অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, March 14, 2018

গল্প-মলয়েন্দু মজুমদার

          বনভোজন

বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। অপর্ণা, শিউলি, টুলি সিদ্ধান্ত নেয়, যে তারা বনভোজন করবে। ওরা একই বিদ্যালয়ে পড়ে।  শিউলি টুলি একই শ্রেণীতে পড়ে। অপর্ণা ওদের মধ্যে ছোট। পদ্মার পাড়েই টুলিদের বাড়ি। পদ্মা একটি বড় প্রশস্ত খাল, সমগ্র হাবরা শহরটিকে প্রায় ঘিরে আছে। বর্ষায় হাবরা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জল নেমে আসে পদ্মার বুকে। টুলিদের বাড়ির চারিদিকেই জলাভূমি। বর্ষাকালে টুলিদের বাড়িটিকে ঠিক যেন দ্বীপ মনে হয়। বন্যার সময় চতুর্দিকে জলের মাঝে, টুলিদের বাড়ীর টালির ছাদটিই শুধু দেখা যায়। যোগাযোগের মূল রাস্তা থেকে অনেক ভিতরে টুলিদের বাড়ি বন্যার জল নামতে নামতে দুর্গাপূজো শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘসময় ওদের পুতুলখেলা, ধানক্ষেতের মাঠে খেলা বন্ধ থাকে। কালীপূজোর সময় থেকেই শীতের পোশাকের জন্য বড়দের বকুনি শুরু হয় পুকুরের জল কমছে, গাছে গাছে হরেক রকম কুল, তেঁতুল  অপর্ণাদের বাগানে।

Picture Courtesy -Writer



অপর্ণা শিউলি, খুড়তুতো জ্যাঠতুতো বোন। অপর্ণা শিউলিদের বাড়ি রাস্তার পাশেই। অপর্ণাদের বাগানেই ওদের সবার শৈশব কৈশরের নানা কাহিনী। ছুটির দিনে সকাল হলেই রান্নাবাটি খেলা তারপর সবাই মিলে পুকুরে সাঁতার। পড়ন্ত দুপুরে আচার খেতে খেতে পুকুরের বাঁধান সিঁড়িতে ছকের খেলা। পুকুর পাড়েই কুল চালতা আঁশফল গাছের ছায়ায় বর্ষায় বেড়ে ওঠা আগাছার ঝোপের মাঝে বনভোজন করবে টুলিরা। কথামত সবাই মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করে বনভোজনের আগের দিন। জয়ন্তী বাসন্তী, টুলির সহপাঠী দুই বান্ধবীও বনভোজনে অংশগ্রহণ করে জয়ন্তী বাসন্তী পাশের পাড়ায় থাকে। টুম্পা সুপর্ণা, অপর্ণার ছোট দুই ভাই বোনও, বনভোজনে সামিল হয়। বনভোজনের আগের দিন সবাই মিলে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে এবং জায়গাটা গোবর-জল দিয়ে ধুয়ে দেয়।

সবাই বাড়ি থেকে চাল, আলু, ডাল, শুকনো লঙ্কাহলুদ, নুন গুড় আনবে, এটাই স্থির হয় সবাই টাকা দিয়ে ডিম, পাপঁড় আর সকালের খাবার কিনবে। খিচুড়ি, ডিমের ঝোল, চাটনি পাঁপড় খাওয়া হবে দুপুরে। মুলো, সিম, ফুলকপি দিয়ে খিচুড়ি, আলু দিয়ে ডিমের ঝোল, টম্যাটো দিয়ে গুড়ের চাটনি। তিনজন মিলে কখনো ফিসফিস, কখনো হাসতে হাসতে একই আলোচনা। চাল, আলু, ডাল, শুকনো লঙ্কাহলুদ, নুন গুড় এসবই তো বাড়ি থেকে আনতে হবে। টাকা অবশ্যই সবার জমানো তহবিল থেকে দেবে। সবাই দশটাকা রে দিলেই হবে

Picture Courtesy -Writer

তিনজন খুব সকালে বোসদের ক্ষেত থেকে অতি সন্তর্পণে টম্যাটো ফুলকপি নিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে টুলি ক্ষেত থেকে নেবে, শিউলি সাহায্য করবে এবং অপর্ণা পাহারায় থাকবে। পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ন ঘটে। বেশ কয়েকটা লাল টম্যাটো দুটো ফুলকপি নিয়ে পুকুর ঘাটে চলে আসে টুলিরা। অপর্ণাদের বাড়ির ক্ষেত থেকে মুলো, কাঁচালঙ্কা আর শিউলিদের ক্ষেত থেকে সিম নিয়ে নেয় ওরা সব কিছু পুকুর ঘাটের বসার জায়গার নিচের কুঠুরিতে গুছিয়ে রেখে ওরা বাড়ি চলে যায়। কথা হয়, বাড়ি থেকে সকালের চা বিস্কুট খেয়েই পুকুর ঘাটে চলে আসবে সবাই।


তিন সদ্য কিশোরী সকাল সকাল ষ্টেশান রোডের মিষ্টির দোকানে হাজির। একজনের হাতে টাকা, একজনের হাতে বাজারের ছোট ব্যাগ এবং তৃতীয়জন সবকিছু খেয়াল রাখছে। অবশ্যই টুলি সবার আগে, তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে চতুর বুদ্ধিমতি। সিঙ্গাড়া  নিমকি কিনবে বলে, মিষ্টির দোকানে প্রচুর কথা বলছে। অকারন দরদাম করছে একটি করে ফ্রী নেওয়ার জন্য। চটপটে সদ্য কিশোরীর সাথে কথা বলতে গিয়ে, দোকানদার ভুল করে সিঙ্গাড়া  নিমকি দুবার দিয়ে ফেলেছে। বুদ্ধিমতি টুলি কিন্তু সবার প্রথম লক্ষ্য করে এবং বেশ মজা পায়

অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির আনন্দে তিনজন যশোহর রোড পেরিয়ে ছুটতে ছুটতে অপর্ণাদের বাগানে পৌঁছায়। সকাল-সকাল গরম-গরম সিঙ্গাড়া  নিমকি খাবে, সেটাও কিনা দু-বার। পুকুর পাড়ে সে  সিঙ্গাড়া  নিমকি নিয়ে গল্প শেষ হচ্ছে না। ইতিমধ্যে জয়ন্তী বাসন্তী হাজির চাল, ডাল অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে। টুম্পা সুপর্ণাও হাজির পুকুর পাড়ে। সবাই হই-হই করতে করতে বনভোজনের জায়গায় হাজির। সবার পিছনে প্রায় নিঃশব্দে চলছে লালী, টুলিদের কুকুর। কেউ কিন্তু লালীকে নজর করে না।

যাইহোক, গরম সিঙ্গাড়া  নিমকি খেতে খেতে সবাই অনেক গল্প করছে। ঠিক ফ্রী পাওয়া সিঙ্গাড়াগুলো পরে আবার খাওয়া যাবে। সিঙ্গাড়া প্যাকেটটি ঝোপের দিকে রেখে দিল। সিঙ্গাড়া-নিমকি খেতে খেতে স্থির কাঠকুটোর ব্যবস্থা করতে হবে। ইঁট দিয়ে উনুন বানানো হবে। টুম্পা ,সুপর্ণা, জয়ন্তী বাসন্তীকে বলা বাগান থেকে কাঠকুটো জোগাড় করতে। হঠাৎ সবাই চমকে ওঠে লালীর আওয়াজে। সবার অলক্ষে লালী সিঙ্গাড়া প্যাকেটটি ঝোপের মধ্যে থেকে নিয়ে নেয়। খাবারের গন্ধে আরও দু-দুটো কুকুর ঘোরাঘুরি করছিল, তারাও অপেক্ষায় ছিল। এবার কাড়াকাড়ি থেকে কামড়া-কামড়ির শুরু। সবাই যখন বুঝতে পারল ততক্ষণে লালীদের সকালের বনভোজন সারা। দৈববাণীর মত অপর্ণা লে ওঠে, জানিস তো ঠাকুর - দেখতে পায় টুলি সঙ্গে সঙ্গে লে ওঠে, “ এতক্ষন বলিসনি তো! “

টুম্পা ,সুপর্ণা, জয়ন্তী বাসন্তী কাঠকুটো, নারকেল পাতা সংগ্রহ করতে লাগল। অপর্ণা, শিউলি, টুলিরা রান্নার ব্যবস্থা করতে লাগলো। টুলির মনটা খুব খারাপ ফ্রী সিঙ্গাড়াগুলির জন্য। তবে এবার সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। পুকুর ঘাট থেকে সব কিছু ধুয়ে আনার পর খিচুড়ি বসানো হয়ে গেছে, ডিম সেদ্ধ করে ভাজা হচ্ছে সব্জি কাটা চলছে। টুলির কথা মত টুম্পা রেডিও নিয়ে এল টুলিদের বাড়ি থেকে। রান্না করতে করতে শনিবারের বারবেলাশুনবে। চারিদেকে চালতে গাছ, খেজুর গাছ, আঁশফল গাছ, কুল, আম, বেল, বেত আরও কত গাছ। শনিবার দুপুরের বেতার নাটক  সাহেব শুনতে শুনতে ভাজা ডিম গুলো একপাশে রেখে দিল টুলি। খেলা পাগল সাহেবেরজন্য সবার চোখে জল। খিচুড়ি, পাঁপড় ভাজা হয়ে গেছে। চাটনি হয়ে গেলেই ডিমের ঝোল করা হবে। এখন বিজ্ঞাপনের চলছে সারা অঙ্গে মেখে নিন, সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, বোরোলিন... ’, সবাই কলাপাতা ধুয়ে,হাত ধুয়ে বসে পড়ল। ডিমের ঝোল হলেই খেতে বসবে। আলু দিয়ে ঝোল হয়ে গেছে, ডিম দেওয়া হবে। টুলি ডিমগুলো খুঁজে পাচ্ছে না। খুঁজে খুঁজে একটা ডিম পাওয়া গেল ঝোপের একটু ভিতরে। বাকিটা দিয়ে একটু দূরে লালীরা দুপুরের বনভোজন সারছিল মহা আনন্দে।

সাহেব হাসপাতালে, বাড়িতে বোনের বিয়ে...কিডনি বিক্রী করে বাবাকে বোনের বিয়ের জন্য টাকার ব্যবস্থা... সবার মনেই কষ্ট।  এইদিকে ডিম ছাড়া আলুর ঝাল, খিচুড়ি, চাটনি পাঁপড় সহ দুপুরের বনভোজন সারছে অপর্ণা, শিউলি, টুলিরা অন্যদিকে লালীরাও বনভোজনের আনন্দে। হঠাৎ অপর্ণার দৈববাণী বলেছিলাম না, ঠাকুর - দেখতে পায়। অন্যকে ঠকালে নিজেকেও ঠকতে হয়, বাবা সব সময় বলেন।সবাই হেসে ওঠে

Picture Courtesy -Writer













1 comment:

  1. বাঙ্গালীরা তো আজকাল বাংলায় লেখে না । তাই পড়ে খুবই ভালো লাগল । আরো চাই ।

    ReplyDelete

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান