অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, February 19, 2020

গল্প-শীতকাতুরে- সুধাংশু চক্রবর্তী


শীতকাতুরে  

সুধাংশু চক্রবর্তী

Image Courtesy: Google Image Gallery


 


- আয় সোনা, ভালো করে তেল মাখিয়ে তোকে চান করিয়ে দিই । শীতকালে বেশী বেলা করতে নেই । তাড়াতাড়ি আয় বাবা  
- ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ-...
- অত শীতকাতুরে কেন রে ? ঠিক যেন বাপের স্বভাবটাই পেয়েছিস । জল দেখলেই তোরা দুটিতে যেন জলাতঙ্কের রোগী ! বোস এখানে । বোস বলছি ।
- ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ-...

- এ্যায়, চোপ্‌ । সেই থেকে ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ । চুপ করে বোস । তেল মাখিয়ে দিলে দেখবি শীত একেবারে ‘ছুঁ’ হয়ে গিয়েছে । বলতে বলতে তৃণা এক খাবলা তেল নিয়ে ছেলের গায়ে হাত বোলতে শুরু করলেন । বল্টু তাতেই কেঁপে উঠলো, ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ...

- আবার ইঁ-হিঁ-হিঁ ? তেল গরম না ?

- ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ... কিন্তু তোমার হাত যে ঠাণ্ডা মা । ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ...

- চুপ করে বোস বাঁদর ছেলে । গরম জল দিয়ে ভালো করে স্নান করিয়ে দেবো । দেখবি আর শীত করছে না ।
  
মাথায় দু’মগ জল ঢালতেই বল্টুর চিলচিৎকারে বাড়ি মাথায় উঠলো, ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ... 
তড়াক করে উঠে দৌড়ে পালাতে যেতেই তৃণা খপ্‌ করে হাত ধরে ফেলে বললেন, পালাচ্ছিস কোথায় বাঁদর ? বোস চুপ করে । নইলে তোকে কিন্তু ঠাস্‌-ঠাস্‌-ঠাস্‌ । 

পালানোর উপায় নেই বুঝে বল্টু বেদম ঠাণ্ডায় হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে ইঁ-হিঁ-হিঁ-হিঁ... তাতেই ওর পায়ে লেগে জলের বালতি উলটে যাওয়ায় বালতির বাকী জলটুকু সোজা তৃণার গায়ে । তৃণা অমনি তড়াক করে উঠে দাঁড়ালেন, এ কী করলি বদমাইশ ছেলে ? দিলি তো ভিজিয়ে আমাকে ? মেরে তোর হাড় না গুঁড়িয়ে দিয়েছি তো… উঁ-হুঁ-হুঁ-হুঁ… কী ঠণ্ডা রে বাবা ! উঁ-হুঁ-হুঁ-হুঁ…  

রাত্রে শোবার আগে দিব্যেন্দুকে ডেকে তৃণা বললেন, কাল কাকভোরে গিয়ে বিধুগোয়ালার কাছ থেকে দুধ নিয়ে এসো । ওই দুধ দিয়ে নলেন গুড়ের পায়েস বানিয়ে খাওয়াবো তোমাকে । বিধু আজকাল দুধে খুব জল মেশাচ্ছে । ওই ট্যালট্যালে দুধের পায়েসের কি সেই স্বাদ থাকে ? থাকে না । দুধ দুইবার কালে গিয়ে দাঁড়ালে ও আর জল মেশানোর  সুযোগ পাবে না । এখন ঘুমোও তুমি । ঠিক কাকভোরে ডেকে তুলবো তোমাকে ।

ওফ্‌, কি ঠাণ্ডা রে বাবা’ বলতে বলতে লেপের তলায় সেঁধিয়ে গেলেন দিব্যেন্দু । তৃণা তখনো বকর বকর করে চলেছে, জানো তো, আজ দুপুরে না তোমার ওই নচ্ছার বল্টুকে স্নান করাতে গিয়ে আমার যা হাল... পুরোটা শোনার আগেই লেপের ওমে ডুবে থাকা দিব্যেন্দু তলিয়ে গেলেন গাঢ় ঘুমে । স্বামীর মুখ থেকে ‘হুঁ-হ্যাঁ’ শুনতে না পেয়ে তৃণাও এবার ঘুমোনোয় মন দিলেন ।

দিব্যেন্দু স্বপ্নে দেখছেন, কাকভোরে খোলা জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন । এই কনকনে শীতের ভোরে তাঁকে যেতে হবে দুধ আনতে ! ভাবতেই হাত-পা তাঁর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে । জানালার বাইরে তাকাতেই দিব্যেন্দুর শরীরের সমস্ত রক্ত যেন জমে বরফ হয়ে গেল । দশদিক ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে ! হাতখানেক দূরের বস্তুও দেখা যাচ্ছে না এমনই ঘন কুয়াশা !

ভয়ে কাঁটা হয়ে থেকে সহসা অনুভব করলেন তৃণা এসে দুধের পাত্র ধরিয়ে দিলেন তাঁর হাতে । ভালো করে ধরার আগেই ‘ঠক্‌’ । দুধের পাত্র গড়াগড়ি খাচ্ছে তাঁর পায়ের কাছে ! 

দেখেই তৃণা তেলেবেগুণে জ্বলে উঠলেন । তাঁর হাড় জ্বলুনি বাক্যিবাণে দিব্যেন্দুর শরীর গরম হতে সময় নিলো না । নিজেকে আপাদমস্তক চাদরে মুড়ে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলেন রাস্তায় । শীতে কাঁপতে কাঁপতে বিধুগোয়ালার গোয়ালে এসে দেখেন গোয়ালা এখনো দরজা খোলেনি ! সর্বনাশ । হাঁকডাক জুড়ে দিলেন । ঘরের ভিতর থেকে বিধুর গলা ভেসে এলো, একটু সবুর করেন বাবু, এখুনি বেরোচ্ছি দুধ দুইতে । আপনি বরং বেঞ্চটায় গিয়ে...   

বাইরে পেতে রাখা বেঞ্চটায় গিয়ে বসলেন দিব্যেন্দু । এখন কুয়াশা যেন আরও ঘন হয়েছে ! বিধুগোয়ালা এখনো কেন বেরোচ্ছে না ঘর থেকে ! গায়ের চাদরখানা কুয়াশায় ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছে । সহসা কুয়াশা যেন কয়েকগুণ ঘন হয়ে গেল ! সঙ্গে কনকনে শ্বৈত্যপ্রবাহ । এরপরই আচমকা শুরু হলো প্রচণ্ড তুষারপাত । দিব্যেন্দু ক্রমশ চাপা পড়ে যাচ্ছেন তুষারের ভারী চাদরের তলায় । হাতে-পায়ে খিঁচ ধরেছে । যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে যতটা সম্ভব গলা তুলে হাঁক দিলেন, কই রে বিধু, হলো তোর ? আমি যে ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি ।

- যাবেনই তো । লেপখানা যে গুটিয়ে আছে আপনার পায়ের কাছে । নিন চাপিয়ে দিলাম আপনার গায়ে । 

বিধুগোয়ালার গলাটা মেয়েলী এবং বেশ ঝাঁঝালো শোনালো না ! ভালো করে চোখদুটো কচলে নিয়ে তাকিয়ে দেখেন তৃণার মুখখানা ঝুলে আছে তাঁর মুখের ওপরদেখেই বুঝলেন বিধুগোয়ালার গোয়ালে বসে নেই ! শুয়ে আছেন নিজেরই বিছানায় ! দিব্যেন্দুর মুখ থেকে আচমকা বেরিয়ে এলো, তুমি ! বিধু কোথায় ? এখনো বেরোয়নি ঘর থেকে ? 

- মরণ । ঘুমটাকে দু’চোখের পাতায় অনেক কষ্টে নামিয়েছিলাম । বাবু কিনা সেই ঘুম উড়িয়ে ছাড়লেন বিধু বিধু করে ! এখন ঘুমোও দেখি । যাবে তো সেই কোন কাকভোরে । অথচ এই মাঝরাত থেকে সেখানে যাবার জন্য ছটফট করে মরছো ! নাকি এখনই গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে চাও বিধুর গোয়ালে ? এনে দেবো দুধের পাত্র ?


| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |

 Back To Index- সূচিপত্র


















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান