অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Friday, August 28, 2020

অনুগল্প-সমাজের জলছবি-জ্যোতিকা পোদ্দার


সমাজের জলছবি


জ্যোতিকা পোদ্দার

অনুগল্প ১
ভগবান না শয়তান

Image Courtesy: Google Image Gallery


হঠাৎ সকালে অরূপের ফোন।
 শর্মিলা তখন হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছে...
আজ একটা জটিল অপারেশন আছে। মেয়েটা প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকেই ভীষণ রকমভাবে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিল।
গ্রামের মেয়ে অল্পবয়সে বিয়ে হয়েছে, বিয়ের পরপরই প্রেগনেন্ট হয়ে পড়েছে, সতেরো বছর বয়স, জননাঙ্গ গুলির গঠনও ঠিকমতো হয়নি,তারমধ্যে অপুষ্টি ...
গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার দেখাচ্ছিলো। কিন্তু তার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি অন্য ডাক্তারের কাছে রেফার করে দিয়েছেন তিনি।
এখন ডক্টর শর্মিলার আন্ডারে ভর্তি সেই মেয়েটি।
খুবই ব্যস্ত শর্মিলা আজ। তার মধ্যেই অরূপের ফোন।
 ফোনটা তুলে শর্মিলা বলে,
-হ্যালো! বলো অরূপ।
-শর্মি আজ আমার পিসিদিদা এসেছে , তোমাকে দেখবে, একসাথে লাঞ্চ করবে বলল। তুমি কিন্তু চটপট হসপিটাল থেকে চলে এসো আমাদের বাড়িতে।
-অরূপ,আজকের অপারেশনটা খুব ক্রিটিক্যাল। জানিনা তাড়াতাড়ি যাওয়া সম্ভব হবে কিনা। কিন্তু আমি চেষ্টা করবো।
-শর্মি মনে রেখো আর কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের বিয়ে- এইধরনের ফ্যামিলি প্রোগ্রামগুলো অ্যাটেন্ড করতে হবে তোমাকে।
-বললাম তো আমি চেষ্টা করব।
অরূপের বাড়িতে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের আসর জমজমাট,কিন্তু শর্মিলা এখনো আসেনি-
অরূপ বারবার ফোন করছে, কিন্তু ফোন সুইচ-অফ।
এতবড় গাইনোকোলজিস্ট শর্মিলা, একটা ছোট্ট অপারেশন করতে এত সময়!
এত জটিল বড়বড় কেস সে এক নিমিষে সমাধান করেছে,
অরূপের বাবা হঠাৎ টিভিটা চালালেন,
-খবরটা শুনি যতক্ষণ শর্মিলা না আসে।
টিভি চালাতেই সবাই হতবাক-
হসপিটালে প্রসূতির মৃত্যুতে ডাক্তার এবং নার্সকে মারধোর,হসপিটাল ভাঙচুর, ড: শর্মিলার অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু,নিউজ মিডিয়া তোলপাড়।
ডক্টর শর্মিলা বারবার বলছেন,মহিলার শারীরিক জটিলতা ছিল তিনি সেটা আগেই পেশেন্টের বাড়ির লোকদের বলেছিলেন,
তবুও অনেক চেষ্টা করে তিনি,কিন্তু মা, বাচ্চা কাউকে বাঁচাতে পারেননি।
টিভিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শর্মিলার সালোয়ারের কাঁধের কাছটা টানাহেচড়ায় ছিঁড়ে গেছে-

পিসিদিদা বলে উঠলেন,
-ছিছি একি অলুক্ষুনে মেয়ে বাবা,তাকে তোরা এই বাড়ির বউ করতে  যাচ্ছিলি ?
-আহা গো,মা বাচ্চা দু'জনকেই মেরে ফেলল!
-এমন খুনি শয়তান মেয়ে ঘরের বউ! মেনে নিতে পারলেন না অরূপের মা অনিতাদেবী।
 অরূপের  সাথে বিয়ের সম্বন্ধটা ভেঙ্গে গেলো শর্মিলার।
পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং পোস্টমর্টেমের পর দেখা গেল মেয়েটির শারীরিক জটিলতা এতটাই ছিল যে কোন ভাবেই তাকে বাঁচানো যেতনা,তবুও সব দোষ হল ড:শর্মিলার।
এত কিছুর মধ্যেও শর্মিলা অবাক হলো অরূপের ব্যবহার দেখে,শর্মিলার এত বড় বিপদের সময় পাশে থাকা তো দূরের কথা-তার পরিবার যা সিদ্ধান্ত নিল তাতেই মত দিল।
দুঃখী শর্মিলা ট্রান্সফার নিয়ে শহর ছেড়ে চলে গেল উত্তরবঙ্গের এক গ্রামীণ হসপিটালে।
কেটে গেল পাঁচবছর...

হঠাৎ ডা:সেনের কেবিনে হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয় এক মহিলা,মহিলার কথাতে বোঝা গেল  বাপের বাড়িতে  এসে তার মেয়ের খুব সংকটজনক অবস্থা,মেয়েটি সাড়ে সাতমাসের গর্ভবতী।
ভদ্রমহিলা ড: সেনের পায়ে পড়ে বললেন,
-যেভাবে পারেন আমার মেয়েকে বাঁচান।

ডা:সেনের অক্লান্ত চেষ্টায় প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হলো মহিলার, কিন্তু মা বাচ্চা দুজনেই প্রাণে বাঁচল।
অপারেশন থিয়েটার থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বেরোলেন ডা:সেন।

ছুটে এলেন মহিলার স্বামী এবং শ্বাশুড়ীমা,ভদ্রমহিলা কেঁদে বললেন,
-ডাক্তারবাবু আপনি মানুষ না, ভগবান! আমার বউমা আর আমার একমাত্র বংশধরকে আপনি প্রাণভিক্ষা দিয়েছেন।
মুখ থেকে মাক্সটা খুলে ফেললেন ড:সেন।
এতবছর পর আবার মুখোমুখি অনিতা দেবী অরূপ আর ড:শর্মিলা।।

সমাপ্ত



অনুগল্প ২

শৈশব চুরি

Image Courtesy: Google Image Gallery


-হ্যাঁরে মালতি আজ আসতে এত দেরি হল কেন কাজে? সঙ্গে আবার কে রে? সেনগিন্নি বলে।
-বৌদি আজ বাড়ি থেকে বেরোতে একটু দেরি হয়ে গেল,কালকে সারারাত আমার বরের কাশি সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ,বৌদি এই হল আমার মেয়ে।
সেনগিন্নি মেয়েটাকে ভালো করে জরিপ করে বলে,
-বাহ! মালতি! তোর মেয়েটাতো বেশ, কি নাম রে তোর?
-আমার নাম কুমারী বিনীতা দাস।
-বাহ! মালতি তোর মেয়েতো বেশ চটপটে রে, হ্যাঁরে মালতি খাওয়া-পরায় মেয়েকে দিবি নাকি!
-আমার মেয়ের ঘরে আমার নাতিটা চারবছরের হয়েছ, খুব দুরন্ত হয়েছে,মেয়ে আবার চাকরি করে, তাই ছেলেটাকে চোখে-চোখে রাখার জন্য খাওয়া-পরার লোক খুঁজছিল।
-তোর মেয়েকে দেখে ঠিক লাগছে, ভালো মাইনে দেবে,আলাদা ঠিকে ঝি,রান্নার লোক আছে। ওর কাজ হবে খালি ছেলেকে ধরা, আমার মেয়ের শাশুড়ির বয়স হয়েছে তো, পারেনা।

-না গো বৌদি;  আমার বিন্তিকে কাজে লাগাব না; ও পড়াশোনা করছে, ক্লাস ফোরে পড়ে।,ক্লাস থ্রি থেকে ফোরে উঠতে ফার্স্ট হয়েছে,আমি ওকে অনেক দূর পড়াবো,ও বড় অফিসার হবে-মালতির দুচোখে স্বপ্ন।
সেনগিন্নি মুখ বেঁকিয়ে বলে,
- যেমন তোর মর্জি, তোকে বলা রইল যদি বিন্তির বয়সী কাউকে পাস তো বলিস।
রাত্রিবেলায় বিন্তির চুলে তেল লাগিয়ে দিতে দিতে মালতি বলে,
-বিন্তিরে তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন, আমার মত বাড়ি বাড়ি কাজ করতে তোকে আমি দেবনা, তোকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করব, জানিস তো আমরা খুব গরীব ছিলাম. ছোট ছোট চারটি ভাইবোনকে রেখে বাবা মারা গেল, মা আমাদের ভাইবোনেদের দুবেলা খাবার জোগানোর জন্য লোকের বাড়ি বাড়ি বাসন মাজার কাজ ধরল, মার একার রোজগারে সংসার চলেনা,মার সঙ্গে আমিও যেতে শুরু করলাম কাজে, তখন আমার বয়স এগারো। তারপর ১৫-১৬বছর হতে না হতেই আমার বিয়ে হয়ে গেল, তুই হলি, তোর বাবা রিক্সা চালায়, দু-চার পয়সা যা হয় মদ বিড়ি সিগারেট উড়িয়ে দেয়,কিছু বলতে গেলে অশ্রাব্য গালিগালাজ,মারধোর, সংসার চালানোর জন্য আবার ঠিকে কাজে লেগে গেলাম,মরণ পর্যন্ত এই কাজ আমাকে করে যেতেই হবে,কিন্তু তুই আমার স্বপ্নপূরণ করবি।
বিন্তি বলে,
-হ্যাঁ  মা, আমি লেখাপড়া করব।

-খক খক খক, উফ!
 আবার তোমার কাশিটা বেড়েছে, ও বিন্তি! তোর বাপের জন্য এক গ্লাস জল আন। কত করে বলি মদ বিড়ি সিগারেট খেওনা,শুনবে না কথা।
-খক..! খক ...! খক...!
-ওমা একি এ যে কাশির সাথে রক্ত উঠছে...!
-ডাক্তারবাবু কি হয়েছে ‌এর ? সারাদিন খুব কাশে কাল যা যা পরীক্ষা করতে বললেন- এই যে সব পরীক্ষার রিপোর্ট।

গম্ভীর মুখে ডাক্তারবাবু সমস্ত রিপোর্ট দেখে বললেন,
-তোমার বরের ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে।
-ওমা! কি হবে ডাক্তারবাবু! এ রোগ কি আর সারবে না?
 মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মালতি।
ডাক্তারবাবু বলেন,
- এ হলো রাজরোগ। চিকিৎসা করতে যেমন সময় লাগবে তেমনি লাগবে টাকা! খুবই সময় সাপেক্ষ, তুমি ঠিকমত  ওষুধপত্রের জোগাড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারলে চেষ্টা করে দেখতে পারি বাঁচাতে পারি কিনা! পারবে কি চিকিৎসার খরচ চালাতে? তাহলে হসপিটালে এডমিট করে নিচ্ছি।
চোখ মুছে মালতি বলে,
-পারবো ডাক্তারবাবু আপনি মানুষটারে বাঁচান..!
 সেদিন বিকেলে-
-সেনবৌদি,এই যে বিন্তি; পাঠিয়ে দাও, তোমার মেয়ের কাছে খাওয়া পরায়।
বিন্তির অজান্তেই চুরি হয়ে গেল তার শৈশব
এইভাবে প্রতিদিন কতশত শৈশব যে চুরি হয়-তার খবর রাখে কজন...!


সমাপ্ত


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Monsoon Issue,2020 | July-September 2020 |রিমঝিম সংখ্যা।
| Third Year Sixth Issue |23 rd Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
 সূচি পত্র / Index


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান