অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, July 17, 2018

যখন তখন-ভ্রমণ-কালাপানির দেশ আন্দামান (পর্ব- ১)-তৃপ্তি মিত্র


কালাপানির দেশ আন্দামান (পর্ব- ১)

তৃপ্তি মিত্র 

সংখ্যা -২২, (১৮ ই জুলাই ,২০১৮)





ভ্রমণতৃষ্ণাতুর মন আবাল্য আমার আছে । ভ্রমণ বলতে পথ চলতে চলতে এক অমুল্য অনুভূতি । যে অনুভূতি এনে দেয় মনের প্রশান্তি  ৷ প্রতিদিনের ছকে বাঁধা জীবন থেকে বেরিয়ে এসে  মুক্তির পথে যাত্রা ৷
যে যাত্রার শুরু আছে শেষ নেই । আন্দামান সম্পর্কে যেটুকু অনুভূতি আমার মনে ধরা দিয়েছে তারই খানিকটা আমার পাঠক বন্ধুদের উপহার দিলাম । ........ 




Indigo বিমানে যেতে যেতে মেঘ কে খুব কাছ থেকে দেখলাম ৷ কত রকমের মেঘ কালো মেঘ , সাদা মেঘ , ধূসর , নীল , আশমানী আর কত অদ্ভুত সুন্দর রঙের মেঘের সমারহ ৷ সেই মেঘ সমুদ্র পেরিয়ে কখন যে চলে এলাম কালাপানির দেশ আন্দামান বুঝতেই পারলাম না ৷ বিমান সেবিকা যখন ঘোষনা করল আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি , দৃষ্টিটা একটু বাইরে নিতেই দেখতে পেলাম দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশি , অজস্র সবুজ দ্বীপের সমাহার ৷ অফুরান উত্তাল সমুদ্র , গভীর বনাঞ্চল , রূপোলি বালুকাবেলা  যা আন্দামান কে করে তুলেছে আরো মোহময়ী ৷
বঙ্গোপসাগরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ৫৭২টি দ্বীপ নিয়ে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত ৷ আন্দামান শব্দের অর্থ হল হিন্দুদের দেবতা হনুমান ৷ আর নিকোবর শব্দের অর্থ হল উলঙ্গদের বাসভুমি ৷ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হল টুইন আইল্যান্ড ৷ এই আইল্যান্ডে ছড়িয়ে আছে বহু ইতিহাস , বিস্ময় ,এবং নানা অভিঙ্গতা ৷ ভু - বিজ্ঞানী থেকে জীব বিজ্ঞানী , ঐতিহাসিক , নৃতত্ববিদ , সাধারণ পর্যটক সবার জন্য রয়েছে কিছু না কিছু রসদ ৷ 
আন্দামানের মোট আয়তন হল ৮২৪৯ বঃ কিমি যার মধ্যে ১৯৬২ বঃ কিমি হল কোষ্টাল লাইন অর্থাৎ পাহাড় , অরন্য আর সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপভুমি ৷ 
আন্দামানে এসে প্রথমদিন  পোর্টব্লেয়ারের আশে পাশের দ্রষ্টব্য স্থানগুলি দেখে নিলাম ৷ প্রথম গেলাম অ্যান্থ্রোপলজিকাল মিউজিয়ম ৷ এরপর পোর্টব্লেয়ারের একমাত্র সমুদ্রতট চিডিয়া টাপু বিচে কিছুক্ষণ কাটিয়ে পোর্টব্লেয়ারের আস্তানায় ফিরে আসলাম ৷ 
সন্ধ্যে বেলায় গেলাম সেলুলার জেল দর্শনের উদ্দেশ্যে ৷ ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বিপ্লবীদের ওপর ব্রিটিশের নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী এই কারাাগার ৷ কারাগারের নকশাটি একটি বৃহৎ তারামাছের মতন সাতটি বাহু বিশিষ্ট ৷ এখন তিনটি অবশিষ্ট ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভুমিকম্পে চারটি বাহু ক্ষতিগ্রস্ত ৷ এখন সে সব অংশে সাস্থকেন্দ্র তৈরি হয়েছে ৷ কারাগারের প্রতিটি বাহু তিনতলা বিশিষ্ট ৷ প্রত্যেক তলায় ৬৯৮ টি ছোট ছোট শেল ৷ মুলত বহু বন্দিকে একসঙ্গে আটক করার জন্য এই কারাগার নির্মান করা হয়েছিলো ৷ মুল কেন্দ্রে আছে একটি নজর মিনার যা প্রতিটি বাহুর সঙ্গে যুক্ত ৷ রাজদ্রোহে অভিযুক্ত বিপ্লবীদের দীপান্তর দন্ড দিয়ে পাঠানো হত এই কারাগারে ৷ 
সেলুলার জেলে সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হল লাইট অ্যান্ড সাউন্ড সো ৷ এটি মুলত ভাষ্যপাঠ , শব্দ এবং আলোর ওপর নির্মিত একটি সো ৷ খোলা আকাশের নিচে কোজাগরী চাঁদের পরশ নিতে নিতে চলে গেলাম অনেকটা পিছনে অর্থাৎ ১৮৯০ ৷ সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কে দিয়ে প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে ১৯০৬ সালে এই কারাগারের নির্মান কাজ শেষ হয় ৷সেই সময় খরচ হয়েছিলো  ৫,২৭,৩৫২ টাকা ৷  রাজদ্রোহে অভিযুক্ত বিপ্লবীদের দীপান্তর দন্ড দিয়ে পাঠানো হত এই কারাগারে ৷ ভাষ্যকার বলতে লাগলেন সেইসব আত্মবলিদানের মর্মগাথা ৷ এত যাবৎ ইতিহাসের পাতায় পড়েছি বা বিভিন্ন চলচিত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনগাথা অনুধাবন করেছি কিন্তু এই ভাবে সেই ঐতিহাসিক স্থানে বসে সত্য কে জানা এ আমার পরম পাওয়া ৷ 
ভাষ্যকার একে একে বিপ্লবীদের নামগুলি বলতে লাগলেন ৷ উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় , হেমচন্দ্র দাস , বিভুতি সরকার ,বারিন ঘোষ , অনন্ত সিং , অম্বিকা চক্রবর্তী প্রমুখোদের নাম ৷ এবার কানে এলো বুটের খট্খট্ শব্দ আর ব্রিটিসদের আঁধো আঁধো বাংলায় কথোপকথন ৷ গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠল ৷  ব্রিটিসদের নির্মম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে  কত যে বিপ্লবী শহিদ হয়েছেন , ভাষ্যকারের কাছে সে কাহিনী শুনতে শুনতে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল ৷
বিনায়ক দমোদর সাভাকারের কক্ষের আলো জলে উঠলো ৷ তার ই ঠিক নীচে তিনটি কক্ষ আলাদা রাখা ৷ এখানে রাখা হত ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত আসামীদের ৷ এরই পাশে ফাঁসির ঘর যেখানে একসঙ্গে তিনজন কে ফাঁসি দেওয়া হত ৷ ফাঁসি দেবার সময় নজর মিনারে বেজে উঠতো বিশাল এক ঘন্টি , যা বহু দূরের মানুষকে সতর্ক করে দিত ৷ রাজদ্রোহিতা করা অপরাধ , এবং তার শাস্তি মৃত্যু ৷ 
অনুভব করার চেষ্টা করতে লাগলাম বিপ্লবীদের আত্মবলিদানের মর্মগাথা ৷ কখন যে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল বুঝতে পারলাম না ৷ সব শেষে " বন্দে মা তরম " ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল কারাগার প্রাঙ্গন ৷ জ্বলে উঠল সমস্ত কক্ষের আলো ৷ তখন মনটা প্রশান্তিতে ভরে উঠল ৷ 
                                       — চলবে

ছবিঃ লেখিকা







No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান