অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, October 9, 2018

ভ্রমন-সান্ত্বনা দাস


 মর্ত্যের দেবভূমি বদ্রীনারায়নের পথে 

বদ্রীনাথ ধাম



      ঈশ্বর আর কতদূর, আর কতদূরে গেলে তোমায় দেখতে পাব? ক্লান্ত পথিক ভয় বিস্ময়ে ডুকরে ওঠে মনে মনে। "এই তো আর একটু, আর একটু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে নদী পেরিয়ে গহন বরফ রাজ্যের ভেতর দিয়ে আয় "।এই কি ঈশ্বরের ভাষা না এগিয়ে যাবার অমোঘ টান! জানি ভয় পেলে যাত্রা কঠিন হবে। অলকানন্দার পাশ দিয়ে সঙ্গম ছুঁয়ে আমাদের যাওয়ার কথা। অদম্য ইচ্ছা আর সাহস নিয়ে শুরু হল পথ চলা। 
      আমাদের ছ'জনের দল। চক্রবর্তীদা, ভট্টাচার্যদা তাঁর স্ত্রী,সেন বৌদি আর দাসবাবু আর আমি। ২০১৫ তে ২০ শে মে আমরা ক'জন যাত্রা করলাম হিমালয়ের উদ্দেশ্যে। পিছনে পড়ে রইল পরিচিতজনদের বিস্মিত চাউনি আর প্রিয়জনদের উদ্বেগ। বেশী দূরের কথা নয়, ঘটে গেছে সেই দুর্যোগ কেদারনাথ আর এই সমস্ত পাহাড়ী অঞ্চলে। ভেসে গিয়েছিল কেদারনাথের জনপদ। ভেঙ্গে পড়েছিল পাহাড়। বদ্রীনাথের পাহাড়, জনপদ রাস্তাঘাট হয়েছিল পাব্লিত আর বিপদসঙ্কুল।
    বুধবার ট্রেন ছিল ১ টা ১০এ। রওনা দিলাম হাওড়া থেকে হরিদ্বারের দিকে। লক্ষ্য বদ্রীনারায়ন হয়ে গঙ্গোত্রী ইত্যাদি।


     এক রাত দু'দিন কাটিয়ে পৌঁছলাম হরিদ্বার। হরিদ্বার কথাটির দু'টি অর্থ হয়। কৈলাশ হল ভগবান শিবের বাসস্থান। কৈলাশ যাবার প্রথম দ্বার হল হরিদ্বার, অর্থাৎ হর-দ্বার। আবার আর এক অর্থে বদ্রীনারায়নের অর্থাৎ ভগবান বিষ্ণুর বাসস্থান হল উত্তরাখণ্ড ,সেই কারনে হরির বাসস্থানে যাবার এটাই প্রথম পথ। এখানে আমরা হর কি পৌড়ির ঘাটে সেই রাতে প্রিয়জনের মঙ্গল কামনায় প্রদীপ ভাসালাম। মা গঙ্গা এবং অন্য দেব দেবীর মূর্তি দর্শন করলাম। কল্লোলিনী গঙ্গা যেন পরম স্নেহে আমাদের স্পর্শ নিলেন। পথের কষ্ট ভুলে আমরা তৃপ্ত হলাম, স্নিগ্ধ হলাম। ট্রেন যাত্রার অসহ্য গরম আর ক্লান্তি নিমেষে দূর হয়ে গেল। হরিদ্বারে অনেক ঘাট,হর কি পৌড়ি, বিষ্ণুঘাট,রাম‌ঘাট ইত্যাদি। 
হলি ডে হোমে এক রাত কাটিয়ে পরদিন কংখল যাত্রা করলাম। কংখলে আনন্দময়ী মায়ের সুন্দর শ্বেত পাথরের মন্দির আছে। শোনা যায় কংখলেই নাকি রাজা দক্ষ যজ্ঞ করেছিলেন এবং এরই কাছে
সতী দেহত্যাগ করেছিলেন। সেই সন্ধ্যায় আমরা বর্ণময় গঙ্গা আরতি দেখলাম। সংস্কৃত মন্ত্র এবং দীপ নিয়ে গঙ্গাবক্ষে আরতি, সুন্দর দৃশ্য। দীপের আলো আর খেয়াদীপের আলো, দুয়ে মিলে এক অদ্ভূত সুন্দর দ্যুতি নদীবক্ষে দীপ্তিময় হল। ২৩ তারিখ সকালে আমরা যাত্রা করলাম বদ্রীনারায়নের পথে।


        একটা টাটা সুমো আমাদের বাহন আর আশীষ আমাদের ড্রাইভার। 

হরিদ্বার থেকে বাঁধানো সুন্দর পথ,গাড়ী চলল হু হু করে। কথা গল্প আর দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন পেরিয়ে এসেছি অনেকটা পথ। বাঁধানো পথ শেষ হয়ে গেছে ।ওপরে উঠতে শুরু করেছি পাহাড়ের গা বেয়ে। দূর থেকে মনে হচ্ছে পাহাড়ের পর পাহাড় দিয়ে তাসের মত সাজিয়ে রেখেছে কেউ পুরো জায়গাটা। আলো ছায়ায় মায়াবী সে দৃশ্য। ক্যামেরায় বন্দী করলাম সে দৃশ্য যতটুকু পারলাম। আমরা এগিয়ে চলেছি দেবপ্রয়াগের দিকে। শিবালিক হিমালয় থেকে যত নদী নেমে এসেছে, সবকটি একত্রিত হয়ে  মিলিত হয়েছে দেব প্রয়াগে। ঋষি, অলকানন্দা, বিষ্ণু,ভাগীরথী, পিণ্ডার, নন্দাকিনী, মন্দাকিনী, সরস্বতী, শ্যেন, কেদার, গঙ্গা, অসি, বরুণা ও ধৌলী এই কটি নদী একত্রিত হয়ে অলকানন্দা ও মন্দাকিনী নাম নিয়ে দেব  প্রয়াগে মিলিত হয়েছে। কথিত আছে সব দেবতারা এখানে স্নান করেছিলেন।১৯৯৩ সালে যখন প্রথমবার বদ্রীনারায়ন যাই তখন এই পবিত্র জল স্পর্শ করার সৌভাগ্য হয়ে ছিল, এবারে স্পর্শ হল না এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। পাহাড়ের পথ সঙ্কীর্ণ ধূলি ধূসরিত। কোথাও আবার সামান্য পরিস্কার। গাড়ী চলতে লাগল, ক্যামেরাও। এ এক অদ্ভূত অনুভূতি। একেই বুঝি বলে পাহাড়ের টান। 
তখনও ধ্বংসের রূপ চোখে পড়ে নি। পৌঁছে গেলাম রুদ্রপ্রয়াগ। ১৯৯৩ সালে রুদ্রপ্রয়াগকে দেখেছিলাম অন্য রূপে। পাহাড়ী সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে গেলে রুদ্রদেবের মন্দির ,শিবমন্দির উঁচুতে। একটুখানি নীচে দূর্গামন্দির,সেখানে মাতাজী পূজারিনী। কথা বলেন না। ইশারায় আশীর্বাদ দিয়েছিলেন। সামনে পাথরের চাতাল রেলিং দিয়ে ঘেরা। প্রকাণ্ড এক শীলা তীব্র জলস্রোতের মধ্যও স্থির হয়েছিল। সবাই বলে 'নারদশীলা ',দেবর্ষি নারদ এর ওপর বসে তপস্যা করেছিলেন। এত কথা বললাম কারন যাওয়ার সময় না পারলেও আসার সময় রুদ্রপ্রয়াগে নেমেছিলাম এবার ।বিপর্যয়ের সময় জলের তাণ্ডবে ভেসে গেছে নারদশীলা, ভেঙ্গে গেছে রেলিং। রাস্তা ভাঙ্গা। ধ্বংসের রূপ প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম এখানে। দুর্গা মায়ের মন্দিরে বৃদ্ধা পূজারিনীকে মায়ের সেবায় দেখলাম। জিজ্ঞাসা করা হয়নি 'আপনিই ২১ বছর আগের দেখা সেই পূজারিনী নাকি? তাই যদি হয় এই প্রয়াগ যখন  ফুঁসে উঠেছিল কোথায় ছিলেন আপনি? 'প্রসাদ পেলাম। আবার যাত্রা শুরু।


                  চামলী হয়ে আমরা এগিয়ে চললাম যোশীমঠের দিকে। যোশীমঠে বদ্রীনারায়ন ছ'মাস পূজিত হন।পথে পড়ল বড় বড় বোল্ডার আর অজস্র ভাঙা পাথর। পাশে পাশে চলল অলকানন্দা পথ দেখিয়ে। পাহাড়ের আরও ওপরে উঠছি আমরা। একপাশে পাহাড় আর একপাশে বিশাল খাদ। পৌছে গেলাম যোশীমঠে। বৃষ্টি নেমেছে পথে, চারিদিকে নিশ্চুপ অন্ধকার। বিশেষ ছাউনি কোথাও নেই। আমাদের গন্তব্য কালী কমলী রেস্ট হাউস. গাড়ী থেকে নেমে ভিজে গেলাম আমরা। ব্যাগ জামাকাপড় সব ভিজে গেল। রাত ৯ টা বাজে। রেস্ট হাউস জানিয়ে  দিল  book করা থাকলেও এত রাতে ঘর পাওয়া যাবে না। অনেক কষ্টে পাশের হোটেলে ঘর মিলল।আস্বাস্থ্যকর এবং রাত্রি যাপনের অযোগ্য। খাদ্য যা মিলল তা মুখে দেওয়া যায় না। প্রায় অভুক্ত রাত কাটল। সকালে উঠে বরফ ঘেরা ছোট্ট শহর দেখে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। গুরু শঙ্করাচার্যের তৈরী চারটি জ্যোতির্মঠের মধ্যে এটি একটি। সামান্য কিছু খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। মাঝখানে গাড়ী থেকে নেমে আউলিতে একটু সময় কাটালাম। বরফ ঢাকা পাহাড়ের দৃশ্য অতি মনোরম। মাঝে একটুখানি সমতলে আমরা দাঁড়িয়ে। পাহাড়ের অনেক ওপরে হনুমানজীর মন্দির। প্রণাম করলাম। আউলির ফটো তুললাম। আবার যাত্রা শুরু। 

                  এবার বিষ্ণুপ্রয়াগ। বিষ্ণুগঙ্গা আর অলকানন্দার সঙ্গমস্থল। এপার ওপার একটা ঝুলনা। ঝুলনায় পা দিতেই দুলে উঠল। অনেকেই ভয় পেল কিন্ত ফটো উঠল ক্লিক ক্লিক।পথ চলতে চলতে পান্ডুকেশ্বরও পেরিয়ে এলাম। এবার যাত্রা বিশাল বদ্রীনারায়নের দিকে। 
                  পথ সঙ্কটময়। পাহাড়ের গায়ে সরু পথ 
একটা গাড়ী কোন রকমে যেতে পারে কিন্তু চাকাটা খাদের দিকের রাস্তায় একদম লাইন বরাবর যাচ্ছে। ঝুরঝুরে পাথর সব সময়েই খসে পড়ার আশঙ্কা। খাদের নীচে দিকে তাকানো যাচ্ছে না। এদিকে যখন তখন পাহাড়ের মাথা থেকে বড় বড় পাথরের চাঁই গড়িয়ে পড়তে পারে। সরু পথের উল্টোদিক থেকে যখনই গাড়ী আসছে তখনই বিপত্তি। যার চাকাটা এক ইঞ্চি সরে যাবে তার কি হবে তার নমুনা আমরা দেখলাম ।গভীর খাদে একটা গাড়ী উল্টে পড়ে আছে, বোল্ডার পড়ে আরও দু'টো গাড়ী ধ্বংস হয়ে গেছে। অতএব বহু দূর থেকে গাড়ী আসতে দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়া অপেক্ষাকৃত একটু চওড়া জায়গায়, কোন পাহাড়ের বাঁকে ।কোন কোন জায়গায় দু'পাশে বরফ ঢাকা পাহাড়  পায়ের নীচে সরু পথ বরফে মোড়া। বরফ আর বরফ শুধুই বরফ। পরিস্কার আকাশ যখন, সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে রুপালী চূড়ার ওপর। বরফের রাস্তা পার হতে না হতেই আবার প্রলয়ের চিহ্ন। প্রবল বিপর্যয়ের পর ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এই পথ। খসে পড়েছে বড় বড় পাথর। কাল পড়েছে, আজ পড়ছে হয়ত কালও পড়বে। হয়ত নয় পড়বে, এটাই পাহাড়ের প্রকৃতি। এই ধ্বংস অব্যাহত চিরন্তন। গায়ে শিহরন দেয় তবু চোখ বন্ধ করতে ইচ্ছা করে না। মনে হয় এই ছবি ধরে রাখি মনের ফ্রেমে। 
ফটো উঠল মনে, ফটো উঠল ক্যামেরায়। 
                                                   

     এক জায়গায় আমাদের গাড়ীর সামনেই ধ্বস নেমেছে। দাঁড়িয়ে গেল গাড়ীর লাইন। কিছুক্ষন লাগল ধ্বস পরিস্কার হতে, আবার আগের মতো চলল  গাড়ী গুটি গুটি পায়ে। কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে নদীর মতো বরফের স্রোত, আবার কোথাও বিশাল বিশাল বৃক্ষ। অপূর্ব দৃশ্য দেখে চোখ ফেরে না। পাহাড়ের পর পাহাড়, তার ওপরে পাহাড়, পেছনে পাহাড় সামনে দুদিকে পাহাড়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পথ বন্ধ। না পথ আছে ,বিশাল বদ্রীনারায়নের দিকে গেছে ,মর্তের স্বর্গের দিকে। কোথাও কোথাও সূর্য্যের আলো পড়ে রুপোর মতো ঝকঝক করছে পাহাড়।পাহাড় আর পাহাড়, পাহাড় আদি পাহাড় অনন্ত। এদের চূড়া আকাশচুম্বী, নীচে অসীম খাদ যার শেষ দেখা যায় না। যদি জিজ্ঞেস করি "ঈশ্বর তুমি কোথায়? "কান পাতলে হয়তো শুনতে পাব "এই এখানে তোর পাশে, তোর কাছে,তোর নিশ্বাসে, তোর অনুভবে নইলে এই দুর্গম স্থানে তুই এলি কি করে? "


চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছুলাম দেবভূমি বদ্রীনারায়নে ,আশ্রয় মিলল কালীকমলী  রেস্ট হাউস এ। সামনে নীলকণ্ঠ পাহাড়,বরফে ঢাকা সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।সূর্যের আলো পড়ে অপূর্ব তার দ্যুতি।দুপাশে দুই শৃঙ্গ নর ও নারায়ণ, ঘিরে রয়েছে নীলকণ্ঠকে। ২১ বছর আগের দেখা নীলকণ্ঠ আরও একবার আমাদের বিমোহিত করল। বন্ধুদের  জন্য ধরে রাখলাম সেই ছবি, কোথাও সূর্যোদয় কোথাও বা সূর্যাস্ত,কোথাও কলকল পাহাড়ী নদী কোথাও আবার সঙ্গমের স্রোত। বেলা ১২ টা নাগাদ পৌঁছুলাম বদ্রীনারায়ন। মন্দিরের কাছেই ব্রম্ভকুণ্ড, প্রচণ্ড গরম জল। সাধ্যমত স্নান সেরে পূজোর ডালি নিয়ে দাঁড়ালাম পূজো দেওয়ার লাইনে। লাল রঙের মন্দির। বিধ্বংসী বন্যায় কেদারনাথ মন্দিরের যেমন ক্ষতি হয়নি বদ্রীনারায়ন মন্দিরেরও তেমন ক্ষতি হয় নি। ঢুকলাম মন্দিরের গর্ভগৃহে। পরমপ্রাপ্তি। সর্ব আভরণে ভূষিত ঐশ্বর্যময় অপূর্ব নারায়ণ মূর্তি। দেখা যেন শেষ হয় না। মনে আকাঙ্খা হয় আরও দেখি। পূজো দিয়ে মনে মনে প্রার্থনা জানালাম। ফিরে এলাম রেস্ট হাউস এ। বৃষ্টি আরম্ভ হল, পাহাড়ী বৃষ্টি যখন তখন হয় ,সঙ্গে তীব্র শীত। খাওয়া শেষে সবাই কম্বল মুড়ি দিলাম। 
                                

      পরদিন মানাগ্রাম।ভারতবর্ষের হিমালয় পর্বতমালার সীমার শেষ গ্রাম। ২১ বছর আগের বোল্ডারের ওপর দিয়ে হাঁটা নয়, এখন রাস্তা বাঁধানো কিন্ত চড়াই উৎরাই তো আছেই। পথের পাশে পাশে দু'একটি করে দোকান, এগিয়ে চললাম পায়ে পায়ে। সামনে পেলাম সরস্বতী গঙ্গা, সরস্বতী নদীর উৎসস্থল।তীব্র ভয়ঙ্কর উত্তাল জলচ্ছাস পাহাড়ের মাথা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নীচে। অপূর্ব শোভা। পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে বয়ে আসা জল মাথায় মুখে দিলাম,স্পর্শ করলাম সরস্বতী গঙ্গা। এরপর ব্যাস গুহা। অন্ধকার গুহার মধ্যে ব্যাসদেবের মূর্তি। কথিত আছে ব্যাসদেব এখানে বসেই পুঁথি রচনা করেছিলেন। ফিরে এলাম রেস্ট হাউস এ। পরদিন আবার যাত্রা, এবার লক্ষ্য গঙ্গোত্রী। 
                  

       পরদিন সকালে যাত্রা শুরু রুদ্রপ্রয়াগের দিকে।পথের নেশা আর যাত্রা পথের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। রুদ্রপ্রয়াগে এক দিন কাটিয়ে রওনা দিলাম উত্তরকাশীর দিকে। রেস্ট হাউস এ পৌঁছলে এখানকার সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করল। ঘরের পিছনেই গঙ্গা। বড় শহর,বড় জায়গা। সন্ধ্যাবেলা গঙ্গার তীর অতি মনোরম। কিন্ত টিপ টিপ করে বৃষ্টি তো পড়েই যাচ্ছে। এক অজানা আশঙ্কা যে মনে দানা বাঁধছে না  তা নয়  ,পথ যা দুর্গম বেরিয়ে গঙ্গোত্রী পৌঁছতে পারব তো? যেকোনো সময়েই তো  ধ্বসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বাড়ীতে ফোন করে বলে দিলাম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে যেন চিন্তা না করে। অতঃপর সেই পায়ে চলা রাস্তায় গাড়ী চলা,সন্তর্পণে  ধীরে ধীরে দেখে দেখে। সেই বরফের চাদর ঢাকা সরু পথ। পায়ের নীচে খানিকটা পথ ধাতব কিছু পাতা, ‌তার ওপর বরফের চাদর জমে আছে। দুরে এক জায়গায় ছোট ছোট বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে, ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।কোথাও ঝাউ গাছের মতো গাছের সারি,  কোথাও আবার নীচে দিকে পাহাড়ের গা কেটে ছোট ছোট ক্ষেত। অবশেষে পৌঁছুলাম গঙ্গোত্রী।প্রায় মন্দির সংলগ্ন রেস্ট হাউস  এ আমরা উঠলাম। মন্দিরে গঙ্গা মায়ের পুজো দিয়ে নীচে নেমে  স্পর্শ করলাম পূণ্যতোয়া গঙ্গা। এবার এগোলাম গঙ্গোত্রীর উৎসমুখ সূর্যকুণ্ডের দিকে। পাহাড়ের  ফাঁক দিয়ে বিপুল বেগে আলোড়িত হয়ে গঙ্গা ঝাপিয়ে পড়ছে পাতালে। বিচিত্র রঙের পাথর ঘিরে রয়েছে স্রোতস্বিনীকে। বেগবতীর গর্জন,বেগ, কল্লোল আর গান সবই যেন আপন মহিমায় বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আমরা তৃপ্ত, আমরা ধন্য। রাত্রিবেলা মন্দিরে সন্ধ্যা আরতি দেখে বিশ্রাম। 

পরদিন ফেরার পালা। পৌঁছুলাম হরিদ্বার।লছমন ঝুলা
, রামঝুলা ইত্যাদি দেখলাম। কেউ কেউ মনসা মন্দির, চণ্ডী মন্দিরও দর্শন করে এলেন। একদিন কাটিয়ে হাওড়ার ট্রেন ধরলাম। 

ছবি তুলেছেন ঃ লেখিকা






পত্রসজ্জাঃস্বরূপ চক্রবর্তী



















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান