ঋতুর মধ্যে ঋতুরাজ 'বসন্ত' সবার
বড় প্রিয় কাল। শীতের শেষে বছরের শেষলগ্নে বসন্ত নিয়ে
আসে, দিয়ে
যায় রঙের ছোঁয়া। দোলের অপেক্ষা পূর্ণতা পায় এই সময়ে। এই সময়ে আমারও মনে আসে এক অনির্বচনীয় আনন্দ-ঘন দিনের
স্মৃতি, দিনটা
দোলের সামান্য আগে
বা পরের।
বন্ধু
শিবপ্রসাদের সৌজন্যে প্রাপ্তি। কলেজে পড়ি। ওরই উদ্যোগে গিয়েছিলাম আমাদের এখান থেকে কিছুটা
দূরে শ্রীমতি মৈত্রীয়ী দেবী( আশাকরি রবীন্দ্র অনুরাগী এবং স্নেহধন্য এই লেখিকার
আলাদা পরিচয় দিতে হবে না)-র পরিচালিত সংস্থা অনাথ আশ্রম 'খেলাঘর'-এ।
অত্যন্ত অনাড়ম্বর অথচ এক প্রাণবন্ত আন্তরিকতার ছোঁয়া মাখা অনুষ্ঠানে। আশ্রমের সন্তানসহ
সহায়িকারা খোলা আকাশের নীচে গাছ-গাছালির মাঝে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে নাচে গানে
নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন অনাবিল আনন্দ সহকারে। একটি গাছের নীচে বেদীতে মৈত্রীয়ী দেবী
বসা, যথেষ্ট
বয়স তবু কি সুন্দর!
ভিতরের আলোয় আলোকিত যে! কাছে গিয়ে প্রণাম করে আস্তে জিজ্ঞাসা করলাম "শিল্পী
আসবেন এবার?" বললেন"
হ্যাঁ, এবার
আসবেন,বসো।"
ঋজু, দীর্ঘদেহী
অতীব সাধারণ ভাবে
সস্ত্রীক এলেন যিনি তাঁর খ্যাতি আকাশ-ছোঁয়া। সে খ্যাতি যে তাকে
মাটিছাড়া করেনি, দেখলাম
; দেখলাম
অবাক বিস্ময়ে আমার অতি প্রিয়, না কেবল আমারই নয় অবশ্যই- শ্রী
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে। মৃদু হাসি সহ চারিপাশে ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে
এসে বসলেন অতি সাধারণ এক কাঠের চেয়ারে, পাশে স্ত্রী শ্রীমতি বেলা মুখোপাধ্যায়।
ব্যস্ততা ভরা জীবনে সুযোগ থাকলে এখানে অবশ্যই আসেন, জেনেছিলাম। এত
কাছে, এত
সহজ স্বাভাবিক ছন্দে শিল্পী ধরা দিলেন, আমি আজও আপ্লুত। সামনে আর একটি চেয়ারে
হারমোনিয়াম রাখা। তবলাও নেই। সামান্য কাছে টেনে নিলেন হারমোনিয়াম, চারিপাশে
যে যার মতোন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসা,ভরাট গলায় স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হলো রবির
গানে-
প্রাঙ্গণে মোর শিরীষশাখায় ফাগুন মাসে
আমার কী উচ্ছাসে
ক্লান্তিবিহীন ফুল ফোটানোর
খেলা।
ক্ষান্তকূজন শান্তবিজন সন্ধ্যাবেলা
প্রত্যহ সেই ফুল্ল শিরীষ
প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখি
' এসেছে কি- এসেছি কি।'
অনেকের সাথে আমিও ভেসে
গেলাম সে অনির্বচনীয় সুরে। এবার এলো থালায় আবীর, এলো মিষ্টি, রঙে-রসে জারিত হয়ে তৈরি হয়ে গেল এক মনকাড়া পড়ন্ত
বেলার স্মৃতি।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post