অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Sunday, August 26, 2018

যুগলবন্দী ১৩-গল্প -শম্পা সান্যালঃ মুস্তাক আহমেদ


    যুগলবন্দী- সংখ্যা # ১৩ 

কলমেঃ শম্পা সান্যাল
ক্যামেরায়ঃ  মুস্তাক আহমেদ

 ভালোবাসা কারে কয়






ভাইঝির বিয়েতে ব‍্যস্ত বুলবুল দ্রুত নেমে আসছিলো। বরযাত্রীরা সবাই এসে গেছেন, তাদের তদারকির প্রধানা তিনি অত‌এব একবারে ব‍্যতিব‍্যস্ত যাকে বলে আর কি। ধূতি-পাঞ্জাবি পরিহিত উঠে আসছেন দাদার সাথে, ও কে!

-বুলু, ইনি অয়নের মামা। আমার বোন বুলবুল
-নমস্কার।
-নমোওষ্কার! 
বুলবুল দ্রুততার সাথে নেমে যেতে চায়, অবশ দেহ- মন। দাদার সাথে প্রবাল!  শ্রাবণ মাস, বৃষ্টি তো স্বাভাবিক।  বিয়েবাড়ি দ্রুত ফাঁকা হয়ে গেছিল, অন‍্যসময় হলে হয়তো আরো খাণিকক্ষণ পরে সবাই যেতো। বরযাত্রীদের প্রবাল প্রায় তাড়িয়ে বাসে তুললো। না, একটাও বাক‍্য বিনিময় হয়নি বুলার সাথে। বৌভাতের দিন খাওয়ার সময় এসে তদারকি করে গেল। বিয়ে করেছে কিনা জানতে  ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। সুযোগ হয়নি, পেলেও কি বলতে পারতো!
-কেন রে!
-আমরা এসেছি, তোমাকে ডাকতে হবে!
-না রে, ইচ্ছে করেই আসিনি। আমার কপাল তো জানিস! 
-আবার! আবার ঐ কথা!!
-ছাড়তো।
অয়ন প্রণাম করতে উদ্যত হতেই " থাক্, থাক্ বসো তো! ভালো থেকো।
অষ্টমঙ্গলায় এসেছে, দুদিন আবারও হৈচৈ করে কেটে যায়। প্রবালের  কথা কথায় কথায় জানতেও পারে। প্রবাল এখন বিদেশে থাকে। বিদেশী মোহ ওর থেকে বুলাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল আর আজ!


                                   
-বুলা , কাল অয়নের বাড়ির সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছি। কাল ছুটি নিস বুঝলি!
-অয়নের বাড়ির সবাই মানে! এক মা ছাড়া আর কে আছে?
-আরে, অয়নের মামা তো ওদের সব। উনি চলে যাচ্ছেন তাই ওনাকে বললাম আসতে। সাথে অয়নের মা তাকেও বললাম। মিষ্ঠুরা  আসবে, উনি একা বাদ যাবেন কেন, বল্ ?
-কিন্তু আমার এখন ছুটি নেওয়া মুশ্কিল, এতোদিন ছুটি নিয়েছি। আবার যদি বলি! না গো
-দ‍্যাখ্ যা ভালো বুঝিস, আমি আর কি বলবো!
প্রবালরা এসেছিল, না ওকে খারাপ ভাবেনি, তবে দেখাটা আটকাতে পারলো না।  এদিক ওদিক আর কতো করা যায়! স্কুলের পর এক অসুস্থ সহকর্মীকে দেখতে যাবে বলতে বৌদি ফোনটা কেটে দেয়। অবশেষে বাড়িই ফেরে, ফলে সাক্ষাৎ হয়েই যায় আবারও। সৌজন্যে দু- চারটে কথাও হয়। পরে পরে জানে যে বুলার বিগত দিনের কথা ওর অবর্তমানে আলোচিত এবং প্রবাল বিবাহিত। বিদেশী মহিলা আজ ওর গৃহিণী। কোথাও যেন একটা তীক্ষ্ম বেদনা অনুভূত, এক‌ই অনুভূতি কি সেদিন প্রবালের‌ও হয়েছিল! হয়তো কেন, অনেক বেশীই আহত যে সেটাতো  একটু হলেও তো জেনেছিল,  বিবেকে কোথাও আঘাত করেনি সেদিন। নিজ চাওয়া পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেসময়। 


                             ‌       
       ‌    ‌    ‌‌  ‌     ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ মিষ্টুরা হানিমুন সেরে ঘুরে গেছে। আহ্লাদিত মিষ্টুর হাসি দেখে মনে আসে -আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো?
-কিইই! হানিমুন! এখানে! এখানে দিঘা- পুরীও যেতে কত খরচ জানো তুমি? জানবে কি করে, হ্হ‍্যা বংশে কেউ এসেছে যে-হান্নিমুন!

-তখন তো রাগ, দুঃখ অভিমানের পারা একটুতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তো, কথায় কথায় চোখে আসতো জল, ক্রমে জানা হলো, জানা হলো অনেক কিছু। তন্ময়কে ভালো করে জানার তো সময়‌ই পেলো না। অচিন্তিনীয়, ঘুরে প্রবাল এলো !! অহংকার, অবজ্ঞা আত্মগরিমা শিক্ষা দিচ্ছে।  আচমকা ঘুম ভেঙে যায়।  স্ট্রীট লাইটের সৌজন্যে ঘর আলোকিত, নাইট বাল্ব জ্বালাতে হয় না। সোয়া দুটো। বাথরুম ঘুরে এসে জল খেয়ে শুয়ে পড়ে, ঘুম আসে না। মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে নানা স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে। বৃষ্টি হচ্ছে, শার্সি বেয়ে জলের ধারা আঁকিবুঁকি কেটে নেমে যাচ্ছে, তাকিয়ে থাকে সেদিকে। প্রবাল। ভাইঝির বিয়েতে কতোবছর পর দেখা। একরাশ লজ্জা চোখে মুখে নিয়ে ওর সামনে দাঁড়ানো যে কি অস্বস্তিকর! সুন্দরী বলে চিরকাল‌ই ছেলেদের নেক নজরে। বেশ উপভোগ্য ছিল।সুযোগ‌ও নিয়েছে। ইচ্ছেমতো সম্পর্ক ভাঙা-গড়ায় মজা পেয়েছে। তবু তার‌ই মধ্যে প্রবাল যে কি করে দুই-আড়াই বছর টিকে গেছিল! সম্ভ্রান্ত পরিবারের সুসন্তানের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে প্রবালকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল বিদেশে। একটুকুও দুঃখবোধে আক্রান্ত হয়নি। আহ্লাদে সুজয়কে জয় করার বোধে ভেসে গেছিল সেদিন। বছর পাঁচেক বাদে ফিরে এসেছিল নিঃস্ব হয়ে। অনুভব করেছিল পরাজয়ের গ্লানি। মা-বাবা আফসোস করে করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছিলেন। দাদা বৌদির উদ‍্যোগে ওর ওজর আপত্তি তোয়াক্কা না করে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। ইতিমধ্যে রূপের সাথে মেধাও ছিল, তার‌ই সুবাদে বেসরকারী এক স্কুলে চাকরি জুটিয়ে নিয়ে ছিল। তখন‌ই দেখেছিল রূপ বড় বিড়ম্বনা। ডিভোর্সি সুন্দরী মহিলা বড্ড সহজলভ্য অনুমানে কি যে লালসার শিকার হতে হয়েছে, ভাবলে গা রি রি করে আজো। অনেকটা সেকারণেই মুক্তি পেতে দ্বিতীয় বিয়েতে নিমরাজি হয়েছিল। অন‍্যের ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শিক্ষা দিলো আবারও। দু'বছর গড়ালো না, তন্ময় চলে গেল অ‍্যাক্সিডেন্টে, অফিস থেকে ফেরার পথে। শ্বশুরবাড়িতেও থাকা সম্ভব হলো না নানান কটুক্তির কারণে।  খুব যে বিশাল অভাব তন্ময়ের জন্য, না হয়নি। আসলে তন্ময়‌ও ডিভোর্সি, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হতে সময় নিচ্ছিল আর গড়ে ওঠার মুখেই যবনিকা টেনে দিলেন ঈশ্বর। চেষ্টা করেছিল শ্বশুরবাড়িতে থাকতে। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে ছেড়ে এলো আবারো রিক্ত হাতে।

           ‌‌‌          ‌‌‌‌‌‌‌            


স্বপ্নে কি দেখছিল!   শার্সির গায়ে জলের ধারায় কে   লিখছিল??  কে ছিল!  লেখাটা কি ছিল, মনে পড়ছে না। অনিন্দ্য, বিভাস! না, না তবে কি সুজয়! মনে আসছে না। অনেকগুলো মুখ ভেঙ্গে চুরে মিলেমিশে এক হয়ে যাচ্ছে। খুব ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে, সবাই এগিয়ে এসে পড়ছে জানলাটার উপরে, আরে ভেঙ্গে যাবে তো! এই তোমরা কে? সবাই মিলে ওরকম করছো কেন?  আজো বর্ষা-ঘন রাত। আর ওর জীবনের সাথে বৃষ্টির অদ্ভুত একটা সম্পর্ক আছে, কেন কে জানে ! স্বপ্নটা ভেঙে যায়, হাত-পা অসাড়, গলা শুকিয়ে গেছে। স্বপ্ন ছিল!  আস্তে আস্তে উঠে জল খায়, শুয়েও পড়ে আবার, আবারও নানা কথা, নানা স্মৃতি-ঘুমিয়েও পড়ে একসময়। বৌদির ডাকে লাফ দিয়ে ওঠে___ওরে বাবা, পৌনে আটটা! ডাকোনি কেন?
-আমি তো ঠাকুরঘর থেকে নেমে দেখলাম। শরীর ঠিক আছে তো?
-হ‍্যা,হ‍্যা আমি তৈরি হচ্ছি। তুমি যাও, আমি যাচ্ছি।
-শোন্, আজ আর স্কুলে যাসনা।
-কেন!
-দরকার আছে। তুই মুখ ধুয়ে নীচে আয় বলে বৌদি বেরিয়ে যায়। একটু বিরক্ত‌ই হয় বুলা। এদের বোঝানোই মুশ্কিল, কথায় কথায়-মনেমনে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে নীচে নামতেই দেখে টেবিলে দাদা বৌদি বসা।
-আয়, আজ লেট যে!
-ঐ, আজকাল ঘুমটা ভালো হয়না রে, যাকগে বৌদি কি বলছিল!
-হ‍্যাঁ, আমি বলছি। ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাদা বলে-একটা বাজে খবর আছে। ধড়াস করে ওঠে বুকটা। ক্বি, কি হয়েছে,কার কি হয়েছে!!
-অয়নের মামা মারা গেছেন। এতো বাজে........
মিষ্ঠুদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী, সবাই মিলে আনন্দ করার মাঝে অয়ন চ‍্যাঁচায়, হাতে ধরা ট‍্যাবের দিকে তাকিয়ে হাসছে, মাথা নাড়ছে- প্রবাল। ভিডিও কল করেছে। সবাই তো হুমড়ি খেয়ে যে যার ইচ্ছেমতো দেখছে, কথা বলছে। বুলার‌ও খুব ইচ্ছে, না প্রবালের প্রতি না, আগ্ৰহ ওর বিদেশি স্ত্রীকে দেখার। জানা হয়ে গেছে তিনি খুব ভালো। দুটো ছেলে ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি। মিষ্ঠু বাবা মাকে দেখাতে নিয়ে এলো ট‍্যাবটা। সৌজন্য আদান-প্রদান হলো, -মিষ্ঠু, তোমার পিসি আসেনি?
-হ‍্যাঁ, হ‍্যাঁ এই তো ! সঙ্কুচিত বুলা বাধ‍্য হয় তাকাতে। পাশে স্ত্রী, বাধ‍্য হয় হাতজোড় করে সৌজন্য প্রদানে।ট‍্যাব দ্রুত চলে যায় অন‍্যদিকে। শুনতে পায় সমস্বরে সবাই আদরের শাসন করছে, কিনা_আবার কবে আসবের উত্তরে মজা করে বলেছে " বলতে পারছি না, তবে বলে রেখেছি মরলে আমাকে যেন দেশে পাঠানো হয়......"-স্বাভাবিক। এসব কথার প্রত‍্যুত্তর যেমন হয় সবাই তার তার মতো রিয়াক্ট করছে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে যে-




                    ‌    ‌        
প্রবাল শায়িত।  ওর স্ত্রী আর ছোট ছেলে এসেছে। আজ আর কাছথেকে প্রবালের বৌ- বাচ্চা দেখার আগ্ৰহ নেই, কান্নাকাটির মাঝে স্তব্ধ হয়ে  একদৃষ্টিতে প্রবালের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে বুলা। আজ নিজে থেকেই এসেছে। বৃষ্টি ঝরা রাতে জানলার কাঁচে জড়ো হয়েছিল যারা তাদের মধ্যে ও কি ছিল! জলের দাগ শুকিয়ে গেছে। ক্ষতবিক্ষত মন নিয়ে থেকে যায় বুলবুল। 
"আমি কি বিষকন‍্যা" !
 বর্ষা এলে বুলার  অসুস্থতা বাড়ে। জানলার পাশে বসে থাকে একভাবে। মানসিক যন্ত্রণা থেকে আজ মানসিক রোগীতে পরিণত বুলবুল কি যে দেখে ! জলে লেখা খোঁজে, খোঁজে ওর ভালোবাসাকে। চোখের জলে স্নাত বুলবুল  সজল কালো মেঘে চেনে ভালোবাসাকে। 



                                                                                                               অলঙ্করণঃ ফিরোজ আখতার, স্বরূপ চক্রবর্তী




















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান