অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Saturday, April 25, 2020

বড়গল্প-কেলুদার 'সংকটময়' কেস-সায়ন্তনী পলমল ঘোষ

কেলুদার 'সংকটময়' কেস
সায়ন্তনী পলমল ঘোষ
অলঙ্করণঃ মিঠুন দাস

কেলুদা মন দিয়ে হাতের ছবিখানা দেখছিলেন। টেবিলে আরও কয়েকটা পড়ে আছে। শার্লক হোমসের গেট আপটা চিরকালই কেলুদার পছন্দের কিন্তু মুশকিল হল ঠোঁটের ফাঁকে পাইপ ছাড়া শার্লক হোমস ইনকমপ্লিট আর কেলুদার আবার তামাকজাত দ্রব্যে এলার্জি। সেই ক্লাস টেনে পড়ার সময় সহপাঠিনী ললিতার কাছে হিরো সাজার জন্য সিগারেটে সুখটান দেওয়ার চেষ্টায় অসুখই বাধিয়ে বসেছিলেন। ললিতা তো তার পাশের বাড়ির পলাশের হাতে হাত চোখে চোখ রাখলোই তার ওপর বাবার সেই ট্যমেটোর মত গোল গোল রক্তচক্ষু এখনও মনে পড়লে কেঁপে ওঠেন কেলুদা। তাই অগত্যা হোমস বাদ। এবার হাতে উঠে এল ব্যোমকেশবেশি আবীরের ছবিখানা কিন্তু এখানেও মুশকিল। ওই বিয়ের দিন বড় জামাইবাবু সেই যে ধুতি পরিয়ে দিয়ে বিয়ে করতে নিয়ে গিয়েছিলেন তারপর থেকে সে ধুতি যত্ন সহকারে হাতে হাতকড়া পড়ার স্মৃতি হিসেবে আলমারীতে তোলা আছে। জীবনে আর কখনও ধুতি পরেন নি কেলুদা তাই এটাও ম্যানেজ করা যাবে না। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেলুদা মনে মনে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন," সত্যিই আপনি অনন্যঅসাধারণ। ফেলুদাকে কত সাধারণ পোশাক পরিয়েই অসাধারণ করে তুলেছেন আপনি। প্যান্ট-শার্টকত সহজে ক্যারি করা যায়। ধুতির কোঁচা খোলার ভয় নেইপাইপের ধোঁয়া খেয়ে কাশির ভয় নেই তারওপর গরমের সময় ওভার কোট পরে ভেপে যাওয়ার চান্স নেই।"  কেলুদা ওরফে কালোসোনা মিত্র হলেন " ঈগলের চোখ" ডিটেকটিভ এজেন্সির কর্ণধার। ছোটবেলা থেকেই পড়ার বইয়ের ফাঁকে দস্যু মোহনপাঁচকড়ী দে ছিল কেলুদার নিত্যসঙ্গী। একটু বড় হবার পর তো হোমসএরকুল পয়রোব্যোমকেশ এরা কেলুদার আরাধ্য দেবতার জায়গায় উন্নীত হয়েছিলেন। ঠিক যেই সময়টা কেলুদা ভাবতে আরম্ভ করেছিলেন যে এবার ভারতবর্ষের বুকে কল্কি অবতারের মত আবির্ভাব ঘটবে দুধর্ষদুঃসাহসী ডিটেকটিভ কে এস মিটারের ঠিক সেই সময়ই কেলুদার বাবা ঘেঁটি ধরে ঢুকিয়ে দিলেন রেলের চাকরীতে। সারা জীবন রেলের চাকায় পিষ্ট হবার পর যখন রিটায়ারমেন্ট করলেন আর কারুর বাধা মানেন নি কেলুদা নিজের বাড়ির একতলায় খুলে বসেছেন," ঈগলের চোখ।" নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করে শরীরটা এখনও একদম সুস্থ সবল রেখেছেন। দেখলে পঞ্চাশের বেশি মনে হয় না। কেলুদার গোয়েন্দাগিরিতে সাফল্যও নেহাত মন্দ নয়। মার্জার মার্ডার কেসকুকুর কিডন্যাপিংলাউ-কুমড়ো চুরির কেস তো অহরহই আসে। মাঝেসাঝে মানুষের কেসও পেয়ে যান।
"মে আই কাম ইন?" কেলুদা চোখ তুলে দেখলেন ধোপদুরস্ত প্যান্ট-শার্ট পরা বছর পঁয়ষট্টির এক ভদ্রলোক দরজায় দাঁড়িয়ে। 
"পকেটভারী কেস মনে হচ্ছে।" মনে মনে একথা বললেও কেলুদা স্টাইল করে মুখে বললেন, "ওহ ইয়েসকাম ইন।" ফেলুদা আর হোমসের মিক্সচার কায়দায় ভদ্রলোককে সামনের চেয়ারটায় বসার ইঙ্গিত করলেন।  ধপ করে বসেই ভদ্রলোক ঢকঢক করে সামনের গ্লাসের পুরো জলটা খেয়ে ফেললেন তারপর কেলুদাকে কোনও সুযোগ না দিয়ে পুলিশদের মত বাঁজখাই গলায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করলেন, " আপনি গোয়েন্দা?"
"হুম।"
"ওকেআমার কেসটা আপনাকে নিতেই হবে। নুটুটাকে টাইট দিতেই হবে। আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে ব্যাটা। ওর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন করতেই হবে আপনাকে। দেশের জন্য দশের জন্য করতেই হবে আপনাকে। করতেই হবে।" উত্তেজনায় নেতাদের মত কাঁপছেন ভদ্রলোক।
"হুম।"
"কি হুম হাম করছেন। পারবেন তো?" খেঁকিয়ে উঠলেন এবার।
"হুম।"
"ঠিক আছে।"
"তা নুটুটা কে?" মিউমিউ করে বললেন কেলুদা।
"নুটুআরে নিউটন কুমার মুখুজ্জেবিজ্ঞানী। আমেরিকায় থাকত। আমার প্যান্টে হিসি করা বয়সের বন্ধু।"
"ওহতা আমার কাজটা কি বললে একটু ভালো হত মানে কি কারণে ওই ইয়ে করা বয়সের বন্ধুর জন্য আপনি এখানে এসেছেন। আর আপনার নামটা?" গলা মাখনের মত নরম করে বললেন কেলুদা।
"আরে আমাকে চেনেন না! আয়াম দ্য গ্রেট সংকট চরণ চাটুজ্জে। দীর্ঘদিন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের বড় অফিসার ছিলাম। "
 এরপর ভদ্রলোক আবার শুরু করলেন। দুরন্ত এক্সপ্রেসের গতিতে যা বললেন তার মর্মার্থ হল এই যে তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু নুটু ওরফে বিজ্ঞানী নিউটন কুমার মুখুজ্জের কর্মকান্ড দেখে  সম্প্রতি তাঁর মনে সন্দেহ হয়েছে যে নুটু গোপনে ভয়ানক কোনও এক্সপেরিমেন্ট করছে কারণ যে নুটু আগে তাঁকে ডেকে হেঁকে তার আবিষ্কৃত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরোধক চা খাওয়াতো সেই নুটু এখন তাঁকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ির বাইরে থেকে বিদায় করে দিচ্ছে। ভালো করে কথা  পর্যন্ত বলছে না। একদিন তো নুটুর রোবট কুকুরটা পর্যন্ত তাঁকে দেখে দাঁত কিড়মিড় করছিল। তাছাড়া নুটুর বাড়িতে সন্দেহজনক লোকজনও দেখা গেছে। সবমিলিয়ে সংকট চরণের মনে ঘোরতর সন্দেহ যে নুটু ভয়ানক কোনও কিছু করতে চলেছে যে কারণে আমেরিকার অত দামি চাকরী ছেড়ে এই বয়সে পৈতৃক ভিটেতে চলে এসেছে। মুখে বলছে আর বিদেশে ভালো লাগছে না কিন্তু পেটে অন্য মতলব আছে মনে হচ্ছে। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার দরুণ সংকটচরণ সংকটের গন্ধ আগে থেকে পেয়ে যান।  দীর্ঘদিন কাজের সূত্রে মানুষের সংকটে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাই তিনি মনে করেন ভারতবর্ষকে নিউটন মুখুজ্জে নামক সংকটের হাত থেকে উদ্ধার করতে তাঁকেই সংকটমোচনবিপত্তারণ সব হতে হবে। ছোটবেলার বন্ধু বলে খুব খারাপ লাগছে। ছোটবেলার খেলার স্মৃতিকিশোর বেলার দুস্টুমির স্মৃতিযৌবনের একসাথে এগরোলের স্মৃতি সব যেন ডাউনলোড হয়ে মনের মধ্যে রিপিট টেলিকাস্ট হচ্ছে কিন্তু দেশের স্বার্থে দশের স্বার্থে তিনি আর কোনও দিন ফ্রেন্ডশিপ ডে পালন করবেন না। 
"তা আমাকে কি করতে হবে?" আলতো করে জিগ্যেস করলেন কেলুদা।
"আপনি তো আচ্ছা আহাম্মক মশাই। এখনও বুঝতে পারলেন না যে নুটুর প্ল্যান কি সেটা খুঁজে বের করে আমাকে জানাতে হবে! আমি জানাবো পুলিশ কিংবা সি বি আই কে। কাউ ডাং ভরা মাথায় কি করে যে গোয়েন্দা হয়েছেন!"  
অপমানটা হজম করতে কেলুদার যথেষ্ট কষ্ট হল কিন্তু কেসের ওজন আর সংকট চরণের পার্স থেকে বেরোনো কাগজগুলোর ওজনের কথা ভেবে হজমলা ক্যান্ডি খেয়ে নেবেন ভাবলেন। অগ্রিম বাবদ এই টাকা পেয়েছেন জানলে গিন্নী তাঁর এই নতুন পেশাটাকে আর ঝাড়ুর আগায় উড়িয়ে দিতে পারবে না। 

       উফফকি মশা নিউটন মুখুজ্জের বাগানে!  মুখুজ্জে মনে হচ্ছে মশাগুলোর জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ওদের আরও শক্তিশালী করে তুলেছে নাহলে এমন গোরুর ইনজেকশনের মত সুঁচ ফোটাচ্ছে কি করে! কেলুদা অনেক কষ্টে হাঁচোড় পাঁচোড় করে পেছনের ভাঙ্গা পাঁচিল দিয়ে বাগানে ঢুকেছেন। মুখুজ্জে লোকটা বোধহয় হাড় কিপ্টে। পাঁচিলটা মনে হচ্ছে ওর দাদুর দাদুর আমলের কিন্তু সেটা মেরামত করার কোনও ব্যবস্থাই করে নি অবশ্য মেরামত করে ফেললে আজ কেলুদার অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। এতেই পাঁচিল থেকে কাঁটা ঝোপের ওপর লাফিয়ে পড়তে গিয়ে কনুইতে ছুড়ে গেছে। গাল চিরে বিন্দু বিন্দু রক্ত বেরোচ্ছে।  অতি সন্তর্পণে কেলুদা পা টিপে টিপে একতলার ঈশান কোণের ঘরটার জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন। শীতের দিনে সন্ধ্যে নেমে গেছে বলে যাই হোক কেলুদাকে কেউ দেখতে পাবে না। সংকটচরনের কথা অনুযায়ী এই ঘরটাই নিউটন মুখুজ্জের গবেষণাগার। লোকটা নাকি বিজ্ঞানের সব বিষয়ে পারদর্শী। 
ধুর বাবা সব জানালাগুলো শক্ত করে লাগানো। অন্য ঘরে দেখতে হবে। একবার চারিদিকে তাকিয়ে নিলেন কেলুদা। নাহমুখুজ্জের এই বিশাল বাগানে শুধুই বড় বড় গাছপালার নিচে থোকা থোকা অন্ধকার। জন মনিষ্যির গন্ধ নেই কিন্তু গোয়েন্দা কে এস মিটারের গন্ধ পেয়ে যদি এইসব পুরোনো গাছ থেকে এক দু পিস রামচন্দ্রের প্রতিপক্ষ দলের সদস্য নেমে আসে তাহলে তো...। একটা বেলগাছও আছে।
"শোনরোরোসাবধানে যাবে। কাজটা কতটা জরুরি বুঝতেই পারছ।"
"ওকে বসডোন্ট ওরি। ইট উইল বি ডান"   হাসতে হাসতে বলল লোকটা। কথাবার্তার আওয়াজ শুনে জানালার একচিলতে ফাঁক দিয়ে কেলুদা দেখলেন ঘরের মধ্যে দুজন মানুষ। কেলুদার দিকে  যিনি মুখ করে আছেন তাঁর কর্মকাণ্ডের কল্যাণেই কড়কড়ে নোটগুলো কেলুদার পকেটে ঢুকেছে। অন্য ব্যক্তিটি পেছন ফিরে থাকলেও জামাকাপড়ের ফাঁক দিয়ে তার  গায়ের রঙ যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে সে যে বিদেশি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শীত কালেও গায়ে একটা পাতলা টি শার্ট আর বারমুডা আসলে ওদের সব দেশে তো হাড় কাঁপানোদাঁত কনকনানো ঠান্ডা পড়ে। তার মানে এ নিশ্চয় বিদেশী গুন্ডা কিংবা গুপ্তচর হবে। গুপ্তচর মনে আসতেই কেলুদার চোখের সামনে ভেসে উঠলো জেমস বন্ড অবতারে পিয়ার্স ব্রনসনরজার মুরড্যানিয়েল ক্রেগের চেহারাগুলো। নাহএই লোকটা গুপ্তচর নয় ওই গুন্ডাই হবে। 
"তাড়াতাড়ি যাও। ইটস আ কোয়েশ্চেন অফ লাইফ অর ডেথ।"
"ওকে বাই।"
লাইফ অর ডেথ! তারমানে সংকট চরণের সন্দেহই ঠিক। গন্ডগোল শুধু নয় এক্কেবারে খুনোখুনি কেস! নাহওই বদ বিদেশীটাকে খুন করা থেকে আটকাতেই হবে। যে দেশে কে এস মিটারের মত দুঁদে গোয়েন্দা আছে সেখানে এত সহজে মানুষ খুন করবি ব্যাটা! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। কেলুদার মনে একসাথে ভারত আমার ভারতবর্ষকদম কদম বাড়ায়ে যাবন্দেমাতরম সব বাজতে লাগলো।


    আগে আগে লোকটা একটা মান্ধাতার আমলের ক্যাঁচর ক্যাঁচর সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে আর পেছন পেছন কেলুদা চলেছেন তাঁর মোটর সাইকেল নিয়ে। সাইকেলকে অনুসরণ করার জন্য তাঁর মোটর সাইকেলের গতি গোরুর গাড়ির সঙ্গে সহজেই পাল্লা দিতে পারবে।
"ও দাদুএর চেয়ে হাঁটুন না। আগে পৌঁছবেন।" একটা বছর দশেকের বাচ্চা আওয়াজ দিল কিন্তু কেলুদা নিরুপায়। ব্যাটা বিদেশী কিলার কোথায়  হারলে-ডেভিডসনে চড়ে খুন করতে যাবে তা না একটা পঁচিশ বছরের পুরোনো বুড়ো হিরো সাইকেল নিয়ে চলেছে।  নিউটন মুখুজ্জে মনে হচ্ছে কিপ্টে টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। টাকাপয়সা বেশি দেবে না তাই এ ব্যাটা তেল খরচা বাঁচাচ্ছে। দেখতে দেখতে লোকটাকে ফলো করতে করতে ঘোষ পাড়ার ফুটবল মাঠের কাছে চলে এলেন কেলুদা। এদিকটা বেশ নির্জন। একটু তফাতে থেকেই অনুসরণ করছেন কেলুদা। লোকটা বুঝতে পেরে গেলে অনেক কিছু হতে পারে। কেলুদার হাতপা এমনকি পেটটাও গ্যাস বেলুনের মত ফুস হয়ে যেতে পারে।  আরে একী! কোথা থেকে একটা চার চাকা গাড়ী এসে ঝুড়ি থেকে কুমড়ো তোলার মত টপাক করে লোকটাকে সাইকেল থেকে তুলে নিল! ডাঙ্গায় খাবি খাওয়া কাতলা মাছের মত লোকটা হাত পা ছুঁড়ছিল কিন্তু কিছু করতে পারলো না। গাড়িটা স্পীড নিচ্ছে কিন্তু গোয়েন্দা কে এস মিটার যে অকুস্থলে উপস্থিত তা ওদের জানা নেই। মনে হচ্ছে নিউটন মুখুজ্জে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এখন গ্যাং ওয়ার জাতীয় কিছুও হতে পারে মনে হচ্ছে। মনে মনে ভাবতে ভাবতে কেলুদাও পৃথ্বীরাজ চৌহানের মত ঘোড়া, থুড়ি বাইক ছোটলেন। গাড়িটা অনেকখানি এগিয়ে গেছে।




     "তুই যে বলছিলি একটা লোককে মুখুজ্জের বাগানে চুপিচুপি ঢুকতে দেখেছিস?"
"ও গুরুলোকটা ভদ্দর জামাকাপড় পরা চোর মনে হল।"
"নে মুখুজ্জেকে ফোন লাগা।"
বাড়ির পেছন দিকে জানালায় আড়ি পাতা কেলুদার কান দুটো গরম হয়ে উঠলো। একজন গোয়েন্দাকে চোর ভাবছে! একদম সাবস্টান্ডার্ড গুন্ডা।
"মুখুজ্জে তোমার নতুন আবিষ্কার আমাদের একহাতে দাও আর অন্য হাতে তোমার নাতিকে নাও ব্যস সিম্পল ব্যাপার।" কানে ফোন নিয়ে ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে কথা বলছে গুন্ডাটা।
মুখুজ্জের নাতি! চেয়ারে বাঁধা লোকটার মুখটা ভালো করে দেখতে পেলেন কেলুদা। মুখে টেপ আটকানো থাকলেও বুঝতে পারলেন বছর সাতের বয়স হবে ছেলেটার। তবে চেহারাটা হাট্টাকাট্টা আর চুল কালো হলেও চোখগায়ের রং সব বিদেশীদের মত। মুখুজ্জের নতুন অবিষ্কারটা কি রে বাবা যার জন্য কিডন্যাপিং কেস ঘটে গেল! কেলুদা তাঁর মগজাস্ত্র প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেন। মুখুজ্জে লোকটার আবিষ্কার যাই হোক না কেন এই গুন্ডাগুলো যারা গোয়েন্দাকে চোর ভাবেবাইরে একটা পাহারা বসানোর মত বুদ্ধি নেই ঘটেতাদের হাতে পড়তে দেওয়া যায় না। তাঁকে নামতেই হবে যুদ্ধক্ষেত্রে। সংকটচরণকে টুক করে একটা মেসেজ করে পকেট থেকে বের করে ফেললেন পিস্তলখানা। এই মুহুর্তে নিজেকে ফেলুদার বড়দা আর জেমস বন্ডের ছোট ভাই মনে হচ্ছে কেলুদার। দরজা খোলাই রেখেছে আহাম্মকগুলো।
"হ্যান্ডস আপ।" 
"ও গুরুএতো মনে হচ্ছে নুটু মুখুজ্জের পাঁচিল টপকানো সেই চোরটা!"
"তা পিস্তল লিয়ে এখানে কি হিরো হওয়ার সাধ হয়েছে বুড়ো?"
"ডোন্ট কল মি চোর অন্ড বুড়ো। আয়াম দ্য গ্রেট ডিটেকটিভ কে এস মিটার। ছেলেটাকে ছেড়ে দাও।"
"বুড়ো টিকটিকি! খিক খিক খিক। ওরে ঘনা ধর ব্যাটাকে।" গুরুর আদেশ পাওয়া মাত্র ঘনা কেলুদাকে সটান কাঁধে তুলে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল।
"ওরেঘনা বুড়ো খেলনা পিস্তল লিয়ে এসেছে রে! খিক খিক খিক।"  কেলুদার পিস্তলটা নাচিয়ে বলল গুন্ডাটা। নগদ পাঁচশ টাকা দিয়ে একদম আসলের মত দেখতে ওই পিস্তলখানা কিনেছিলেন কেলুদা।
"রবিনকে ছেড়ে দাও। রবিনকে ছেড়ে দাও।" কেলুদা অবাক হয়ে দেখলেন দরজায় দাঁড়িয়ে সংকট চরণ। সত্যিই মানুষের সংকটে ছুটে আসা লোকটার স্বভাব। তবে চোখমুখগুলো কেমন যেন ফ্যাকাশেঅদ্ভুত লাগছে। মনে হয় সংকটকালে ওনার এরকম রূপান্তর ঘটে।
এই তুই কে রে?" ঘনার মুখ থেকে কথা বেরোতে না বেরোতে সংকট চরণ ঘনাকে দুহাতে তুলে গরাদ বিহীন বড় খোলা জানালা গলিয়ে বাইরে ফেলে দিল। ব্যাপারটা ঘনার গুরুর হজম হওয়ার আগেই তারও একই দশা হল। সংকট চরনের এই সুপার ম্যান অবতার দেখে কেলুদার মুখটা তো ক্রিকেট বল ঢোকার মত হাঁ হয়ে গেছে। হঠাৎ বাইরে ধুপধাপ আওয়াজ। পুলিশ এসেছে। দরজা দিয়ে প্রথমে ঢুকলেন নিউটন মুখুজ্জে আর তার পিছু পিছু সংকট চরণ। এই মুহুর্তে ঘরের মধ্যে দু দুজন সংকট চরণ। প্রথম জনের কোনও ভাবান্তর নেই কিন্তু দ্বিতীয় জন আঁতকে উঠলো," এ কেঅবিকল আমার মত দেখতেআমার তো কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া যমজ ভাই নেই।"
"এ হলো আমার সৃষ্টি নতুন রোবটহিউম্যানয়েড। তোর মত দেখতে বানিয়েছি আর নামও তোর ডাক নামে সান্টু রেখেছি। ভেবেছিলাম তোকে জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেব তাই কিছুদিন তোকে আর আমার বাড়িতে ডাকিনি কিন্তু এই মদন গুন্ডা সব ভণ্ডুল করে দিল। আমি রবিনকে দিয়ে রায় পাড়ার পিসীমার মেনি বিড়ালটার জন্য আমার আবিষ্কৃত একটা ওষুধ পাঠাচ্ছিলাম। সে ব্যাটার অতিরিক্ত ইঁদুর খেয়ে যায় যায় অবস্থা। পিসীমার তো প্রায় পাগল হওয়ার উপক্রম তাঁর পালিত পুত্রের এই মরণাপন্ন দশায়। মাঝপথে এই মদন আমার টাকে চুল গজাবার ওষুধের ফর্মুলা নেবে বলে এইসব কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। ও তো আর জানে না যে রবিন বিপদে পড়ার সাথে সাথে রোবট সান্টু জানতে পেরে গেছে। রবিনের হাতের ঘড়িটা আসলে একটা মাল্টিপারস গেজেট। লোকেশন ট্র্যাক করা কোনও ব্যাপারই নয়।" রবিন আর কেলুদা চেয়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
"রবিন?"
"আরে আমার ভাইপো রনিতের ছেলে। ওর মা বিদেশী বলে ওইরকম দেখতে। কদিন আগেই এসেছে। ওকে তো ছোটবেলায় দেখেছিস তুই। ভুলে গেছিস মনে হয়। ও ইন্ডিয়ায় এসেছে আমার সাথে থাকবে বলে। নিজের পিতৃ পুরুষের জায়গায় কিছুদিন কাটাতে চায় ও। আচ্ছাএই ভদ্রলোক কে?" কেলুদার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন নুটু মুখুজ্জে। সংকট চরনের নিজের অবস্থাই এখন সংকটাপন্ন। যে বন্ধু তাঁর মত দেখতে রোবট বানিয়েছে তাকে কি করে বলেন....।
"হ্যাললো মিস্টার মুখার্জীআয়াম ডিটেকটিভ কে এস মিটার। ওনার অফ ঈগলের চোখ ডিটেকটিভ এজেন্সি। আসলে কি হয়েছে জানেন আপনার বন্ধু সংকট বাবুর আগেই সন্দেহ হয়েছিল যে আপনার ওপর টেররিস্ট অ্যাটাক হতে পারে। আনফরচুনেটলি অ্যাটাকটা আপনার নাতির ওপর হল। তো যাই হোক আপনার সেফটির জন্য উনি আমাকে হায়ার করে ছিলেন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আপনার নাতির মাধ্যমে আপনার ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করবে ওরা তাই রবিনকে ফলো করছিলাম।"
"এক্সেলেন্ট! তাই তো দারোগা সাহেব বললেন যে সান্টুও ওনাকে ফোন করেছিলো। সান্টু ওরে সান্টু ভাই আমার। তুই আমাকে এত ভালোবাসিস!" আবেগে গলার স্বর ধরে আসছে নুটু মুখুজ্জের। একলাফে সংকট চরণকে জাপটে জড়িয়ে ধরলেন। সংকট চরণও , " ওরে আমার নুটু বুকে আয় বলে জড়িয়ে ধরলেন বন্ধুকে।" দুই বন্ধুর সে আবেগঘন দৃশ্য দেখে যে কারুর চোখে জল এসে যাবে। জড়াজড়ি শেষ হতে কেলুদা বেশ কায়দা করে নিজের পিস্তলখানা তুলে নিয়ে সংকট চরণের কানে কানে ফিসফিস করে বললেন," বন্ধুর কাছে সত্য গোপন রেখে আপনার সংকট মোচন করার জন্য আমার ফি-টা কিন্তু ডাবল হয়ে গেল।" 


| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
  |ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Lock-down Issue,2020 | April 2020 |হাসিরাশি সংখ্যা।
।নববর্ষ ১৪২৭| Third Year Fifth Issue |22nd Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |


 সূচি পত্র / Index














No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান