একটি প্রেমের গল্প
প্রথম জীবনের ভালবাসা নাকি কখনো ভোলা যায় না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত
স্বপ্নের মত স্মৃতির পাতায় লুকিয়ে থাকে।
মেয়েটি কিশোরী বেলায় একটি ছেলের প্রেমে পড়েছিলো।
ছেলেটি তার থেকে পাক্কা দশ বছরের বড়ো ছিলো। ছেলেটির তখন ভরা
যৌবন।মেয়েটি অবল্য প্রেমের অ আ ক খ তেমন কিছু বোঝেনা। শুধু ভালো লাগে
প্রেমিকের কথা ভাবতে,তার সঙ্গ পেতে। স্কুলে যাতায়াতের পথে চোখাচোখি
এইটুকুতেই খুশি কখনো মেয়েটি। কিন্তু ছেলেটি... এইটুকুতে কি আর মন ভরে
তার।তার তো তখন দামাল পনা প্রেম।ভেসে যেতে ইচ্ছে করে।ডুবে যেতে ইচ্ছে
করে।কুছ পরোয়া নেহি।সে চায় তার প্রেমিকাকে সর্বক্ষণ কাছে কাছে
পেতে।মেয়েটি তাই মাঝে মাঝে স্কুল পালিয়ে সারাদিন দু'জনে একসঙ্গে
কাটায়।কত গল্প, হাতে হাত, চোখে চোখ,সময় যেন ঝড়ের গতিতে চলে
যায়।
পৃথিবীর সবকিছু ভুলে দুজন দুজনের কাছে করে আত্মসমর্পণ।
ছেলেটি একদিন বললো,কাল কিন্তু আমাদের দেখা
করতেই হবে, বিশেষ প্রয়োজন।
মেয়েটি বলল, কি এমন বিশেষ প্রয়োজন শুনি তো।
ছেলেটি বলল,আগে থেকে বলা যাবে না,এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ।
মেয়েটির তো
সেই টেনশন। সারারাত দুচোখ এক করতে পারে না।কখন ভোরের আলো ফুটবে।কখন আসবে সেই ক্ষণ।
মেয়েটি সেদিনও স্কুল গেলোনা। ছেলেটি এলে দু'জনে শহর থেকে একটু দূরে
একটু
নিরিবিলিতে, একটু একান্তে দুজন দুজনার কাছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে ছেলেটি রাংতা মোড়ানো উপহার তার প্রেয়সীর হাতে তুলে
দিলো। মেয়েটি তো অবাক, প্রেমিকের কানে কানে
ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস
করলো,আজ কি বিশেষ দিন গো প্রিয়? উপহার দিলে আমায়।
ছেলেটিও তার প্রেয়সীর কানের কাছে মুখটি নিয়ে ফিসফিস করে বলল-
তোমার শুভ জন্মদিন প্রিয়ে।
মেয়েটি আবেগে আপ্লুত হয়ে
তার প্রেমিককে দুবাহুতে নিজের
অজান্তেই জড়িয়ে ধরলো।আর বলতে লাগল, আমাকে এর আগে কখনো কেউ
এভাবে
জন্মদিন জানায়নি। মেয়েদের আবার জন্মদিন হয় নাকি ?
ধুর পাগলি বলে ছেলেটা ও তার
প্রেয়সীকে বলিষ্ঠ দুবাহু বন্ধনে
ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ধীরে ধীরে ভালোবাসার প্রথম চুম্বন এঁকে দিলো।সেকি তৃপ্তি
ভালোবাসার প্রথম স্পর্শে অনুভব।
মেয়েটি লজ্জায় অবনত মুখে
তার প্রেমিকের বুকে মুখ গুঁজে
থাকলো বহুক্ষণ। ছেলেটি হঠাৎ নিরবতা ভঙ্গ করে বলে উঠলো,আরে আমার দেওয়া
উপহার গুলো তো খুলে দেখো লক্ষ্মীটি। মেয়েটি লজ্জা অবনত মুখে আস্তে আস্তে
রাংতা মোড়ানো স্বযত্নে সাজানো উপহার খুলে দেখতে লাগলো,একখানা বই,
তাঁর উপর লেখা " শেষের কবিতা " রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।আর একটি বড়ো
চকলেট এবং
একটি রক্ত গোলাপ। আর ঠোঁটে আঁকা ভালোবাসার মানুষটির উষ্ণ চুম্বন।তার
ভালোবাসার সঞ্চয়।আজও স্মৃতির পাতায় টাটকা জীবন্ত।
গোলাপ আজ শুকিয়ে গেছে, শেষের কবিতার পাতা লালচে
হয়ে গেছে।
কিন্তু স্মৃতি ? হৃদয়ের এককোনে দগদগে ঘায়ের মতো বড়ো ব্যথা দেয়।কোন
ওষুধেই তাকে সারানো যায় না। যেদিন এ দেহ চিতার আগুনে পুড়ে ছাই হবে
সেদিনই হবে সব ব্যথার অবসান। শেষের কবিতার লাবন্য-অমিতের মতোই তাদের
জীবনও দুদিকে গেছে বেঁকে। হয়তো, মিলনে ব্যক্তিগত চাওয়া
পাওয়ায় তাদের
বিরহের ব্যথাটুকু হারিয়ে যেতো ঠিকই। কিন্তু ভালোবাসাকে এভাবে জীবনের
শেষদিন পর্যন্ত অনুভব কি হতো ? শেষের কবিতার উপহারের
তাৎপর্য তাদের
জীবনের মানেটাকে এভাবে বুঝিয়ে দিতোনা।
প্রেমের সার্থকতা মিলনেই
শুধু নয়। অনেক বেশি মনে হয় বিরহ
যন্ত্রনায়।
তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাষায় প্রকাশ-বিরহ মধুর লাগে আজি মধু
রাতে।
জীবনের এই শেষ বেলায় এসেও তাঁর কথা মনে আসে বারে বারে,
ভালোবাসা দিয়েছিলে অকাতরে,গন্ডুষ ভরে । কৃপণতার ছিলোনা
কোনো অবকাশ।
মৃত্যু কালেও তাই ভালোবাসার হোক জয়গান।তুমি শুধু মিতা, তুমি শুধু
ভালবাসার অবদান।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post