মা
সান্ত্বনা দাস
এই তো সেদিন তুমি ভাতের থালাটা থেকে ভাত মেখে বললে -খেয়ে নে।অনিচ্ছায় তুমি বড় বিরক্ত কর ভাবতে ভাবতে জুতোটা পায়ে গলিয়ে দে দৌড়। জুতোটা পালিশ করে ঠিক জায়গায় রইল কি করে একবারও মনে এল না। টিফিনে বন্ধুর সাথে লুচি তরকারী ভাগ করে খেতে খেতে মায়ের কথা একবারও মনে পড়ত না, পড়ার কথাও নয়। বাড়ী এলে মা জিজ্ঞাসা করত ঠিক 'হ্যাঁ রে সব পড়া পেরেছিস, টিফিন খেয়েছিস? 'সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মায়ের কেমন করে কাটত খেয়ালও থাকত না, মা ঠিক খেয়াল করত আমার কেমন করে কাটছে।
কখন যেন টিফিন নেওয়া বন্ধ হয়েছে। টাকা দিয়ে টিফিন কিনে খাচ্ছি। হাফপ্যান্ট স্কুলের পোষাক বদলে গেছে ফুলপ্যান্ট টাই এ। স্কুল বদলে গেছে কলেজে। মা কিন্তু একই রকম শাড়ী পরে, পোষাক বদলায় নি। সহপাঠিনী যখন বান্ধবী হলো ততদিনে আমি মায়ের নিশ্চিন্ত কোল ছেড়ে পৃথক ঘরে স্থান নিয়েছি। বাবা পড়াশুনা অন্যান্য বিষয়ে জিজ্ঞাসা করত ,মা খেতে দেওয়া ছাড়া বিশেষ গুরুত্বে পড়ত না। তবু অসুখ করলে মা পাশ থেকে উঠত না, হয়ত ঠিক মতো খেতো না। তারপর চাকরি নিয়ে বিদেশ।ততদিনে এক সহপাঠিনী সহধর্মিণী হয়েছে। আমার মা শিক্ষিত, সংযত। যোগাযোগ রাখত, আমি সময় পেতাম না। আমার ডলপুতুলের মতো কন্যার ছবি মাকে ভিডিও করে পাঠিয়ছিলাম ,মা নাম দিয়েছিল 'তিয়াসা '।
এখন মা আমার সামনে খুব কাছে শুয়ে আছে। চোখ বন্ধ গলায় মালা। মাকে এত সুন্দর আগে কখনো দেখি নি। মা আমার দিকে তাকাচ্ছে না কথাও বলছে না।
মা জিজ্ঞেস করল না 'খোকা এলি? ' আমি জিজ্ঞাসা করলাম 'মা যাচ্ছ? 'তারপর অসহায় ভাবে মায়ের আলতা পরা পায়ে মাথা ঠেকিয়ে বললাম 'আমি সব থেকেও একলা হয়ে গেলাম মা। '
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post