অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Friday, August 30, 2019

গল্প-একটি কিশোরের পরাজয়ের গ্লানি-মলয়েন্দু মজুমদার

একটি কিশোরের পরাজয়ের গ্লানি 

মলয়েন্দু মজুমদার



নবমীর দিন তখন প্রায় সন্ধ্যা। হঠাৎ অনিক ঘরে প্রবেশ করে। মুখমণ্ডল কেমন যেন থম্থমে। অনিকের বাবা, রামকিঙ্কর, তখন ঘরেই ছিলেন। রামকিঙ্কর বহুবার তাঁকে সুধায় “হ্যাঁরে চ’লে এলি যে! ভাই কোথায়? কিছু হয়েছে?” কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে অনিক ব্যালকনিতে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে ত্রিধা ও ইমন, রামকিঙ্করের স্ত্রী ও কনিষ্ঠ পুত্র, ঘরে এলে অনিকের এহেন আচরণের কিছুটা আন্দাজ করতে সমর্থ হয় রামকিঙ্কর পাঁচবছর হ’ল রামকিঙ্কর এই আবাসনে মা, স্ত্রী ও পুত্রদ্বয়কে নিয়ে থাকছে।  এখানকার প্রথমবারের দূর্গাপূজার পর রামকিঙ্করের মা কখনই ঘরের বাইরে যাননি। তিনি বার্ধক্যজনিত কারনে প্রায় শয্যাশায়ী। নানান ছুটিতে সহপাঠীরা বেড়াতে যায় কিন্তু অনিক-ইমনদের কোথাও যাওয়া হয় না, একাকী ঠাকুমাকে রেখে। বছর কয়েক আগে দার্জিলিং – কালিম্পং বেড়াতে গিয়েছিল অনেক রকম ব্যবস্থা করে। কিন্তু প্রায় শয্যাশায়ী মায়ের জন্য একরাশ দুঃশ্চিন্তা সবসময়ই রামকিঙ্করকে ঘিরে থাকত। সেকারনেই বেশ কয়েক বছর কোথাও  বেড়াতে যাওয়া হয়না ওদের। রামকিঙ্কর নানারকম ভাবে ছেলেদের ছোট ছোট খুশি ও আনন্দের বন্দোবস্ত করার চেষ্টা করে থাকে। বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন, গান  শেখা, ফুটবল খেলা, আঁকা শেখা, গল্প, আবৃত্তি এভাবেই অনিক ও ইমনের দিন চলে। ত্রিধা খুবই উৎসাহী মানুষ। দুই ছেলেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে, গানের প্রশিক্ষণে,  ফুটবল মাঠে, আঁকার প্রশিক্ষণে প্রায় ছুটতে থাকেন কখনো কখনো রামকিঙ্করও দুই ছেলেকে নিয়ে যায়।

সেবারের নবমীর দিনই রাত প্রায় এগারোটার নাগাদ পরিবারের সবাইকে নিয়ে রামকিঙ্কর  ভবানীপুর অঞ্চলের দূর্গাপ্রতিমা দর্শনে বেড়িয়ে পরে। ভবানীপুরের ৭৪ পল্লির ও অন্যান্য প্রতিমা দর্শন করে অনিকের বেশ ভাল লাগতে থাকে। অদ্ভূত সুন্দর সব শিল্পকর্ম অনিক-ইমনকে ভীষণ আকৃষ্ট করে। রাত তখন বারোটা, ফাঁকা রাস্তায় অনিকরা সকলে খুবই শান্ত পরিবেশে ভবানীপুর অঞ্চলের হিন্দুস্থান ক্লাব, জাস্টিস তালুকদারের বাড়ীর পাশের প্রতিমাসহ দেবেন্দ্র ঘোষ রোডের অন্যান্য প্রতিমা দর্শন করতে থাকে। যগুবাবুর বাজারের নিকটে ফিরে এসে ‘অবসর’ ও হাজরা অঞ্চলের বেশ কিছু ভালো ভালো প্রতিমা দর্শন করে। অনিক তাঁর মায়ের সাথে এবং ইমন বাবার হাত ধরে হাঁটছিল। ভীষণ আনন্দময় হয়ে উঠেছিল অনিক-ইমনদের ঐ পূজা পরিক্রমা। হাঁটতে হাঁটতে অনিক ও ত্রিধার মধ্যে অনেক কথোপকথন হতে থাকে।

অনিকঃ মা, আমার মনটা এখন বেশ ভালো লাগছে।
ত্রিধাঃ   কেন?
অনিকঃ জানো, বাড়িতে আমার একদম ভালো লাগছিল না।
ত্রিধাঃ কেন? না ভালো লাগার কি হয়েছিল?
অনিকঃ আমি নিজে দেখলাম আমার আঁকা ছবিটা দ্বিতীয় নির্বাচিত হয়েছে । দাস কাকু ও গাঙ্গুলি কাকিমা নির্বাচন করেছেন। ওনাদেরকেই তো দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন করার। কিন্তু রিনার বাবা এসে আমারটা সরিয়ে দিলেন। সিনয় পর্যন্ত আমাকে বলে গেল “অনিক তুই দ্বিতীয় হয়েছিস।“
ত্রিধাঃ হ্যাঁ, সিনয় আমাদের সকলের সামনে এসে বলে গিয়েছিল “ অনিক যা এঁকেছে, ও-ঐ নির্বাচিত হবে।“ সবাই শুনেছে। সকলের মায়েরা শুনেছে। ঠিক আছে, এমন হয়। এতো মন খারাপ করলে চলে না। হয়ত ভবিষ্যতে তুমি আরও অনেক ভালো আঁকবে, এটা তারই ইঙ্গিত। তাছাড়া, যে কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণটাই প্রধান। আঁকার প্রতি তোমার সততাই মূল বিষয়।

সেবারের দূর্গাপূজার নবমীর দিন বিকালে আবাসনের ছোটদের মধ্যে আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অষ্টমীর দুপুরেই সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ইচ্ছুকদের রং-পেন্সিল-তুলি নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে হবেঅনিক ও ইমন দুজনেই ইচ্ছা প্রকাশ করে। রামকিঙ্কর ও ত্রিধা দুজনকেই উৎসাহ দেয়। অনিক, রামকিঙ্করকে দেখায় কোন্‌ কোন্‌ ছবি আঁকতে সে ইচ্ছুক এবং যে কোন একটিকে নির্বাচন করতে বলে। রামকিঙ্কর বলেন, “ ভালোবেসে আঁকাটাই আসল। মনোযোগ দিয়ে ভালোবেসে যা আঁকবে সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ।ইমন রং- পেন্সিল, আঁকার বোর্ড নিয়ে নিচে চলে যায়। কিন্তু অনিক যেতে চায় না। ত্রিধা জানায় আমি অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু ও যেতে চাইছে না। তুমিই দেখ!“ রামকিঙ্কর বোঝাতে থাকে অনিককে। মন না চাইলে অংশগ্রহণ করা ঠিক নয়। তবে অংশগ্রহণে কোন ক্ষতিও নেই।




পরের দিন প্রভাতী চায়ের সময়ে ত্রিধা ও রামকিঙ্কর, অনিকের মনখারাপ বিষয়ে গভীর আলোচনা করতে থাকে। “অনিক-ইমনকে আরও বেশী ছবি আঁকা অনুশীলন করতে হবে কোন বিষয়ে ভালোবাসা থাকলে অনেক অনেক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। সেটা খেলা, পড়াশুনা, গান-বাজনা, ছবি আঁকা কিংবা অন্যান্য যে কেন সৃজনশীলতার ক্ষেত্রেই হতে পারে।  আমি পারিনি বা পাইনি ভেবে মনখারাপ করলে চলবে না। আরও পরিশ্রম করে আমাকেই প্রমান করতে হবে, যে আমি পারি। পৃথিবীতে সমস্ত বিখ্যাত মানুষই জীবনে বহুবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, পরিশ্রম করেছেন এবং প্রমান করেছেন। “ বলেন রামকিঙ্কর।  অনিক ঘুম থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, চুপ করে মা-বাবার আলোচনা শুনছিল। ত্রিধা ও রামকিঙ্কর সেটা খেয়াল করেনি। হঠাৎ দেখতে পেয়ে অনিককে ডেকে নেয়, ত্রিধা।

“ যেটা তুমি ভেবেছ বা শুনেছ সেইরকম কিছু হয়ে থাকলেও, বিষয়টি নতুন কিছুই নয়। তোমার খারাপ লাগতেই পারে। এই পৃথিবীতে এসব প্রতিনিয়ত চলে থাকে। কিন্তু যে ভালোবেসে পরিশ্রম করবে সে একদিন জয়ী হবেই। পরাজয় থেকে শক্তি সঞ্চয় করে আরও বেশী পরিশ্রম করতে হবে। “ অনিককে বোঝাতে থাকেন রামকিঙ্কর।  “সব জায়গায় একই রকম হয়। ভালো লাগে না! স্কুলেও দেখেছি, এখানেও দেখলাম। সব-সময় অন্য কেউ অন্য কোন ভাবে নির্বাচিত হয়। সবই যদি পূর্ব-নির্ধারিত থাকে তবে আমাদেরকে কেন বলা? এখানে বলেছে যেমন খুশী আঁকো। পরে জানলাম, আমি নাকি সূর্য দিইনি, তাই হবেনা। তাই যদি হবে, তাহলে দাস কাকু ও গাঙ্গুলি কাকিমা নির্বাচন করলেন কিভাবে? রিনার বাবা নির্বাচক ছিলেন না। যেহেতু রিনাও প্রতিযোগী,  তাই রিনার বাবা কখনই নির্বাচন করতে পারেন না।“ বলতে থাকে অনিক।

“বাবা, তোমার সৃষ্টিটি ভালো হয়েছে কিনা সেটাই আসল। এক তলার কাকু-কাকিমারা বলেছেন যে, ব্যালকনি থেকে ওনারা সব দেখেছেন। এই প্রতিযোগিতায়, আঁকার প্রতি তোমাদের দুই ভাই-এর সততা ছিল প্রশ্নাতীত। সকলে সেটা দেখেছেন ও স্বীকার করেছেন। তোমার ছবিও খুব সুন্দর হয়েছে। তোমার বন্ধু, সেনয়, সব্বাইকে বলেছে তোমার ছবি সম্পর্কে। এটাই আসল প্রাপ্তি। যদি ছবি আঁকতে তুমি ভালোবেসে থাকো তবে আরও যত্ন নেয়া দরকার। তুমি বা তোমরা ভাগ্যবান, তোমরা এই বয়স থেকেই পরাজয়ের কষ্ট অনুভব করতে পারছো। পরাজিত হলে তবেই জয়ের আনন্দ বেশী উপলব্ধ করা সম্ভব।“ রামকিঙ্কর বোঝাতে থাকে। বোঝাতে বোঝাতে রামকিঙ্কর খুব অসহায় অনুভব করে।  যেদিকেই দৃষ্টি যায় সর্বত্রই নানারকম বোঝাপড়া দেখতে পায়। পাওয়া ও পাইয়ে দেওয়ার এক গভীর অসুস্থতা সর্বত্রই দেখতে পায়। তবুও সন্তানদের বোঝায় “ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি”


 Back To Index

















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান