প্রয়াস..
ঊর্মিমালা মজুমদার
মস্ত পুকুরটার পাড় ঘেঁষে সহস্র মানুষের
ঢল।সদ্য তুলে আনা,সাদা থান
পরা সিক্ত দেহটাকে ঘিরে অস্বস্তিকর জটলা।মেয়েটির বয়স বছর কুড়ির কম বৈকি বেশি নয়।মুখখানা
লাল সিঁদুরে মাখামাখি।কানাঘুষো ফিসফিসানি, বিধবার সধবা সাজার সাধ জেগেছিল।মুহূর্তে যেন ঢাকের বাদ্যি,কাঁসর ঘন্টা, সিঁদুর খেলা,সুসজ্জিত মাতৃ মন্ডপ, প্রতিটি দৃশ্যকে রিওয়াইন্ড করে ফিরে
গেলাম কয়েক ঘন্টা আগের অবস্থানে। মা কে বরণ করা, সিঁদুর খেলা এই সব কিছুর ফাঁকে, সবার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি
নিষ্পাপ,অমায়িক মুখ আমি লক্ষ্য করছিলাম অনেক্ষণ
যাবত।সধবাদের আচারের মাঝে তার যোগদান করা নিষিদ্ধ। সেটি সে মেনেও চলছিল।কিন্তু হঠাৎই
মায়ের বিগ্রহের সম্মুখে এসে পড়ায় ছিটকে গেলেন অনেকেই। বাড়ির বড়রা একরকম তাকে ধমকে, ঘরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।কাঁদতে
কাঁদতে মন্ডপ ছেড়ে ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল মেয়েটি। সেই শেষ দেখা তার সাথে।কর্মসূত্রে কলকাতায়
থাকি। গ্রামের বাড়িতে এসেছি পূজোর ছুটি কাটাতে।তাই বিশেষ কাউকেই চিনিনা। পরে শুনেছিলাম
ফুলপিসিমার গ্রাম সম্পর্কের আত্মীয়া ও। মায়ের বিসর্জনের পরে পরেই আবার একটি বিসর্জন।
মায়ের আলতা রাঙা পা দুখানি আমাদের গৃহখানি ত্যাগ করে সত্যি সত্যিই যেন কোন সূদুরে
পাড়ি দিলো।কেউ একজন ছুটে এসে খবর দিলো, মাকে বরণের পর অন্যান্য উপকরনের সাথে যে সিঁদুরের রেকাবিটা
রাখা ছিলো ওটা ঘরের মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।সবার মুখে মুখে তখন একটাই আলোচনা, এই পাগলীরই কান্ড এসব।সিঁদুরের লোভে
পাপ করল আর সেই পাপেই নাকি ওর এমনভাবে অপমৃত্যু হল।কিন্তু মায়ের পায়ের আশীর্বাদি সিঁদুরে
তো সবার সমান অধিকার।তাহলে সমাজের এমন অদ্ভূত নিয়ম কেন? একবারও কি মেয়েটিকে পাগলী বলে সম্মধোনের
আগে তার মনের যন্ত্রনাগুলোকে উঁকি মেরে কেউ দেখার চেষ্টা করেছে? বিসর্জন মানে তো সব কিছুর শেষ হয়ে
যাওয়া নয়, বিসর্জন মানে তো নতুন করে অর্জন
করা। কিন্তু নানা কারণে আমাদের দেশের কোটি কোটি মেয়ের বিসর্জন হয় প্রতিদিন।তৎক্ষণাৎ
স্হির করলাম, আজ থেকে আর শুধু নিজের জন্য নয়,বাঁচবো সকল মা বোনেদের জন্য।প্রয়োজনে
মুখোমুখি প্রতিবাদে সোচ্চার হবো আবার কখনো বা কাগজে কলমে প্রকাশিত হবে আমার প্রতিবাদের
প্রয়াস।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post