অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, October 2, 2019

ছোটদের গল্প-একজন দাদুর গল্প- সহেলী চট্টোপাধ্যায়


একজন দাদুর গল্প

সহেলী চট্টোপাধ্যায়

Image Courtesy: Google Image Gallery Collage: Swarup Chakraborty

রুবিকের মাঝে মাঝে মামার বাড়ি অসহ্য লাগে। পড়াশোনা করতে এমনিতেই ভাল লাগে না। তারওপর রয়েছে দাদুর খিচখিচ। দাদু তো ওকে টিভি দেখতেই দেন না। স্কুল থেকে ফিরে দুপুরে খেতে খেতে একটু যা ডোরেমন দেখা শুধু এলাউ। একঘন্টা যেই হয়ে যাবে অমনি মিলিমাসি এসে টিভি বন্ধ করে দিয়ে যাবে। বলবে এবার রেস্ট নাও রুবিক। নইলে দাদু বকবে তোমাকে।
টিভি দেখতে দেখতে রুবিক এক এক দিন ঘুমিয়েও পড়ে। দাদু আর দিদার কড়া নজর থাকে। মিলিমাসির ওপর। মা তো সেই সকালে বেরিয়ে যান ফেরেন অনেক রাত করে। বাবা বিদেশে থাকেন। ফোন আর হোয়াটস এপ এ ভিডিও কল করেন ছুটির দিনগুলো। দিদা রুবিককে অনেক ছাড় দিলেও দাদুর নিয়ম বেশ কড়া। এক ঘন্টার বেশি রুবিককে কিছুতেই টিভি দেখতে দেবেন না। রুবিকের ক্লাসের বন্ধুরা কত টিভি দেখে মোবাইলে ক্যাণ্ডি ক্রাশ খেলে আরও কত রকম গেম খেলে সেই সব গল্প ক্লাসে এসে শোনায়। রুবিকের ও খুব ইচ্ছা হয় এসব খেলতে কিন্তু দাদুর জন্য কিছু করতে পারে না। কম্পিউটারে বসলেও বেশিক্ষণ গেম খেলার সুযোগ পায় না। দাদু ও তক্কেতক্কে থাকেন। একঘন্টা পর এসে ঠিক রুবিককে তুলে দেন। কখনও বলেন আমার সঙ্গে বেড়াতে যাবি?
রুবিক লাফিয়ে ওঠে। দাদুর হাত ধরে বেড়াতে যাওয়ার সময়টা ওর খুব ভাল লাগে। দাদু ওকে নিয়ে অনেক হাঁটেন। রিক্সা বা টোটো চড়তে চান না চট করে। রুবিকেরও হাঁটতে ভালই লাগে। কখনও ওরা গঙ্গার ঘাটে চলে যায়। কখনও কোনো মন্দির। দাদু খুব ভাল গল্প বলতে পারেন। ফিঙ্গে আর কুঁকড়োর গল্প, ঘ্যাঁঘ্যাসুর এর গল্প বারবার শুনতে চায়। কখনও হাঁটতে হাঁটতে পুরানো কোন বাড়ির সামনে চলে আসে তারা। কখনও মেলা। কখনও বা বাজার। দাদু দরদাম করে। রুবিক সব কিছু লক্ষ্য করে। ফলওয়ালা থেকে সব্জিওয়ালা সবাইকে ও খুব খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে। দাদু একটা দারুণ জিনিস তাকে দেখিয়েছেন। একটা বকুল গাছ। ছোট্ট ছোট্ট সাদা ফুলে ভর্তি গাছ। কি মিষ্টি গন্ধ! গাছে আবার লম্বা লম্বা ছোট ছোট ফল ও হয়। তবে খাওয়া যায় না। গাছতলাটা ফুলে ফলে ভর্তি হয়ে থাকে। রুবিক তার ছোট্ট হাত বাড়িয়ে কুড়িয়ে নেয় আর নিজের প্যান্টের পকেট ভর্তি করে নেয়। বাড়ি গিয়ে সে একটা ছোট বাটিতে ফুলগুলো রেখে  অল্প জল ঢেলে দেয়। বাটিটা নিজের পড়ার টেবিলে রেখে দেয়। মিষ্টি গন্ধে ঘরটা কেমন স্নিগ্ধ হয়ে থাকে। দাদু ছাদে কিছু টবে জুই, বেল, গন্ধরাজ, কামিনী বসিয়েছেন। শীত কালে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাও করেন। রুবিকের বেশি পছন্দ গরমকালের ফুল। কারণ গরমের ফুলের গন্ধ বেশি হয়। দাদু বাগানে কৃষ্ণচূড়া, কাগজ, শিরিষ, কদম, অশোক, আম, জাম, পেয়ারা, বাতাবি লেবু কাঁঠাল,দেবদারু হেন গাছ নেই করেননি। গাছগাছালি থাকার জন্য প্রচুর পাখির ও আনাগোনা হয়। হরিয়াল, কুবো, বেণেবৌ, টুনটুনি, রঙ্গিন কাঠঠোকরা, বসন্তবৌরি সব সময় ডাকাডাকি করে। রুবিকের মনটা ভালই লাগে। অনেক মনখারাপ কেটে যায় পাখির ডাক শুনলে। দাদু প্রচুর কাজ করেন।  অন্য সময় হোমিওপ্যাথি চর্চা করেন। বাজার দোকান, ঠাকুরপুজো, রুবিককে নিয়ে বিকেলে বেড়াতে যাওয়া, পড়তে বসানো সবই করেন। রুবিককে লাইব্রেরীর কার্ড ও করিয়ে দিয়েছেন। ও পছন্দ মত বই পড়তে পারে। টিভি আর ফোন নিয়ে ওকে পড়ে থাকতে দেখলেই দাদু চটে যান। এই নিয়েই দাদুর সঙ্গে যত অশান্তি। মাকে বললে কোন লাভ হয় না। টিভি দেখাটা ভাল নয় এটাই শুনতে হয়।


পুজোর সময় বিশাল চাপের মুখে থাকেন সুলেখক অরিজিত রায়। ছোটোদের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখতে হয় অরিজিতকে। স্কুলের শিক্ষকতার ফাঁকে-ফাঁকে গল্প ছড়া লেখার কাজটা করতে ভালই লাগে। অরিজিত আজও টিভি দেখতে পারে না। বেশিক্ষণ কিছুতেই মন দিতে পারে না। আজ ও যেন দাদুর রাগী রাগী চোখ দুটো অনুভব করে নিজের মনের গভীরে। মোবাইলে ভিডিও ও দেখতে পারে না। অথচ ওর কলিগরা মোবাইলে ভিডিও দেখে দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা দিব্যি কাটিয়ে দেয়। প্রযুক্তি খারাপ নয় তবে খুব সাবধানে একে ব্যাবহার করতে হয়। ইউটিউব থেকে ও অনেক রান্নাও শিখেছে। বিভিন্ন য়েব ম্যাগে নিয়মিত লেখে এবং পড়ে। অরিজিতের পড়ার নেশা প্রবল। বাড়ির বাগানে আজও নানা রকম গাছ বসিয়েছে ও। দাদুর সঙ্গে বসে যে গাছগুলো লাগিয়েছিল সেসব গাছ এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। নিজের মনে সে অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়ায় বাগানে। পাখির ডাক শোনে। বেশিক্ষণ মানুষের সঙ্গ তার ভালো লাগে না।  প্রকৃতি একজন মানুষের মনের কল্পনাশক্তিকে অনেক বেশি উর্বর করে। ডিজিট্যাল বিনোদন সেই আনন্দ কাউকে দিতে পারে না। এটা অরিজিত মনে করে। কিছু লোক তাকে পাগল মনে করে। একা একা একটা বাড়িতে গাছপালা আর বইপত্র নিয়ে যে পড়ে আছে সে তো পাগলই।
  মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অসামাজিক মনে হয়। দাদুই তার বারটা বাজিয়েছে। আবার কখনও মনে হয় নাহ জীবনটা বেশ কেটে যাচ্ছে। এইভাবে ভাল থাকতে কজন পারে। ছোটবেলা থেকেই সে যদি টিভি ভিডিও গেম বা মোবাইলের এর  নেশা করে ফেলত তাহলে আর লেখক হয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হত না। বুঝতেও পারত না জীবন এত রঙ্গীন হতে পারে।

।। সমাপ্ত ।।

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |






















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান