অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Friday, August 30, 2019

গল্প-পয়লা বৈশাখ-বনবীথি পাত্র


পয়লা বৈশাখ

বনবীথি পাত্র




এখনো খাওয়া শেষ হলো না তোমার, এইটুকু খেতে এতক্ষণ লাগে? রান্নাঘর থেকে একটা ট্রেতে দু-কাপ চা আর দুধের গ্লাস নিয়ে বেরিয়ে মহুলকে অকারণ ধমক লাগায় প্রতিটা ছুটির দিনের মতোই সকাল থেকে মেজাজ গরম পিয়ালীর মায়ের হাতে চায়ের কাপটা ধরিয়েই মহুলের সামনে থেকে বাটার টোস্টের প্লেটটা টেনে নেয় দুপিস পাউরুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে একটু আধটু খেয়েছে , বেশিটাই তখনো পড়ে রয়েছে অকারণেই একটু বেশি আওয়াজ করে দুধের গ্লাসটা নামিয়ে বলে , চটপট খেয়ে নাও আটটা বাজতে আর দেরি নেই একটা মানুষ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে আর তখনো তুমি রেডি হতে পারবে না , সেটা মোটেও ভালো দেখায় না দুধ খেয়ে যাচ্ছো , তার ওপর   লুচি-পরোটা খবরদার মুখে দেবে না খেতে বললে বলবে , তুমি ব্রেকফাস্ট করে গিয়েছ ডিম - চিংড়িমাছ একদম খাবে না , ওগুলো খেলেই তোমার অ্যালার্জি বেরোয় কি হলো দুধের গ্লাসটা নিয়ে বসেই থাকবে নাকি দুধটা খাবে
রবিবার সকালে মা-মেয়ের এই গম্ভীর কথাবার্তা মুখস্থ হয়ে গেছে পরমার আজ রবিবার নাহলেও পয়লা বৈশাখের ছুটি কাল রাতেই ঋতমের মা ফোন করে বলেছেন , ওদের বাড়িতে কি একটা অনুষ্ঠান আছে তাই মহুলকে সকালে নিয়ে যাবে
কোর্ট থেকে এমনটাই নির্দেশ আছে , মেয়ে মায়ের কাছে থাকলেও ছুটির দিনে বাবা চাইলে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারেন ঋতমের বা ওর  বাড়ির কোন ভালোটাই শুনতে পছন্দ করে না পিয়ালী মহুলের মনে ঋতম বা ওর বাড়ির কোন প্রভাব ফেলতে চায়নি , কিন্তু আইনি জটিলতায় শিকড়টা উপড়ে ফেলতে পারেনি
গ্লাসের দুধটুকু শেষ করতে বলে বাথরুমে স্নানটা সারতে ঢুকে পড়ে পিয়ালী তার বেরনোর তাড়া আছে আগে ছুটির দিনগুলো বাড়িতেই থাকতো পিয়ালী , কিন্তু কিছুদিন থেকেই ছুটির দিনগুলোতে যেন অফিসের থেকে বেশি তাড়াহুড়ো করে বেরনোর জন্য ফিরতেও বেশ রাত হয় ঋতম মহুলকে পৌঁছে দিয়ে চলে যায় , তার অনেক পরে ফেরে পিয়ালী হুইলচেয়ারে বসেও মেয়ের নতুন জগৎটার আন্দাজ করতে অসুবিধা হয়না পরমার কিছু বলতে গেলেই পিয়ালীর সেই এক অভিযোগ , এমন ছেলের সাথে জীবনটা জুড়ে দিয়েছিলে যে পাঁচবছরের মধ্যে মেয়ে নিয়ে ফিরে আসতে হলো আমার জীবনটা তো শেষ হয়েই গেছে , একটু কি নিজের জন্য বাঁচার অধিকার নেই আমার !!!!
ঋতমকে ছেলে হিসাবে তো ভালোই লেগেছিল তখন , পরিবারটাও ভালো.....তবু কেন যে ওদের সংসারে পিয়ালী নিজেকে মানিয়ে নিতে পারল না কে জানে !!!! ঋতমকে এখনো কিন্তু বেশ ভালো লাগে পরমার মহুলকে পৌঁছে দিতে এসে পিয়ালী না থাকলে একটু বসে পরমার সাথে গল্প করে যায় মাঝেমাঝে  
ঋতম ঠিক সময়ে এসে মহুলকে নিয়ে গেছে তার কিছুক্ষণ পরেই বেড়িয়ে গেছে পিয়ালী আজ প্রথমবার দোতলার বারান্দা থেকে পিয়ালীর নতুনবন্ধুটিকে দেখেছে পরমা ছেলেটির আর্থিক প্রাচুর্যকে ছাপিয়ে যেন তার উগ্রতাটাই চোখে পড়ে পরমার প্রতিটা ছুটির দিন এইভাবে একজনের গাড়ি করে সকালে বেড়িয়ে যাচ্ছে আর সেই কোন্ রাতে ফিরছে , দুদিন পরে তো পাড়ার লোকে পাঁচজনে পাঁচকথা বলবে এটুকুও কি বোঝেনা পিয়ালী !!!!!!
মনে মনে ঠিক করেন এবার একটু শক্তভাবেই কথা বলতে হবে মেয়ের সাথে
চারদিকে আজ কত হৈচৈ ....একসময় সকালবেলা উঠে স্নান সেরে আগে পাড়ার মন্দিরে পুজো দিয়ে এসে তবে কাজকর্ম শুরু করতেন পরমা পয়লা বৈশাখ মানেই নানারকম রান্নার ব্যাপার ছিল সন্ধ্যেবেলা একটু ঘুরতে বেড়নো আর রাতে বাইরে কোথাও খেয়ে বাড়ি ফেরা কোথায় যেন বদলে গেল দিনগুলো মেয়ের বিয়ের বছর না ঘুরতেই মানুষটা চলে গেল তার একবছরের মধ্যেই  সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে কি যে হলো , সারাজীবনের জন্য হুইল চেয়ার বন্দী নাতনিটা এখন এখানে থাকে বলে তাও কিছুটা সময় কেটে যায় বছরের প্রথম দিনটাতে আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা সারাটাদিন , মনজুড়ে শুধুই স্মৃতির টানাপোড়েন
বিকালের আগে থেকেই আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা , কালবৈশাখীর সঙ্কেত যেন হয়ত ঝড়-বৃষ্টি আসতে পারে ভেবেই মহুলকে বিকালেই পৌঁছে দিয়ে গেছে ঋতম
বছরের প্রথম দিনেই এলোমেলো করে এলো কালবৈশাখী প্রকৃতি যেন ভাঙনের খেলায় নেমেছে মহুলটা ভয়ে দিম্মার কোলের কাছে জড়োসড়ো অনেক পরে ঝড় থেমে শুরু হলো বৃষ্টি , প্রবল বৃষ্টি পিয়ালী তখনো ফেরেনি মহুলের বোধহয় মায়ের জন্য মনখারাপ করছে , কান্নাকাটি শুরু করেছে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না পিয়ালীকে নাতনিকে সামলাতে পারছে না কিছুতেই
মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে ফোন করেছে বৃষ্টির মধ্যে সাথে সাথে ছুটে এসেছে ঋতম "আমার মা-কে খুঁজে এনে দাও "
ছোট্ট মহুলের বায়নায় অতো রাতে কোনো ঠিকানা ছাড়াই খুঁজতে বেড়িয়েছে
ঋতম কি করে যে পিয়ালীকে খুঁজে পেল জানা হয়নি , তবে অনেকটা রাতে পিয়ালীকে সাথে করেই ফিরেছিল ঋতম বড্ড বিধ্বস্ত লাগছিল পিয়ালীকে বাড়ি ফিরেই মহুলকে জড়িয়ে আকুল কান্নাতে ভেঙে পড়েছিল পিয়ালী
মহুল বেচারি কেমন একটা আতঙ্কের মধ্যে ছিল যেন মাকে ফিরে পেয়েও বাবাকে ছাড়তে চায়নি মহুল ঋতম এবাড়িতেই থেকে গেছে , পিয়ালীও কোন আপত্তি করেনি  ভালো থাকার জন্য আপন মানুষগুলোর স্পর্শ বড়ো বেশি দরকার বহুদিন বাদে আজ বাবা আর মায়ের মাঝখানে শুয়ে বড় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে মহুল
ঝড়ের শেষে বৃষ্টিটাও থেমে গেছে , জানলার গ্রিল ছুঁয়ে ছুঁয়ে এখনো গড়িয়ে পড়ছে জলের ফোঁটা গুমোট গরমটা কেটে গিয়ে হালকা একটা ঠাণ্ডা বাতাস জুড়িয়ে দিচ্ছে শরীরের ক্লান্তি , মনের বিষণ্ণতা
নতুন বছরের প্রথম রাতটায় মহুলের মতোই বড় নিশ্চিন্ত লাগছে পরমার ।।







 Back To Index











1 comment:

  1. সব সময়ের মত‌ই। দারুন লিখেছো দিদি।

    আমি কাটোয়ার পিকি (চুমকীর দাদা)

    ReplyDelete

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান