অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, February 19, 2020

গল্প-অলৌকিক?-শ্রাবণী গুপ্ত সরকার


অলৌকিক?

শ্রাবণী গুপ্ত সরকার


Image Courtesy: Google Image Gallery



    উৎসব আর তিস্তা এই মাস দুয়েক আগে বিয়ে করেছে। হ্যাঁ করেছে নিজেরাই নিজেদের পছন্দে। তিস্তা সল্টলেকে একটা বুটিকে কাজ করে আর উৎসব সেক্টর ফাইভে। সহকর্মীর জন্মদিনে একটা বুটিকের পাঞ্জাবি গিফট করবে ভেবে উৎসব এসেছিল। রেখে গেল মনটাকে। মোটামুটি বছর দুয়েক কোর্টশিপ চালিয়ে ওরা বিয়ে করল।

    বুটিকে কাজ করে মানে তিস্তা কিন্তু সেলসগার্ল নয়, ও ডিজাইনার। ফ্যাশন ডিজাইনিং করে এই বিশিষ্ট ও আলোচিত বুটিকে যোগ দিয়েছে। ওর চেহারা, পোশাক সব মিলিয়ে খুব ঝকঝকে আর রুচিসম্মত। আর উৎসব বেশ সুদর্শন সফট ওয়ার ইঞ্জিনীয়ার। কোন অসুবিধাই নেই, দিব্যি গড়গড়িয়ে চলছে সংসার গাড়ি। কেবল ছুটির অভাব দুজনেরই। এমনই কাজের চাপ যে, বিয়ের দুমাসে মধ্যে মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার সুযোগও হলো না নবদম্পতির। 

    উৎসবের গোটা পাঁচেক ছুটি জমে ছিল তার সঙ্গে আরো কিছুদিন জুড়ে তিস্তা বুটিকের কাজ সামলে ছুটি আদায় করে তবে একটু বেড়ানোর ব্যবস্থা হল—মাইশোর আর উটি।

    খুব খুব আনন্দে ওদের যাত্রা শুরু। নতুন বিয়ের রোমান্টিকতা আর কাজের ফাঁকে ছুটির অনাবিল ছেলেমানুষী ছেয়ে ছিল উৎসব আর তিস্তার মন।

    মাইশোর প্যালেস দেখে ওরা যখন মুগ্ধ তখনই শুনলো আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় সমস্ত প্যালেস আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। এটাই নাকি রীতি। সব সরকারী ছুটির দিনে সেজে ওঠে মাইশোর প্যালেস। কাজেই সারাদিন ওরা ঘোরাঘুরি করল। তিস্তা এরই মধ্যে টুকটাক শপিং করছে। কোনোটা নিজেদের ঘরে রাখবে বলে, কতগুলো আবার উপহার দেবে বলে। এরই মধ্যে দোকান থেকে অসাধারণ একটা শাড়ি কিনে ফেললো উৎসব তিস্তার জন্য। ডিজাইনার তিস্তা বেশ কিছু ড্রেস মেটেরিয়াল কিনে ফেলেছে ওর বুটিকের কাজে লাগবে বলে। আর চন্দন পারফিউম, সাবান, ধূপকাঠি, ছোটখাটো চন্দন কাঠের মূর্তি – এইসব সওদা করে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে একটু ফ্রেশ হয়েই ছুটল প্যালেসের দিকে।

    কি অসামান্য লাগে এক নিমেষে যখন সমস্ত প্রাসাদটা আলোকমালায় সেজে ওঠে! মুগ্ধ হয়ে দেখে প্রচুর ছবি তুলে ওরা ফেরত এল হোটেলের আশ্রয়ে। খাওয়া-দাওয়া সেরে সব গুছিয়ে নিল তিস্তা আর উৎসব। কাল সকালে ওরা উটি রওনা দেবে। নাঃ দাম্পত্য খুনশুটি নয়, গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল দুজনেই।

    উটি যাওয়ার পথটা অসাধারণ সুন্দর। মুদুমালাই অরণ্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অজস্র পাখি, হরিণ আর দূর থেকে হাতি দেখে মন ভরে গেল ওদের। তারপর ঠান্ডা ঠান্ডা সুন্দর হিল স্টেশন উটি। এখানে ওরা তিনদিন থাকবে। লেকের কাছেই হোটেল। পৌঁছে স্নান খাওয়া সেরেই তিস্তারা বেড়িয়ে পড়লো লেকে বোটিং করার আনন্দ নিতে। বিকেল আর সন্ধ্যায় একটু ঘোরাঘুরি। কখনো হোমমেড চকোলেট টেস্ট করে কেনা, কখনো মশলা পাতির দরদাম করা, কখনো বা এসেন্সিয়াল অয়েল নিয়ে নাড়াচড়া। পরের দিন লোকাল সাইট সিয়িং-র গাড়ি ঠিক করে, সরকারী বিভাগ থেকে কিছু বুকলেট সংগ্রহ করে ওরা ফিরলো সাময়িক আবাসস্থলে।

    খাওয়া দাওয়া সেরে একটু ঘনিষ্ঠ হলো ওরা। তারপরেই হঠাৎ মনে হলো বুকলেটগুলো একটু দেখে নিলে হয় না? কোথায় কোথায় কাল যাবে? কাগজপত্রে চোখ বোলাতে বোলাতেই উৎসব জিজ্ঞাসা করল “তিস্তা! তোমার ভূতের ভয় আছে নাকি?” হেসেই ফেলল তিস্তা এমন বিদঘুটে প্রশ্নে।

কেন? ভূত আছে নাকি হোটেলে?” 

নাঃ!মানে কাল যে সব স্পটগুলো দেখবো তার মধ্যে একটা সুইসাইড পয়েন্ট আছে তো। আমার মিষ্টি বউটাকে যদি কোন বিদেহী আত্মা পছন্দ করে ফেলে?” 

দূর! সব পাহাড়ি জায়গায় অমন একটা করে সুইসাইড পয়েন্ট থাকে। খালি বাজে কথা! এবার ঘুমোও তো। কাল সকালেই আবার বেরোবো”।

    পরদিন সকালে সুন্দর সাজুগুজু করে উৎসব আর তিস্তা মহা উৎসাহে চললো বেড়াতে।  বোটানিক্যাল গার্ডেনটা তো অতুলনীয়। যেমন সবুজ মখমলের মতো ঘাসে ঢাকা লন, তেমনই ফুল আর অর্কিডের বাহার।

    রোজ গার্ডেনে গোলাপের বৈচিত্র্যে চোখ জুড়িয়ে গেল। চা আর কফি ক্ষেত দেখতেও বেশ লাগলো ওদের। আর ভিউ পয়েন্টগুলোর তো তুলনা হয় না। মোবাইল আর ক্যামেরা সমানে ধরে রাখছে সব মুহূর্ত গুলোকে। দুজনেরই খুব আগ্রহ ফটোগ্রাফিতে।

    মাঝখানে লাঞ্চ করেছে একটা রেস্তোরাঁতে। কফিও খেয়েছে। এখানকার কফি খুবই বিখ্যাত। পাল্লা দেয় নীলগিরির চা-ও।

    বিকেলের দিকে একটা পয়েন্টে এল ওরা। নামার সময় ড্রাইভার বললো এটাই সেই সুইসাইড পয়েন্ট। ওরা যেন দুজন সবসময় একসঙ্গে থাকে। মুচকি হেসে ক্যামেরা নিয়ে নেমে পড়ল দুজন। হানিমুনে এসে একসঙ্গেই থাকবে ওরা, বলার কি আছে। ভারী সুন্দর জায়গা। এখানে এসে  আত্মঘাতী হতে ইচ্ছা করে? কে জানে বাবা! একপাশে পাইন, বার্চ, ঝাউয়ের বন অন্যদিকে অতলস্পর্শী খাদ। ওরা এখানেও প্রচুর ছবি তুললো। একা একা ছবি, দুজনের সেলফি। একজন বিদেশী টুরিস্ট তিস্তার অনুরোধে ওদের ক্যামেরায় যুগল চিত্রও তুলে দিলেন কয়েকটি।

    এবার ওরা গাড়ির দিকে রওনা দিল। ড্রাইভার ওদের দেখে খুব নিশ্চিন্ত হলো। উৎসব প্রশ্ন করতেই ড্রাইভার বললো এখানে একা থাকলেই বিপদ। দলে বা দুজনে একসঙ্গে এলে সমস্যা নেই। মৃত আত্মারা একা মানুষ দেখলেই ভুলিয়ে ভালিয়ে খাদের দিকে নিয়ে যায়। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়।

    হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছিল তিস্তার। ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ রইলো। হোটেলে নেমে ড্রাইভারকে টাকা পয়সা মিটিয়ে ওরা চললো ঘরে। সারাদিনের ধকলের পর একটু রেস্ট নিতেই হবে। রুমেই কফি আর স্ন্যাক্স-এর অর্ডার দিয়ে এল উৎসব। খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে তিস্তা বলল, “আজ আর বেরোতে ইচ্ছা করছে না। দেখা তো মোটামুটি শেষ। কাল না হয় কাছাকাছি হাঁটার দূরত্বে যা যা আছে দেখে বোটিং করে একটু ছুটিটা উপভোগ করি”। উৎসব সায় দিলো। ও –ও কম ক্লান্ত নয়।

    রাতে বেরিয়ে একটা হোটেলে ডিনার করে ফিরে এলো ওরা। দক্ষিণী খাদ্য দুজনেরই বেশ পছন্দের। দোসা, ইডলি, সম্বর, উত্তাপম, থালি সবই খুব মুখরোচক ওদের কাছে। এবার তিস্তা বসলো ব্যাগ আর সুটকেশ নিয়ে। উৎসব ক্যামেরা নিয়ে। সুন্দর ঝকঝকে সব ছবি ডিজিটাল ক্যামেরায় আর মোবাইলে। শেষের দিকে তিনটে ছবি দেখেই চমকে উঠল উৎসব। এ কি! এরা কারা? দুটো সেলফি আর একটা তিস্তার একার ছবি ঐ পাইন বনে। পোশাক তো হুবহু ওদের মতোই! কিন্তু মুখগুলো এমন অস্বাভাবিক অচেনা লাগছে কেন? ডাকাডাকিতে একটু বিরক্ত উঠে এল তিস্তা। কিন্তু ছবি দেখেই চমকে উঠল নিজেও। ‘এরা কারা যেন আমাদের মুখের উপর অন্য কারো মুখের আদল এসে পড়েছে। কি ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে। কেমন করে হলো?’

    একটু চুপ করে থেকে উৎসব বলল, “দেখো, এসব তো তুমি বা আমি কেউ মানি না। মানে ভূত প্রেত অলৌকিক। জানিনা এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কিনা। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে ওখানে সত্যিই কিছু আছে হয়তো। যাক বাবা, কমের উপর দিয়ে গেছে। তবে একা থাকলে কি হতো ভাবতেই কেমন একটা লাগছে। তাই না?”

    দুজনেই অবাক হলেও একটা গা শিরশিরে ভাব কিন্তু ওদের মধ্যে ঘনিয়ে এলো যেটা থেকে মুক্ত হতে ওদের সময় লাগবে। একটা আচমকা হাড় কাঁপানো হাওয়া যেন ওদের আরো কাছাকাছি নিয়ে এল।

    সারা রাত কেমন যেন অস্বস্তিতে কাটল ওদের। পরের দিন সকালে লেকে জলবিহারের মাঝেও এক আশ্চর্য্য শৈত্য, সংশয় তিস্তার মনে পর্দার মতো দুলতেই লাগল। উৎসবও আর আগের মতো হাসিঠাট্টার মুডে আসতে পারছিলো না। দুজনেই ভাবছিল ব্যাপারটা কি? অথচ কেউই মন খুলে কথাটা বলতে পারছিল না অপরকে। যদি অন্য জন হাসে এটা ভেবে? নাকি অন্য কিছু?



| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |


Back To Index- সূচিপত্র

No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান