-হ্যা গা কোলকেতায় নাকি ছেলের
বাজার চলতিছে!
-সে তো চলেই, পতিবছর, এ
আর নুতন কি কতা।
-পতিবছর!
-কেনে, কোলকাতা কেনে, একানেও
তো বসে।
তোরে
কেডা বললো?
-রানীর মা এয়েছে না, বলতেছিল সস্তায় নাকি মেলা জিনিস মেলে। হ্যাগো
আমাদের হাটের মতোন নাকি ঐ যে গাজনের মেলা তার মতো?
-আরে না-হ্যা ধর্ ঐ একই একটু ভেন্ন বলে হারাণ বিড়ি
ধরায়।
-আমারে তো কওনি কখোনো। এখানেও
বসে ছেলের বাজার!
এমন
নাম কেন? ভাবে বাসবী।
-কি রে চুপ মেরে গেলি যে! কি
ভাবতেছিস?
-একদিন নে যাবা?
-বোঝো! কি হবে শুনি গিয়ে?
-না, এই আর কি, এট্টু
দেখতাম। আচ্ছা ছেলের বাজার বলে কেন্ গো?
-ওরে বাবারে, এতো মহাজ্বালা! বেলা চড়চড়্ করে বারতেছে, কাজে বেরোবো নাকি!
বাসবী
আর কথা বাড়ায় না। তাড়াতাড়ি করে মানুষটারে ভাত বেড়ে দেয়।
রানীর মা বলতেছিল ও যে বাড়িতে
থাকে সে বাড়ির বৌ নাকি বাচ্চা বিয়োতে পারবে না তাই একখান মেইয়ে কিনে এনেছে। আচ্ছা
ছেলে মেলে? তিন তিনখান্ মেয়ে, শ্বাউরি কথায় কথায় শোনায় বংশে পিদ্দিম জ্বালানোর
জন্য কেউ আর রইলো না। সবথেকে দুঃখু লাগে মনে যখন কোনো পোয়াতির সাধভক্বন হয় ওরে আগে
কেউ সামনে যেতে দেয় না, ও ছেলে আঁটকুড়ী কিনা!
এই
ছেলের বাজারে কি মেলে? কারেই বা শোধায়!
সারাটা
রাস্তা হারান বকবক করে, বলে-দেখলে তো! মনের বাসনা পুন্য হয়েছে? কি না ছেলের বাজার দেকবো।
-আমি তো একবারই বলে ছিলাম
-তুই তো কিচু নিলি নে।
-না, ওসব তো আমাদের হাটেও মেলে গো। তবে গাজনের মেলা
এর চেয়ে ভালো।
মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয, ছেলেমেয়ে কি আলু-পটল যে বাজার মিলবে! এমন ভাবনা কেন এলো যে! আঁচলে নাকচাবির সাথে মনোবেদনাকেও বেঁধে রাখে।
মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয, ছেলেমেয়ে কি আলু-পটল যে বাজার মিলবে! এমন ভাবনা কেন এলো যে! আঁচলে নাকচাবির সাথে মনোবেদনাকেও বেঁধে রাখে।
-আচ্ছা, দেকেছো বলতেছে ছেলের বাজার কিন্তু মেলা মেয়েমানুষেরই
ভির।
-দূউর, তুই কি রে! বলে হারান হাসতে থাকে।
-ক্যান্, হাসতিছো কেনো?
-আরে বাবা বাজার কি ছেলে মেয়েদের
আলাদা হয়! ছেএল মানে, মানে হলো গিয়ে বিকরি। বোঝা গেল! চল্ চল্ পা চালিয়ে,এট্টা ভ্যান যদি পেতাম!
-না গো বাসে বাসে মেলা পয়সা
গেচে, এটুকু পথ হাটতি পারবো, চলো।
-কত্তদিন পর আমরা দোজনে বের
হইছি বল্।
বাসবী
হাসে, পথ্থম পথ্থম হারান নে বেরোতো।
শাউড়ি রাগ করলি ওর হয়ে দু-কতাও কয়ে দিতো। কি করবে, পাঁচটা
মানসের পেট চালাতে গিয়ে সব সাদ আহ্লাদ গেচে। পিছন ফিরে হারান তাড়া দেয়, বাসবী বলে-ছোট
মেইয়েটারে আনলি হতো, কাঁদতেছেল।
-দেকলি তো মানসের মেলা, ওরে নিয়ে আসলে পারতিস! ও ঠিক আচে, এইতো গাজনের মেলা বসতেছে, ওকানে ওদের নে যাবো।
দীর্ঘশ্বাস
ফেলে বাসবী। - চন্ডিতলায় থাকলি আমিও এট্টু
রোজগার করতি পারতাম।
মাতায়
মাতায় সব মে, বিয়েসাদি তো দিতে হবে!
-ঘরে সোমথ্থ মেয়ে রেখে বেরোতি
পারতি?
-সে তো অনেকেই যায়।
-থাকার মধ্যে আছে তো ঐ বাপ পিতেমহের
ভিটে, দেবো বেচে।
-ওমাগো, সাযের বেলা কি অলুক্বনে কতা! দুগ্গা দুগ্গা বলে
বাসবী মাথায় হাত ছোঁয়ায়। পায়ে পায়ে ক্লান্ত দুটো শরীর এসে দাঁড়ায় চাঁদের আলোয়
আলোকিত একফালি উঠোনে।
-মনু, ওমা! আলো ! দরজা টা খোল্ মা।
-অশিক্ষিত, অজ্ঞ মহিলা নিজ গর্ভজাত নয় জেনেও কি ছেলে যদি
পেতো মন থেকে মেনে নিতে পারতো! ওর পরিবার? সাথে
সাথে একসঙ্গে অনেক গুলো যুক্তি-তর্ক খাড়া হলো, ইতিমধ্যে
গন্তব্য স্টেশন,প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গ পাল্টে
পাল্টে যেতে লাগলো। ফাঁকা হয়ে এলো কামরা, আশেপাশের
যাত্রীরাও অনেকে শুনতে শুনতে নেমে গেল গন্তব্যে। চুপচাপ বসে সবার কথা শুনতে শুনতে
সময় কাটছিল, এবার মনে এলো ঘটনাটা যদি সত্যিই
হতো -এই অজ্ঞতাকে কি তুচ্ছ জ্ঞান
করতে পারি! আজ যদি হাজার প্রতিশ্রুতির বদলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হতো! আমরা, যারা তথাকথিত শিক্ষিত দলে আছি, আমাদেরও কি দায় নেই। একজনকে শিক্ষিত অন্তত শিক্ষার
আলো দেখাই না, কেন? এরকম ছোট ছোট আমাদের চোখে মজা (অন্যের অজ্ঞতা
নিয়ে) সবাই দেখি, শুনি। না জানাটা তো সবসময়
দোষের নয়, আলোকিত অঙ্গনে আসন পেলে ছেলের
বাজার মানে 'সেল' আর এই বাজারের বিশেষত্ব ১০/২০ শতাংশ হারে কমমূল্যে
জিনিস মেলে, পুরোনো স্টক ক্লিয়ার করা হয়, এটুকু জানা থাকলে অলীক কল্পনা চুরমার হয়ে বাস্তবের
মাটিতে আছড়ে পড়তো না। আর তারই সাথে সাথে জানতো ছেলে কি মেয়ে হবে সেটা একদমই মায়ের
উপর নির্ভর করে না। অকারণে নানা কটুকথা থেকে মিলতো মুক্তি। নানাভাবে বিভিন্ন আঙ্গিকে
শেখানো যায়, বোধের বিকাশ ঘটানো তো যায়!
এসব ভাবনা ট্রেনে রেখে নেমে যাই নির্ধারিত স্টেশনে, আমিও।
বাঃ! দারুন লাগলো।
ReplyDelete