আমার চোখে
সাগরপারের কারাগার
সেলুলার
সেলুলার
কৃষ্ণা সাহা
ছোট বেলায় ভূগোল পড়ে ভাবতাম, আন্দামান একটা দ্বীপ যেখানে সেলুলার জেল
আছে,আর কেউ
সেখানে গেলেই তাকে জেলে ঢুকিয়ে অত্যাচার করা হয়।বড় হবার পর
ভুল ধারণাটা ভেঙ্গে গেলেও মনের গভীরে ভয়টা যেনো রয়েই
গিয়েছিল । আর সেটার
প্রমাণ পেলাম আন্দামান পৌঁছানোর কয়েক মূহুর্ত আগেই। আকাশ থেকে
তাকে দেখে কিন্তু এটাই মনে হয়েছিল স্বপ্নের দেশ।
সেলুলার জেল-ঔপনিবেশিক কারাগার বা কালাপানি। ভারতের
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত একটি বহুল আলোচিত একটি
কারাগার। ১৯০৬ সালেএই কারাগারটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে
অংশগ্রহণকারী বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ-বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত ও বিনায়ক
দামোদর সাভারকার এবং আরো
অনেককে এই কারাগারের দীর্ঘদিন বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এখন এই দালানটি জাতীয় স্মারক হিসেবে
ব্যবহার হচ্ছে।
বিপ্লবের অগ্নিযুগের
প্রচারের প্রথমসারিতে এলেও দ্বীপান্তর শুরু হয়েছিল সিপাহী বিদ্রোহের পরেই। গ্রেট ব্রিটেনের জন্য
দ্বীপান্তর ছিলো অস্ট্রেলিয়ায়।
নুতন উপনিবেশ স্থাপনের সময় ব্রিটিশরা একই সঙ্গে দ্বীপান্তরও খুঁজে রাখতো।
ভারতের জন্য তাদের সেই অনুসন্ধান ছিলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
বাংলা তথা ভারতে যখন ব্রিটিশ বনিকদের মানদন্ড
ধীরে ধীরে রাজদন্ড হয়ে গেছে। ততদিনে কালাপানি পেরিয়ে
দ্বীপান্তরে নির্বাসিত
হয়ে গেছে বহু বন্দী। মূলত, কুখ্যাত অপরাধীদের জন্য এই দ্বীপ নির্ধারিত হয়েছিলো, কিন্তু ঠগী,ফাঁসুড়ে ডাকাতদের বদলে এই দ্বীপ হয়ে উঠলো ব্রিটিশ
বিরোধী আন্দোলনকারীদের বন্দী বাস।
সিপাহী বিদ্রোহের পরবর্তী সময়ে অন্তত ২০০ জন
বিদ্রোহীকে পাঠানো হয়েছিল। সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে যাঁরা
সম্রাট দ্বিতীয়
বাহাদুর শাহ জাফরের কাছে পিটিশন দায়ের করেছিলেন তাদেরকেও নির্বাসিত হতে হয়েছিল কালাপানি পেরিয়ে সুদূর আন্দোলনে।
এই দ্বীপকে বাছার পিছনে অনেক যুক্তি ছিলো
ব্রিটিশদের।সেই সময়ে এই দুর্গম বিপদসংকুল দ্বীপে জীবন ধারণ
ছিলো অসম্ভবের
নামান্তর। তাছাড়া এখান থেকে পালানো ছিলো অত্যন্ত কঠিন।আর যদিও
বা পালানো সম্ভব হতো, কালাপানি ফেরত ব্যাক্তিকে গ্রহনে তখন প্রস্তুত
ছিলোনা হিন্দু সমাজ।
Photo Courtesy : Writer:: Edited by Swarup Chakraborty |
দ্বীপান্তরে নির্বাসিত বন্দী ভার সামলাতে কারাগার
নির্মাণ ছাড়া আর পথ ছিলোনা ব্রিটিশদের। ১৮৯৬ থেকে ১৯০৬ ,দশ বছর ধরে নির্মিত হয়েছিল সেলুলার জেল। বার্মা থেকে আনা ইট দিয়ে
গাঁথা হয়েছিল শোষনের
এই স্মারককে। নির্মমতার প্রতীক এই জেলের সেল থেকেই এর নাম করন হয়
"
সেলুলার ।
সাইকেলের চাকার যেমন স্পোক হয় তেমনি এই কারাগারের সাতটি
বাহু। প্রতিটি
তিনতলা। সারিবদ্ধ সেলগুলোকে ঘুপচি ঘর বললেও কম বলা হবে।এমন ভাবে ৬৯৩টি
সেল বানানো হয়েছিলো।বহু উঁচুতে থাকতো একটা ঘুলঘুলি।আলো আসতো নামমাত্র।
এরকম পেলে একা একা থাকতে হতো বন্দীদের,যাতে কেউ কারো মুখ দেখতে না পায়। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম , অকথ্য অত্যাচারের মধ্যে তাদের দিন কাটতো। খাবার
হিসেবে যা দেওয়া হতো তা এককথায় পরিমাণে সামান্য ও অখাদ্য। নির্মমতার
এখানেই শেষ নয়। সূর্যাস্তের পর থেকে ১২ঘন্টা প্রকৃতির ডাকে
সাড়া দিতে পারতেন
না বন্দীরা। অপেক্ষা করতে হতো পরদিন সূর্যোদয় অবধি।
বন্দীরা কোনো সংবাদপত্র হাতে পেতো না, চিঠিপত্র এলে বারবার পরীক্ষা করা হতো। বহু বন্দী উন্মাদ হয়েও যেতেন। এই
কারাগারের অত্যাচারের
কথা বলে শেষ করা যাবে না। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় বন্দী হলেন
ভগৎ সিং এর সঙ্গী মহাবীর সিং। জেলের অবস্থা নিয়ে সোচ্চার
হয়েছিলেন মহাবীর, শুরু করেছিলেন অনশন আন্দোলন। তাঁর অনশন ভঙ্গ করতে ব্রিটিশ
প্রশাসন তাঁর মুখে জোর করে দুধ ঢেলে দেয়।সেই দুধ তাঁর
ফুসফুসে প্রবেশ করে
শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান মহাবীর। তারপর তার দেহ পাথরে বেঁধে
ছুড়ে ফেলা হয় সমুদ্রে, কালাপানিতে।
সবকিছুর পরও কালাপানি ছিলো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে
পূণ্যভূমি। নিজেদের বর্তমান ওখানে সমর্পন করে তাঁরা
চেয়েছিলেন দেশবাসীর ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে।
।। সমাপ্ত ।।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post