অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Friday, February 14, 2020

রহস্য রোমাঞ্চ-এ যেন অজানা এক রাত -মিঠুন দাস


এ যেন অজানা এক রাত


মিঠুন দাস

অলঙ্করণঃ লেখক

"হাইওয়ে দিয়ে রাতের অন্ধকারে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে গাড়ি। রাস্তায় আর কোন লোক তো দূরের কথা, গাড়ি পর্যন্ত নেই। স্ট্রীটল্যাম্পগুলোও নিভু নিভু। রাতের রাস্তা চিরে দিচ্ছে জোরালো হেডলাইটের আলো। অলি এখনও হতবাক! এক্ষুণি যেটা দেখলো সেটা কি ছিল? লোকটা কি জাস্ট উবে গেল! লুকিং গ্লাসে তাকালো একবার -  কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। পরমুহূর্তেই শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো একটা। আয়নায় দুটো স্থির চোখ যেন ওর দিকেই চেয়ে আছে! চমকে উঠলেও গাড়ি চালাতে চালাতেই ঝট করে একবার পেছন ফিরে দেখে নিল অলি ... না তো...কেউ কোথাও নেই। তবে কি চোখের ভুল! কিন্তু ওই ... ওই তো... লুকিং গ্লাসে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জ্বলজ্বলে দুটো চোখ! সজোরে ব্রেক..."

ধ্যাৎ, গাড়ির মিউজিক সিস্টেমটার আবার কি হল! এমন ইন্টারেস্টিং জায়গায় এসে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন মানে আছে? *#%&!!@*#@@%&#
নিজের বিরক্তি চেপে রাখতে পারল না রন। এই সেদিন গাড়িটা সার্ভিসিং থেকে ফিরেছে, হঠাৎ আবার কি গণ্ডগোল হল! সার্ভিস ম্যানেজারটাকে আচ্ছা করে ঝাড়তে হবে। দিব্যি সানডে সাসপেন্স চলছিল। রেডিও মীর এর অনবদ্য উপস্থাপনায় অসাধারণ একটা ভুতুড়ে গল্প ড্রাইভের মজাটা হাজারগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছিল। পেনাল্টিমেট মোমেন্টে এসে এই উপদ্রব!! কি হল অলির কে জানে! এত গাড়ি থাকতে ভূত ওই গাড়িতেই হাওয়া খেতে চাপলো! ভেবে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসিও খেলে গেল রনের। ভূত ফুতে ওর বিশ্বাস নেই। শুধু এরকম আলো আঁধারি রাতে ভূতের গল্প মানে পুরো জমে ক্ষীর। কিন্তু নাহ! কপাল খারাপ থাকলে কোনো সুখই সয়না। যত্তসব! 

