বৃষ্টিস্নাত এক রাতে
শম্পা সান্যাল
Image Courtesy: Google Image Gallery |
আমার এই লেখা দিনে, বা রাতে জোরালো আলোর নীচে পড়ার জন্য নয়। উপভোগ করতে চাইলে
পড়ুন,
একটু নরম আলোর নীচে। একটু নির্জন। ঘন বর্ষার রাত, লোডশেডিং। পরিবেশের একটা প্রভাব তো থাকেই, তাই না! না , না, মজা করলাম। তবে এই অভিজ্ঞতা যা বলতে বসেছি ; সেইসময় যে আবহে এই ঘটনা, সেই আবহ যদি আমার সাধ্যমত প্রকাশ করতে পারি, ধারণা করে নিতে পারেন , বলবো, একটু শিউরে উঠবেন, উঠবেনই।
সময়টা সত্তরের দশক।
হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার পর সেজো মামার সাথে আমি আর ছোটমাসী
( সমবয়স্কা, বান্ধবী বলাই সঙ্গত) দার্জিলিং বেড়াতে গেছিলাম। তখন
সোজাসুজি দার্জিলিং পৌঁছানো যেতো না। মাঝে লঞ্চে করে পারাপার। তখন দার্জিলিঙের যে
সৌন্দর্য্য সে কেবল সেসময় যারা গেছেন তাদের মনে আঁকা হয়ে আছে। অপরূপ প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যমন্ডিত পরিবেশে, গরম- প্রধান অঞ্চলের আবাসিক আমরা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি। উপভোগ্য সেটাও। হ্যাঁ, সেসময়ের তুলনায় আজ ঠান্ডাও কমে গেছে আমাদের কার্যকারিতার
গুণে। যাইহোক, চারদিন
ঘোরা,
বেড়ানো খাওয়া দাওয়ায় অমলিন স্মৃতি নিয়ে এবার ফিরে চলার
পালা। মনে মনে বললাম "আবার আসবো। ভালো থেকো তুমি"
মনিহারি
ঘাট থেকে স্টিমারে কি ভালো লাগছে! কিন্তু সমস্যা শুরু হলো সকরিগলি ঘাটে এসে।
ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল, নেমে মালপত্র নিয়ে কাদা বালির ওপর দিয়ে তাড়াতাড়ি
যাওয়াও যাচ্ছে না। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে, তবে ইঞ্জিন লাগেনি। আর সেকারণে কামরা গুলো অন্ধকার। মামা যা
বোঝার বুঝে আমাদের নিয়ে উঠলেন এক কামরায়। মামা লাইটার জ্বালিয়ে আমাদের বললেন, উপরের বার্থে দুজনে চলে যা। আমাদের পিছন পিছন এক ভদ্রলোক
তার স্ত্রী আর শিশু সন্তানকে নিয়ে উঠেছেন। তারা আর মামা নীচে বসে। বাইরে হালকা
কোলাহল,
স্টিমার থেকে নেমে সব আসছেন। অল্পস্বল্প ভিজেছি, ঠান্ডা লাগছে। ব্যাগ থেকে জামা কাপড় বের করে যে চেঞ্জ করে
আসবো,
অন্ধকারে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। তার উপরে এখনকার মতো তো চেন
টানা নয়,
তালার ঘাট লাগানো স্যুটকেস। জানলা দিয়ে হালকা আলো এসে পড়েছে। বাইরের
কোলাহলও স্তিমিত। জোরে বৃষ্টি নেমেছে ; প্রায়ান্ধকার
কামরায় আমরা সবাই ঠিক স্বস্তি বোধ করছি
না। বাচ্চাটাও ঘুমিয়ে পড়েছে। হালকা
কথাবার্তা চলছে। আচমকা চমকে উঠলাম আমরা সবাই।
বৃষ্টির সুরেলা আওয়াজ ভেদ করে কানে এলো ভারি বুটের আওয়াজ, ঠক্। ঠক্। ঠক্। ক্রমশঃ শব্দ জোরালো হচ্ছে, অর্থাৎ আমাদের দিকেই আসছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। বুকের
ভিতর যেন দুমদুম করে হাতুড়ি পিটাচ্ছে কেউ। লোয়ার বার্থে ভদ্রমহিলা বাচ্চাটাকে
জড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন।
ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন স্বরে মামাকে কিছু বলতে যেতেই মামা মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললেন-"চুউউউপ্"। যেভাবে মামা গলা নামিয়ে " চুউউপ্" শব্দটা ছড়িয়ে দিলেন, শব্দটা এসে নাড়িয়ে দিলো সবাইকে। আতঙ্ক শব্দটা জানা ছিল, জানা ছিল না তার ভয়াবহ আক্ষরিক অর্থ। নিমেষে আতঙ্ক গ্ৰাস
করেছে আমাদের সবাইকে। অন্ধকারে কেবল মাত্র আলো মামার সিগারেটের মুখে। শব্দটা আচমকা যেমন এসেছিল, একদম কাছে এসে তেমনি আচমকা থেমেও গেল! মন উসখুস করছে, নড়ার শক্তি হারিয়েছি। শক্ত হয়ে তাকিয়ে আছি শব্দ-
উৎস-পানে। অদ্ভুত এক নিরবতায় দমবদ্ধ পরিবেশ। পাশের কামরার কোনো যাত্রী তো হতে
পারেন! কিন্তু তৃতীয় নয়ন অবলোকন করছে অন্য কিছু, আর তাই
সে মেসেজ পাঠাচ্ছে, সাবধান! সময়ের হিসেব গেছে গুলিয়ে। ক্রমশঃ প্রকাশিত, কালো টুপিতে (আলো আঁধারে যেটুকু বোঝা গেল) মুখটা একটু আড়ালে, লং কোট পরা এক দীর্ঘদেহী এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের সামনে।
রুদ্ধশ্বাসে এক নিমেষে যতো অপ্রীতিকর ঘটনার কথা ঘাই মারছে মাথায়। আস্তে আস্তে
শব্দ এগিয়ে গেল আমাদের কামরা ছাড়িয়ে। ওঃ, সহযাত্রী! অন্ধকারে
নিজের ক্যুপ খুঁজছেন। খামোখা আমরা সবাই ভয়ে মরলাম। উফফ্, হালকা লাগছে। শব্দটাও থেমে গেছে। ভদ্রলোক মামাকে আবারো
উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যেতেই মুখে আঙ্গুল দিয়ে মামা আবারও থামিয়ে দিলেন। যদিও থামানোর কোনো দরকারই ছিল না। আপনি সবাই
থমকে যেতো, গেলোও!
একটা নারী কন্ঠের আর্ত চিৎকার আমাদের ভিতর-সহ নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে
আসছে। বুকে আবারো দ্রুতলয়ে হৃদস্পন্দনের শব্দ যেন কানে তালা ধরিয়ে দেবে। মনে তো
হলো,একদম পাশেই। মানে, পাশের ক্যুপে? নাকি! তার পরেরটায়!
উনি কি একা! আমরা উঠে যাবো? বলবো মামাকে? কোনরকমে যেন অবশ শরীরকে চালনা করে মাথা ঘুরিয়ে মামার দিকে
তাকালাম। চেন- স্মোকার নন্। দেখলাম, বিচলিত মামা একটা থেকে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে নিলেন।
উত্তেজনায় আমাদের প্রত্যেকের তখন যে কি করুণ পরিস্থিতি! যখন পাশের কুপের পরিস্থিতি ভাবনায়, আমাদেরই একজনের
আচমকা গোঙিয়ে ওঠার ছোট্ট আওয়াজ; নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছে আবার দীর্ঘাকৃত অবয়ব। হঠাৎ বিদ্যুৎ- এর ঝলকানিতে
আলোকিত মুহূর্তে সবাই দেখলাম-পুরুষ নয়; এক নারী অবয়ব। কি ভয়ঙ্কর! ভয়ে চোখ বন্ধ করতেও কি ভুলে
গেছিলাম,
নাকি! করেছিলাম! উপরে শান্ত থেকে মামা এবং ভদ্রলোকটি
পাথরের মূর্তির মতো বসে। অন্ধকারে সিগারেটের আগুনের রঙটাও যেন একদম উপযুক্ত, এই আবহে। ঘন অন্ধকারে একটা ছোট লালচে-কমলা স্ফুলিঙ্গ
জ্বলছে- নিবছে। যেন কোনো সংকেত- ধ্বনি , না এখন সেকথা মনে হচ্ছে। তখন ঐ আলোটুকুও ভালো লাগছিল না, সত্যি। ভিতরের অস্থিরতাকে নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ
প্রচেষ্টায় বিস্ফারিত চোখ বুজে গেল একটা ধাক্কায়, আপনি মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো-মাগো! কতোটা সময়
কেটেছে জানিনা, আজো
মনে হয় অন্তহীন একটা সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের মনে। জোরালো আলোয় চোখ মেললাম। (অনেকক্ষণ অন্ধকারে
থাকার দরুন ট্রেনের মিটমিটে আলোও তখন জোরালো)। ইঞ্জিন লেগেছে, তাই মৃদু দুলুনি হয়েছে। ভয়ের আঙ্গিকে তাই ধাক্কা বলে
ভেবেছি। নেই। দীর্ঘদেহী অদৃশ্য। হৈহৈ করে একদল ছেলে এসে উঠলো আমাদের কামরায়।
দমবদ্ধ পরিবেশ ভেঙ্গে আমরা সহজ ভাবে শ্বাস
নিলাম ; এতোক্ষণ!
কতোক্ষণ? মনে নেই। না, রুদ্ধশ্বাস
নাটকের যবনিকা পতনের শুরু- শেষ সময় মাপতে
দেয়নি। খুব ক্লান্ত লাগছে, সবারই মুখে স্বস্তির ছাপ কিন্তু , তারপর ঐ ছেলেগুলো আমাদের কথা শুনে যা বললো তাতে আমরা আবার
নতুন করে ভয়ের বাতাবরণে।
বিশ্বাসের জায়গা
প্রত্যেকের নিজস্ব।
ওরা শুনে নিজেদের মধ্যে
আলোচনা শুরু করে দিলো, যা থেকে আমাদের প্রত্যেকেরই মনে হলো
কিছু একটা ব্যাপার আছে। তারপরই ওরা নেমে যেতে উদ্যত। মামা এবং ঐ ভদ্রলোক উদ্বিগ্ন
হয়ে জানতে চাইলেন ,কেন
ওরা মালপত্র তুলে নিচ্ছে! ওদের বক্তব্য-আজকের তারিখে,এই রাতে প্রত্যেক বছর এই ঘটনা ঘটে এই ট্রেনে। এখন বুঝতে পারছে, এতো ফাঁকা কেন ট্রেন! আজকেও ঘটেছে কাজেই ওরা এখানে থাকবে না।
-"তাহলে
উঠলে কেন?"
-তারিখটা
মনে ছিল না আর সামনে ফাঁকা কামরা পেয়ে উঠে পড়েছিল।
মামা বললেন,"অন্য কামরায় গেলে কি লাভ! ওখানেও তো দেখা দিতে পারে!"
অল্পবয়সী ছেলেরা শুনে
একটু ঘাবড়েও গেল।
ভদ্রলোক তো ওদের পায়ে
পড়তে পারলে বাঁঁচেন এমন অবস্থা আমাদের সাথে তোমরা থাকো প্লীজ। দেখলে না আলো এবং তোমরা
আসাতে চলে গেছে। আর আসবে না।
মামাও বললেন,"একসাথেই থাকি বরং। আর আলো কেউ নেভাবে না, কেমন!"
ওরাও নিজেদের মধ্যে
আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো, থাকবে।
এখন যেমন পা ফেলার জায়গা
পাওয়া যায় না, তখন
সেরকম ছিল না। ভয়ে ভয়ে আমি আর মাসী ওয়াশরুমে গেলাম, আসলাম। প্রতিটি ক্যুপ লক্ষ্য করলাম, ইতিমধ্যে ঐসব ক্যুপেও কয়েকজন যাত্রী এসে গেছেন। দুই-একটা ক্যুপ ফাঁকা। না, কোনো
অপ্রীতিকর দৃশ্য চোখে পড়লো না অথচ আওয়াজ তো এদিক থেকেই এসেছিল। আমাদের আগে মামারাও
ঘুরে দেখে গেছেন। ঐসব যাত্রীদের আমি আর
মাসী সদ্য ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ওদের কাছে ব্যক্ত করতে চাইলেও মামা মাথা নেড়ে নিষেধ
করলেন। পুরো ক্যুপটা করে দেখে দরজা দেওয়া হলো। ছদ্মবেশী মানুষের কুকীর্তি করার
প্রচেষ্টা হওয়াটাই বাস্তব, পরা-বাস্তব মেনে নিতে সময়তো লাগেই, একটুও যদি যুক্তিবোধ থাকে, তাই না! ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। শুয়ে পড়েছি প্রায় সবাই, যদিও, ঘুম আসছে না। ফিরে ফিরে আসছে কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত। ভাবতে
না চাইলেও ভুলতে পারছি না। সবাই ভয়ে আলো জ্বালিয়ে শুয়েছে। আমাদের ক্যুপের
ডানদিকের প্রথম ক্যুপটায় আলো জ্বলছে না কোনো কারণে। ঐ ক্যুপে কেউ নেই যদিও কিন্তু ঐ ক্যুপ হয়ে ওয়াশ রুমে যেতে হবে। যেদিক থেকে আওয়াজ পেয়েছিলাম অর্থাৎ আমাদের
বাঁদিকে কৌতুহল এবং প্রয়োজনে ঐদিকের ওয়াশরুমে তাই গেছিলাম। অবশ্যই মামাকে সঙ্গে নিয়ে। তখনতো ওদিকেও লোকজন তাই ভয় লাগেনি । মামাও আর
দাঁড়াননি। তবে আমি আর মাসী তখনো পুরোপুরি আতঙ্ক-মুক্ত নই তাই দরজা ভিজিয়ে একে
অপরকে সাহস দিয়ে কোনোরকমে যথাস্থানে ফিরে এসেছিলাম। এসব ভাবনার মাঝে সারাদিনের
এবং সন্ধ্যেবেলার তীব্র মানসিক ক্লান্তিতে একসময় চোখ লেগেও এসেছে, ছেলেদের
তীব্র কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সবাই উঠে পড়েছি। মামা চপ্পল গলিয়ে ওদের দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন। সাথে সাথে নীচের
ভদ্রলোকও।
এপাশে ওপাশে সবজায়গায়
আলো জ্বলছে, কেবল
প্রথম ক্যুপের ভিতরটা অন্ধকার তাই মনে ভয় আসেনি। সেকারণে একটি ছেলে ওপাশের
ওয়াশরুমে যেতে গিয়ে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কেন! ঐ আবছা অন্ধকারে ও নাকি
পরিষ্কার দেখেছে সেই দীর্ঘদেহী কে। মনের ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। অবচেতন মনে ভয়ের
থেকে জন্ম নেওয়া ইলিউশন।
কিন্তু থমকে গেলাম
প্রত্যেকেই। আমরা কেবল এক দীর্ঘদেহীকে
দেখেছি ,এটুকু তথ্য পেতেই
ওরা এতো ভয় পেয়েছিল যে বিশদ বর্ণনা দেওয়া আর হয়নি। ঐ ছেলেটি বিশদ বর্ণনা দিতে
আমাদের পারস্পরিক চোখাচুখি বুঝিয়ে দিলো, মিথ্যে বলছে না।
এখন আমি আপনাদের বিশদে
বলতেই পারি। বিশ্বাস করবেন কিইই!
অপেক্ষায় রাখাটা ঠিক
হবে না। তবে আপনাদের বিশ্বাস করিয়েই
ছাড়বো। শুনুন তাহলে!
বিশদেই বলছি-ছেলেটির বর্ণনা দিলো এক ভয়ঙ্কর-মুখী মহিলার। হালকা আলোতে
যতোটুকু দেখতে পেয়েছে। হ্যাঁ, আমরাও তো তাই দেখেছি!
মুহূর্তে আমাদের আবারো গ্ৰাস করলো ভয়। তখন ছেলেটিকে সুস্থ করাই প্রধান
কাজ। রাতও ফুরিয়ে আসছে। ছেলেটিকে সবাই মিলে নানা চেষ্টা করে স্বাভাবিক অবস্থানে
ফিরিয়ে আনতে আনতে ভোর হয়ে গেল। রাতের আবেশময় পরিবেশ দিনমনি গ্ৰাস করে সব
রহস্যের কিনারা করে দিলো। দীর্ঘদেহীর ইঞ্জিন লাগার অভিজ্ঞতা ছিল অবশ্যই আর তাই সে
দ্রুত নির্গমনের চেষ্টায় ভয়ঙ্কর-মুখী পুতুলটিকে নিয়ে অগ্ৰসর হলেও সম্ভব হয়নি
কম্পার্টমেন্ট থেকে সরে পড়া ; কারণ ঐ দরজা দিয়েই ছেলের দল হৈহৈ করে উঠে পড়ে। হ্যাঁ, যাকে দেখে আমাদের প্রাণবায়ু প্রায় যায় যায় হয়েছিল তিনি
একটি নিরীহ পুতুল বিশেষ! প্রথম ক্যুপ টিতে না জ্বলাতে সুবিধা হয়েছিল। পুতুলটিকে
ঐ ক্যুপ রেখে সুযোগ বুঝে নেমে গেছে সেই দীর্ঘদেহী। সুযোগ আমরাই তো করে দিয়েছিলাম
ছেলেগুলো ওঠা মাত্র। ওদের দেখেই তো আমাদের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বাক্যালাপ বিনিময় তাকে সরে যেতে সাহায্য করে ছিল। হয়তো
ভেবেছিল,
সুবিধা মতো আবারও উঠে খেল্ দেখাবে কিন্তু সম্মিলিত
প্রচেষ্টায় সবদিক বন্ধ এবং আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়তো সে সুযোগ দেয়নি। গন্ডগোলের আওয়াজে ঐদিকের মানুষ- জনও এসে
গেছেন। পরে ,পরে
জানলাম বছরে এই একদিনই নয়, মাঝেমধ্যেই এভাবে অন্ধকারে যাত্রীদের বোধের বাইরে পাঠিয়ে লুঠ করে নেয় তাদের
সর্বস্ব। সেকারণে ওরাও খুব সতর্ক ছিলেন। একার কাজ বলেও মনে হয়না এখন। ছেলের দল কিন্তু তারিখেই অনড় থাকলো। এটাও মানুষের সৃষ্ট তারিখ হওয়াই স্বাভাবিক।
পরপর দু-চার বছর তারিখগুলো রক্ষা করতে পারলে ঐ দিনগুলোতে ট্রেন ফাঁকা থাকবেই আর
সেই সুযোগ নিয়ে চলবে বে-আইনী লেন-দেন।
এবারে বলি, মামা ক্যালকাটা পুলিশের ডিটেক্টিভ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মামা আলিপুরদুয়ারে নেমে ছিলেন, দেখেছিলাম। কেন , বুঝিনি। এখন সবাই জানলাম ঐসময় দ্রুত স্টেশনমাস্টারকে
নিজ-পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। আজো মনে পড়লে ভাবি, মামা
এতো স্থির ছিলেন যে অবাকই হচ্ছিলাম। না! বিপদে মাথা ঠাণ্ডা রাখারও শিক্ষা নিতে
হয়েছে যে! একটু হলেও সে শিক্ষা আজো কাজে
লাগাই। ভয়ঙ্কর মুখশ্রী- যুক্ত পুতুলটিকে দিনের আলোতেও যেন স্বাভাবিক লাগছে না।
ভয় এমনই এক অনুভূতি! আশ্চর্য এটাই, ছেলেগুলোর চোখে আগে পড়লো না কেন! আবারো সর্বসিদ্ধান্ত মেনে
নিতে হলো অর্থাৎ পুতুলটি উপরের ব্যাঙ্কে রেখে গেছিল। ট্রেনের দুলুনিতে অবশেষে সে
পপাত ,
ঘটনাচক্রে তারসাথে ঐ ছেলেটিও। শিয়ালদহ স্টেশনে আবারো
কমপ্লেইন করার পর রেল- পুলিশের হাতে পুতুলটিই ধরা পড়লো, আমরা বোকার হাসি হেসে পারস্পরিক সৌজন্য আদান প্রদান করে
বাড়ির পথে।
আলো ও আঁধার। ধাঁধার
মতোন আমাদের জীবনে। দুই-ই উপভোগ্য।
মাঝে মাঝে ভয় পেলে মন্দ
কি!
সমাপ্ত
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
|ALEEK PATA-The Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Monsoon Issue,2020 | July-September 2020 |রিমঝিম সংখ্যা।
| Third Year Sixth Issue |23 rd Edition|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post