দন্ত্যস্থ
স্বরূপ চক্রবর্তী
(১)
স্থান:- আবার কৈলাস পর্বত, চৈত্রমাস
কাল:- প্রায় মধ্যরাত্রি, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ
পাত্র:- সপরিবার মহাদেব
আজ সকাল থেকেই শিব ও শিবার মধ্যে চলছে মন কষাকষি, যাকে বলে 'দাম্পত্য কলহ', কি?
বিশ্বাস হচ্ছেনা বুঝি? আরে বাবা হয় হয়, এখানেও হয়, ফি বছর বাংলায় যাতায়াত করার ফলে মা দুর্গা ও ভোলেবাবার
মধ্যেও দাম্পত্য কলহের বীজ ঢুকেছে, তবে তার যথেষ্ট কারনও আছে, ওইতো সেবার, এক থিম পুজোর আর্টিস্ট থিমের চক্করে মায়ের পোশাক- আশাক এত
আধুনিক করে দিয়েছিল যে লজ্জা ঢাকা দায় হওয়ার জোগাড়,নেহাতই বাপের বাড়ি বলে কথা, মা ব্যাপারটাকে মানিয়ে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করে ছিলেন, কিন্তু গতবছর এক প্যান্ডেলে তো হৈচৈ কান্ড, শিবঠাকুর
তো রেগে কাঁই, কর্তাদের
একদম অভিশাপ টভিশাপ দিয়ে ফেলেন আর কি,তা, রাগবার কথা তো বটেই, আরে বাবা! তোরা 'গ্লোবাল
ওয়ার্মিং ' থিম
নিলি তা,
বেশ, তা বলে সমস্ত দেবী দেবতা, মায় অসুরকেও কচি কলাপাতার পোষাক পরাবি! আচ্ছা, সেটাও না-হয় মানা গেল, কিন্তু তোরা লক্ষ্য রাখবি না যে কখন পড়ার রাম ছাগলটি, তার সমস্ত গার্লফ্রেন্ড দের নিয়ে প্যান্ডেলে হামলে পড়ে
সমস্ত'পোষাক' কে 'শাক' ভেবে স্রেফ সাবড়ে দিয়েছে? সে তো মা কোনও ক্রমে সিংহের ওপর চড়ে বসে রক্ষা পেয়েছেন, তা না হলে কি যে হতো.......?সেই ঘটনাটি আজও শিবের মনে টাটকা, তাই যখনই মা দুর্গা এই ভরা চৈত্রে মর্ত্যে যাবার বায়না
ধরলেন,
তখন শিবের মাথা ভিসুভিয়াস হতে দেরি হলনা, নেহাতই মা গঙ্গা শিবের মাথায় জল টল ঢেলে ব্যাপারটা ম্যানেজ
দিলেন। বছরে
একবার ছাড়া মায়ের বাংলা ভ্রমণ নিষিদ্ধ, মাও এটা মেনে নিয়েছিলেন, কিন্তু বাদ সাধল ওই ' চৈত্র সেল '।আসলে হয়েছে কি, যবে থেকে ওই মর্ত্যবাসীরা একেবারে গুনে গেঁথে বলে দিল যে
গোটা পৃথিবীতে আর মাত্র শতিনেক বাঘ অবশিষ্ট রয়েছে, সুতরাং ওদের শিকার করা চলবেনা, তখন থেকেই মা এর কপালে ভাঁজ,কারন মহাদেব যে কেবল মাত্র বাঘ ছাল ছাড়া আর কিছু পরেন না, তার ওপর আবার সেদিন ওঁনার
সবেধন নীলমণি শীতে পরার একমাত্র রয়্যাল বেঙ্গলের ছালটি স্বর্গের ধোপাকে
কাচতে দিয়ে পড়েছেন ফ্যাসাদে, ব্যাটা ছাল টিকে ছিঁড়েফর্দাফাই করে নিয়ে এসে বলে কি না, 'এত শতাব্দী প্রাচীন ছাল কাচা আমার কম্ম নয়,' তারপর জিব কেটে, পোষা গাধাটির শিংয়ে হাত রেখে বলল, 'এই আমি আমার ব্যবসার
,
মায় আমার প্রিয় গাধাটির দিব্বি বলছি, এই ছাল আমি আর কাচতে নেবো না,শিগগির একটি নতুন ছাল আনুন' বলে কাচার পয়সা টয়সা না নিয়েই দাপিয়ে চলে গেল।
"এ তো মহা ফাঁপরে পড়া গেল, এখন নতুন ছাল পাই কোথায়?" মায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ।সুতরাং খোঁজ পড়ল কার্তিকের, এই পরিবারের একমাত্র টেক স্যাভি স্মার্ট সদস্যের।মা শুধোলেন
,'
হ্যাঁ রে কাতু, একটু দ্যাখ না, যদি তোর ওই অনলাইন না কি যেন বলে, ওখানে কোনও রয়্যাল বেঙ্গলের ছাল পাওয়া যায় কি না?' কার্তিক তখন 'স্কাইবুক লাইভে' মগ্ন, সেখানে স্ক্রিনের তলায় ব্যানার স্ক্রল করছে,' রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য, কে বা কারা যেন সুন্দর বনের গভীরে সেঁধিয়ে কয়েকটি ধাড়ি ধাড়ি
বাঘকে মেরে তাদের ছাল ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে', ব্রেকিং নিউজের সাথে নিউজ প্রেজেন্টারের রিসার্চ টিপ, '
শোনা যাচ্ছে যে সুন্দর বনের নগ্ন বাঘের বডির সাথেই
আফ্রিকাতে ফোকলা হাতির বডি পাওয়া গেছে, মানে, বডি আছে কিন্তু কে বা কারা দাঁত গুলি সমূলে উপড়ে নিয়ে গেছে, গোটা পৃথিবীর পুলিশ ও গোয়েন্দা হন্যে হয়ে চোরাশিকারীদের
তল্লাশ করছে।'মায়ের
ধাক্কায় কার্তিকের মগ্নতা ভাঙে, ' দেখছ না, সারা পৃথিবীর কি হাল!,বাবাকে বলো ওসব বাঘছাল টাগছাল ছেড়ে ট্রেন্ডি হতে, বল ফ্লোরাল প্রিন্টেড বারমুডা ধরতে, একেবারে ইন থিং, আর ইজিলি পাওয়া যায়, একটা ক্লিক আর ,'বৈতরণী ডট কম' থেকে এক্কেবারে
কৈলাসে হোম ডেলিভারী, নো পাঙ্গা নো ইস্যু।' 'কিন্তু...',মায়ের
কপালে ভাঁজ।এমন সময় গনেশ এসে হাজির, সব শুনে ফুট কাটল, 'একটু চেষ্টা করলে হয়ত বাঘ ছাল পাওয়া যেত'। গণেশের কথা শুনে কার্তিকের পিত্তি জ্বলে গেল, এমনিতেই দুইজনের মধ্যের সিবলিং রাইভ্যালরি পুরোনো,সেই পুরাণ যুগ থেকেই চলে আসছে, পৃথিবী পরিক্রমনের কম্পিটিশনের থেকেই, তার ওপর এই সেইদিন ভ্যালেনটাইন ডে তে, বাবার গাঁজা খেয়ে স্বর্গের কার্নিশ টপকে ফুলের বাজারে পড়া, আর চোর সন্দেহে লোকজনের মারের হাত থেকে বাবাকে বাঁচিয়ে নিয়ে
আসার পর থেকেই, (যারা
জানেন না তারা ভ্যালেন্টাইন বম বম টা একটু পড়ুন) গণেশ এই পরিবারের নয়নের মনি, তার কথায় সবাই ওঠে বসে, কার্তিক নিজেকে সামলে নিল। গণেশের কথা শুনে মা বুকে বল পেলেন,' হ্যাঁ রে, বাবা, তুই কি কিছু উপায় বলতে পারিস?''উপায় তো ওই একটাই, চৈত্র সেল!' ' মানে?', মায়ের জিজ্ঞাসা। 'বাংলায় এখন চৈত্র সেল চলছে, শুনেছি সেখানে সবকিছুই পাওয়া যায়, শুধু বাঘের ছাল কেনো ,দাঁত, নখ, দুধ সব পাওয়া যায়। ''যায়?',
মায়ের মাথার পেছনের হাজার ওয়াটের জ্যোতির্বলয় টি জ্বলে উঠল, শিব তেরিয়া হয়ে উঠলেন, 'কথায় কথায় এতো আলো জ্বালিয়ে দাও কেন? ইলেক্ট্রিসিটির বিল টাও তো মাথায় রাখতে হবে , না কি?' কার্তিক মুচকি হেসে মনে মনে ভাবল, 'এবার চাঁদ, তোমায় দেখাবো ফাঁদ,'বলল, ' ঠিক আছে, তুইই
বল আমাদের ঠিক কি করা উচিত 'প্রশ্রয় পেয়ে গণেশ বলল,' আমরা সবাই মিলে চলো কোনও চৈত্র সেলে যাই,''ওনার সাইজ টা মাথায় রাখলেই ..,' 'ত্রিপল, মানে ট্রিপল এক্সেল,' মুখের কথা কেড়ে বলে কার্তিক। 'ঠিক, বাবা না গেলেও চলবে,' মধ্যস্থতা করল লক্ষী ।স্বরস্বতী বলল,' আমিও বাদ,' 'কেনো?'
মা শুধোলেন‘ওখানে এখন ভীষণ ধুলো আর নোংরা, আমার হাঁসের পাখা, আমার শাড়ী সব নোংরা হয়ে যাবে'।'তোর যত
শুভ্র শুভ্র বাতিক, থাক তুই ঘরেই। সে তো
হলো,
কিন্তু কোন বাজারে যাওয়া যায়?'দ্যাখ না, দাদা , তোর 'গোলগাল' ম্যাপে, কোথায় ট্রাফিক একটু কম,'। 'হুম বাছাধন, আজ তুমি পড়েছ ফাঁদে, আমি কার্তিক, তোমার বড় ভাই কি সাধে?' মনে মনে বলে কার্তিক কিছুক্ষণ খুট খাট করে সুন্দরবনের
লাগোয়া একটি বাজার খুঁজে বের করল। "বাসুদেব পুর বাজার।"সব ঠিকঠাক । সেই রাতে জরুরী তলব পড়ল নন্দী ভৃঙ্গীর মহাদেবের কাছে,"এই, তোরা দুটোতে গিয়ে এক্ষুনি একটা সার্ভে করে আয়, ওই বাসুদেবপুর না কি যেন জাগাটার নাম, তোদের মায়ের তো বঙ্গে যাবার একটা সুযোগ চাই ব্যস, আর ওদিকে আমি চিন্তায় মরি আর কি, কচি কচি ছেলেপুলে নিয়ে এই প্যাচ প্যাচে গরমে... যাক গে বুঝবে
ঠ্যালা।" বলে গাঁজার কলকে তে মনোযোগ করলেন ভোলানাথ,"বাবা, বলছি কি, মানে ইয়ে যদি একটু ... পেসাদ, না, থাক”,
বাবার রক্তচক্ষু দেখে থতিয়ে গেল নন্দী।
(২)
বাসুদেব পুরের আকাশে নিশুত রাতে নন্দী-ভৃঙ্গী কে গ্লাইড করতে দেখা গেল। "বাজার টা স্ক্যান কর, হাঁদারা", ওদের 'শিং ফোনে' বাবার
হুঙ্কার শোনা গেলো। "আচ্ছা বাবা”, বলে দুজনেই দুই দুই চারটে শিং খুলে ফেললো। যাক, অ্যান্টেনা নেই, বাবার হুঙ্কারও নেই, ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য শিং খুলতে হয়েছে বলে বাবাকে বুঝিয়ে
দেওয়া যাবে 'খন।
ওরা উড়তে লাগল ইতি উতি। বাসুদেবপুর হল সুন্দর বনের
লাগোয়া একটি মাঝারি সাইজের গঞ্জ, নোনা জলের খাঁড়ি দিয়ে তিনদিকে ঘেরা,তবে, এখানকার বাজারটি বেশ জমাটি, বেশ কয়েকটি বড়সড় দোকান আছে এখানে, আশেপাশের গ্রাম, এছাড়া ক্যানিং , নেতিধোপানি, গোসাবা, ইত্যাদি সুন্দর বনের তাবড় তাবড় এলাকা থেকে নোনা খাঁড়িতে
ডিঙি নৌকা বেয়ে লোকজন আসে, আর জঙ্গলের খাবারে অরুচি ধরলে মাঝে মাঝে ডোরা কাটা কেঁদোরা এখানে হামলা করে, তবে এখানকার বাসিন্দারা এতে অভ্যস্থ , তাদের চলে যায়। উড়তে উড়তে একটি বেশ বড়সড় শাটার টানা দোকানের সামনে এসে পড়ল
ওরা, বিশাল
সাইন বোর্ড টাঙানো, "জটাধর বস্ত্র বিপনী", "এখানে সকল প্রকার কাপড় সুলভে পাওয়া যায়" "প্রোপ্রাইটর
: হলধর পাঁজা"। সবই ঠিক আছে, কিন্তু সাইন বোর্ডের দুই প্রান্তে দুইটি ইয়া সাইজের শিব
ঠাকুরের ছবি একটু বেমানান লাগল ওদের। "হুমম, বেশ বড়ই দোকানটা, কি বলিস?" বলল ভৃঙ্গী। "চল দেখা যাক", সায় দিয়ে বলল নন্দী। জটাধর ভান্ডারের পেছনেই মালিকের বাড়ী, দোকানটা বাজার মুখো আর বাড়িটি খাঁড়ি মুখো। ওরা বাড়ির দিকটা
তে ভেসে চলল, ওদিক
পানে যাবার সময় তাজা গাঁজার সুমিষ্ট ধোঁয়া ওদের নাকে প্রবেশ করল, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে অর্থবহ ইশারা করল।
(৩)
জটাধর বস্ত্র বিপনীর মালিক ষাটোর্ধ হলধর বাবুর এই তল্লাটে বড় এবং সৎ ব্যবসায়ী বলে
খুব নামডাক, তিন
পুরুষের এই ব্যবসা শুরু করেন হলধরের পিতা জলধর, সেই ব্যবসা বাড়ান
হলধর আর এখন তাঁর পুত্র সূত্রধর ব্যবসা দেখাশোনা করে, তিনি এখনও দোকানে যান,বিশেষতঃ পুজো পার্বণ বা মেলা টেলা হলে, ক্যাশ সামলান,খদ্দেরের ভীড় দেখতে তার বেশ লাগে। শোনা যাচ্ছে যে আসছে পঞ্চায়েত
ভোটে তিনি নির্দল প্রার্থী হবেন,হলধরের আর একটি বিশেষত্ব হল দেবদ্বিজে তাঁর অচল ভক্তি, বিশেষতঃ ভোলেবাবার তিনি কট্টর চেলা, রোজ রাত্তিরে খাওয়া দাওয়ার পর তিনি বাবার আরাধনায় বসেন, উপকরণ অতি সামান্য, উত্তম কোয়ালিটির গাঁজা,কলকে, আর দেশলাই, ব্যস, বেশ কয়েক ছিলিম টেনে আর ব্যম ব্যম হুঙ্কার ছেড়ে তিনি তাঁর
আরাধনা শেষ করেন তার পর সদর দরজা বন্ধ করে তবে শুতে যান, এই সব ক্রিয়া প্রক্রিয়া সাঙ্গ করতে বেশ রাত হয়ে যায়,তাই পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে বাইরের ঘরেই তিনি ঠাঁই
নিয়েছেন। চৈত্র
মাস চলছে , আজ বেশ
গরম,
তাই তিনি একেবারে বাইরের দাওয়াতে তিনি তাঁর পুজোর আসন
পেতেছেন,
নন্দীরা ধীরে ধীরে হলধরের সামনে ল্যান্ড করল।
হলধর সবেমাত্র পরিপাটি করে দুই ছিলিম শেষ করার পর সবে তিন
নম্বরটি ধরাচ্ছেন, এমন সময় দুটি গ্রাম্য লোক যেন আকাশ থেকে ভেসে তাঁর সামনে এসে দাঁড়াল, হতে পারে তৃতীয় ছিলিম, কিন্তু হলধরের জ্ঞান বেশ টনটনে আছে,
"এত রাতে আবার এরা কারা, আপদ", তিনি ভোটে দাঁড়াচ্ছেন শুনে আশপাশের অনেক লোক তাঁর কাছে
বিভিন্ন কাজের উমেদারী করতে আসে, হলধর তাঁর সাধ্য মত সাহায্য করেন,কিন্তু তা বলে এত রাতে....। কিছুটা বিরক্তির সাথে তিনি লোক
দুটোকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কে হে তোমরা, এত রাতে, কি ব্যাপার"?হাটুরে লোকদের মত খাটো ধুতি, মাথায় বাবরি চুল, অদ্ভুত ধরণের পিরান গায়ে লোকদুটির
গায়ের রং এক্কেবারে মিশকালো, আর সবচেয়ে বে মানান হচ্ছে ওদের পায়ের রাংতা ওয়ালা নাগরা।"কোন যাত্রা দলের লোক হে তোমরা? এমন সং সেজে এত রাতে ঘুরে মরছে দ্যাখো"
"ব্যম ভোলে" বলে হুকার ছাড়লেন হলধর।
চমকে উঠে নন্দী-ভৃঙ্গী আমতা আমতা করে নিজেদের জন্য একটি
পরিচয় খুঁজছিল, কিন্তু
অমন সুমিষ্ট ঝাঁঝালো গাঁজার গন্ধে প্রাণ টা আকুলি বিকুলি করে উঠছে, যাক শালার সার্ভে, এখন যেভাবেই হোক দু এক ছিলিম না টানতে পারলে ...উফফ,
কি সুন্দর গন্ধ....। "কি! নিজেদের পরিচয় দিতে এত ধানাই পানাই কিসের হে তোদের?"
বিরক্ত হলধর তুই তোকারিতে নেমে এলেন।“ঠিক বলেছেন স্যার, আমাদের ওই নাম" "আমি ধানাই, আর ও আমার তিন মিনিটের ছোট ভাই পানাই", বলে নিজেদের দেখালো নন্দী। "হাঃ হাঃ, এ আবার কি ধরণের নাম?" , জিজ্ঞাসা হলধরের। “না, মানে দুগণ্ডা ভাই বোনের পর যখন আমাদের জন্ম হল, তখন বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসল,”আমার গরীবের সংসার, খুদ কুঁড়ো খাইয়ে নাহয় এদের মানুষ করব কিন্তু এখন এই দরিদ্র
চাষার রতন এই ছেলে দুটোর জন্য নাম পাই কোথায়? আমরা যে বড্ড গরীব"। সেই শুনে আমার দাদু, যাঁকে আমাদের দুগন্ডা ভাই বোনের সকল অন্যায় আবদার মেটাতে হত, তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, "আরে নামের জন্য অত ধানাই পানাই কিসের?এ দুটোর নাম হোক ধানাই আর পানাই",
" আর বলে দিচ্ছি সুবল, এই শেষ, না হলে কিন্তু বৌমাকে বাপের
বাড়ি পাঠিয়ে দেব বলছি, মনে থাকে যেন "।ওদের কথা শুনে হলধর বেশ আমোদ পেলেন,"বোস বাছারা", বলে দাওয়ার এক পাশে বসালেন এবং নন্দী ওরফে ধানাই এর দিকে
গাঁজার ছিলিম এগিয়ে দিয়ে বললেন, "এই নাও, মহাদেবের প্রসাদ, তুমি বড় ভাই, তুমিই আগে...""বড় আমার বড় এয়েছেন রে, বলে কলকে টা এক প্রকার ছিনিয়ে নিল ভৃঙ্গী ওরফে পানাই"।
পারিবারিক কলহের মধ্যে না পড়ে হলধর শুধোলেন ,
" এবার বলোতো বাছারা, তোমাদের এখানে আসার কারণটি কি"? "আজ্ঞে, আমরা হেতাল গঞ্জের জমিদার বাড়ি থেকে আসছি, উনারা ভীষণ শিব ভক্ত," বলে কপালে হাত ঠেকায় ধানাই। “আপনাদের বাসুদেব পুর বাজারের নামডাক শুনে এখানে এসে আপনার ও
আপনার দোকানের ব্যাপারে জানলাম, তা, আমাদের মা জননীর খুব বাজার করার দরকার, ওদিকে আমাদের এলাকায় মশার উৎপাতে ব্যবসাপত্র প্রায় বন্ধ,লোকজন সব এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে, কিন্তু জমিদার পরিবার তো আর যেতে পারে না,তাই ওখানেই পড়ে আছেন, তো, জমিদার গিন্নী আর তাঁদের দুই ছেলে এখানে আপনার দোকানে কালকে আসবেন কেনাকাটা
করতে,
একটু খেয়াল রাখবেন, এই আর কি।" “কিন্তু, সাবধান!” ঘনিয়ে আসে পানাই,"ওঁদের আসল পরিচয় কিন্তু কেউ যেন জানতে না পারে, এই টুকু অনুরোধ"। "এ আর বড় কথা কি, আমার দোকানে ওঁরা আসবেন, তাতেই আমি ধন্য”, বিগলিত হাসলেন হলধর।
(৪)
একেবারে ভোর রাতে ধানাই-পানাই, থুড়ি, নন্দী- ভৃঙ্গী মহাদেবের সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে সব ব্রিফ করল
শুধু গাঁজা খাওয়ার ব্যাপারটা সযত্নে এড়িয়ে গেল, কারন ডিউটি আওয়ার্সে নেশা করা বাবার না পসন্দ। মহাদেব ওদের
কাজে খুশি হয়ে হৃষ্ট চিত্তে বললেন , যা ব্যাটারা, আজ তোদের ছুটি, আর এই নে পেসাদ, বলে গাঁজার কলকে টি ওদের হাতে তুলে দিলেন।
ওদিকে সকাল থেকেই
মা দুর্গা, গণেশ ও কার্তিক সাজুগুজু করে একেবারে যাকে বলে ‘রেডি’। বেরোবার আগে মা ছেলেদের নিয়ে শিবঠাকুরের কাছে এলেন, বললেন ,"এগোচ্ছি, তোমার জন্য পান্তা ভাত আর আলুসিদ্ধ করে রেখে যাচ্ছি, যা গরম, এবারে তো দেখছি কৈলাশেও শান্তি নেই",মহাদেব স্মিত হেসে বললেন ," আমার জন্য ভেবো না, আর , বাসুদেবপুর বাজারে নন্দীরা গিয়ে খবর নিয়ে এসেছে,ওখানে জটাধর বস্ত্রবিপনীর মালিক হলধর পাঁজা খুব ভালো লোক, আমাকে মন্যি করে, বড় কাপড়ের দোকান,ওখান থেকেই তোমরা তোমাদের জিনিষ খুঁজে নিও"।বাবার কথা
শুনে মা খুব খুশি হলেন, ভাবলেন, মানুষ
টা যেমনই হোক, আমাকে
খুব ভালো বাসে। "আর শোনো", বাবা চালিয়ে যান, "একটা কথা মনে রেখ, ওখানে গিয়ে নিজেদের স্বরূপ প্রকাশ করবে না, আর দৈব শক্তি প্রয়োগ নৈব নৈব চ, ওই ব্যাটা মর্তবাসী দের কোনও হক নেই ওদের ওই পাপ চক্ষে
আমাদের দেখার, মনে
থাকে যেন", চোখ
পাকিয়ে সাবধান
করলেন ভোলে বাবা। মা মাথা নিচু করে ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন; আর বললেন,"আচ্ছা , চলি, আর তুমি কিন্তু ওই ছাইপাঁশ গাঁজা
খাবেনা মোটেই, তোমার আবার গরমে এইসব সহ্য হয়না।"“রটন ওল্ড ফ্যাশনড ন্যাকা ফ্যামিলি প্রেম, একে অপরের স্পেস হ্যাক করে খবরদারি",” কি হলো, চলো", কার্তিক তার বিরক্তি প্রকাশ করল।আচ্ছা আচ্ছা আসছি বাবা, বললেন মা।
(৫)
সবে মাত্র সকাল হচ্চে, আকাশ হালকা হলদে বরণ ধরেছে, বাসুদেবপুর বাজারের এক কোনায় খাঁড়ির এক্কেবারে গা ঘেঁষে
অবস্থিত বাসুদেবপুর থানা, বাজার খুলতে এখনো অনেক দেরি, কিন্তু এই ভোরেই থানার ইনচার্জ হরিপদ সরখেল ব্যাজার মুখে ডিসচার্জড হয়ে চেয়ারে
এলিয়ে বসে আছেন, একে তো
কুটকুটে গরম, তার
ওপর সিলিং ফ্যানটাও যেন ঘুরতে চাইছে না, কনিষ্ঠ কনেস্টবল নীলরতন প্রানপনে হাত পাখা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু গরম যেন আর কমেই না।বছর পঞ্চান্নর হরিপদর মনে মোটেই
সুখ নেই,
কারন আজ প্রায় সাত বছর হলো এই পাণ্ডব বর্জিত জঙ্গলে
শাস্তিমূলক পোস্টিংয়ে পড়ে আছেন, ওনার প্রমোশোনও
আটকে আছে,
তার জন্য উনি নিজেকে মোটেই দোষারোপ করেন না,হতে পারে যে দু একটা ঘুষের আর কয়েদি ফেরার হবার মামলা চলছে
ওনার নামে, তা, সে আর এমন কি, অমন এক আধটা মামলা তো থাকতেই পারে, তা, বলে এই শাস্তি! এইত সেদিন, সদরে গিয়েছিলেন একটি কেসের তদ্বির করতে, তা , বড় সায়েব বললেন,“দেখুন মশাই, প্রোমোশনের
কথা আপনি ভুলেই যান","হেঁ হেঁ, ক্যানো সার?" "এসব ছোট খাটো চোর বাটপাড় ধরে আপনি নিজের ক্যারিয়ারের কালি
মুছতে পারবেন না", "যদি ভালো কোনও কেস সলভ করতে পারেন, তাহলেই আমার কাছে তদ্বির করতেআসবেন, না হলে নয়, ঘুষ আমি নিই না, আর, যাবার সময় দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে যাবেন।"স্পষ্ট ইঙ্গিত বুঝে কোনও ক্রমে
হতাশা সামলে বিমর্ষ সরখেল দরজার দিকে পা বাড়াতেই বড় সায়েব বলে উঠলেন,
" গত পরশু আপনার চেলা
নীলরতনের হাতে যে রসগোল্লার হাঁড়ি টি পাঠিয়ে ছিলেন , সেটার মধ্যে কতগুলি যেন পচা পচা ঠেকছিল, নেহাতই আমার বাচ্চাটা হ্যাঙলা, সবকটা মেরে দিল তাই, না হলে গিন্নি বলছিলেন যে আপনি এলে আপনাকে জল খাবারে
খাওয়াবেন,
যত্তসব আনাড়ী, ওদিকে গিন্নির আবার একজোড়া ঝুমকো দুলের শখ হয়েছে, আমার সময় নেই, তা, আপনি কি জানেন কোনো স্যাকরার খবর, যেখানে খাঁটি মাল পাওয়া যাবে? "সরখেল হালে পানি পেয়ে আকর্ন বিস্তৃত হাসি দিয়ে বললেন,
" হেঁ হেঁ , কি যে বলেন স্যার, আমি কালই বাসুদেবপুরের সেরা স্যাকরার থেকে স্যাম্প্যাল
পাঠিয়ে দেব 'খন, সাথে সুন্দর বনের খাঁটি মধু,", "আরে,নাআআআ, না, দাম নিয়ে কিস্যু ভাববেন না,
ওটাতো আর ঘুষ নয়, ওটা আমার তরফ থেকে বৌদি আর ভাইপোর জন্য কিঞ্চিৎ ...মানে... উপহার... মাত্র...., আর, ইয়ে,
স্যার, আমার, মানে, ফাইলটা যদি ... একবার","বললাম না, কোনও ভালো কেস সলভ করুন, তবেই আপনার ফাইল মুভ করবে, নচেৎ নয়"।সরখেল হাঁড়ি মুখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন….
"এই হারামজাদা ন্যালা, বলি ঘুমিয়ে পড়লি না কি ব্যাটা, হাত পাখাটা জোরে জোরে চালা" "শরীরটা বড্ড ম্যাজ
ম্যাজ করছে, আলস্য কাটাতে একটা বিশাল হাই তুলে কোনও মতে আড়াইমনি শরীর টাকে চেয়ার থেকে
মুক্ত করে সরখেল হাতে রুলটি তুলে নিয়ে হাজতের দিকে এগিয়ে গেলেন, হাজতের ভেতরে তিনজন কয়েদি ছিল, দুইজন কে দেখলেই বোঝা যায় যে, এই হাজত টি হল তাদের ঘর বাড়ি, দিব্যি দুই জনায় বাজি রেখে তাস খেল ছিল, তৃতীয় জন একটি বছর বিশের যুবক, দেখলেই বোঝা যায় শিক্ষিত , ভদ্র, সে হাজতের এক কোনায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ছিল, সরখেল কে ভেতরে আসতে দেখে প্রথম দুই জন উঠে সেলাম ঠুকল, আর সরখেল বিনা বাক্য ব্যয় করে এলো পাথাড়ি রুল চালাতে লাগল, আর ওরা যথা সাধ্য চেষ্টা করছিল বেঁকে চুরে মার এড়াতে,মিনিট পাঁচেক এভাবে চলার পর সরখেল হাঁপিয়ে মার বন্ধ করল, কয়েদি দুটো সরখেল কে সমীহ করে বলল,
"স্যার, লাগেনি তো?", "আপনার দয়ায় কিছু করেকম্মে খাচ্ছি, আপনি চোট পেলে যে আমাদের নরকেও ঠাঁই হবে না", আশীর্বাদের ভঙ্গীতে ওদের মাথায় হাত রেখে সরখেল মুড়লেন সেই যুবক
টির দিকে,মিচকি হেসে বললেন " তা, শালা বাবু, কেমন আছেন? আপনার জামাই বাবুকে খবর পাঠানো হয়েছে, উনি আপনার জন্য জামিন নিয়েএলেই আপনি ছাড় পেয়ে যাবেন,আর যদি না আসেন..হেঁ হেঁ, তাহলে এই রুল দিয়ে....", বলে রুলটি ছেলেটির নাকের সামনে ঘোরালেন।"আপনি কিন্তু অন্যায় করছেন স্যার, আমি কিছুই করিনি, দিদি জামাই বাবুর বাড়িতে বেড়াতে আসা কি অন্যায়?"ছেলেটি বলে উঠল।"না, না,
না, না,
সেটা অন্যায় হবে কেন? কিন্তু আমার এলাকায় বড়লোক স্যাকরা হওয়া পাপ, সেই স্যাকরার শালা হওয়া পাপ, আর আরও পাপ বড় সায়েবের গিন্নির যখন ঝুমকো দুলের শখ উঠবে তখন
জামাই বাবুর বাড়ি বেড়াতে আসা", "বুঝেছ হে ছোকরা? বেশি আইন দেখিও না, এটা কলকাতা নয়, বাসুদেবপুর, এখানে কয়েদিদের আমি আকছার হাপিস করে দিই, কেউ জানতেও পারে না"।বলে সরখেল হৃষ্ট চিত্তে নিজের
চেয়ারে এসে এলিয়ে বসলেন, বেলা প্রায় সাড়ে আটটা, ইতিমধ্যে নীলরতন মোড়ের দোকান থেকে
তেলেভাজা,
গরম জিলিপি আর মুড়ি নিয়ে এসে দারোগা বাবুর সামনের টেবিলে
পাতা খবরের কাগজের ওপর রেখেছে, দারোগা গিন্নির রাতে টিভিতে হিন্দি সিনেমা দেখে শুতে রাত হয়, তাই সকালের জলখাবার টা দারোগা সায়েব এই থানাতেই সারেন।মুখে
একমুঠো মুড়ি আর আধখানা চপ ফেলে দারোগা বাবু কাগজে মন দিলেন।প্রথম পাতাতেই এক্কেবারে বড় বড় হেডিং,
" রয়্যাল বেঙ্গল
রহস্য", পুরো
খবরটা পড়েই হরিপদ সরখেল লাফিয়ে উঠলেন, " আরে!! এত একেবারে আমার নাকের ডগায়"।"কি স্যার? মাছি?" , বলে উঠল নীলরতন ওরফে ন্যালা।হরিপদ খেঁকিয়ে উঠলেন, "চোপ , মাছি নয় রে হতভাগা, বাঘ,"আতঙ্কিত নীলরতন ইতি উতি দেখে ভয়ে ভয়ে বলল,
"বা..ঘ, কক..কোথায় স্যার?"আসলে একেবারে
খাঁড়ির এপারে লাগোয়া এই বাজার ও থানা এলাকা। খাঁড়ির ওপারে লাগোয়া সুন্দর বন
থেকে ইয়া ইয়া কেঁদো সাইজের বাঘ মাঝে মাঝে
জল খেতে চলে আসে, যদিও খাঁড়ি পেরিয়ে এপারে কোনো দিন আসেনি, তবে আসবেনা, তার গ্যারান্টি কোথায়?হরিপদ বললেন," আমার নাকের ডগা দিয়ে... বাঘের ছাল পাচার!দাঁড়া, দেখাচ্ছি "শুনে নীলরতন হাঁফ ছাড়ে।তড়িঘড়ি ভুঁড়ি ওয়ালা
পেটের ওপর বেল্টটা টাইট করে শার্টের কলার ঠিক করে সিধে হয়ে বসলেন সরখেল,ভাবলেন এই মওকা, কেসটা সলভ করতে পারলে কেল্লা ফতে, পেয়ারের নীলরতন কে
কাছে ডেকে চাপা গলায় সমস্ত প্ল্যানটা বোঝালেন ,
" শোন ন্যালা, তুই আজ থেকেই লেগে পড়, চারিদিকে খেচর লাগা, ওই পোচাররা,বাঘের ছাল পাচার করার আগেই ওদের পাকড়াও করা চাই,তাহলেই আমার এই নির্বাসন থেকে মুক্তি, আর তোর উন্নতি।
(৬)
চাঁদি ফাটা রোদে, গণেশ ও কার্তিক সমভিব্যহারে বাসুদেবপুর বাজারে প্রকট হলেন মা দুর্গা, জমজমাট ধুলো ভর্তি বাজার, দোকানে দোকানে চৈত্র সেলের ধুম, ব্যানার, ডিসকাউন্ট কত কিছু, ফি বছর বাপের বাড়ি আসা বলতে তো ওই পুজোর সময় প্যান্ডেলে পোজ
দিয়ে বসে থাকা আর কৈলাশে ফিরে সারা বছর সংসার সামলানো, মা এর কাছে এই রকম পরিবেশ একদম নতুন , ভীড়ে ভীড়াক্কার রাস্তা আর দোকান গুলো , ঘাম আর উৎকট সস্তা সেন্টের গন্ধে নাড়ী ছাড়ার উপক্রম, লোকেরা কিনছে কম দরাদরি করছে বেশী, দোকানীদের দরাজ ডিসকাউন্টও দরাদরি থামাতে পারছে না, কিন্তু বাপের বাড়ি বলে কথা, মা বেশ এনজয়
করছিলেন,
দোকানে দোকানে ঝোলানো জামাকাপড় , কার্তিক খালি তাড়া দিচ্ছে আর বলছে ওই "জটাধারী" না,কি, সেই দোকান টি তাড়াতাড়ি খুঁজে কেনাকাটা সেরে বাড়ি ফিরে চল, আমার সাফোকেশন হচ্ছে। এখানে দৈব শক্তি ব্যবহারের উপায় নেই, তাই হাঁটতে হচ্ছে, কার্তিক আর গণেশ মা এর দুই পাশে হাঁটছে, কার্তিকের ময়ূর আর অস্ত্রশস্ত্র বোনেদের জিম্মায় কৈলাশে, শুধু গণেশ কে নিয়েই মুশকিল, গণেশ তার দেড় খানা দাঁত কে প্যাঁচ খুলে একটি কাপড়ের
শান্তিনিকেতনী থলেতে ভরে কাঁধে রেখেছে, বোনেরা বার বার বলল
যে তুই তোর দাঁত গুলি আমাদের দিয়ে যা, আমরা ধুয়ে মুছে চক চকে করে রাখব, কিন্তু কে কার কথা শোনে, তার জেদ,সে থলে নেবেই, কি আর করা, অগত্যা..., ওদিকে ওই দেখে কার্তিক মনেমনে খুশি, কারণ সকালের ওই বাঘের ছাল আর হাতির দাঁতের খবর। "
বাছাধন,
তুমি এবার ফাঁসলে বলে"।যাই হোক ওরা তিনজনে জিজ্ঞেস করে
করে দোকানের দিকে এগোচ্ছে, কিছুক্ষণ পরেই "জটাধর বস্ত্রবিপনীর" দেখা পাওয়া গেলো, ওঁরা ভেতরে গিয়ে হলধর কে খুঁজে পেলেন, বিশাল বড় দোকান, প্রচুর কাপড় আর প্রচুর খদ্দের। হলধর পাঁজা মা আর
দুই পুত্রকে খাতির করে বসালেন, মা জননীর গায়ের দুধে আলতা রং, চোখের দীপ্তি,পরনের দামি শাড়ি এসব দেখে বোঝাই যায় যে তিনি কোনো বড় বংশের গৃহিনী, সাথে দুই ছেলে, একটির চোখ টানাটানা, কোঁকড়া কালো চুল, অন্যটি বেশ নাদুসনুদুস, এঁদের দেখে যেন সাক্ষাৎ শিব পরিবারের কথা মনে পড়ে, হলধরের মনে ভক্তি ভাব জেগে উঠল, উনি নিজে হাতে করে ওঁদের কাপড় দেখাতে লাগলেন।এরই মধ্যে হঠাৎ
গণেশের উসখুসুনি শুরু হল, আসলে সবাই নিজের নিজের বাহন রেখে এলেও গণেশ তার প্রিয় ইঁদুর কে ছেড়ে আসতে
পারেনি,
আর বঙ্গে ইঁদুরের কখনো কোনো অভাব দেখা যায়নি, ফলে ইঁদুর কে দেখে কেউ গ্রাহ্য করবেনা এটাই স্বাভাবিক, আর ঠিক এই কারণেই গণেশ ওই থলে টা নিয়ে এসেছে , যাতে করে ওর বাহন কে লুকিয়ে আনা যায়, কিন্তু, দোকানের ভেতরে আসা ইস্তক ইঁদুর টি বড্ড ছটফট করছে, তাই মা আর দাদাকে বলে গণেশ খোলা হাওয়া খাওয়ার বাহানায়
দোকানের বাইরে গিয়ে দাঁড়াল, কিন্তু ইঁদুর টি এত পাজি যে একটু সুযোগ পেতেই ঝোলা টপকে এক্কেবারে রাস্তায় পড়ে ঝড়ের বেগে দৌড় লাগালো,
"আঃ বাঁচাগেল, যা ভারী মালিক , তাকে বইতে বইতে জান এক্কেবারে কালি হয়ে গেলো, এই সুযোগ ছাড়া যায়?"
(৭)
গণেশ থতমত খেয়েই নিজেকে সামলে দৌড় লাগালো পিছু পিছু, বাজারের ভীড়ের মধ্যে লোকজনের ধাক্কা বাঁচিয়ে, স্রোতের উল্টো দিকে কোনোও ভাবে গণেশ এগিয়ে চলছে, ভাগ্যিস দৈব শক্তি ব্যবহার নিষিদ্ধ, নইলে এতক্ষনে ইঁদুর বাবাজি কব্জা হয়ে যেতেন। ওদিকে থলেতে দাঁত গুলো রয়েছে, কিন্তু না, অনেক চেষ্টা করেও গণেশের সাথে একটি সিঁড়িঙে লোকের ধাক্কা
লেগেই গেল,আর
ধাক্কা লাগতেই লোকটি কঁকিয়ে উঠল, " আরে আরে! আপনার থলেতে কি আছে মশাই? বন্দুক টন্দুক নয় তো? না কি তলোয়ার বল্লম টল্লম কিছু?",
“আপনি ডাকাত না কি?"বলে রাখা ভালো যে সুন্দরবনের এইসব এলাকা, বিশেষতঃ নেতিধোপানী এলাকা
পর্তুগীজ জলদস্যুদের লুকোনোর স্থান ছিল, ১৭৫৭ সালে মুঘল বাদশা দ্বিতীয় আলমগীরের হাত থেকে ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানি সুন্দরবনের দখল নিয়ে এই সব ডাকাতদের কিছুটা দমন করেছিল, কিন্তু আজ এই একবিংশ শতকেও ডাকাতি সমানে বিদ্যমান, তাই , ভদ্রলোকের আশঙ্কা অমূলক নয়।হতভম্ব গণেশ কিছু বোঝার আগেই
লোকটি গনেশকে জাপ্টে ধরে একটি খোলা জায়গায়
এনে ফেলল,
"থলিতে কি আছে দেখাও", গণেশ জমা হওয়া ভীড়ের হাতে মার খাবার থেকে বাঁচার চেষ্টায়
থলেটি আঁকড়ে ধরে থাকল, কিন্তু লোকটিও নাছোড়বান্দা, গণেশের হাজার ওজর আপত্তি সত্ত্বেও যা হোক করে থলেতে উঁকি
মেরে ভেতরের জিনিষ দেখেই ভিরমি খাবার জোগাড়, আসলে থলেতে রাখা গণেশের দাঁতের সুচালো অংশ টি তেই লোকটি
খোঁচা খেয়ে ছিল। গণেশের সামলে চলা উচিত ছিল,কিন্তু ....আজ মনে
হচ্ছে যে কপালটিই খারাপ।ভীড়ের মার যে কি জিনিস তা গণেশ জানে,গণেশ চোখ বুঁজে মারের জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু
লোকটি দেখা গেল কোনও রকম চিৎকার চেঁচামেচি না করে গণেশের কানে কানে বলল,
" ভাই, বুঝতেই পারছ যে হাতির দাঁত কোনো ছাতা নয় যে ব্যাগে নিয়ে ঘোরাফেরা
করবে","আর
বাঘের ছাল, হাতির
দাঁত,
এসব সমেত ধরা পড়লে কি হতে পারে বোঝ নিশ্চই?"
গনেশের ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখা শুঁড় শুকিয়ে গেলো, কারন কাল সন্ধে বেলায় দাদার ল্যাপটপে চোরাশিকারের কাহিনী টি
সে শুনেছে।সেই লোকটি আরও ঘন হয়, বলে," যদি বাঁচতে চাও তা হলে আমার কথা শোনো যা বলি কর, তাহলে কোনো ভয় নেই"।এরা নিশ্চয়ই তাকেও চোরাশিকারী ভেবে
জেলে পাঠাবে, সর্বনাশ!
সামনেই আবার পয়লা বৈশাখ , সে জেলে থাকলে ব্যবসায়ীরা হাল খাতা করবে কিভাবে? বাণিজ্য বিরল এই বঙ্গে সব লাটে উঠবে যে! আর দোকানে দোকানে
তার উদ্দেশ্য যে মিষ্টি ভোগ দেওয়া হবে, তার সবটাই তো ওই হতভাগা ইঁদুর খাবে, ব্যাটার জন্যই আজ এত দুর্ভোগ। মাথাটা
গরম হচ্ছিল, কিন্তু
কোনো মতে সামলে নিয়ে গণেশ লোকটির সাথে চলতে রাজী হয়ে গেল। উত্তেজিত ভীড় কে শুনিয়ে লোকটি গণেশকে বলল,
"মাফ করবেন ভাই, ছাতাটা একটু সামলে
রাখলেই তো পারতেন," উত্তম মধ্যম ধোলাই দেবার এমন সুবর্ন সুযোগ টি হাত ছাড়া হয়ে যেতে
ভীড়ের লোকজন বিমর্ষ বদনে নিজের নিজের
রাস্তা ধরল।
(৮)
গনেশকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে লোকটি ভুলিয়ে এনে তুলল বাসুদেবপুর থানায়, আসলে সে হল থানার কনিষ্ঠ কনেস্টবল নীলরতন এর লাগানো খেচর,গণেশের তো চক্ষু চড়ক গাছ, হরিপদ সরখেল লাফিয়ে উঠে বললেন,"
সাবাশ ন্যালা, তোর জন্য আমি সদরে নিশ্চই বলব, হয়ত তুই একটা ভারত রত্ন টত্ন পেয়ে যেতেও পারিস।আসলে হরিপদর
কথা মত ন্যালার ফিট করা খেচর বাজারে চক্কর দিচ্ছিল, ঠিক তখনই হরিপদর ভাগ্য বলে আর গণেশের দুর্ভাগ্য বলে তার হাতে পড়ে গণেশ আর, গণেশের হাতে হাত কড়া।কিন্তু একটা ব্যাপারে হরিপদর খটকা
কিছুতেই যাচ্ছিল না, "আচ্ছা ন্যালা, আমরা তো খুঁজছিলাম বাঘের ছাল,কিন্তু বেরোলো অন্য মাল, আচ্ছা, সুন্দরবনে হাতির দাঁত এলো কি করে?"
"আরে স্যার," খোলসা করে নীলরতন, আপনি তো খালি প্ৰথম পাতাটি পড়েছেন, তিন নম্বর পাতাটি তো পড়েই দেখেননি,"
বলে আফ্রিকার হাতির দাঁতের ব্যাপারটি বলল নীলরতন।"কিন্তু তিন নম্বর পাতাটি কোথায়?"লজ্জা লজ্জা কণ্ঠে নীলরতন বললে ,"আজ্ঞে, ওটার ওপরেই তো সকাল বেলায় আপনার জন্য তেলে ভাজা আর মুড়ি
সার্ভ করেছিলাম"।"হারামজাদা! তুমি পুরানো কাগজ পাওনি?""দেখা কোথায় গেল দাঁতটা, মানে খবর টা", তম্বি করল হরিপদ।"এইযে স্যার, চপে চাপা পড়ে আছে", বলে আধ খাওয়া চপটি নিজের মুখে চালান করল ন্যালা।"হ্যাঁ, এইত", বলে বিড়বিড়িয়ে খবর টি পড়লেন হরিপদ। "হুমম", হুঙ্কার ছাড়লেন হরিপদ, তার মানে, সুন্দরবনের খাঁড়ি পথে চোরা চালান, আন্তর্জাতিক চক্র, মানে'ভারত রত্ন', 'আফ্রিকার
কালোহীরে'"!খুশীর আতিশয্যে হরিপদ নীলরতন কে জড়িয়ে ধরলেন,
" ওরে আমার ন্যালা, ভাই আমার, তুই আমার হীরে,আমার মানিক, আমার গলদা চিংড়ি, আমার ইলিশের পেটি,তুই তো হেলে ধরতে গিয়ে একেবারে কেলে ধরে ফেলেছিস!""এবারে আমায় আর পায় কে, এবার দেখি কোন শালা আমার প্রমোশন আর ট্রান্সফার আটকায়,""বলে কি না ঘুষ নিই না, ব্যাটা জোচ্চোর বড় সায়েব"।
(৯)
এদিকে গণেশের আশায় বসে থেকে মা এর মন দুঃশ্চিন্তায় ভরে উঠছে, দুপুর প্রায় গড়িয়ে এলো বলে, আর দেরী করা যায় না,ওদিকে সন্ধ্যের আগে কৈলাসে ফিরে রাতের খাবার সময় মত না দিলে
খালি পেটে গাঁজা খেয়ে শিব ঠাকুর কৈলাস মাথায় তুলে ফেলবেন।"অ বাবা কাতু, দেখ না তোর ভাইটি কোথায় গেল? "ওদের এই বিপদ দেখে হলধর ওদের সান্ত্বনা দিলেন, জল খাইয়ে মা দুর্গা কে বললেন, " ভয় নেই মা, আপনার ছেলে ঠিক ফিরে আসবে, মা দুর্গার নাম নিন, সব ঠিক হয়ে যাবে।মা মনে মনে ভাবলেন,
"কিন্তু মা দুর্গা নিজে বিপদে পড়লে
কার নাম নেবেন?"মায়ের
করুন মুখ দেখে কার্তিক বলল , "মা, তুমি এখানে একটু বসো, আমি একবারটি এগিয়ে দেখি কোথায় গেল ছেলেটা"।কিন্তু মা সঙ্গে যাবেন বলে জিদ
ধরলেন,
সুতরাং দুজনে মিলে এগিয়ে চললেন। খুঁজতে খুঁজতে মা কে নিয়ে কার্তিক এসে পৌঁছল বাজারের সেই
জায়গাটাতে, যেখান থেকে
গণেশ কে কিছুক্ষণ আগে পাকড়াও করেছে
ন্যালার চ্যালা, পথচলতি
লোকজন কিছুই তেমন বলতে পারল না, কিন্তু ওদের এভাবে হন্যে হয়ে কাউকে বা কিছুকে গরু খোঁজা খুঁজতে
দেখে একটি লোক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কার্তিক কে জিজ্ঞেস করল,"
কি ভাই,কি খুঁজছেন?"
"কি নয়, কাউকে”, বিরক্ত গলায় বলল কার্তিক, "একটি নাদুস নুদুস হ্যাবলা মত ছেলে, আমার ভাই, একেবারে ইঁচড়ে পাকা, এদিকে একা একা এসেছিল, তার পর আর কোনো পাত্তা নেই। "লোকটি বলল "ভাই?"
"তাহলে তো ব্যাপার সুবিধের নয়।"
“সুবিধের তো নয়ই, ভীষণ পাজি আর ডেপো ছেলে", বললে কার্তিক। “কিন্তু আপনার ভাই যার খপ্পরে পড়েছে সে শুধু পাজিই নয়, পাজির পা ঝাড়া একেবারে"।"মানে?” কার্তিক মনে মনে আমোদ পায়।"কি ব্যাপার বাবা?" মা উদ্বিগ্ন মুখে প্রশ্ন করেন। “ওইটে আমার দোকান ", রাস্তার পাশের একটি সোনা গয়নার দোকানের দিকে দেখিয়ে বলল লোকটি।"আমি দোকান থেকে দেখলাম যে, আপনাদের বর্ণনা মত একটি ছোট ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল বাসুদেবপুর
থানার ছোট কনস্টেবল নীলরতন ওরফে ন্যালার চ্যালা এক খেচর";"ওদের কাজই হ'ল যে কোনো নতুন লোককে দেখলেই থানায় নিয়ে গিয়ে কয়েদির সংখ্যা
পুরো করা"," কারণ
থানার হেফাজত থেকে ফি দিনই কোনও না কোনো কয়েদি সটকান দেয়, বা বলা যায় ঘুষ দিয়ে পার পেয়ে যায়"।"সে কি! সর্বনাশ হয়েছে বাবা, আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে গেছে?" , বলে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন," বাছা তুমি আমাদের দয়া করে একবার থানায় নিয়ে যাবে বাবা?"
মা এর পোশাক ও চেহারা দেখে দোকানীর মনে সম্ভ্রমের উদ্রেক হয়, সে বলে," আপনার কথা ঠেলতে মন
চায়না,
কিন্তু ওই হরিপদ দারোগা আর ওর কুকর্মের সাথী নীলরতন ভীষণ
শয়তান মা,
এই আমার ব্যাপারটাই ধরুন , আমার একমাত্র শ্যালক গত পরশু আমার বাড়ী প্রথম বার আসছিল, তা,নতুন
লোক দেখে ওই ন্যালা ব্যাটা ওকে ফাঁসিয়ে থানায় নিয়ে ফাটকে আটকে রেখেছিল, আজ সকালে আমি অনেক টাকা আর সোনার ঝুমকো দুল ঘুষ দিয়ে শালাকে
ছাড়িয়ে আনি","শালা ভীষণ পাজি।" "কে? তোমার শালা?" জিজ্ঞেস
করল কার্তিক। "না, ওই হরিপদ সরখেল আর তার সাগরেদ নীলরতন ওরফে ন্যালা, আমি থানার দরজা অব্দি যেতে পারি,কিন্তু ভেতরে যেতে অনুরোধ করবেন না দয়া করে","
আমার বিশ্বাস ওই হরিপদ দারোগা মায়ের পেট থেকে বেরোতেও মনে
হয় ঘুষ নিয়েছিল। "বুদ্ধিমান কার্তিক সব বুঝছিল, এই অবস্থায় মা সাথে থাকলে একটা যা তা কান্ড হবে বুঝে
কার্তিক মা কে ওই গয়নার দোকানের ভেতরে ঠান্ডা হওয়াতে বসিয়ে মালিক কে নিয়ে থানার
দিকে এগোলো...
(১০)
এই ঘটনার ঘন্টা কয়েক আগের ব্যাপার-থানায় গণেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, ব্যাপারটাতে সরাসরি হরিপদ হাত লাগিয়েছে-"তোর নাম কি ছোকরা?"
“গণেশ"
"তা বেশ"
"তোর বাবার নাম কি"?
"মহাদেব"
"কি দেব"?
"মহাদেব"?
বাড়ি কোথায়?
"কৈলাস"
"চোপ! ব্যাটা বেয়াদব", বলে টেবিলে সজোরে রুল ঠুকলেন হরিপদ।
"এবার বলবি ওই হাতির দাঁত গুলো তোর"।
"আমার ই তো",” আসার সময় বাবা মহাদেব বলে দিয়েছেন ছদ্মবেশ ধারন করতে, তাই
প্যাঁচ খুলে দাঁত দেড় খানি থলেতে রেখে ছিলাম"।
হো হো করে অট্টহাসিতে নীলরতন আর কয়েদি
সহ গোটা থানাটি কাঁপিয়ে হরিপদ বিষম টিষম খেয়ে ভুঁড়ি সামলে নিজেকে ধাতস্থ করলেন,
"ব্যাটা তুমি একটি পাকা ক্রিমিন্যাল, উফফ ওরে ন্যালা রে রে এ এ , তুই যে কি একখানা বিরাট কাজ করেছিস স্রেফ ভাবা যায় না,"
বলে হরিপদ জালার মত পেট টাতে হাত বুলিয়ে আত্ম তৃপ্তির হাসি হাসলেন।“যাক, এখন ব্যাটাকে লকআপে ভরে রাখ, বেলা গড়িয়ে গেল, আমি চাড্ডি মুখে দিয়ে একটু বিশ্রাম করে আসি, খাবার পর পিঠটা সোজা না করলে আমার আবার পুরোনো কোমরের ব্যাথাটা
চাগাড় দিয়ে ওঠে"। এই বলে কোনও ক্রমে আড়াইমনি শরীরটা কে চেয়ার থেকে টেনে তুলে
উঠতে যাবে-
এমন সময় গণেশ ফুট কাটল, " ঘুষের পয়সায় শুধু গান্ডেপিণ্ডে গিললে আর শারীরিক পরিশ্রম না
করলে বাত,
ব্যাধি সব হয়"।"চোপ! ব্যাটা ফিচেল, এই ন্যালা, ব্যাটা কে এক্ষুনি ফাটকে ঢোকা, আমি এসে এর ব্যবস্থা করছি",বলে কোমরের বেল্ট টাইট করতে করতে সরখেল কোয়ার্টারের দিকে পা
বাড়ালেন।
(১১)
প্রায় আধঘন্টা পরের কথা, লকআপের সামনে টুল নিয়ে বসে ন্যালা ঢুলছিল, এমন সময় থানার দরজায় টোকার শব্দ শুনে নিদ্রা ছুটে গেল তার,দরজা দিয়ে কার্তিক কে উঁকি মারতে দেখা গেল, কার্তিকের পাশ দিয়ে সোনার দোকানী শুধু মুণ্ডু বাড়িয়ে ভেতরের অবস্থা দেখার চেষ্টা করছিল,আধো অন্ধকারে কিছুই বিশেষ বোঝা যাচ্ছিল না,ন্যালা হুঙ্কার ছাড়ল, " কি ব্যাপার? কাকে
চাই?"হুঙ্কার শুনেই দোকানী সটকান দিল। কার্তিক একটু ভেতরে গিয়ে বলল," আজ্ঞে আপনাকে, দারোগা বাবু"। কার্তিকের মুখে দারোগা ডাক শুনে ন্যালা গলে ননী,কিন্তু মৌখিক গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল " ভেতরে এস,বল কি সমস্যা"? কার্তিক একেবারে লক আপের সামনে এসে আধো অন্ধকারে ঠাহর করে
দেখে, যা
ভেবেছে ঠিক তাই,অন্ধকারে
এক কোনায় মুখ নিচু করে বসে আছে কার্তিকের জীবনের চির শত্রু, তার ভাই , -'গণেশ'। "এইবার, যাদু, তুমি পড়েছ ফাঁদে, তোমার জ্যঠামি এইবার চিরতরে ঘুচবে, বার বার বললাম যে দাঁত গুলির প্যাঁচ খুলে কৈলাসেই ছেড়ে আয়, তা নয়, ওনার শুধু শো অফ"। "সেই কত যুগ আগে পৃথিবী
পরিক্রমার নামে মায়ের চারদিকে চক্কর লাগিয়ে চিটিং বাজি করে জিতে আর সেবার
ভ্যালেন্টাইন ডে তে বাবাকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে তুমি নিজেকে হিরো ভাবতে শুরু
করেছ,
এবার তুমি বুঝবে চাঁদ, এই পৃথিবীতে হরিপদ দারোগার হাত থেকে বিনা দৈব শক্তি আর আমার
সাহায্য ছাড়া কিভাবে বাঁচবে, আমি দেখব", মনে মনে ভাবল কার্তিক। মুখে বলল দারোগা বাবু আমি একজন কে "খুঁজতে খুঁজতে
এখানে এসেছি।" নিজের পদের প্রমান দিতে নীলরতন উঠে গিয়ে দারোগার চেয়ারে বসে পড়েছে।
কার্তিকের আওয়াজ শুনে গণেশের ধড়ে যেন প্রাণ এলো,
"দাদা, আমায় বাঁচা , প্লিজ"।"হুমম, দেখি, কি করতে পারি", কার্তিক নীলরতনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
" দেখুন দারোগা সাহেব, এই লোকটি কে কোথায় পেলেন? আমি ইন্টারনেটে এর ছবি দেখেছি, আপনার তো লটারী লেগে গেছে, এই লোকটি একটি মহা ফেরেব্বাজ ইন্টারন্যাশনাল চোরা কারবারী, একে মোটেই ছাড়বেন না", বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।
কার্তিকের কথা গণেশ শুনতে পারল না, কিন্তু দাদার ওভাবে চলে যাওয়া দেখে প্রমাদ গনল।
কিছুক্ষণ পর কার্তিক হতাশ মুখে মা এর কাছে ফিরল, " নাহ, মা,
থানায় যাকে আটক করে রেখেছে, সে অন্য কেউ, আমাদের গণেশ নয়।" "নয়? বলিস কি রে? “বলে মা
ডুকরে কেঁদে উঠলেন। বাজারে ধীরে ধীরে সন্ধ্যে নেমে আসতে লাগল, দোকান গুলোতে বাতি জ্বলতে শুরু করেছে, কার্তিক বলল, "চলো মা, আমরা ফিরেই যাই
কৈলাসে, এই
অন্ধকারে দৈব শক্তির সাহায্য ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না, ওখানে গিয়ে বাবাকে বললে কিছু একটা ব্যবস্থা অবশ্যই
হবে।" অগত্যা
নিমরাজী মা, কৈলাসের
দিকে রওয়ানা হলেন।
(১২)
সব শুনেটুনে শিব ঠাকুর তো রেগে কাঁই,"তোমরা সব এত বে আক্কেল হলে কি ভাবে? এখন কোথায় খুঁজি ছেলে টাকে, কে জানে কোথায় আছে,কিভাবে আছে?", “পই পই করে নিষেধ করে ছিলাম, কিন্তূ, এই সংসারে আমার কথা কেউ কি কখনো শুনেছে? এবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙল মা এর, চিৎকার করে বলে উঠলেন, " এখন তো ছেলে ছেলে করে আদিখ্যেতা করছ,তখন মনে ছিল না, যখন তোমার পেয়ারের বিষ্ণু ছেলেটার মাথাটি কেটে নিয়ে ছিল? আবার আদিখ্যেতা করে অরিজিনাল মাথার জায়গায় হাতির মাথা জুড়ে দেওয়া
হয়েছিল,
সেই থেকে বাছা আমার দাঁত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে, তুমি কি কিছু জানো যে মর্ত্যে হাতির দাঁতের কি চড়া দাম? ওরা জানতে পারলে বাছা কে আমার ছেড়ে দেবে ভেবেছ?"
বলে ডুকরে কেঁদে
উঠলেন মা।
এখন ,
গণেশ দাঁত নিয়ে কেন
গেছে ?
এই কঠিন প্রশ্ন টি করার সাহস পেলেন না দেবাদিদেব। শুধু
মিনমিনিয়ে বললেন, ' আহা,
আহা রাগ করো কেন ? আমি আছি তো, দেখি কি
করতে পারি?"
হ্যাঁ, তাই
দ্যাখো,
তা নাহলে আজ থেকে তোমার খাওয়া দাওয়া বন্ধ, তখন শুধু থেকো গাঁজার ওপরে, এই বলে রাখলাম ।" বলে মা দাপিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
মহাদেব প্রমাদ গনলেন, আবার ডাক পড়ল নন্দী-ভৃঙ্গীর, সব কথা বুঝিয়ে বলা হল তাদের বাবা বললেন , শোন, সেই হলধর না কি যেন লোকটি, ওর মনে হচ্ছে এলাকায় প্রভাব প্রতিপত্তি বেশ, একবার ওকেই ধর , কিন্তু খবরদার! খুব প্রয়োজন না হলে নিজেদের পরিচয় একদম দিবিনা, মর্ত্যের লোকজন আজ কাল হয়েছে মহা পাজি, না ভূতে বিশ্বাস করে, না, ভগবানে, এমন
লোকের কাছে যাওয়া ভূত বা ভগবান কারুর যাওয়াই সেফ নয়, নেহাৎ বাধ্য না হলে দৈব শক্তির প্রয়োগ এক্কেবারে নয়, মনে থাকে যেন'।
(১৩)
রাত প্রায় এগারোটা, আজ হলধর বাবুর মনটা বড় চঞ্চল, সেই ছেলেটি কোথায় যে গেল, আহা, বেশ পরিবারটি, ঠিক যেন শিব দুর্গার পরিবার, আজ দোকানের কাজের ভিড়ে ওদের আর খোঁজ করা গেলো না, কালকে একবার লোক পাঠিয়ে দেখব 'খন।যদি ধানাই পানাই আর একবার আসত, তা হলে জানা যেত। আজকে উনি ঘরের ভেতরেই বসে ছিলেন, মাঝারি সাইজের ঘর, বড়সড় একটি জানালা, একটি দরজা অন্তঃপুরের দিকে খোলে, আর তার উল্টো দিকে বাইরের দরজা, যেটা বাইরের দাওয়াতে খোলে, একটি একজনের শোওয়ার উপযুক্ত খাট, ঘরের মাঝে একটি মার্বেল টপ টেবিলে পুজোর অর্থাৎ গাঁজার সাজ
সরঞ্জাম সব সাজানো, কিন্তু বেশ বোঝা যায় যে ও বস্তুর ব্যবহার এখনো হয়নি। তা, ওরা এলো, এসে
জানালা দিয়ে উঁকি মারতে লাগল, ওদের দেখতে পেয়েই হলধর গিয়ে সদর দরজা খুলে ওদের সাদরে
আপ্যায়ন করলেন-“এসো
এসো ভায়ারা, কোথায়
ছিলে তোমরা? তোমাদের
মা ঠাকুরণ আর ছেলে দুটি ঠিক ঠাক বাড়ি পৌঁছেছেন তো? ছোট ছেলেটি কোথায় যে ঘুরতে চলে গেল, মা ঠাকুরণও দোকান থেকে কিছুই নিয়ে গেলেন না"।
“রোসো, রোসো, সব বলছি", হাত তুলে হলধর কে থামাল,"এখন আমরা তোমাকে যা বলতে চলেছি, তার কথা যেন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে, কথা দাও"। “দিলাম, বললেন হলধর"।"তুমি জান আজ যাঁরা তোমার দোকানে এসেছিলেন তাঁরা কে?"
"কেনো, তোমরাই তো বললে যে ওনারা হেতাল গঞ্জের জমিদার পরিবার, আহা, কি সুন্দর, ঠিক
যেন শিব ঠাকুরের সংসার"।“একদম ঠিক, ওঁরা
তাঁরই পরিবার", গম্ভীর গলায় বলল নন্দী।হা হা করে হেসে উঠলেন হলধর,
"অর্থাৎ তোমারা ধানাই পানাই নও নন্দী
ভৃঙ্গী"।"একদম
ঠিক!” বলল ওরা। "এই; এটা কিন্তু বেশী হয়ে যাচ্ছে, এই দেখ, আমি কিন্তু এখনো পুজোয় বসিনি", অবিশ্বাস জলধরের গলায়, “কি, কি প্রমান আছে? দেখি!" "প্রমান? হুমম, আমরা তোমাকে সশরীরে দর্শন দিতে পারব না, তবে..., ," বলে এদিক ওদিকে দেখে পানাই বলল,
" ওই লোহার আলমারিতে একটি
লাল শালুতে মোড়া বাক্স আছে , ঠিক?, যেটা হরিপদ সরখেল আজ সন্ধ্যায় তোমার
কাছে গচ্ছিত রেখে গেছে।
হলধর ভাবলেন ঠিকই তো, আজ সন্ধ্যায় হরিপদ দারোগা এসেছিল, মাঝে মাঝেই আসে, একটু অন্ধকার হলে, আড্ডা দেয়, চা খায়, আর মুখ বাঁধা থলে, বা বাক্স বন্দী কিছু গচ্ছিত রেখে যায়, বলে, থানার দস্তাবেজ, আপনি মান্যগণ্য মানুষ, তাই একটু সামলে রাখুন, আবার পরে এসে নিয়েও যায়। হরিপদর সামনেই সেগুলি উনি লোহার আলমারী তে তুলে রাখেন
আর দারোগা চাইলে ফেরৎ দিয়ে দেন, অন্যের ব্যাপারে উনি বেশি নাক গলান না, কিন্তু এসব তো এদের জানার কথা নয়, কিন্তু তবু সন্দেহ তো যায় না, তাই বলেন ,"এতে কি প্রমান হয়না যে তোমরা চোর? আড়ি পেতে আমার বৈঠক খানার ব্যাপার স্যাপার দেখেছ?"
"কি! আমরা চোর! যতবড় মুখনয় তত বড়
চোপা!" ধমকে ওঠে ভৃঙ্গী। ওকে শান্ত করে নন্দী বলে, "আচ্ছা, আমরা না হয় উঁকি মেরেছি, কিন্তু ওই পোঁটলায় কি আছে তা কি তুমি জান?"
"আমি পরের জিনিস বিনা অনুমতিতে ছুঁই
না" "ঠিক আছে, আমরা বলছি, ওতে কোনো সরকারী জিনিস নেই, আছে এক গোছা টাকা, আর সোনার গয়না।" হলধর দরজা বন্ধ করে ট্যাঁক থেকে চাবি নিয়ে আলমারি ও বাক্স
টি খুলে দেখে চোখকপালে তুলে ফেললেন। টাকা ও একজোড়া বড় সাইজের ঝুমকো কানের দুল আছে
বটে। "ওই টাকা আর গয়না হল ঘুষের জিনিস, আর ওটা ও নিয়েছে বড় সায়েব কে দিয়ে নিজের প্রমোশন নেবার
জন্য"। হলধর
বাবুর চোখে অবিশ্বাস দেখে ওর বলল "তবে দেখো,"ওদের দেখে চোখ উল্টে হলধর মূর্ছা গেলেন, কারন আর কিছুই নয়, ওরা দুজন জমি থেকে প্রায় ছয় ইঞ্চি ওপরে ভেসে রয়েছে।
(১৪)
চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে হলধরের
জ্ঞান ফেরানো হোল, সব কিছু বোঝানোর পর হলধর কে উড়িয়ে নিয়ে ওরা থানায় পৌঁছে গেল।থানায় গিয়ে হলধর
নাইট ডিউটির হাবিলদার কে দিয়ে দারোগা কে ডেকে পাঠালেন। হলধর মানী লোক, ভবিষ্যতের প্রধান, দারোগা পাশের কোয়ার্টার থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে থানায় এসে হলধর কে দেখে বসতে বলল।
নন্দীরা অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছে। "বলুন স্যার, আপনি এত রাতে! কি ব্যাপার?" হরিপদ সোজাসুজি লক আপের কাছে গিয়ে বললেন,"সরখেল, ওই ছেলেটিকে এক্ষুনি ছেড়ে দাও, ও নির্দোষ,আর তুমি জান যে ও কে? উনি সাক্ষাৎ শিব পুত্র 'গণেশ'"। সরখেল চোখ গুলি গোল্লা পাকিয়ে হলধরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বলল,
" লোকে বলে আমি ঘুষ খাই, কিন্তু অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না, যে, আমি গাঁজা খাই, এত রাতে সময় না নষ্ট করে কাল সকালে একবার আসুন,ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে এখন"। সরখেল তাকে গাঁজা খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছে দেখে জ্বলে উঠলেন
হলধর পাঁজা,"সরখেল!"
হুঙ্কার দিলেন হলধর। "তোমার সমস্ত কালো কারবার আমি জানি, আমার কাছে অকাট্য প্রমান আছে,ওঁকে ভালোয় ভালোয় ছাড়ো, না হলে সদরে রিপোর্ট যাবে, তাতে ফল ভালো হবেনা।তখন তোমার ট্রান্সফার হবে সুন্দরবনের
একেবারে ভেতরে, ওখানে
তুমি ঘুষ খাবেনা, বাঘেরা তোমায় চিবিয়ে খাবে।" সরখেলও হার মানার পাত্র নয়, " ও যদি দেবতা হবে তাহলে দৈব শক্তির সাহায্যে নিজেই বেরিয়ে
আসুক।""তোমার
পাপ চোখে ওঁদের দৈব শক্তি দেখা সম্ভব নয়","তবে...প্রমান চাও? আচ্ছা..", “তোমার একটি পুরোনো কোমরের ব্যাথা আছে না?"
"আছেই তো, উঁ হুঁ হুঁ, সোজা হয়ে বসতেও পারিনা", সরখেল ডুকরে উঠল। “ওই গরাদ ধরে এদিকে পেছন ফিরে একবার দাঁড়াও তো।"
মজা দেখতে সরখেল তাই করল।"এইবার। বাবারা, আপনারা আছেন তো? যেমন কথা হয়ে ছিল.."দুইজোড়া অদৃশ্য পায়ের ভীষণ জোরালো
লাথি এসে পড়ল সরখেলের পশ্চাদ দেশে, একটা ভীষণ মট করে শব্দ হল আর সরখেল মুখ থুবড়ে পপাত চ।হতবাক
সরখেল বলল, " কে ? কে?" "সে কথা ছাড়ো,” হলধর আর হাবিলদার মিলে সরখেল কে টেনে তুললেন।
“বল, তোমার, কোমরের
ব্যাথা আছে না গেছে?" অদৃশ্য লাথি খেয়ে আর সদরে ঘুষের রিপোর্ট হবার শাসানিতে কাজ
হল,
সরখেল তালা খুলে দিয়ে বলল, বাবা গণেশ, আমরা পাপী তাপী মানুষ, মর্ত্যে এসেছেন ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার দয়া করে এদিক পানে আসবেন না, আর আসলেও অমুল্য দাঁতগুলো বাড়ীতেই খুলে রেখে আসবেন, না হলে আমাদের মত গরীবদের বাঁচা দায় হবে।
(১৫)
ভোর হয়ে আসছে, মৃদু মন্দ শীতল হাওয়া ভেসে আসছে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে।থানার বাইরে এসে হলধর
হাতজোড় করে গণেশ কে বললেন," বাবা, এত দূর যখন এসেছেন, তখন দুটি দিন আমার বাড়িতে অতিথি হয়ে আসুন, আমি আপনার পরিচয় কাউকে দেবোনা।" স্মিত হেসে গণেশ বলল, " কথা দিচ্ছি, আসছে পয়লা বৈশাখ হাল খাতার দিনে তোমার কাপড়ের দোকানে আমি
নিজে এসে তোমার পূজো গ্রহণ করব"।এই বলে গণেশ, নন্দী-ভৃঙ্গী ধীরে ধীরে বাতাসে মিলিয়ে গেল।আর গণেশের ইঁদুর? সে এক অন্য গল্প , তোমাদের শোনাবো অন্য কোন সময়।।
।। সমাপ্ত ।।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post