আড্ডা দিতে দিতে রনের খেয়ালই ছিল না রাত অনেকটাই হয়েছে। রন, মানে রনদীপ দে - একটি মাল্টিন্যাশানল কোম্পানির পদস্থ অফিসার, বয়স তিরিশের কোঠায়। আসলে এই ছোট শহরটাতেই তো ওর বেড়ে ওঠা। স্কুলজীবনের সব বন্ধুবান্ধবই তো এখানেই আছে। তাই কাজের সুবিধার জন্য বাবা জখন এই ছোট্ট শহর ছেড়ে কলকাতায় পাকাপাকি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, রন কিছুতেই সেটা পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি মন থেকে। এখনও সুযোগ পেলেই চলে আসে বন্ধুদের কাছে। হাসি ঠাট্টায় কি করে যে সময় হু হু করে বয়ে যায় কোনদিন সেটা বুঝে উঠতে পারেনা। আজকের দিনটাই যেমন…
এই অনেক রাত হচ্ছে, এবার উঠতে হবে” ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে রন।
দাঁড়া না বাবা, অত তাড়া কিসের?” হইহই করে উঠল বাবি, সৌম্য, জয়, চয়ন।
কে তোমার জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করে আছে চাঁদ? তুমি না গেলে ঘুমাতে যাবে না বুঝি!” চিরকালের ফাজিল চয়ন সুযোগ পেলে কি আর ফুট কাটতে ছাড়ে।
তোদের আর কি? এখান থেকে দু’পা হাঁটলেই তো বাড়ি। আমাকে তো যেতে হবে এখন এক ঘণ্টা ড্রাইভ করে, বিরক্তিকর!!”
একা কেন যাবি! বালাই ষাট! এমন পূর্ণিমার রাতে ঠিক একটা পেত্নী পেয়ে যাবি তোর সাথে যাওয়ার জন্য” ভূতের মত দাঁত বের করে বলল বাবি।
নিকুচি করেছে তোদের, চললুম আমি” সত্যি সত্যি উঠে পড়ল রন।
এই দাঁড়া দাঁড়া, আর একটা করে সিগারেট কাউন্টারে খেয়েই উঠবো সবাই, তুইও বেরিয়ে যাস" এতক্ষণ চুপ করে থাকা জয় বলে উঠল “বাড়িতেই তো যাবি। আর পাঁচমিনিট পরে গেলে কিছু যাবে আসবে না।"
সেই পাঁচমিনিটটাই বাড়তে বাড়তে আরো আধঘণ্টা হয়ে গেল। আসলে বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে বেরোতে কারই বা ভালো লাগে!
গাড়িতে উঠেই আগে মোবাইলটা বের করে দেখল রন। বাড়ি থেকে একটা মিসড কল আছে। ফোন করে বলে দিল এখন বেরোচ্ছে, এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবে। বন্ধুদের সাথে থাকলে ফোনটা সযত্নে দূরে রাখাই পছন্দ করে সে, মানে আসলে দেখার দরকার পড়েনা। ফোন বা চ্যাট তো বাকি সময় এদের সাথেই চলে। আর আড্ডার মাঝে অফিসের ফোন! নৈব নৈব চ… অগত্যা…
মুখে যতই ড্রাইভ নিয়ে বিরক্তি দেখাক, গাড়ি চালাতে রনের ভালোই লাগে আর ওর বন্ধুরাও সেটা ভালোই জানে। জানলার কাঁচটা নামিয়ে দিয়ে হাইওয়ের দিকে রওনা দিল রন। চেনা রাস্তা, ছোটবেলায় বাবার বাইকে চেপে কত ঘুরে বেড়িয়েছে এই রাস্তা দিয়ে। এখন তো সময় পেলেই নিজেই আসে গাড়ি নিয়ে। রাস্তার প্রত্যেকটা গর্তও মোটামুটি মুখস্থ হয়ে গেছে। আজকে অবশ্য রাস্তাটা অন্যদিনের থেকে একটু অন্ধকার। সবকটা আলো জ্বলছে না রাস্তার। ভালোই হয়েছে একদিক দিয়ে। পূর্ণিমার আলোটা বেশি করে বুঝতে পারছে হুইলের পিছনে বসে। বাবিটা মন্দ বলেনি, পাশে কেউ একটা থাকলে মুডটাই অন্যরকম হত। চাইকি, বেশ একটা লং ড্রাইভেও চলে যাওয়া যেত। গাড়ির মিউজিক সিস্টেমটা অন করে দিল রন। হেমন্তের মায়া জড়ানো গলায় ভেসে এল “তুম পুকার লো, তুমহারা ইন্তেজার হ্যায়”। ওর অন্য বন্ধুরা অবশ্য গাড়িতে ধূমধাড়াক্কা গান বেশী পছন্দ করে, কিন্তু একলা ড্রাইভে রনের এরম গানই পছন্দ।
অভ্যস্ত হাতে হাইওয়ে চিড়ে দ্রুত ছুটে চলেছে গাড়ি। গান শেষ হতে একটু অন্যরকম কিছু শোনার মন হল। আজকেই সৌম্যর কাছ থেকে পেনড্রাইভে “সানডে সাস্পেন্স”-র কালেকশনটা জোগাড় করেছে রন। ওটাই চালিয়ে দিল মিউজিক প্লেয়ারে। আরিব্বাস, এ তো কোইন্সিডেন্সের ঠাকুরদাদা!! মীর যেন ওর আজকের এই ড্রাইভটাকেই গল্প বানিয়ে শোনাচ্ছে এপিসোডটায়। চোখ রাস্তায় থাকলেও কানটা সাসপেন্সেই চলে গেছে।
সামনেই রাস্তার ডানদিকে বিদ্যুৎ কোম্পানির ফ্যাক্টরি, আর অন্যধারে সরকারী আবাসনের উঁচু পাঁচিল। ফ্যাক্টরির আলোতেই এখানে রাস্তাটা বেশ পরিষ্কার দেখা যায়। হঠাৎ চোখে পড়ল দূরে ফ্যাক্টরির দিক থেকে এক বুড়ো হেঁটে হেঁটে এসে রাস্তার ডিভাইডারে উঠে পড়েছে রাস্তাটা পেরোবে বলে। দ্রুত ক্যালকুলেশান চালু হয়ে গেছে রনের মাথার মধ্যে। দুজনের মাঝে যা দূরত্ব আর ওর নিজের গাড়ির যা গতি, বুড়ো কোনভাবেই সে পৌঁছে যাওয়ার আগে রাস্তা পেরোতে পারবে না, ধাক্কা অনিবার্য। সুতরাং হর্নই ভরসা, কানে গেলে নিশ্চয়ই বুড়ো আর রাস্তা পেরোনোর ঝুঁকি নেবে না। বিদেশী কোম্পানির গাড়ীর ডাবল হর্ন রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে বেজে উঠল তীব্র শব্দে। কিন্তু এ কি!! বুড়োর যে কোন হেলদোলই নেই। একই ভাবে নির্লিপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে; ডিভাইডার ক্রস করে রাস্তার মাঝ অব্দি পৌঁছে গেছে প্রায়! বুড়ো কি কানে কালা নাকি!
অতঃকিম? গাড়ির হেডল্যাম্পের বিমারটা মেরে দেখবে নাকি? যদি হঠাৎ জোরালো আলোয় চমকে যায় বুড়ো।
অবশ্য চমকে থেমে গেলে ঠিক পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে রন - এটুকু বিশ্বাস তার নিজের মধ্যে আছে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাইবিমটা দিয়েই দিল, হেডল্যাম্পের তীব্র আলো অন্ধকার ফুঁড়ে এগিয়ে গেল তীরের মত। আর সাথে সাথেই চমকে উঠল রন। আরে! সামনে তো কেউ নেই। বুড়ো কি পড়ে গেল নাকি রাস্তায়! আচ্ছা কেলেঙ্কারি। নিমেষের মধ্যে ব্রেক চেপে গাড়ি আসতে করে দিল রন। কিন্তু…কিন্তু…সামনে তো কেউ নেই… আশেপাশেও না…  যাওয়ার মত জায়গাও তো নেই কোথাও… তাহলে?
আর ওখানে থাকার সাহস কুলোলো না রনের। পাগলের মত গাড়ি ছুটিয়ে দিয়েছে বাড়ির রাস্তায়। কিন্তু বুড়োটা গেল কই? রাস্তায় যখন নেই তখন কি তবে?...গাড়িতে?!!
চমকে উঠে কপালের ঘাম মুছে নিল রন। শক্ত হাতে স্টিইয়ারিংটা চেপে ধরল, আক্সিলেটরে পায়ের চাপটা অজান্তেই যেন আর একটু বেড়ে গেল। ছোটবেলা থেকে দেখা হরর মুভিগুলো ভিড় করে আসছে মাথার ভেতরে, বিশেষ করে এতক্ষণ শোনা সানডে সাসপেন্সের গল্পটা।
না, লুকিং গ্লাসের দিকে রন তাকাবে না, কিছুতেই না… এখনও আধঘণ্টার রাস্তা বাকি, কোনদিকে না তাকিয়েই সে পৌঁছে যেতে পারবে তার গন্তব্যে। আর বলা যায় না… আয়নায় কি অপেক্ষা করে আছে তার জন্য!! না, এই ভুল সে করতে পারে না… কিছুতেই না। কিন্তু বারবার মন চলে যাচ্ছে লুকিং গ্লাসটার দিকে… চোখ অবাধ্য হয়ে উঠছে মনের… একবার কি তবে দেখবে আয়নায়… কি দেখবে? দুটো স্থির চোখ অপেক্ষা করছে চোখা চোখি হওয়ার? ... রেডিওর গল্পের শেষ টাও জানা হয়ে যাবে হয়তো।…

সমাপ্ত...?

| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  | Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |


   Back To Index- সূচিপত্র
















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান