অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, March 13, 2018

রম্য রচনা-স্বরূপ চক্রবর্তী


ভ্যালেন্টা




(এই কাহিনীর সত্যতা জানতে দেখুন দেবতাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট "skybook" )



স্থান: কৈলাস পর্বতের এক নিভৃত কোনা

কাল: ত্রয়োদশীর রাত

পাত্র: দেবাদিদেব, একটি কলকে,একপাত্র গাঁজা আপাততঃ এই।



আজ ত্রয়োদশী কাম ১৩ই ফেব্রুয়ারী, মহাদেব একমনে গাঁজা টানছেন আর ধোঁয়া ছাড়ছেন,
ভয়ে ভয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো নন্দী-ভৃঙ্গী ডুও,

Image Courtesy-Google Images 

করজোড়ে বলল "বাবা, রাত তো অনেক হল, মা তাড়া দিচ্ছেন, কাল আবার ওনার উপোষ, তা ছাড়া এই ভেজালের বাজারে এত গাঁজা সহ্য হবে তো?"

বাবা রক্তচক্ষু পাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন," খক, খক,.....আমি কি আর..খক, খক সাধে?" "ব্যাটাদের অতিভক্তি দেখেছিস?" 

"খ...অ অ ক ....আজ থেকেই শুরু করেছে," "মধু,দুধ,ঘী, মিষ্টি সব গঙ্গাজলে মিশিয়ে ঢেলেই 

যাচ্ছে,অরুচি ধরে গেল, একটু টেস্ট চেঞ্জ করতে দে", " যা ভাগ ভাগ"।

এদিকে বাবার উগ্র মূর্তি, ওদিকে মায়ের হাতের বেলনা, "যা থাকে কপালে, শালা আজ আর বাড়িই ফিরব না" , বলে দুই জনে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।




ওদিকে সকাল হয়েছে, শিবলোকে সাজ সাজ রব, আজ শিব চতুর্দশী, মায়ের আদেশে গণেশ 

গিয়েছে ফুল আনতে, সবচেয়ে সরেস ধুতুরা হল মায়ের ডিমান্ড,

কার্তিক বসে বসে 'স্কাই বুক' ঘাঁটছে, সামনে স্বরস্বতী ব্যাজার মুখে বসে আছে।

" যাই বল সরো, আজকাল তোর বাজার টা বেশ ডাউন, ফলোয়ার গ্রোথ এক্কেবারে স্টিল," 

"তোর ওই বেঙ্গলের একদিনের সেলিব্রেশন এক্কেবারে লোকাল, আর এদিকে দ্যাখ, ভ্যালেন্টাইন
ডে উইকে পরিণত হয়েছে,  ভরপুর ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট, কিছু কর, না হ'লে তোর ওই লাভ 

উইং টা পুরো ফ্লপ হয়ে যাবে, বাকি থাকবে হাতে বীনা, আর কিস্যু না"।

শুনে তেরিয়া হয়ে ওঠে স্বরস্বতী,

"কেন? তোর তো বেশ ভালোই বাজার তাই না? দ্যাখ দাদা, আগে প্রপোজ, তারপর

 ম্যারেজ,তারপর তোর মূর্তি সুপার ইম্পোজ, তবে গিয়ে একলা বা যমজ,","আগে নিজের 

ফলোয়ার বাড়া, তারপর রোয়াব ঝাড়বি", বলে দাপিয়ে চলে গেল।


ওদিকে মা দুর্গা ভীষণ চিন্তিত, গতকাল রাত থেকেই মহাদেব বেপাত্তা, নন্দী-ভৃঙ্গীও মহাদেবকে 

খুঁজতে গিয়ে ফিরে আসেনি, লক্ষী গেছে নারায়ণের সাথে 'ভ্যালেন্টাইন উইক'  সেলিব্রেট করতে, 

গণেশ গেছে ফুল আনতে, তাই কাউকে না পেয়ে কার্তিক কেই পাকড়ালেন মা,

"হ্যাঁ রে, তুই না বাড়ির বড় ছেলে?তোর কি কিছুই করার নেই? বসে বসে বোনটা কে না জ্বালিয়ে 

তোর ওই ছাইপাঁশ 'স্কাইবুক লাইভ' খুলে দেখ না কেউ কোনো মাতাল লোকের কান্ড পোস্ট করেছে

 কি না, তোর বাবা আজকাল আবার নেশা করলে এমন এমন কান্ড করেন যে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে

 যায়, হলে ওখানে গিয়ে ধরে আনা যেত,", "কে জানে লোকটা গেল কোথায় ?"




 ওদিকে চারিদিকে লোকজনের ভীড়, কোলাহলের মাঝে ধীরে ধীরে চোখ খুলে মহাদেব বুঝলেন যে

Image Courtesy: Google Images
 তিনি একটি ব্যস্ত বাজারের মাঝ- মধ্যি খানে চিৎপটাং মুদ্রায় পড়ে আছেন, ধীরে ধীরে তিন নম্বর 

চোখ টি একটু খুলতে বুঝলেন যে

কাল রাত্তিরে নেশার ঘোরে বোধ হয় 'কৈলাসের কার্নিশ' টপকে নিচে এসে পড়েছেন, ধীরে ধীরে 

উঠতে গিয়ে ঠোক্কর খেলেন একটি লোকের সাথে, লোকটি মাথার ফুল ভর্তি ঝুড়ি টি ব্যালেন্স 

করতে করতে  খেঁচিয়ে উঠল,

"মরণ, বলি সঙ সেজে রাস্তার মাঝে , কি ব্যাপার?......... ভোলেবাবার ভক্ত মনে হচ্ছে যেন? 

কেন একটু কম গাঁজায় কি শানাচ্ছিল না? যত্তসব, উটকো," বলে নিজের রাস্তায় এগিয়ে গেল।

মহাদেব বুঝলেন এটি একটি ফুলের বাজার, আরও বুঝলেন যে আজ ভ্যালেন্টাইন ডে।


ওদিকে গণেশ, বরাবরের বুদ্ধিমান ছেলে, সেটার পরিচয় তো সেই সেবার কার্তিকের সঙ্গে পৃথিবী 

পরিক্রমার কম্পিটিশনের সময়ই পাওয়া গিয়েছিল, সুতরাং ধুতুরা ফুলের জন্য আদাড়ে বাদাড়ে না 

খুঁজে সোজা হাজির এই ফুলের বাজারে, যেখানে একটু আগেই মহাদেব 'ফল' করেছেন।

তা শুঁড় টিকে ভাঁজ করে ছদ্মবেশ ধারণ করে গণেশ এ দোকান ও দোকান ঘুরে একটি দোকানে 

গিয়ে দেখে একপাশে স্তূপীকৃত ধুতুরা আর অন্য পাশে লাল গোলাপ, প্রথমটি ২০ টাকা জোড়া, 

অন্যটি ২০০ থেকে,৩০০ টাকা জোড়া।

তার টেক স্যাভি বড়দা আর 'স্কাই বুকের' দৌলতে গণেশ 'ভ্যালেন্টাইন ডে' কি  তা জানে, তবে

 চাক্ষুষ এই প্রথম, কারণ ওই যে 'আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী কাম শিব চতুর্দশী' , তা, 'চতুর' গণেশের 

পক্ষেও গোলাপের ডিমান্ড বাড়ানোর জন্য  'দোষী' কে খোঁজা অসম্ভব।


মন দিয়ে ধুতুরা পছন্দ করতে করতে হঠাৎ গণেশের কানে গেল একটু দূরে একটি দোকানের

সামনে বেশ হল্লা হচ্ছে, উৎসুক হয়ে পায়ে পায়ে গিয়ে দেখে কি, "মহাদেব ভান্ডার" নামের 

দোকান টির সামনে একটি উস্কো খুস্কো লোক কে সবাই মিলে উত্তম মধ্যম দেবার তালে আছে, 

লোকটি মনে হয় নেশাগ্রস্থ, একটি মারও এখনো পড়েনি তবুও টলছে।

ভীড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে গণেশের চোখ ছানাবড়া, ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখা শুঁড় টি খুলে পড়ে যায় আর কি!

"আরে! এ তো বাবা,স্বয়ং মহাদেব।"

মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে গণেশ দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করল," ইনি কি করেছেন?"

"চুরি"।

দোকানদারের ছোট্ট জবাব।

"কত টাকার জিনিস?"

"কেন? আপনি দেবেন", দোকানদার জামার হাত গোটায়।

"না, মানে, উনি  বোধহয় অজান্তে...."

যেমন তেমন করে ২৫০ টাকা 'জামিনে' বাবা কে মুক্ত ক'রে একটি ফাঁকা জায়গায় এনে ফেলে গণেশ।

"কি বাবা!শেষমেশ চুরি?"

"চুরি কেন? দেখলি না ওটা আমার দোকান, 'মহাদেব ভান্ডার'", হেসে বলেন মহাদেব।

বোঝানো অসম্ভব বুঝে গণেশ মরিয়া হয়ে প্রশ্ন করল, " কি চুরি , থুড়ি, নিয়ে ছিলে শুনি"?

লাজুক লাজুক মুখে মহাদেব বললেন 

"তোদের মা আজকের দিনে উপোষ করে আমার পুজো করে, এমন কি নেশা করতেও বাধা 

দেয়না, এর পেছনে কারণ টি কি?" মহাদেবের প্রশ্ন

"কি আবার ভক্তি , শ্রদ্ধা" , গণেশের ,'গেস'

"না - রে, প্রেম, বুঝলি? প্রেম।" বলেন শিব।

Image Courtesy:Google Images

আর তার বদলে আমি তো প্রায় কিছুই করতে পারিনা, তাই মর্ত্যের ছেলে পুলে গুলোকে দেখে, 

এইটা, মানে," বলে বাঘ ছালের গেঁজে খুলে বের করলেন একটি ইয়া সাইজের লাল গোলাপ...



বলুন হর হর মহাদেব, " ভ্যালেন্টাইন বম বম"।










BACK TO INDEX 












No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান