মাতৃভুমির খোঁজে
আয়। চল। আর দেরী করিস না।
অন্নপূর্ণা মন্দিরে অনেক
ক্ষন হল।
কোনদিকে যাবি।দক্ষিণ পশ্চিমেই চল।
মিছির পাড়া দিয়ে যাবি... না
পান্ডে পাড়া দিয়ে।
চল এদিক দিয়েই চ।
এই যে মিছির পাড়ার
শেষ প্রান্তে চলে এলাম।
এই দ্যাখ এই যে চারকোনা বড়
পাথর দেখছিস।দ্যাখ ভাল করে।কতগুলো গর্ত ।
কত? ২৪
টা......।
আবার দেখবি ধর্মরাজ পুজোর
গাজনের শেষে ভক্তারা এই পাথর উল্টে উপুড় করে রেখে দেবে।
বিশাল ভারি।
পরের বছর সেই গর্তের সংখ্যা
দেখবি বেড়ে গেছে।
চল।চল।......
এই যে, ডানদিকের
টা পাত্থরগড়ে আর বাঁদিকে নন্দিগড়ে।
মাঝখানে এই সরু রাস্তা...গরুর
গাড়ি চলার মত।
আস্তে..., আস্তে...,।
দৌড়াস কেন...।
আরে মটু মাস্টার না।ধুতি
পরে পান চিবোতে চিবোতে হাতের চেটো দিয়ে দুপুরের রোদ আড়াল
করে বাথানের দিকে এগিয়ে চলল।
যাবেই না কেন।
বাথানের ফুটবল মাঠের পশ্চিম
প্রান্তে ঐযে দেখা যাচ্ছে পতাকা।পতপত করে উড়ছে।
মানে আজকে ম্যাচ আছে।
পানাগড় আর গোপালমাঠ।
চল চল...
চারিদিক লোকে লোকারণ্য। আয়
না তাড়াতাড়ি।
এই তোর কাছে পয়সা আছে!
আমার আছে।
আচ্ছা শোন আমি চটপটি কিনছি,আর
তুই নারকেল!
নারিয়াল্লেই......,নারিয়েল্ললিলই...
নে বাকি চটপটিটা শেষ কর...,।
খা খা..., খেলা
শেষ হয়ে যাবে যে।
নে মুখে পুরে নে...,দ্যাখ
আমার শেষ...।
চিৎকার হাজারো লোকের...,
হোহো...হ......,হইইইইইইই,
পাস দে পাস,দে
দে ফুচি কে...ফুচি......কে
দে...,
শোন মাথা নুইয়ে ঠেলে ঢুকতে
হবে।
ঢোক... ক...
এই একটু দেখ,তে
দাও গো...।সর, সর...,
ফু... উউউউউউচিইইইইইই...,
অই যে টিংটিঙে পাতলা লোকটা
ঐ টা পানাগড় টিমের ফুচি...
মিনাল দা......মিনালদা...... পাস
দাও ওওওওও ফুচিকে পাস দাও...,।
মিনালদার পা থেকে ল... অ... অ...মবা......পাস।
ফুচির
পায়ে বল......একজন..., দুজন...... কাটিয়ে
বাঁপায়ের জোরালো শট......,গোওওওওল্লল্লল্লল্লল...,
সঙ্গে সঙ্গে বিশুকার লম্বা
বাঁশি......।
ফের খেলা শুরু...,
গোপাল মাঠের বুঁইদার পায়ে
বল......। কিন্তু আবার লম্বা বাঁশিতে খেলা শেষ করে দিল
বিশুকা......।এক্সট্রা টাইমের গোল...
হোই হোই হোওঅঅ...
,পানাগড়
সেমিফাইনালে উঠে গেল।
মাঠ খালি......।
বাথানের খেলার মাঠের এই
কোনাকুনি পায়ে হাঁটা রাস্তাটা চলে গেছে...,যেন...,
এই চল......যাবি
না।
দেখছিস কত উঁচু তারখুঁটি...।
হাইটেনশন...,
আয় একটা জিনিস দেখবি।এই তার
খুঁটিতে কত জোরে কারেণ্ট যায় জানিস...,।
আয়। আয় না।
আরে ভয় নাই।
এই দ্যাখ এইরকমভাবে কান পাত
খুঁটিতে।
ঝন্নন্নন্নন...ঝনঝন...।
পাচ্ছিস......।আওয়াজ।
চল।...,আরো
নিচের দিকে...
এই দ্যাখ এই হচ্ছে তাঁতীর
পুকুর।
এই পুকুরে আমাদের গ্রামের
বাসন্তী, বড়
দুগগা সব বিসর্জ্জন হয়।
বড়কালীর পিছন পিছন সব ঠাকুর
আসে...... বিরাট
লম্বা লাইন।মশাল জ্বলে।
আর ধর্মরাজ পুজোয় এখান থেকে
ধর্মরাজ তলা পর্যন্ত কত ভক্তা দন্ডি কাটে জানিস।
আয় এদিকে।আয় না।
তুই না আসতে চাস না।
আ:হ:!!!! কি শান্তি...,।
এই হল তরুপাড়ের বাগান!
কি গাছ নাই বলত।
ঐ দ্যাখ তালগাছ...,একপায়ে
দাঁড়িয়ে।
আম,কাঁঠাল,জাম
অশত্থ্ব,বাঁশ...।
মাঝখানটায় শান্ত পুকুর...ছায়া
ঘেরা...।
এই আঞ্জির খাবি...,।
কাঁচা আঞ্জির,কাঁচা
লংকা থেঁতো করে একটু নুন আর তেঁতুল জল...,। যা লাগবে না!!
আর এই যে বটের ঝুরি নেমেছে।
এইটা ধরে ঝুলতেএএ......খুঊঊ...,উউউউব
মজা...
এই দ্যাখ......
হেইইইওওওঅঅঅঅ।
পারবি এখান থেকে ঝুলে
পুকুরের জল এর ওপর ওপর ঝুলে গিয়ে আবার ডাঙায় ফিরে আসতে......।
যা... যা... না...,।ধর...ভাল করে...
এঁ
ইইইই......য়ো...ওওও...,
ঝঝ...অ,অ,অ...,প্পাপ্পাপ্পা...,সসসস,
কি হল... ওঠ...ওঠ..., নে
গামছা দিয়ে মুছে নে...।
ও কিচছুটি হবে না।ওঠ...,
চলতে চলতে শুকিয়ে যাবে।
কুব কুব...,এই
টা কি পাখির আওয়াজ বলত...?
জানি তুই জানিস না......।
নে অনেক হয়েছে...,
এইযে এই ডান দিকে চলে গেলে
সোজা দিগনালা হয়ে...অন্ডাল
বাজার...।
এই রাস্তায় গেলে পাবি...,শষা...,ফূট
আর খেসারি...,।যাবি...?
থাক... ঐ
দিকে অন্য দিন না হয় যাওয়া হবে...।
চল ওই যে বট গাছ টা একা
দাঁড়িয়ে আছে......।
ঐ দিকে যাব...
এখানে এখেঁন পুজো হয়...,।
বাজার ডাঙাল এও এই রকমই বট
গাছ আছে...,।
ঠিক এই রকম একা পাহারা দেয়
যেন গোটা গ্রামকে।
আর এই হল জি-পোতা...!!
এই যে উঁচু ছোট ঢিবি দেখছিস... এর
নিচে কোন বাচ্চা মারা গেলে মাটিতে সমাধি দেওয়া হয়।
কিরে ভয় লাগছে...?
আয়...।
একটু তাড়াতাড়ি পা চালা......তবেই
ত......,
ঐ যে মাঝি পাড়া...,।
দ্যাখ ঘর গুলো কি সুন্দর..., ছোট..., ছোট...,
দেওয়াল গুলো মাটি দিয়ে সুন্দর
করে নিকানো...।
জানিস এই দেওয়ালে আঁকা
ফুলগাছ গুলো কোন রঙ নয়।
এগুলো মাটির ই রঙ......খড়ি...,।
এই ছাগল ছানা টা ছেড়ে দে......
দেখলে বকবে...,ছাড়...ছাড়
আদিবাসি দের ঠাকুর কি বলত...,মারাং
গুরু,।
কি গো সন্তড়ি ভাল আছো...।
দেশে গেইছিলে নাকি...,!
না গো আমাদের এঁড়েবাছুর
নাই।
খোঁজ পেলে বলব।
এদের বিয়েতে এঁড়ে বাছুর
দিতে হয়, পরে
চাষের কাজে লাগে।
চল... চল...
এই যে ইঁটভাটা দেখছিস...,এইরকম
অনেক বাংলাভাটা আছে।আয় বাঁদিকে......
দেখছিস কত শরগাছ......।
আয়...... আরে
এই কুল গুলো মিস্টি নয়...,।
আগে চল......আরো
ভালো...মিস্টি
কুল ঝোপ আছে।
হ্যাই দ্যাখ...
উউউউম...,ম ম...,
কি মিস্টি...উম্মাহ
এইখানে আমরা পিকনিক করি......
জায়গা সরেজমিন দখল করে যেতে
হয় বাপু...,
নাহলে রবিবারের পিকনিকে
জায়গা পাবি না।
খামখেয়ালি ক্লাবের পরিবারের
এই জায়গাটা পাকা।
আর এদিক এর এই ঢিবি টায়
বেশি জায়গা নেই...
এটা দু বন্ধুমিলে......, ভালই
করা যায়,।
উনুন। ছোট হাঁড়ি...,।
খিচুড়ি,ডিমের
ঝোল আর টমেটোর চাটনি...।
আয়...
এই হল সিঙ্গারন নদী।
নাম......জলে
নাম,।
দ্যাখ জলটা কত পরিস্কার......।
স্রোতহীন...... তিরতির
করে জল বয়ে যাচ্ছে......।
জলের নিচে পা...,
পায়ের নিচে বালি......
বুঝতে পারছিস বালি গুলো
আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে...,
সরে যাচ্ছে...,
কি মজা...... তাই
না।
হেই অই দ্যাখ জলে একঝাক মাছ...,মাছ...
ছোট ছোট...,।
কুউউউউউউউউউউ......
জল থেকে দাঁড়িয়ে ট্রেনের
ইঞ্জিনের আওয়াজ...অণ্ডাল
ইয়ার্ড থেকে আসছে...দেখতে পাচ্ছিস
না...।
আয় এই পাড়ে।হোই দ্যাখ...,।
সরষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে
ওই
দিকে......যাই...।
আবার সিঙ্গারন পেরোতে হবে।
হ্যাঁ......। আরে ভিজে পায়ের বালিগুলো থাকুক না।
আয় আয়......
এই হল "বেলতলা..."...,
এরকম আরেকটা বাজার ডাঙাল
দিয়ে যেতে হয়,
সেটা " পাথরঘাটা"
এই হল স্মশান......
এই জায়গা টার কথা 'মা'-প্রায়ই
বলত...
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post