
পক্ষেরই অঙ্গুলির সম্মুখীন আজ অপালাই। অপালা চেয়েছিলো একাধারে পুত্র-কন্যা হয়ে
এই বৃদ্ধ- বৃদ্ধাদের সযত্নে আগলে রাখতে। সমব্যথী, একে অন্যের
পরিপূরক হবে। টাকা পয়সা বাপী মাস পড়লেই বাবার হাতে তুলে দেন। বাবাও এখন অধিকাংশ
দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ওর উপরে। বাপী-মা অপরের বাড়িতে আর বাবা-মা নিজেদের গৃহে’এই এক সূক্ষ্ম অনুভূতির দাগে সম্পর্কে চিড় ধরছে, ভয় হয় কোনদিন না ঝনঝনিয়ে চুরমার হয়ে ছড়িয়ে
পড়ে।
‘বাবা, একটা কথা বলতাম।
‘হ্যাঁ, বলো।
‘না, মানে কিভাবে যে বলবো!
ছ্যাঁত করে
বুকটা কেঁপে ওঠে। অপার সাথে কি কারোর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে!! ওদের ছেড়ে চলে যাবে
কি! নীলয় চলে যাওয়ার পরে অপালা যে মেয়ের মতো হয়ে গেছে।’এত কিন্তু কিন্তু করছিস কেন, বল্ না।
‘আমার কথায়
ভুল বুঝো না
হাত-পা কি
ঠান্ডা হয়ে আসছে!’ না, তা কেন...
‘বাপীদের
কিছু বলিনি, তোমাকে সবকথা আগে বলি, তুমি আলাদা’_
‘তাইই!! করুণ
হাসি চওড়া হলো মাত্র।
‘দুই বাড়িকে
এক করে ঠিক করিনি মনে হচ্ছে। নানান বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভ্যাসে রপ্ত এ বয়সে
মানিয়ে নিতে কষ্ট দিচ্ছে, সমস্যা সৃষ্টি করছে। আমি বুঝতে পারছি।
‘কেন, তোমার বাবা মা কিছু বলেছেন, এক ভারমুক্ত মন যেন কথা বলছে।
‘না, সেভাবে তো কেউই বলেন না, বুঝি ।
‘সে আর এখন
কি করা যাবে। একটু মানিয়ে গুছিয়ে চলতে হবে। তোমার শ্বাশুড়িকেও বলবো....
‘না বাবা ,আমি যেটা বলতে চাই
‘কি!!
‘এ বাড়িটারও
তো বয়েস অনেক।
‘হ্যাঁ, চল্লিশের উপরে, দেখতে দেখতে
হয়ে গেল। কিভাবে যে বানানো, একটু একটু করে’
‘এখন তো
প্রায়ই কিছু না কিছু সারানো নিত্যনৈমেত্তিক হয়ে গেছে, পয়সাও যাচ্ছে।
‘সে তো মা
বৃদ্ধ বয়সে চিকিৎসা খরচ লাগবেই।
‘আমি বলছিলাম
যদি বাড়িটা প্রোমোটারের হাতে দেওয়া যায় তাহলে....
শ্বাশুড়ি
যে প্রবেশ করছেন খেয়াল করেনি অপা।
‘অপা, তুমি কি সাক্ষাৎ অলক্ষ্মী ?? নিজেদের বাড়ি থেকে উৎখাত করতেও বাঁধছে না’
‘মা!!
‘আঃ, কি বলছো?
‘কেন, ভুলটা কি বলেছি? শেষ করে
দেবে, সব ছার খার করে শান্তি ওর।
‘চুপ করে ওকে
আগে বলতে তো দাও।
‘মা, আমার
‘কিসের মা!
কার মা! যে মা বলে ডাকতো আজ যদি বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।
বাপী মা
জোরে কথাবার্তা শুনে কিছু হয়েছে ভেবে তাড়াতাড়ি এসে উপস্থিত। বুঝতে পারছে না ব্যাপারটা
কি।
‘কি হয়েছে
জানতে পারি দাদা?
‘আর কি
জানবেন, আপনাদের মেয়ে এবার আমাদের
মাথার উপর থেকে ছাদটুকু কেড়ে নেবে, যেমন
নিয়েছে আপনাদের।
‘কি! অপা!!
কি বলছেন উনি?
‘কি বলবো
আমিও জানিনা বাপী।
‘অপু, সবাই যখন উপস্থিত তখন সব পরিষ্কার করে বলো।
‘বাবা, আপনাদের ছাদ না থাকলে আমারও কি থাকবে?
‘তুমি
প্রসঙ্গে এসো।
‘আমার
বক্তব্য, এতবড় পুরানো বাড়ি, রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক তাই যদি প্রোমোটারকে দিয়ে
ফ্ল্যাট বানানো যায় তাহলে বাসস্থানের সাথে টাকাও আসে।
‘আর আমরা??
‘তোমরা ওয়ান
রুম ফ্ল্যাট কিনে নিলেই তোমাদের চলে যাবে।
‘এই খোলামেলা
বাড়ি ছেড়ে পায়রার খোপে মরতে যাবো কেন?
‘যেতেই হবে এ
দাবী তো রাখিনি।
‘হুউউউ, অপু নিছক কথার কথা বলেনি। একটু অসুবিধা হবে প্রথম
প্রথম ঠিকই’
‘ওঃ, তোমার মত দেওয়া হয়ে গেল তো!! তাহলে আর কি!
‘ব্যাপারটা
তলিয়ে ভাবুন সবাই।
‘আমাদের কি
বলার আছে, সব তো ছেড়ে এসেছি এখন কপাল
যেদিকে যায়!
‘আমি কিন্তু
খারাপ চাইছি না কারোরই।
‘না না, সে তো বটেই মা লক্ষ্মী!
‘বাবা, ভুল বলে থাকলে ক্ষমা চাইছি। এ প্রসঙ্গে আর কোনো কথা..........
শিশু বৃদ্ধ
দুইই অবুঝ। শিশুদের ভোলানো যায় কিন্তু বৃদ্ধদের বোঝানো, সামলানো বড় কঠিন। আশেপাশে খোঁজ নিয়ে বাপীদের জন্য
একটি ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে হবে। সত্যি, এ বয়সে
স্বাধীন ভাবে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। প্রথমেই যে কেন মাথায় এলো না! আসলে শূন্যতা
পূর্ণতা পাবে, সমব্যথী পাবে মনের আশ্রয় আর ও
সবাইকে কাছে নিয়ে চলতে পারবে এই অলীক ভাবনাই ওকে বাস্তব থেকে দূরে রেখেছিল।
****
দুই
ফ্ল্যাটে এখন বাটি আদান-প্রদান চলছে। মুখোমুখি দুই ফ্ল্যাটের মাঝে দাঁড়িয়ে হাসে
অপালা, নেমে আসে , রাস্তায়, একা। আপন
মনে নিজেকে শোনায়’
"নিবিড় ঘন
আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুবতারা।
মন রে মোর, পাথারে হোস নে দিশেহারা।"