অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Monday, July 9, 2018

যখন তখন-ধারাবাহিক -দন্ত্যস্থ (পঞ্চম পর্ব)-স্বরূপ চক্রবর্তী

দন্ত্যস্থ


(পঞ্চম পর্ব তথা অন্তিম পর্ব)

স্বরূপ চক্রবর্তী


সংখ্যা,১৯ (৯ ই জুলাই,২০১৮)


(১৩)


রাত প্রায় এগারোটা,  আজ হলধর বাবুর মনটা বড় চঞ্চলসেই ছেলেটি কোথায় যে গেলআহাবেশ পরিবারটিঠিক যেন শিব দুর্গার পরিবারআজ দোকানের কাজের ভিড়ে ওদের আর খোঁজ করা গেলো নাকালকে একবার লোক পাঠিয়ে দেখব 'খন।

যদি ধানাই পানাই আর একবার আসততা হলে জানা যেত।

 আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেনমাঝারি সাইজের ঘরবড়সড় একটি জানালাএকটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলেআর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজাযেটা বাইরের দাওয়াতে খোলেএকটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাটঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ সরঞ্জাম সব সাজানোকিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি।

তাওরা এলোএসে জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগলওদের দেখতে পেয়েই হলধর গিয়ে সদর দরজা খুলে ওদের সাদরে আপ্যায়ন করলেন-

এসো এসো ভায়ারাকোথায় ছিলে তোমরা? তোমাদের মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তোছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেলমা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।

“রোসোরোসোসব বলছি"হাত তুলে হলধর কে থামাল,"এখন আমরা তোমাকে যা বলতে চলেছিতার কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারেকথা দাও"।

“দিলামবললেন হলধর"।

"তুমি জান আজ যাঁরা তোমার দোকানে এসেছিলেন তাঁরা কে?"

"কেনোতোমরাই তো বললে যে ওনারা হেতাল গঞ্জের জমিদার পরিবারআহাকি সুন্দরঠিক যেন শিব ঠাকুরের সংসার"।

একদম ঠিকওঁরা তাঁরই পরিবার"গম্ভীর গলায় বলল নন্দী।

হা হা করে হেসে উঠলেন হলধর, "অর্থাৎ তোমারা ধানাই পানাই নও নন্দী ভৃঙ্গী"।

"একদম ঠিক!” বলল ওরা।

"এই; এটা কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছেএই দেখ, আমি কিন্তু এখনো পুজোয় বসিনি"অবিশ্বাস জলধরের গলায়, “কি, কি  প্রমান আছেদেখি!"

"প্রমান?, হুমমআমরা তোমাকে সশরীরে দর্শন দিতে পারব নাতবে..., ," বলে এদিক ওদিকে দেখে পানাই বলল, " ওই লোহার আলমারিতে একটি লাল শালুতে মোড়া বাক্স আছে ঠিক?, যেটা  হরিপদ সরখেল আজ সন্ধ্যায় তোমার কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে।

হলধর ভাবলেন ঠিকই তোআজ সন্ধ্যায় হরিপদ দারোগা এসেছিলমাঝে মাঝেই আসেএকটু অন্ধকার হলেআড্ডা দেয়চা খায়আর মুখ বাঁধা থলেবা বাক্স বন্দী কিছু গচ্ছিত রেখে যায়বলেথানার দস্তাবেজআপনি মান্যগণ্য মানুষতাই একটু সামলে রাখুনআবার পরে এসে নিয়েও যায়। হরিপদর সামনেই সেগুলি উনি লোহার আলমারী তে তুলে রাখেন আর দারোগা চাইলে ফেরৎ দিয়ে দেনঅন্যের ব্যাপারে উনি বেশি নাক গলান নাকিন্তু এসব তো এদের জানার কথা নয়কিন্তু তবু সন্দেহ তো যায় নাতাই বলেন ,"এতে কি প্রমান হয়না যে তোমরা চোরআড়ি পেতে আমার বৈঠক খানার ব্যাপার স্যাপার দেখেছ?"

"কি! আমরা চোর! যতবড় মুখনয় তত বড় চোপা!" ধমকে ওঠে ভৃঙ্গী।

ওকে শান্ত করে নন্দী বলে, "আচ্ছাআমরা না হয় উঁকি মেরেছিকিন্তু ওই পোঁটলায় কি আছে তা কি তুমি জান?"

"আমি পরের জিনিস বিনা অনুমতিতে ছুঁই না"

"ঠিক আছেআমরা বলছিওতে কোনো সরকারী জিনিস নেইআছে এক গোছা টাকাআর সোনার গয়না।"

হলধর দরজা বন্ধ করে ট্যাঁক থেকে চাবি নিয়ে আলমারি ও বাক্স টি খুলে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। টাকা ও একজোড়া বড় সাইজের ঝুমকো কানের দুল আছে বটে।

"ওই টাকা আর গয়না হল ঘুষের জিনিসআর ওটা ও নিয়েছে বড় সায়েব কে দিয়ে নিজের প্রমোশন নেবার জন্য"।

হলধর বাবুর চোখে অবিশ্বাস দেখে ওর বলল "তবে দেখো,"

ওদের দেখে চোখ উল্টে হলধর মূর্ছা গেলেনকারন আর কিছুই নয়ওরা দুজন জমি থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে ভেসে রয়েছে







(১৪)


চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে হলধরের  জ্ঞান ফেরানো হোল, সব কিছু বোঝানোর পর হলধর কে উড়িয়ে নিয়ে ওরা থানায় পৌঁছে গেল।

থানায় গিয়ে হলধর নাইট ডিউটির হাবিলদার কে দিয়ে দারোগা কে ডেকে পাঠালেন।

 হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ 
কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।

 নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে।

"বলুন স্যার, আপনি এত রাতে! কি ব্যাপার?"

হরিপদ সোজাসুজি লক আপের কাছে গিয়ে বললেন,"সরখেল, ওই ছেলেটিকে এক্ষুনি ছেড়ে দাও, ও নির্দোষ, আর তুমি জান যে ও কে? উনি সাক্ষাৎ শিব পুত্র 'গণেশ'"

সরখেল চোখ গুলি গোল্লা পাকিয়ে হলধরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বলল, " লোকে বলে আমি ঘুষ খাই, কিন্তু অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না, যে, আমি গাঁজা খাই, এত রাতে সময় না নষ্ট করে কাল সকালে একবার আসুন, ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে এখন"।

সরখেল তাকে গাঁজা খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছে দেখে জ্বলে উঠলেন হলধর পাঁজা

"সরখেল!" হুঙ্কার দিলেন হলধর।

"তোমার সমস্ত কালো কারবার আমি জানি, আমার কাছে অকাট্য প্রমান আছে,

ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।
তখন তোমার ট্রান্সফার হবে সুন্দরবনের একেবারে ভেতরে, ওখানে তুমি ঘুষ খাবেনা, বাঘেরা তোমায় চিবিয়ে খাবে।"

সরখেলও হার মানার পাত্র নয়, " ও যদি দেবতা হবে তাহলে দৈব শক্তির সাহায্যে নিজেই বেরিয়ে আসুক।"

"তোমার পাপ চোখে ওঁদের দৈব শক্তি দেখা সম্ভব নয়","তবে...প্রমান চাও

আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"

"আছেই তো, উঁ হুঁ হুঁ, সোজা হয়ে বসতেও পারিনা", সরখেল ডুকরে উঠল।

ওই গরাদ ধরে এদিকে পেছন ফিরে একবার দাঁড়াও তো।"

মজা দেখতে সরখেল তাই করল।

"এইবার। বাবারা, আপনারা আছেন তো? যেমন কথা হয়ে ছিল.."


দুইজোড়া অদৃশ্য পায়ের ভীষণ জোরালো লাথি এসে পড়ল সরখেলের পশ্চাদ দেশে, একটা ভীষণ মট করে শব্দ হল আর সরখেল মুখ থুবড়ে পপাত চ।

হতবাক সরখেল বলল, " কে ? কে?"

"সে কথা ছাড়ো,” হলধর আর হাবিলদার মিলে সরখেল কে টেনে তুললেন।

বল, তোমার, কোমরের ব্যাথা আছে না গেছে?"

অদৃশ্য লাথি খেয়ে আর সদরে ঘুষের রিপোর্ট হবার শাসানিতে কাজ হল, সরখেল তালা খুলে দিয়ে বলল, বাবা গণেশ, আমরা পাপী তাপী মানুষ, মর্ত্যে এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার দয়া করে এদিক পানে আসবেন না, আর আসলেও অমুল্য দাঁতগুলো বাড়ীতেই খুলে রেখে আসবেন, না হলে আমাদের মত গরীবদের বাঁচা দায় হবে।
(১৫)

ভোর হয়ে আসছে, মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া ভেসে আসছে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে।

থানার বাইরে এসে হলধর হাতজোড় করে গণেশ কে বললেন," বাবা, এত দূর যখন এসেছেন, তখন দুটি দিন আমার বাড়িতে অতিথি হয়ে আসুন, আমি আপনার পরিচয় কাউকে দেবোনা।"

স্মিত হেসে গণেশ বলল, " কথা দিচ্ছি, আসছে পয়লা বৈশাখ হাল খাতার দিনে তোমার কাপড়ের দোকানে আমি নিজে এসে তোমার পূজো গ্রহণ করব"।

এই বলে গণেশ, নন্দী-ভৃঙ্গী ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল।

আর গণেশের ইঁদুর? সে এক অন্য গল্প , তোমাদের শোনাবো অন্য কোন সময়।।


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান