অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, October 2, 2019

ভ্রমণ- মাহিষ্মতী -পৃথ্বীশ সেন


মাহিষ্মতী

পৃথ্বীশ সেন





মাহিষ্মতী নগরী, এক ইতিহাস বিখ্যাত নগরী। এখন বিখ্যাত হয়েছে বাহুবলী সিনেমার জন্য। সিনেমায় যে নগরী ঘিরে ঘটনা আবর্তিত হয়েছে সেই মাহিষ্মতী সম্বন্ধে আজ লিখতে বসেছি যদিও আমি যখন গিয়েছিলাম, মাহিষ্মতী তখনও এত জনপ্রিয়তা পায়নি কারন তখনো মুক্তি পায়নি বাহুবলী।
অমকারেশ্বর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম তখন প্রায় সাতটা। মাহিষ্মতী এসে পৌছলাম প্রায় সাড়ে নয়টা। অমকারেশ্বর ছাড়িয়ে একটু বেরুতেই শুরু হল জঙ্গল রাস্তা, শুনলাম সিংহ চিতা ভালুক যখন তখন বেরুতে পারে। রাস্তাও মোটামুটি খালি খালি। যাইহোক আমরা তেমন কিছু দেখতে পাইনি।
মাহিষ্মতী ঢোকার আগে ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিল বলল এগিয়ে যেতে, ও আসছে গাড়ি পার্ক করে। গাইড আমাদের ড্রাইভার।

বিশাল তোরণ উপরে এখনো পাহারা দেয় প্রহরী। পেরিয়ে এলাম আমরা প্রাসাদে। ঢুকতেই বামদিকে শিবকন্যা রানী আহল্যাবাই এর মর্মর মূর্তি।

বর্তমান হিন্দু ধর্মে এনার অবদান অনস্বীকার্য।
মুসলিম আমলে নষ্ট হওয়া বেশিরভাগ মন্দির উনি গড়ে তুলেছেন নিজের খরচে- কাশী বিশ্বনাথ অমকারেশ্বর ব্দরিনাথ পুরী জগন্নাথ মন্দির সহ বিভিন্ন ঘাট প্রাসাদ মন্দিরের জন্য নিস্কর সম্পত্তি, অজস্র পাঠশালা, চতুষ্পাঠি, অতিথিশালা, যাত্রীনিবাস এসব ওনার দীর্ঘদিনের কাজের মধ্যে পড়ে।
গুনে শেষ করা যাবেনা ওনার অবদান।

এটি সেই প্রাসাদ যেখান থেকে উনি চালাতেন রাজকার্য্য। এত বিশাল সাম্রাজ্যের মালকিন থাকতেন এমন সাধারণ প্রাসাদে। খুব একটা আহামরি নয় প্রাসাদ তবে প্রাচীর আর সুরক্ষা ব্যাবস্থা দেখার মত।

রানী আহল্যাবাই এর মূর্তি পাশে রেখে ঢুকলাম ডানদিকে মূল প্রাসাদে সেখানে রানীর ঘর বিছানা অস্ত্র পালকি রান্নার পাত্র সহ নানা জিনিস রয়েছে, বর্তমানে মিউজিয়াম
পাশেই ওনার ঠাকুরঘর। বেশ বড়। দেখছি অনেক ব্রাহ্মণ বসে নর্মদা মাটি দিয়ে শিবলিঙ্গ তৈরি করছেন বসে বসে। পুজো করার পর আবার নর্মদা তে ভাসিয়ে দেওয়া বিধি, এই বিধি শুরু করেছিলেন রানী, বংশ পরম্পরায় চলে আসছে সেই পুজো।

প্রাসাদের পাস দিয়ে পূব দিকে নেমে গেছে সিঁড়ি, সেই সিঁড়ি দিয়ে একটু নামতেই দেখা মিলল একটি মন্দিরের চূড়া, খুব সুন্দর কারুকাজ করা মন্দির। নীচে নেমে ডানদিকে আবার বেশ কিছু সিঁড়ি নেমে গেছে ঘাটের দিকে, সোজা নর্মদা। আর ডানদিকে কয়েকধাপ উঠলেই রাম মন্দির, প্রভু রামের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বিশাল মন্দির আর প্রচুর টিয়াপাখির বাস।

উল্টো দিকেই আরেকটি মন্দির মালোজি স্মৃতি মন্দির। পাশেই একটি জাফরির কাজ সেই জাফরির কাজ দেখলে বোঝা যায় মালোজি কাহিনী।
মালোজি ছিলেন রানী আহল্যাবাই এর একমাত্র সন্তান। বিয়ের কিছুদিন পরেই স্বামীর মৃত্যু হয়, তারপরে শ্বশুর মশাই এর মৃত্যুর পর আহল্যাবাই বসেন সিংহাসনে।
কিন্তু প্রজাপীড়ক ছিলেন মালোজি। বারবার অভিযোগে বিরক্ত হন রানী, শেষে কোন এক মহিলার উপর অত্যাচারের অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে রানী আদেশ দেন হাতির পায়ের তলায় ফেলে মালোজি কে হত্যা করতে।
সেই অনুযায়ী আদেশ কার্যকর হয়।
পাশের জাফরির কাহিনীর সম্প্রসার বলছে এটাই। পরে যেখানে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে মালোজি স্মৃতি মন্দির বানানো হয় আর উল্টোদিকে শ্রীরাম মন্দির।

কতখানি প্রজা দরদী হলে এমন কাজ সম্ভব সেটাই ভাবছি।
সুদূর মহারাষ্ট্রের সাধারণ পরিবারে জন্ম রানী আহল্যাবাই এর। সেই সময়ে মেয়েদের লেখা পড়ার চল না থাকলেও উনি শিখেছিলেন। পরে বিয়ে হয় হোলকার বংশে। রানী হবার পর খুবই দক্ষতার সাথে উনি চালিয়েছেন রাজকার্য্য। প্রচুর ধনসম্পদের মালকিন হওয়া স্বত্বেও খুব সাধারণ জীবন কাটাতেন।
বহু যুদ্ধে উনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যেমন বীর তেমনি প্রজাপালিকা ছিলেন। মধ্যপ্রদেশে উনি শিবকন্যা হিসেবে পরিচিতা।

বেরিয়ে এলাম চওড়া ঘাটে। পর পর সিঁড়ি নেমে গেছে নর্মদা নদী অব্দি। এখানে মোটামুটি চওড়া নদী। নদীর জল নিলাম চোখে মুখে মাথায়। এখান থেকে প্রাসাদ দারুন লাগছে দেখতে।

এগিয়ে চললাম প্রাসাদকে ডানদিকে রেখে নদীর ধারে বরাবর। এল শাস বহু মন্দির। শাশুড়ি বউ এর সমাধি মন্দির।
রানী আহল্যাবাই ও তার শাশুড়ী দুইজনের অস্থিভস্ম রয়েছে এই দুটি মন্দিরে। শাশুড়ি মারা গেলে তার উদ্দেশ্য রানী বানান মন্দির আর তার পাশে আরেকটি মন্দির। নিজে মারা গেলে পরে স্মৃতি মন্দির বানানো হয়।
শোনা যায় ভেতরে থাকা শিবলিঙ্গটি রাণী পুজো করতেন নিজ হাতে।

মন্দির জোড়া পেরিয়ে প্রাসাদের পাস বরাবর ঘুরে এলাম আরেকটু। দেখি পরপর বসেছে বিভিন্ন ছাতা আর তার তলায় চলছে মানসিক উদযাপন, শ্রাদ্ধ কাজ। অনেকটা বারাণসী ঘাটের মত।

ফিরে এলাম রাম মন্দিরের সামনে উপরে উঠে মূল ফটকটিকে পাশে রেখে আরেকটি রাস্তা বেঁকে গেছে এবারে ধরলাম সেই রাস্তা।
একটু পরেই এল বামদিকে একটা মন্দির ভেতরে কিছুটা নেমে গিয়ে একটি শিবলিঙ্গ, ঋষি জমদগ্নি পুত্র পরশুরাম করতেন পুজো।
পরশুরাম শিবমন্দির পরশুরামপন্থী সাধুদের কাছে খুবই প্রিয় ও পবিত্র। পরশুরামপন্থী সাধুদের হাতে একটি কুঠার থাকবেই। প্রয়োজনে পরশুরামপন্থী সাধুরা বিভিন্ন সময়ে যবনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এনারা যখন যুদ্ধ করেন তখন হয়ে যান ভয়ঙ্করতম, কারন না সাম্রাজ্যের লোভ, না জিতলে পরে প্রাপ্তিযোগ, না কোন ভোগের চিন্তা, শুধুই লক্ষ্য ধর্ম রক্ষা।
অসাধারণ এক অনুভূতি লাগছে যখন পুজো করেছিলাম আর দুদন্ড বসে ভালো করে দেখছিলাম সেই পরশুরাম শিবলিঙ্গটি।

পরশুরাম মন্দিরের অদূরেই আছে কার্ত্যবীর্য্য অর্জুন মন্দির। ইনি ছিলেন মাহিষ্মতীর আসল প্রতিষ্ঠাতা। শিবকে তপবলে সন্তুষ্ট করে উনি হাজার হাতের শক্তি লাভ করেছিলেন। রাবনকে পরাজিত করে বেঁধে রেখেছিলেন বলে রামায়নে পাওয়া যায় বর্ননা। অসাধারণ বীর আর যোগী রাজা ছিলেন তিনি।
মাহিষ্মতী নগরী তার সময়ে এক গৌরবময় নগরী ছিল বলে জানা যায়। সেই প্রাচীন নগরীর ধংসবশেষ এর উপর বর্তমান মাহিষ্মতী অবস্থিত বলে মনে করা হয়।

ইতিহাস এখানে ঘোরাফেরা করছে প্রতিটি কনায়, চোখ বুজলেই শোনা যায় কার্ত্যবীর্য্য অর্জুন এর পদ ধ্বনি, পরশুরামের পুজো করার সময়ের ঘন্টা ধ্বনি, রানী আহল্যাবাই এর সুকোমল কন্ঠস্বর। সবই রয়ে গেছে এই মাহিষ্মতীর প্রতিটি কোনে কোনে।

ড্রাইভার তাড়া লাগাচ্ছে, যেতে হবে মান্ডু।

পথ নির্দেশ:
বর্তমান নাম মহেশ্বর।
মধ্যপ্রদেশের খারগণ জেলায় অবস্থিত।

অমকারেশ্বর দর্শন করে একটা গাড়ি নিয়ে যাওয়া সবচেয়ে সুবিধার। মাত্র ৬৫ কিমি রাস্তা।


।। সমাপ্ত ।।

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |

















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান