নিরুদ্দেশ
তারক কুমার দাস
Image Courtesy: Google Image Gallery |
এক শীতের কুয়াশা ঘেরা
সকাল। হাসপাতালের নার্স ফুটফুটে সুন্দর কন্যাসন্তানকে নিয়ে এল শয্যায় মায়ের পাশে
দেবে বলে। কি আশ্চর্য মা তো শয্যায় নেই। এদিক ওদিক খুঁজেও কোথাও তাকে পাওয়া গেল
না। পাশের শয্যার মহিলা বললেন, 'কাল
রাতেও তো ওনাকে দেখলাম, কান্নাকাটি করছিলেন। সকালে আর দেখতে
পাচ্ছি না।
অনেক খুঁজেও আর কলাবতীকে
খুঁজে পাওয়া গেল না। হাসপাতালের নার্স দের কাছে আরও দুদিন কাটল সমর্পিতার। হ্যাঁ
সবাই ওর নাম দিয়েছে 'সমর্পিতা
'।পাশের শয্যার বধূ সদ্য মা হয়েছেন।
তাঁকে দেখতে আসেন তাঁর
আত্মীয়া সীমাদেবী। সীমাদেবী নিঃসন্তান। তিনিই গ্রহণ করলেন শিশুকন্যাকে, আইন মেনে যথাযথ ভাবে। সমর্পিতা মা পেল,
মা বাবার স্নেহ পেল, ঘর পেল, আশ্রয় পেল।
এক বছর অতিক্রান্ত। সীমাদেবীর বাড়ির
দরজায় কেউ একটা চিঠি ফেলে গেছে। চিঠি খুলে সীমা দেখেন লেখা আছে, 'আমি কলাবতী।হাসপাতালে যে শয্যায় আপনার
আত্মীয়া থাকতেন তার পরের শয্যায় আমি ছিলাম।
আমি আমার সন্তানকে
হাসপাতালে ছেড়ে এসেছি নিরুপায় হয়ে। দুই
কন্যা সন্তানের পর আর এক কন্যাসন্তান হওয়াতে স্বামী শাশুড়ি আমাদের দু'জনকেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল। মেয়েকে বাঁচাতে
আমি বাধ্য হই ওকে ছেড়ে যেতে। অনেক খুঁজে আপনার ঠিকানা যোগাড় করেছি। আমি জানি
মেয়ে ভাল আছে ।যদি একবার মেয়েকে দেখতে দেন। ' মায়ের আকুল
প্রার্থনায় মন গলল না সীমাদেবীর। শুধু চিঠিটা সরিয়ে রাখলেন।
তিন বছরে সমর্পিতা ভর্তি হল স্কুলে।
বাড়িতে উৎসবের পরিবেশ, নতুন
ব্যাগ, ইউনিফর্ম চকচকে টিফিনবক্স। মা বাবা দু'জনে দাঁড়িয়ে
থেকে স্কুলের গাড়িতে তুলে দেন। বাবা অফিস চলে যান সীমাদেবী অপেক্ষা করেন কখন মেয়ে
ফিরবে।
দিন যায়। সমর্পিতা কিশোরী হয়। নাচ
গান ডিবেট সবেতেই সে পারদর্শিনী। ক্লাসে প্রথম স্থানটা সমর্পিতার বাঁধা। মাধ্যমিক
পাস করল উচ্চ স্থানে।
তারপর থেকে পিছনে তাকাতে
হয় নি। হঠাৎ সমর্পিতার বাবার অফিস বন্ধ হয় যায়। পি এচ ডি করতে
করতে সমর্পিতা চাকরির
খোঁজ করতে লাগল।
শোকে সীমা দেবী অসুস্থ
হয়ে পড়লেন। শয্যা সঙ্গী হল তাঁর। যে কোনো কাজের জন্য সমর্পিতার বাবাকে বেরোতে হয়।
সীমাদেবীকে দেখাশোনার লোক নেই। একদিন অবগুণ্ঠনবতী এক মহিলার আবির্ভাব বাড়িতে।
দেখা হল সীমাদেবীর সাথে একান্তে। 'আমি কলাবতী 'রুগ্ন মানুষটার দিকে তাকিয়ে বললেন ,চিনতে পারছেন আমাকে?
আমি আপনার দেখাশোনা করব।
সমর্পিতাকেও দেখব। আমাকে আমার শ্বশুর বাড়ি তাড়িয়ে দিয়েছে। '
বহাল হলেন কলাবতী। সংসারের সব দায়িত্ব
তার। সমর্পিতার আন্টি ছাড়া চলে না সীমাদেবীরও কলাবতী সহায়। সমর্পিতার বন্ধু সৌরভ।
ওর সঙ্গেই বিয়ের কথা চলছে সমর্পিতার । একদিন সৌরভ বলে 'মা বাবা আর দেরী করতে চাইছে না, তোমার বাড়িতে যাবে দিন ঠিক করতে '।পরদিন সৌরভের মা
বাবা এলেন। কথায় কথায় জানতে পারলেন সমর্পিতা পালিতা কন্যা। ওনারা বললেন 'যার মা বাবার পরিচয় নেই তার সাথে ছেলের বিয়ে
দেব না। 'অনেক অনুনয় বিনয় কিছুই কাজে লাগল না।
পরদিন কলাবতী আবার নিরুদ্দেশ হল।
একটা চিঠি লিখে রেখে গেছে। 'সমর্পিতা,
তোমার মায়ের নাম কলাবতী মিত্র বাবা অমল কুমার মিত্র।
ঠিকানা নীচে দিলাম।
সঙ্গে রইল তোমার জন্মের সময় ভর্তির প্রমাণ পত্র আর তোমার জন্ম প্রমাণ পত্র। আসলটি
তোমার সীমা মায়ের কাছে আছে। অনেক কষ্টে এর প্রতিলিপি বার করেছি। সৌরভের বাড়িতে
দেখিও। আমি চললাম, আমায়
খুঁজো না, আমি আর ফিরব না। '
সমর্পিতার দু'চোখ বেয়ে জলের ধারা নামল। অস্ফুটে একবার
উচ্চারণ করল 'মা '।
আস্তে আস্তে উঠে চিঠিটা
সন্তর্পণে আলমারির ভিতর ঢুকিয়ে রাখল। প্রস্তুত হল বেরোবার জন্য।
কলেজ যেতে হবে,অধ্যাপনা তার কাজ। আরও অনেক সৌরভ আরও অনেক
সমর্পিতাকে জীবনের দিশা দেখাতে হবে।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post