পুজো আসছে
বোধন
তারমানে দুগ্গাপুজো আর এসে গেছে । পাড়ার মোড়ে এই বাজির দোকানটা তো দুগ্গাপুজোর
সময়েই হয় । গেলোবারেও হয়েছিল , মনে আছে মাদলের । পুজো মানেই তো অনেক আলো,বাজনা,রাস্তায় মানুষের ভিড় আর রেলের মাঠে বড়ো মেলা
। আর মেলা হলেই মাঠময় নোংরা কাগজের ছড়াছড়ি ।
এই ছেলে এই দোকানের সামনে ঘুরঘুর করছিস্ কেন রে ? চুরির মতলব আছে ? চল্ ফোট্ এখান থেকে .....
ছেঁড়া বস্তাটা কাঁধে তুলে হাঁটতে থাকে আটবছরের মাদল । পুজোর ক'দিন মেলার মাঠে এত্তোএত্তো কাগজ কুড়াবে
সারাদিন , কটা বেশি টাকা
আসবে হাতে ।
"পুজো আসছে" খুশিতে চকচক করছে মাদলের চোখদুটো ।
পূজন
পিঠে ছপাৎ করে কঞ্চির ঘা পড়তেই লাফিয়ে ওঠে পঞ্চু ।
তখন থেকে চুলবুল চুলবুল করেই চলেছিস্ , তোদের নড়নচড়ন দেখার জন্য বাবুরা টাকা দে নে
যাবেন নিকি তোদের ? পুজোর সিজিনেই
সারা বছরের টাকাটা ঘরে ওঠে জানিস না । আর নড়ছিস্ তো পাছায় লাথি মেরে বের করে দেব
। খাবি রাস্তায় ভিক্ষা করে ।
মতিদার বকুনি খেয়ে চোখের জল মুছে দাঁড়িয়ে পড়ে পঞ্চু । পাশাপাশি দাঁড়িয়ে
বিনোদ-রসিদ-ভোম্বল-খোকনরা....
"পুজো আসছে" .....
প্রত্যেকবারের মতো পঞ্চু-বিনোদ-রসিদ-ভোম্বল-খোকন জীবন্ত স্ট্যাচু সাজবে ।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা রঙ মেখে দাঁড়িয়ে মানুষের মনোরঞ্জনের জন্য ।
বিসর্জন
অনেকদিন পর আজ রোদ উঠেছে । প্ল্যাটফর্মের শেষপ্রান্তের পলিথিনের তাঁবুর ভিতর
থেকে বেরিয়ে আসে ন্যাপলা । পিছনের ধানক্ষেতগুলোকে নদী মনে হচ্ছে । উই দূরে উইখানে
তাদের ঘর ছেলো , কদিন আগে সব
ভেসি গেচে বানের জলে । বাপ উদের দুভাইকে কোলে নিয়ে ইস্টিশেনে রেখে মা আর বুনটাকে
আনতে গেচিলো । ততক্ষণে জলের টানে ভেসি গেছে মা আর বুনটা ।
ইলাস্টিক কাটা প্যান্টটা কোমরে টেনে তুলতে তুলতে ছুটে আসে শঙ্কর ।
জানিস্ দাদা ইস্টিশেনের বাইরে বিশাল প্যাণ্ডেল হচ্চি , দুগ্গাপুজো এসে গেচে । সবাই বলছে পুজোর
চাদ্দিন ওখানে কাঙালী ভোজন হবে । পাত পেড়ি খেতি দেবে সবাইকে । আমাদেরকেও খেতি দেবে
তো রে দাদা ?
কতদিন পেট ভরি
ভাত খাইনি !!
"পুজো আসছে"....
মা-বোন-ঘর হারিয়েও পেট ভরে ভাত খেতে পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর পাঁচ বছরের শঙ্কর
........
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post