আশ্রয়
মৌসুমী চৌধুরী
ব্রান্ডেড জামা, কুর্তি, লেগিংস, গরম চাদর, শীতের পোষাক ইত্যাদির সেক্টরে ডিউটি প্রিয়ার। ডিউটি আট
ঘন্টার। সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যে ছ'টা। অভিজাত শপিং মল। এখানে এক কাপ কফির দাম দেড়শ টাকা।
..."এখানে
সকাল থেকে রাত টাকা ওড়ে। শুধু লুফে নিতে জানতে হয়, বুঝলি?" বেশ অভিজ্ঞ গলায় বলে টগর।
টগরকে ধরেই এখানে চাকরিটা হয়েছে
প্রিয়ার। যাদবপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা জুড়ে যে ঘিঞ্জি বস্তিটা, সেখানেই থাকে প্রিয়া আর টগর দু'জনেই। ফিবছর সেখানে ডেঙ্গুজ্বরে কেউ না কেউ প্রাণ হারায়। এ
বছর পুজোর পরেই দু'দিনের
জ্বরে বাবা তাদের ছেড়ে চলে যেতে এই বস্ত্র বিপণিটির সেলস্ গার্লের কাজে নামতে হয়েছে প্রিয়াকে।
ইন্টারভিউ নেবার দিন কোম্পানির নাদুস
নুদুস চেহারার ম্যানেজারবাবু প্রিয়ার মাধ্যমিক
পাশের সার্টিফিকেটটা
দেখতে দেখতে বলেছিলেন,
..." পেটে
যখন একটু বিদ্যে আছে আর চেহারায় চটকদারিত্ব আছে তখন তোমার বন্ধু এ লাইনে উন্নতি
করবে দেখে নিও, টগর।"
তারপর টগরের দিকে তাকিয়ে
চোখ মটকে হেসে বলেছিল,
..." অমন
সুন্দর চাবুক ফিগার। যে একবার দেখবে সেই আটকে যাবে।
তারপর তো হু হু করে বিক্রি। তুম ভি খুশ, কোম্পানি ভি খুশ।"
কথাটা গুনে গা জ্বলে
গিয়েছিল প্রিয়ার। কিন্তু কিছু বলে নি। পেট যে বড় বালাই।
দু'দিন কাজ করেই প্রিয়া বুঝল মুখচোরা হলে চলবে না এ লাইনে।
সেলস্ বাড়াতে হবে। কাস্টমারকে বোঝাতে প্রচুর
কথা খরচ করতে হবে। টার্গেট পূরণের ওপরই নির্ভর করছে তার চাকরির ভবিষ্যৎ।
মলের ভেতর ফুডকোর্টও আছে। সেখানে কত্ত রকমারি সুস্বাদু
খাবার। প্রিয়ারা সেগুলো
খেতে পারে না। দাম তাদের
আকাশ ছো্ঁয়া। মাঝে মাঝে শুধু লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। ফুডকোর্টে কাজ করে
সনাতনদা। খুব খেয়াল রাখে প্রিয়ার। ওদের তো খাবার ফ্রি। সনাতনদাই মাঝে মধ্যে
বার্গার,
পিৎজা ইত্যাদি টেস্ট করায় প্রিয়াকে।
এক সপ্তাহ কাজ করার পরে একদিন হঠাৎ টগর
তার কাউন্টারে এসে হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে চোখ টিপে ইশারা করে বলে,
"এই
ড্রেসটা পরে নিবি। আজ ম্যানেজার বাবুর ঘরে তোর ওভারটাইম। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দে
ফিরতে রাত হবে। উনিই গাড়ি করে বাড়িতে নামিয়ে আসবেন তোকে।"
হাতের প্যাকেটটা ছুঁড়ে
ফেলে তীব্র চিৎকারে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রিয়া বলে,
..."এ
অসম্ভব! এ কাজ করতে পারব না আমি।"
বলে দৌড়ে বেরিয়ে যায় মল
থেকে।
পরের দিন চুরির দায়ে বস্ত্রবিপনির
চাকরিটা খোয়ায় প্রিয়া। প্রিয়ার ড্রয়ার থেকে পাওয়া গিয়েছিল আগেরদিনে ম্যানেজারের
দেওয়া পোষাকের সেই প্যাকেটটা।
কাঁদতে কাঁদতে শপিং মলের বাইরে বেরিয়ে আসে
প্রিয়া। বাইরে তখন সূর্যদেব মধ্য গগনে। মলের এ.সি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দম বন্ধ লাগে
তার। কী করবে এখন সে? কোথায় যাবে? এখান
থেকে বেরোলে কে তাকে দেবে চাকরি? বাড়িতে পাঁচটি অসহায় অভুক্ত পেট!
হঠাৎ প্রিয়া অনুভব করে পেছন থেকে তার কাঁধে
হাত রেখে সনাতনদা বলছে, "চলো এখান থেকে। আমার কোন পরিচিত ফুডকোর্টে তোমার
নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।"
গাল বেয়ে নোনা স্রোত নামে প্রিয়ার। মনে মনে
বলে, "এ নগর শুধু ছুঁড়ে ফেলে দেয় না, কাঁধে রাখে আশ্রয় স্পর্শও।"
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
| Winter Issue,2010 | January, 2020 |
| Third Year Fourth Issue |21st Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post