সুপ্রিয়
সুপ্রিয়। প্রথম চিঠিতে তোমার নামের সাথে মিলিয়ে
আমার এই সম্বোধন তোমায়
মোহিত করেছিল। আজ আবার অনেক অনেক দিন পর তোমাকে চিঠি লিখছি, অদ্ভুত!
এ বয়সে সেই
চাপা আবেগ, উত্তেজনা
অনুভূতিতে অনুভূত! ভয়ে ভয়ে লুকিয়ে লেখা আবার তোমার
চিঠি, কোথায়
যে রাখি, কতবার
যে পড়ি। যাকগে, যে
কথা বলার জন্য এ চিঠির অবতারণা-অত অস্বস্তিতে পড়ে গেলে কেন? কাল? জেনেছিলাম
তুমি বিদেশে কিন্তু এটা জানা ছিল না, জানার কথাও না অবশ্য যে স্বদেশ প্রীতি তোমাকে দেশে
ফিরিয়ে এনেছে। আমি কিন্তু তোমাকে দেখেই চিনেছিলাম তাই মুখোমুখি হওয়ার
জন্য মানসিক প্রস্তুতি তৈরী ছিল, ভাগ্যিস, না হলে- কি হতো গো নাহলে!!
|
কফি হাউসে প্রথম যেদিন গেলাম, অবাক
হয়ে তোমাদের দেখছিলাম। এটা তোমাদের বৈঠকখানা নাকি!! ক্রমশঃ ভিরে গেলাম আমিও। মনে আছে, আমরা
নবনীতা দেবসেনের সাথে যখন তারাপদ রায়ের আলাপ তখন কফি হাউসের টেবিলে বসা নবনীতার
দুই হাতে চিনি, দ্রুত
সেই অবস্থাতেই
প্রতি নমস্কার এটা জানার পর নতুন কেউ এলে আমরা বলতাম "দাঁড়াও, আগে
হাতে চিনি
নিয়ে নি "। বেশিরভাগেরই গল্পটা অজানা ছিল, তারা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতো, আমরা সমস্বরে
বলে উঠতাম "মিষ্টি মধুর সম্পর্কের জয় হোক্ "-কি
পাগলামি! অনেকে না বুঝে রেগেও যেতো।
ল্যুভর মিউজিয়ামের মোনালিসার সহাস্য মুখের
রহস্য ভেদ করবো, অবশ্যই
আমাদের মতো করে। পিসা যতটা হেলেছে, আমরাও একে অপরের গায়ে
একসাথে হেলে পড়বো,ততটাই।
লিবার্টির নীচে দাঁড়িয়ে দুইজনের একত্রিত হাত উঁচু করে
বলবো "প্রেমের মৃত্যু নেই ", আরো কত শত আবোল তাবোল কথা-কিভাবে
যে সময়টা কেটে যেতো!
ট্রাম আমার পছন্দের যান, দুপুরবেলা
ট্রামে ট্রামে অকারণে, নাঃ, অকারণে
তো নয়, সঙ্গ
পাওয়ার আকুতি তার বুঝি কোনো মূল্য নেই!! অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে, তুমি ছাতা
খুলতে দেবে না, বায়না-ঘোমটা
দাও। যাঃ। শেষে দিতেই হলো, আসলে
ইচ্ছা তো আমারো ছিল।
এভাবেই কত ইচ্ছা যে রোজ তৈরি হতো,দুজনে ভাগ করে নিতাম, বলো নিতে তো?? যখন শুনলাম তোমার বিদেশ-পাড়ি-র খবর, দিন-রাত
চোখের জলে আমার সাথে আমার বালিশটাও ভিজে ভিজে সেইসময় বড়ো আশ্রয় হয়ে গেছিল। মরে যেতে ইচ্ছে
হতো, ভাগ্যিস
সে কর্মটি করিনি।
আমার ভালোবাসা তো অটুট, তোমারটা
ভেঙ্গে ফেলেছো। পারোনি রক্ষা করতে, অনেক বৃহত্তর উদ্দেশ্য-কর্মজীবনের উন্নতি সাধন দেয়নি ভালোবাসার মূল্য। এতো
বাস্তব চাহিদা,আর, কে না
জানে যে, চোখের
আড়াল হলে মনের আড়াল তাই সময়ের সাথে সাথে আমি সরে গিয়েছিলাম।
দুঃখ এটাই, বলে
গেলে না কেন? কিছুদিন
ধরে তোমাকে আনমনা,ব্যস্ত দেখেছিলাম।
জিজ্ঞাসা করে দাওনি সঠিক উত্তর, সময় দিয়েও আসতে পারতে না নাকি ইচ্ছে করেই
আসতে না, জানি
না। অভিমান হতো, কথা
বলতাম না তাতেও তোমাকে বিচলিত দেখিনি। ঈশান কোণের মেঘের সাথে পরিচিতি ছিল না যে-নিজেই
নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম।
কত বছর পর!! এ বয়সে অতীত বড় টানে, টুকরো
টুকরো ছবিগুলো আপনি আসছে মনে। বন্ধ দুয়ার খোলা পেয়ে-মনে
হচ্ছে চারপাশে অনেক ছবি উড়ছে, উপরে-নীচে, চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে-লাইনের উপর ব্যালান্সের চেষ্টায় এক পা, এক
পা করে লম্বা ছেলেটা
যাচ্ছে, যাচ্ছে
যাঃ ধপাস। হাসির শব্দে কপট রাগে "বাঃ, আমার লাগলো আর হাসতো"! "দরকার
কি অত বাহাদুরির"! সত্যি,কত না অদ্ভুত আব্দার, "সবাই যা করে তুমিও তাই করবে! তুমি
খোঁপায় লাল জবা লাগাবে"। বিষম খাওয়ার জোগাড় হাসতে হাসতে, " এত
হাসির কি আছে, জবা
কি ফুল নয়"! " শেষে জবা "!! কি যেন, কি যেন সিনেমাটা, মনে পড়ছে না, সেখানে...... যাইহোক লাগাইনি, কোনও ফুলই লাগাইনি লাবণ্য, আমাদের
বান্ধবীর বিয়েতে। বাবু
এদিকে ধুতি-পাঞ্জাবি পরেছেন, বাসরে ধুতি লুঙ্গি-সমান। নতুন জামাই সঙ্গী পেয়ে মহাখুশি।
কত স্মৃতি-
না, এ
চিঠি তোমাকে পাঠাবো না। লিখলাম বটে তবে ছিঁড়ে ফেলবো। তুমি
-তুমি??
-আর
নেই।
-মানে?? আর
লেখা নেই?
-নাঃ।
হয়তো কোন কারণে উঠতে হয়েছিল লেখা বন্ধ করে, শেষ করে যেতে পারেন নি।
-ইসস্।
ভদ্রলোকটির যে কে-
-তোঃ, বুড়োকে
খুঁজতে বেরোতি? আছে
কি নেই, এ
চিঠিতে কোন তারিখও নেই, কবে লেখা,কবে
দেখা-আসলে
কি মনে হয় জানিস, এটা
দিদুন তার অতীতকে উদ্দেশ্য করে লিখছিলেন,ওনাকে নয়। যা চলে গেছে, যেখানে
ফেরা যায়না ; দ্যাখ্
তাই হয়তো নেই নাম, ঠিকানা,তারিখ.....
-তবে
আমার মনে হচ্ছে ভদ্রলোকের নাম সুপ্রিয়।
-হতেই
পারে।
-মাঝপথে
থামা, আরো
কিছু লেখা....
-হয়তো
মাঝপথেই সব শেষ হয়ে গেছিল,এটা
তার-ই আভাস।
-কোথায়
পেলি?
-একটা
পুরোনো স্যুটকেস মা কাল পেয়ে বাবাকে দেখাচ্ছিল, আমি আসার পর আমাকেও দেখালো
তো বললাম থাক্ এটা আমার কাছে।
-কেন?
একটু হেসে উঠে জানালার কাছে
দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো "কেন!!
অশ্রুসিক্ত চোখদুটো লুকাতেই
যে ও উঠে গেল, বোঝে
নীল।
-ঋজু
যদি আর কারে ভালোবাস
যদি আর ফিরে নাহি আসে
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন
পাও
আমি যত দুঃখ পাই গো-দিদুন
পেরেছেন, তাঁর
প্রেমকে অক্ষত রাখতে পেরেছিলেন, বাঁচিয়ে রাখলেন রবি ঠাকুরকে ও। পারবো, আমিও
পারবো বল্ নীল
-পারবি
তো, পারতেই
হবে যে
-মৃত-সঞ্জীবনী।
পেয়ে গেছি আমি-আমার
পরান যাহা চায়......
-কুউউ, কুউউ
-আরে
গুরু তুমি! এসে গেছো!! জিও
বসন্তকাল জিও
একমুখ হাসি নিয়ে বুকের
মাঝে বন্দি যে তাকে সন্তর্পণে আগলে ঘুরে দাঁড়ায় ঋজু।
|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post