জীয়ন কাঠি
স্বরূপ কৃষ্ণ চক্রবর্তী
Picture Courtesy: Google Images Gallery |
জীয়ন কাঠির রূপোলি পরশে কতো না জানি জন্মান্তরের তৃষ্ণা নিয়ে সহসা একদিন
নবকিশোরীটির নারীসত্ত্বা জেগে উঠে কলম কথা
কয়ে উঠলে, "তোমার কথা ভাবছিলুম তখনই মনটার ভেতরে কেমন যেন কুলকুল করে
স্রোত বইতে লাগলো। সে এক মন কেমন করা অনুভূতি! বিশ্বচরাচরে সেই অনুভব ব্যাপ্ত হয়ে
যাওয়ার মতো ম্রিয়মানতা...! কলমি ফুলের মতো স্নিগ্ধতা এক্কেবারে চোখে মুখে ফুটে
রয়েছে। কতো কিছু ভাবতে মন চায় কিন্তু সব অনুভূতি দুদ্দাড় করে একে অন্যের ঘাড়ে এসে
পড়াতে আমার আর কিছুই বলা হয়ে ওঠে না। অব্যক্ত সন্ধ্যেয় চেয়ে থাকি দূর দিগন্তের
পানে। একেবারে দূরতম স্থানে আমার মন উড়ে বেড়ায় যেখানে লৌকিকতা মনকে আষ্টেপৃষ্টে
বাঁধতে পারে না। আহ্, কি নিটোল শৃঙ্গারিতা যুবতী সন্ধ্যা অথচ কতো ক্ষণস্থায়ী! ক্ষণস্থায়ী বলেই তা
এমন মধুর করে ধরা দেয় বিশেষত প্রেমিক, ভাবুক কিংবা এই আমার মতো আধ-পাগলদের মনে। লোকে বলে ভীমরতি
হয়েছে আর আমি শুনে হাসি। যারা বলে তারা যদি জানতো কিসে আমার মন পড়ে রয়েছে তাহলে
সাত সমূদ্র তের নদী পার হয়ে এসেও আমায় সুখী দেখতে চাইতো। আমার এই পাগল ব্যাকরণ না
মানা মন,
সে আলোয় শুধু নয়, বরং নিগূঢ় সন্ধ্যেয়, উদাস দুপুরে ও বিকেলের মরা রোদে মুঠো মুঠো ছড়িয়ে আছে। ওরা
কেউ দেখতে পেল না বলেই আমায় এতো হিংসে করে।"
সুদর্শন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললে-" কি সুন্দর লেখো গো তুমি! কতো সুন্দর করে
মনের ভাবনাকে ব্যক্ত করলে তুমি। তোমার ওই হাতে, যে হাত দিয়ে ভাবনার আল্পনা আঁকলে সাদা কালোয় কিন্তু রঙিন
করে,
চুমুর আল্পনা এঁকে দিলাম আমি।"
অভিমানিনী ঘাড় দুলিয়ে বললে,
"লেখার প্রশংসা আমার ভালো লাগে না।
অন্ততঃ তোমার কাছ থেকে তো নয়ই। তুমি বোঝো না আমার অনুভূতি!? এসব আমার মনোজগতের বিমূর্ত চিন্তা গুলোকে শুধু রূপ দেওয়ার
প্রচেষ্টা মাত্র।"
সে অধীর হয়ে বললে, "বুঝি বলেই তো লেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিয়েছি ও আমার
অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত অনুভূতি কে প্রকাশ করেছি, তুমি দেখোনি?"
কতকটা আশ্লেষে ভাবুক নবকিশোরী গ্রীবা ভঙ্গিমার সাথে বললে "নাহ্, তোমার প্রশংসা আমায় বেঁধে! আমি তোমার কাছে লেখক তো নইই আর
প্রশংসা ও পাওয়ার জন্যও লিখি না। তুমি ছাড়া আমার এখন লেখাই আসে নাহ্। সব মুছে গিয়ে
আমার তুমি আছো...এক অপার্থিব ঐশ্বর্যের মতো। কাছে নেই বলে আরো বেশি করে আছো।
সমুদ্রের ওপার হতে হাতছানি দিয়ে আমায় সম্মোহন করা তোমাকেই মানায় যেখানে আর বাকি সব
স্থূল;
সব লৌকিক.... ট্রেডমার্কের ধুম। এই বেশ চলছে- দু'জন দু'প্রান্তে... ভাবতে ভাবতে বেশ সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। লাল-নীল সব দীপাবলি!
অভিসারের রাত আর বিরহের সুর- দুইয়ে মিলে বেহালায় কেমন একটা টান ধরে, সময়ের সারেঙ্গির ছড়ের টানে বেরুনো সুর মনকে কাঁদিয়ে দিয়ে
যায়;
নেশা ভর করে চোখের পাতায় অথচ সেখানে পাপ নেই, পঙ্কিলতা নেই, দুঃখ নেই। সে এক চিরদিনের নিশ্চুপ নগরীর সুষুপ্তি জড়িমা সুখ
পদে পদে,
যেন কোনদিনই দুঃখের প্রত্যয় বলে কিছু ছিলো না৷! এক অদ্ভুত
বিষাদ মাখা আনন্দ শুধু! আসলে কি জানো, আমার
চোখে মনে যতটা রঙ চড়ে যায় তা কাটাতে অনেকটা সময় লেগে যায় তাই কষ্টটা একটু বেশিই
অনুভব করি। তাও সময়ের সাথে সব স্তিমিত হয়ে যায় একদিন।“
সুদর্শন বললে, "হ্যাঁ গো, এইটা আমিও অনুভব করি। আর এটাও তো সত্যি যে নিরাসক্তির মানে যে সর্বদা নেতিবাচক হবে তা তো
নয়! মানুষ হয়ে মানুষকে বিশ্বাস করতে না পারাটা ভীষণ কঠিন, বুঝলে?”
দার্শনিকের মতো নবরাধা আবার বলে চললে,
"চাইলেও মিলতে না পারার যে বিহ্বলতা, তা আমৃত্যু জেগে থাকে অথচ পেতে পেতে বিবমিষা জাগে একসময়।
তুমি নিশ্চয়ই জেনে থাকবে- এই শূন্যবাদ (ল্যাটিন nihilism) থেকেই নবরসের সৃষ্টি হয়, কেউ কেউ কবি হয়, পাগল হয়, চাই কি অবচেতনে কতো দূরে দূরেই না তীর্থ করে বেড়ায়! কেউ কেউ
সাধিকা মীরাবাঈ হয়েও দিব্যি জীবনটা কাটিয়ে দেয়।
আর হ্যাঁ, আসলে কি জানো মানুষ আজও জানতে পারলো না কাকেই বা সে ভালোবাসে আর কেনই বা
ভালোবাসে। ভালোবাসার কাছে কারণহীন আত্মসমর্পণ করে
মানুষ যে কি আনন্দ পায়, তা এখনো বুদ্ধির অগম্য মানুষের এতো কিছু আবিষ্কার করেও ।“
কতকটা ভেবে নিয়ে ছেলেটি বিহ্বলের মতো বললে, " হুম, যে কোন সৃষ্টির মূলে থাকে কষ্ট, বেদনা, না পাওয়ার যন্ত্রণা। যন্ত্রনা ছাড়া সৃষ্টি যেন সোনার
পাথরবাটি।"
উদাসীবালা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললে
"একদমই তাই কিন্তু অনেকেই বুঝতে চায় না সেটা। ক্ষমতা, ঐশ্বর্য,
কৃত্রিমতার পেছনে ছুটতে
ছুটতে মানুষের কতো বসন্ত যে পার হয়ে যায়!"
এই পর্যন্ত বলে দু'জনেই থামলে-কারো মুখে কোন কথা নেই অথচ ঈশ্বরের আঙিনা পেরিয়ে
দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়েও এক লহমায় দুটি হৃদয়ের উত্তাপ লু হাওয়ার মতো দু'জনকে ছুঁয়ে গেলো। ওঁরা জেনেছে- বৈষ্ণব পদাবলি ছাড়াও
শৃঙ্গাররসের আরেক সংজ্ঞান আছে যেখানে একই আকাশের নিচে বসে তারকারাজি কে প্রেমের
দূতী করে কতো কথা বলা যায়! কে বলেছে শরীরের সাথে শরীরের সন্ধি নইলে প্রেমিকা আসলে
কুপিতা কিংবা খণ্ডিতা হন? অনুভূতির আসলে কোন ব্যাকরণ হয় না; হয়নি কখনো- কেননা ওটা আপেক্ষিক। তাই...শরীরদ্বয় বিপ্রতীপ
অবস্থানে থেকেও হৃদয়যুগল একে অন্যের সম্পূরক!
# যতক্ষণে ওরা এসব ভাবছে ততোক্ষণে পৃথিবীর আর সব আলো নিভে
গিয়ে অনন্ত অপার রহস্যে কেবল গোল গোল অমলিন চোখে জেগে আছে ধ্রুবতারাটি মানবসভ্যতার
চলার পথের দিগনির্দেশ করে ঠিক যেন জীয়নকাঠির মতো।
।। সমাপ্ত ।।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
|Special Puja Issue,2019 | September-October, 2019 |
| Third Year Third Issue |20Th Edition|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post