সব হারানোর ব্যথা
রাত্রের শেষ লোকাল ট্রেনে চেপে বৈকুণ্ঠপুর থেকে বাড়ি ফিরছেন যজ্ঞেশ্বর ।
গিয়েছিলেন এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে । ট্রেন বসার পর স্ত্রী মন্দারের কথা মনে পড়লো
তাঁর । ইস্, আজ অনেক রাত হয়ে গেল
। বেচারী বাড়িতে একলা রয়েছেন । আজকাল একটাই ভয় তাড়া করে ফেরে যজ্ঞেশ্বরকে ।
স্ত্রীর কাছে কেউ এক জন নেই যে, হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে
ডাক্তার ডেকে আনবে । একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমেই দ্রুত হাঁটতে থাকলেন
বাড়ীর পথ ধরে ।
বাড়ীর অনতিদূরেই রয়েছে বিশাল একটা খেলার মাঠ । সেই মাঠের পাশ দিয়ে আসার সময়
বাতাসে ভেসে আসা চাপা গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন । আওয়াজটা ভেসে
আসছে মাঠের অন্ধকারাচ্ছন্ন বুক থেকে । কেউ নিশ্চয়ই কোনো বিপদে পড়েছে ! এদিকে আবার
সাপখোপের বড়ই উপদ্রপ । কাউকে সাপে কাটলো না তো ! যজ্ঞেশ্বর দ্রুত চলে এলেন
গোঙ্গানি লক্ষ্য করে । এসে ছোট্ট পকেট টর্চের আলোয় দেখেন বছর চোদ্দর একটি মেয়ে
মাঠের মাঝখানে অর্ধউলঙ্গ অবস্থায় পড়ে থেকে ছটফট করছে নিদারুণ যন্ত্রণায় । দ্রুত
কাঁধের ঝোলা থেকে জলের বোতল বের করে মেয়েটির মুখের সামনে ধরে বললেন, ‘জলটুকু খেয়ে নাও মা।’
মেয়েটি ওই অবস্থাতেই ছিটকে সরে গিয়ে ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলো, ‘তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাকে
ছেড়ে দাও তোমরা ।’
নিঃসন্তান সৌমেনের বুকের ভিতরটায় মোচড় দিয়ে উঠলো । আহা রে, না জানি কতই না পাশবিক অত্যাচার হয়েছে কচি
মেয়েটির ওপর । ধর্ষিতা মেয়েটিকে গুছিয়ে নেবার সময় দিয়ে যজ্ঞেশ্বর গলায় সহানুভূতি
মিশিয়ে বললেন, ‘তোমার বাড়ি কোথায় মা ?’
- ‘আমি বড়রাস্তার মোড়েই একটা ঝুপরিতে থাকি এক পাতানো কাকীর সাথে । আমার
মা-বাবা নেই ।’ বোঝা গেল সামান্য হলেও মেয়েটির ভয় কেটেছে ।
- ‘ভয় পেয়ো না মা । আমি তোমার বাবার মতো । যারা তোমার ক্ষতি করেছে তাদের চেনো
তুমি ?’
- ‘চিনি । ওই এলাকারই বড়লোকের দুটো বখাটে ছেলে । ঘুমিয়েছিলাম । কাকীমার পাশ
থেকে জোর করে তুলে এনেছে আমাকে । কাউকে
বলে দিলে আমাকে জানে খতম করে দেবে বলে শাসিয়ে গিয়েছে ।’ মেয়েটি হাউ হাউ করে কেঁদে
ফেললো ।
- ‘তোমার কোনো ভয় নেই মা । থাক, ওদের নাম বলতে হবে না
তোমাকে । এখন চলো দেখি আমার সাথে ।’
- ‘কোথায় ?’
- ‘আমার বাড়িতে ।’
- ‘কিন্তু আমি যে অপবিত্র হয়ে গিয়েছি ! ওরা যে আমাকে......’ কথাটা অসমাপ্ত
রেখে মেয়েটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ।
- ‘দূর বোকা মেয়ে । নর্দমার কাদা গায়ে লাগলে কেউ কি অপবিত্র হয়ে যায় ?
বাড়িতে গিয়ে ভালো করে স্নান করে নিবি । ব্যাস, শরীরে লেগে থাকা সব নোংরা ধুয়েমুছে গিয়ে একেবারে পবিত্র হয়ে যাবি ।’
যজ্ঞেশ্বর ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দেন ।
- ‘তোমরা আমাকে মেনে নিতে পারবে বাবা ? সমাজ তোমাদের
কিছু বলবে না ?’
নিঃসন্তান যজ্ঞেশ্বরের গলা বুজে এলো আবেগে, ‘ওরে, তুই আমাকে বাবা বলে ডেকেছিস তাতেই আমি ধন্য
হয়েছি । সমাজের কথা বলছিস ? যে-সমাজ মেয়েদের আব্রু রক্ষা
করতে পারে না, যে-সমাজ নিগৃহীতাকে দোষারোপ করে সেই সমাজকে
আমি ধিক্কার জানাই । শোন মেয়ে, তোর এই বাবা যতকাল বেঁচে
থাকবে তোকে বুক দিয়ে আগলে রাখবে । এবার ওঠ । বাড়ি যেতে হবে না ? তোর মা যে বসে আছেন আমাদের ফেরার পথ চেয়ে ।’
যজ্ঞেশ্বর বাড়ি এসে সব কথা খুলে বললেন স্ত্রীকে । মন্দার সব শুনে মেয়েটিকে
বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আজ
থেকে তুই আমাদের মেয়ে হলি মা । হেসেখেলে গান গেয়ে এই সংসারটা ভরিয়ে রাখবি । আমি
তোকে নতুন একটা নাম দিলাম । আজ থেকে তোর নাম হবে মৃন্ময়ী ।’
পোড়াকপালি মেয়েটা নতুন একটা নামের সঙ্গে মা-বাবা পেয়ে খুব খুশী । দু’হাত দিয়ে
মন্দারকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তাই
হবে মা । তোমরা আমাকে মৃণ্ময়ী বলে ডেকো ।’
বছর খানেক পর । আজ রথ । যজ্ঞেশ্বরের হাত ধরে মৃন্ময়ী এসেছে দূরের এক রথের
মেলায় । বিশাল মেলাপ্রাঙ্গন হাজার মানুষের ভিড়ে জমজমাট । যজ্ঞেশ্বর মেয়েকে সমস্ত
আনন্দের উপকরণ জুগিয়ে চলেছেন হাসিমুখে । মৃণ্ময়ীকে যখন নাগরদোলায় চাপিয়েছেন ঘটনাটা
তখনই ঘটলো । সহসা কী একটা কারণে যেন জোর ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেল গোটা মেলা
প্রাঙ্গন জুড়ে । মৃন্ময়ী একলা চেপেছে নাগরদোলায় । ওকে নাগরদোলায় চাপিয়ে যজ্ঞেশ্বর
গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন কিছুটা দূরে । ধাক্কাধাক্কির জেরে দূরে ছিটকে গেলেন । তারপর
থেকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না মৃন্ময়ীকে ।
যজ্ঞেশ্বর সেই থেকে গোটা মেলা প্রাঙ্গন জুড়ে খুঁজে চলেছেন নিজের হারানো মেয়েকে
। এদিকে রাত ক্রমশ গভীর হচ্ছে । একসময় ভাঙ্গন ধরলো মেলায় । ভাঙ্গা মেলায় তেমন
মানুষজন নেই । যারা আছে তারা দ্রুতহাতে গুছিয়ে নিচ্ছে যে–যার অবিক্রিত পসরাসামগ্রী
। দু-চারজন সুযোগসন্ধানী মানুষের দেখাও মিলছে এখানে সেখানে । যদি ভাঙা মেলায় কিছু
পেয়ে যায় জলের দরে । এদের মাঝেই যজ্ঞেশ্বরকে দেখা গেল ভেঙে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও মৃন্ময়ীর
সন্ধানে ছুটে মরছেন মেলার এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্ত । মানুষটা দ্রুত একজন অসহায় বাপ
হয়ে উঠেছেন এই ভাঙা মেলায় । তাঁর শরীরের সমস্ত রক্ত ঘাম হয়ে ঝরতে থাকে হাজার
মানুষের পদদলিত বিবর্ণ ঘাসের বুকে । তিনি তবুও ছুটে চলেছেন মেলার এপ্রান্ত থেকে
সেপ্রান্তে ।
চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে আছে তাঁর সব হারানোর ব্যথায় কালো হয়ে যাওয়া
মুখ । খোঁজার মাঝেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ছেন নাগরদোলার শেষ দু-চারটে কারিগরের কাছে, দোকানের মনিব ও ব্যাপারীদের কাছে । দাঁড়িয়ে
পড়ে বর্ণনা দিচ্ছে, ‘ফর্সা , একহারা
চেহারা......চাপা নাক......হাত দুটিতে বড়সড় গোছের রঙ্গিন কাঁচের চুড়ি....আজ
মেলাতেই কিনে পড়েছে.....আমি যে ওর পোড়া কপালে বাপ.........।’ তাঁর সেই বর্ণনায়
যে-সুর ঝরে পড়ছে তা বড়ই করুণ । সোজা এসে বিঁধে যাচ্ছে যে শুনছে তার বুকের ঠিক
মধ্যিখানে ।
দেখেশুনে কেউ কেউ পাগল ভেবে হাসাহাসি করছে । অনেকেই আবার না শোনার ভান করে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের পসরা গুছোনোর কাজে । তারপর একসময় নাগরদোলা, মেলা, হৈচৈ সবকিছু
হারিয়ে গেল পাথুরে স্তব্ধতার আড়ালে । ঝড়ে বিধ্বস্ত যজ্ঞেশ্বরের সামনে পেছনে পড়ে
থাকলো শুধু ন্যাড়া মাঠ । সহসা একপাল হাওয়া ছুটোছুটি জুড়ে দিলো ফাঁকা
মেলাপ্রাঙ্গনের বুকে । তাতেই যজ্ঞেশ্বরের বাঁধভাঙা কান্নার শব্দ মিলিয়ে যেতে থাকলো
দুরন্ত বাতাসের শন্ শন্ শব্দের আড়ালে । একসময় হতাশ হয়ে, নাকের
জলে চোখের জলে একাকার হয়ে, সন্তান হারানোর বুক ভাঙা আর্তনাদ
সম্বল করে যজ্ঞেশ্বর বাড়ি ফেরার পথ ধরলেন । পূব আকাশ তখন রঙ বদলাতে শুরু করেছে ।
যজ্ঞেশ্বর বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, বাড়ীর খোলা দরজায় সেঁটে আছে মন্দারের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কালো মুখ । পাশে
উদ্বিগ্ন মৃন্ময়ীর মুখ । দেখেই প্রায় ছুটে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে
পড়লেন যজ্ঞেশ্বর, ‘তুই ফিরে এসেছিস মা ? ওদিকে আমি যে কত করে তোকে......।’
মৃন্ময়ীও কান্না চাপতে না পেরে বাপের বুকে লেপটে থেকে কান্নাজড়ানো গলায় বলে, ‘ভিড়ের চাপাচাপিতে তোমাকে যে হারিয়ে
ফেলেছিলাম বাবা । কিছুক্ষণ খুঁজেও ছিলাম তোমাকে । না পেয়ে চলে এসেছি বাড়িতে । রাত
গভীর হবার আগেই চলে এসেছি আমি ।’
মন্দার কান্নাভেজা গলায় বললেন, ‘দুশ্চিন্তায় দুশ্চিন্তায় দু’দণ্ড স্থির হয়ে বসতে পারছিলাম না । এখন যাও,
চোখেমুখে জল দিয়ে এসো । চা খেয়ে একটু গড়িয়ে নাও বিছানায় । আজ আর
অফিসে যেতে হবে না তোমাকে ।’
ক্লান্ত শ্রান্ত যজ্ঞেশ্বর মেনে নিলেন স্ত্রীর কথা । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
চোখেমুখে জল দিয়ে এসে চা খেয়ে সোজা চলে এলেন বিছানায় । মৃন্ময়ী এসে বাবার মাথায়
হাত বুলিয়ে দিলো । নিশ্চিন্ত যজ্ঞেশ্বর, হারানো ধন ফিরে পাওয়া যজ্ঞেশ্বর একসময় তলিয়ে গেলন গাঢ় ঘুমে ।
আরও বছর দশেক পর । মৃন্ময়ী এখন আর সেই মৃন্ময়ী নেই । বাপ-মায়ের স্নেহ ভালোবাসা
এবং মাথার নিশ্চিন্তের ছাদ পেয়ে মেয়েটা এতোদিনে খুবই সুন্দরী হয়ে উঠেছে । তাকালে
চোখ ফেরানো যায় না । মেয়েকে আজ পাত্রস্থ করতে চলেছেন যজ্ঞেশ্বর । সুচাকুরে পাত্রটি
তাঁরই সহকর্মীর সন্তান । সব জেনেশুনেই রাজী হয়েছে মৃন্ময়ীকে বিবাহ করে ঘরে তুলতে ।
যজ্ঞেশ্বর যেন দম ফেলারও অবকাশ পাচ্ছেন না । অন্যান্য এয়োস্ত্রীদের নিয়ে মন্দারও
মেতে রয়েছেন স্ত্রী আচার নিয়ে । যজ্ঞেশ্বর একলার হাতে সবদিক সামলাচ্ছেন চোখের জল
সামলাতে সামলাতে ।
বিবাহ আসরে বসে পুরোহিতমশাই সরঞ্জাম গোছাতে গোছাতে হাতের কাছে কিছু একটা বস্তু
না পেয়ে যজ্ঞেশ্বরের কাছে চাইলেন । যজ্ঞেশ্বর দ্রুত কদমে ঘরে এসে ঢুকলেন । এখন
একটি মুহূর্তও নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না । পাত্রপক্ষ চলে আসবে যে-কোনো সময়ে । হাতে
আর বেশী সময় নেই । পুরোহিতের চাওয়া বস্তুটা নিতে ঢুকেছেন এই ঘরে । এখনেই তো
রেখেছিলেন সেই বস্তু । কোনোদিকে তাকানোর সময় পর্যন্ত নেই । ঘরে ঢুকে এদিক সেদিক
হাতড়াতে লাগলেন বস্তুটা হাতে পাবার আশায় । কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছেন না কোথায়
রেখেছেন । গোছানো সরঞ্জামগুলো আগোছাল হতে লাগলো খোঁজার তাড়নায় । যজ্ঞেশ্বরের
ভ্রুক্ষেপ নেই তাতে । হঠাৎ শুনলেন কে যেন বলে উঠলো, ‘কি খুঁজছো বাবা ?’
যজ্ঞেশ্বর চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন । বিয়ের কনের সাজে সেজে একটি মেয়ে !
তাঁর চোখমুখ দেখে বোঝা গেল মেয়েটিকে চিনতে পারছেন না । মেয়েটি আবার শুধোলো, ‘কি খুঁজছো বাবা ? আমাকে
বলো এখনি খুঁজে দিচ্ছি ।’
যজ্ঞেশ্বর অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেন মেয়েটির চাঁদপানা মুখের দিকে । কনের সাজে
মেয়েটিকে ভারি সুন্দরী দেখাচ্ছে ! আহা, অমন একটি মেয়ে যার ঘরে আছে না জানি সে কত ভাগ্যবান !
- ‘ও বাবা, আমার দিকে অমন করে তাকিয়ে আছো কেন ? কি হয়েছে তোমার ? ও বাবা, শরীর
খারাপ লাগছে ?’
‘বাবা’ ডাক শুনতে শুনতে বাস্তবে ফিরে এলেন যজ্ঞেশ্বর । ছিঃ-ছিঃ। নিজের
মেয়েকেই চিনতে পারছিলেন না ! অথচ এই মৃন্ময়ীর জন্যই আজ এতো আয়োজন, এতো ব্যস্ততা ! ছিঃ-ছিঃ । এই লজ্জা তিনি রাখবেন কোথায় ? মেয়েটিকে একদিন অন্ধকার মাঠ থেকে তুলে এনে নিজের সংসারে ঠাই দিয়েছিলেন । বিগত
বারোবছর ধরে নিজের ঔরসজাত সন্তানের মতো লালনপালন করলেও ঘর-সংসার ভুলে এতোকাল কেবল
কাজ আর কাজ করে গিয়েছেন বলেই কি মৃন্ময়ীর দিকে তেমন করে তাকানোর সময় করে উঠতে
পারেননি ? যজ্ঞেশ্বরের দু’চোখে জল জমতে শুরু করলো । ঘুরে
দাঁড়িয়ে সোজা চোখে তাকালেন মৃন্ময়ীর মুখের দিকে । অমনি বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে
উঠলো কিছু একটা হারানোর ভয়ে । কি হারানোর ভয়ে বুকে কাঁপন ধরেছে বুঝতে না পেয়ে
দঁড়িয়ে রইলেন পাথরের মূর্তি হয়ে ।
মৃন্ময়ী কাছে এসে যজ্ঞেশ্বরের বুকে মাথা রেখে ভয়ার্ত গলায় শুধোলো, ‘কি হয়েছে বাবা ? অমন
করছো কেন ?’
।। সমাপ্ত ।।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post