অচিন্ত্য
স্যার
অচিন্ত্য স্যার ছিলেন আমাদের
গেমটিচার । অচিন্ত্য কুমার কাডাড় । বহুল প্রচলিত নিকনেম তেমন ছিল না তাঁর ।
বেঁটেখাটো গাট্টাগোট্টা চেহারা । সাধারণত খেলার টিচাররা তুলনামূলকভাবে ছেলেদের
বেশি কাছে থাকেন খেলার সুবাদে । উনিও তাই ছিলেন । ভালো খেলতেন । বিশেষত ফুটবলটা । মাঝেমাঝে
আমাদের সঙ্গেও খেলতেন । তবে দমে পেরে উঠতেন না ।
স্যারের ব্যাপারে একটা মজার ঘটনা
আমার প্রায়ই মনে পড়ে । এতদিন পরেও । আর মনে পড়লে আমি হাসি চেপে রাখতে পারি না ।
তখন আমরা টেনে পড়তাম । আমি বি সেকশানে পড়তাম । টেন-বি ছিল স্কুলে ঢুকে একেবারে
শেষপ্রান্তে । উল্টোদিকে ছিল দোতলায় উঠার সিঁড়ি । মানে টেন-বি তে ঢোকার যে দরজা
তার উল্টোদিকেই ছিল সিঁড়িটা । সেটা ছিল চতুর্থ ক্লাস । ক্লাস শেষে টিফিনের ঘন্টা
পড়েছে কি পড়ে নি, তার মধ্যে হইহই করে অন্যান্য ক্লাস থেকে ছেলেরা
বেরিয়ে পড়লো । সেদিন বৃষ্টির জন্য স্যার আমাদের খেলাতে নিয়ে যাননি । ঘরে বসেই গল্প
করছিলেন । টিফিনের ঘন্টা পড়ার পর স্যার চেয়ার থেকে সবে উঠতে যাবেন, এমন সময় একটা বিশাল হুলুস্থুল কান্ড হয়ে গেলো । হয়েছিল কি ঘরের উল্টোদিকে
দোতলায় যাবার যে সিঁড়িটা ছিল, ক্লাস নাইনের একটা বিচ্ছু
ছেলে(নামটা এখন আর মনে করতে পারছি না...) সিঁড়ির বেশ কয়েক ধাপ উপর থেকে একটা লাফ
মেরেছিল একেবারে কপিবুক স্টাইলে । কিন্তু মেঝে ভিজে থাকায় সে স্লিপ করলো । আর
এমনভাবে স্লিপ করলো যে একেবারে স্কিড করে সোজা এসে ঢুকল আমাদের ক্লাসের মধ্যে সোজা
স্যারের গায়ের উপর । তারপর দুজনে জড়াজড়ি করে একেবারে চেয়ারসমেত ভূপাতিত হল । স্যার
শুধুমাত্র মুখ দিয়ে ‘আঁক’ করে কিম্ভূত একটা আওয়াজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন । ছেলেদের
মধ্যে কয়েকজন তো বিকট শব্দে চেঁচিয়ে উঠল । কয়েকজন আবার পেছন থেকে হাততালি দিয়ে হো
হো করে হেসে উঠল । দু-তিন জন পড়িমরি করে স্যারকে তুলতে গেল । তা বেশ কিছুক্ষণ
দুজনেই শুয়ে থাকলো ক্লাসরুমের মেঝেতে । তারপর আগে গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন অচিন্ত্য
স্যার । ততক্ষণ কিন্তু চারিপাশে ভিড় জমে গেছে । ছেলেটা কিন্তু আর ওঠে না । সে
একইভাবে শুয়ে রইলো । কিন্তু স্যার পুরোটাই বুঝতে পারলেন । চোখমুখ লাল করে ছেলেটার
কানটা ধরে তুললেন তাকে । চিৎকার করে কি সব বলতে লাগলেন আমরা কিছু বুঝতে পারলাম না ভালো করে । আসলে স্যার এতটাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন যে তাঁর কথাটথা সব জড়িয়ে যাচ্ছিল । আমরা শুধু শুনলাম, ‘মশকরা হচ্ছে
আমার সাথে...আমাকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলি কেন রে বাঁদর…?’ । একটা ছেলে
স্যারের দিকে ডাস্টারটা বাড়িয়ে দিলো...। স্যার সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে দমাদ্দম
দিতে লাগলেন ছেলেটার পিঠে । ততক্ষণে অন্যান্য স্যাররা চলে এসেছেন । অচিন্ত্য স্যার
এবার একটু যেন শান্ত হলেন । বললেন ‘কান ধরে উঠবস কর কুড়িবার...’ । ছেলেটা উঠবস
শুরু করে দিল । গোটা দশেক উঠবস হওয়ার পর স্যার বললেন, ‘যা, তোর কিছুই হয়নি মনে হচ্ছে । তাহলে তুই উঠবস করতে পারতিস না । আর এমন করিস না’
। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্মলেন্দু চক্রবর্তী(NC2) স্যার ।
তিনি ফুট কাটলেন, ‘হ্যাঁ, আর কখনো স্যারকে ল্যাং মেরে ফেলে
দিস না…’ । একবার কটমট করে ওনার দিকে চাইলেন অচিন্ত্য স্যার । তারপর তিনি গটগট করে
বেরিয়ে গেলেন ক্লাস থেকে । পেছন পেছন অন্যান্য স্যাররাও বেরিয়ে গেলেন ।
পরে আমাদের মধ্যে একটা ভীষণ
গণ্ডগোল বাধল একটা বিষয় নিয়ে । আমাদের মধ্যে কয়েকজন বলল স্যার চেয়ার থেকে পড়ে
যাবার সময় মুখ দিয়ে ‘আঁক’ করে শব্দ করেছিলেন । আবার কয়েকজন বলল- না, উনি ‘বাপ’ বলে চিৎকার করেছিলেন । সেই রহস্যের সমাধান এখনও হয় নি ।
| Aleekpatamagazine.blogspot.in |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Lock-down Issue,2020 | April 2020 |হাসিরাশি সংখ্যা।
।নববর্ষ ১৪২৭| Third Year Fifth Issue |22nd Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post