পাঁচটা চল্লিশের লেডিস স্পেশাল টা না পেলে বড় দেরী হয়ে যাবে অন্তরার ক্যানিং পৌঁছাতে পৌঁছাতে। একটা নতুন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যোগাযোগ হয়েছে গড়িয়াতে। খবরের কাগজ দেখে, তাই সব কাগজ পত্র জমা দিতে গিয়ে হোস্টেলে ফিরতে দেরী হয়ে গেলেই গেট বন্ধ হয়ে যাবে রাত সাতটার মধ্যে। এসময়ের লেডিস স্পেশালটা তে অনেকদিন পর-তা প্রায় এক যুগ হবে , পা দিল অন্তরা কিন্তু একটা সময় লেডিস স্পেশাল ছিল না, ছিল জেনারেল ট্রেন যার মাত্র চারটে কামরা ছিল শুধু মহিলাদের জন্য। কিন্তু সে সময় একসঙ্গে দলবেঁধে কলেজ থেকে ফেরার আলাদাই আনন্দ ছিল। ট্রেনে হকার দের থেকে কম দামে টিপের পাতা, কানের দুল, ক্লীপ কেনা কাটা তো ছিল অন্যতম অানন্দ। তারপর এই বারো বছরে নদী দিয়ে জল বহুদূর বয়ে গেছে। জীবন তাকে কত শত পরীক্ষা নিয়েছে তা সেই জানে! এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই ট্রেনটা চলে আসলো যাদবপুর স্টেশনে। কোন রকমে টেনে হিঁচড়ে নিজেকে ট্রেনের ভিতরে নিয়ে গেল সে। দুটো স্টেশন পর নেলপলিশের একজন মহিলা হকার। পাশ থেকে তাকে দেখে কেমন যেন চেনা চেনা লাগলো অন্তরার। হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে নেলপলিশ বিক্রির উদ্দেশ্যে অন্তরার দিকে ফিরতেই মহিলাটির মুখ কেমন যেন বিবর্ণ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সাথে সাথেই সে অন্য কামরায় চলে গেল।
সেদিন হোস্টেলে ফেরা অবধি অন্তরা তার সমস্ত পুরোন স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে লাগলো। কিছুতেই মনের ভিতর একটা খচ্ খচ্ ভাবটা কাটাতে পারলো না। অন্তরার অন্যমনস্কতা নজরে পড়লো বিহুর। বিহু বার বার জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কি এমন ঘটনা ঘটেছে যে অন্তরা রাতে ঘুমাতে পারছেনা ! অন্তরা সেদিন কোন উত্তর দিতে চায় নি। শুধু স্মৃতি হাতড়ে চলেছিল সে।
দিন সাতেক বাদে ঐ স্কুল থেকে তাকে ডেকে পাঠায় তার সিভি দেখে। অন্তরার সকাল থেকে নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না।বিকেলের দিকটায় কিছু সময় বেরা করা যায়। আজও সে ছুটতে ছুটতে লেডিজ স্পেশালটা ধরতে পেল। সেই তিনটে স্টেশনের পর শুরু হলো হকারদের আনাগোনা। এলেন সেদিনকার সেই নেলপলিশ বিক্রয়কারী বিবাহিতা হকার মহিলা। আজ প্রথমেই তার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল অন্তরার। সেই মুহূর্তে অন্তরাই এক গাল হাসি নিয়ে ডেকে বলল কেমন আছিস ওলি? ওলি? ওলি?
ততক্ষণে ম্যাডাম ওলি রওনা দিয়েছেন অনেক দূরে ,অন্য কামরায়।
অলি কে মনে পড়ে গেল অন্তরার ! ক্লাস নাইনে ভালোবেসে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল ওলি। তারপর আর দেখা হয়নি ।এই ওলির সাথে আগের ওলির কোন মিল নেই। আজ যাকে দেখেছে তার ভিতরে রয়েছে সৎ পথে বেঁচে থাকার লড়াই এ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আত্মবিশ্বাসী এক নারী কে , যে তাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগাবে ! নদীদের যে থামতে নেই কোন ভাবেই। বহমানতাই জীবনের ধর্ম।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post