ভৌতিক
উজ্জ্বল সামন্ত
রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িটা বেশ পুরনো সাত মহলা বনেদি বাড়ি। অনেকটা জায়গা জুড়ে ফলের, ফুলেরবাগান, পাশে পুকুর। গ্রামের এক প্রান্তে অবস্থিত । ঘন অন্ধকার
নেমে আসে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে। এত বড় বাড়িতে মাত্র দুজন ব্যক্তি বাস করেন। জমিদার
শ্রী নরনারায়ন রায়চৌধুরী ও তার ভৃত্য হরেন। এই জমিদার বাড়ির পরিবারের দুই ছেলে
।বড়় ছেলে ডাক্তারি পড়তে গিয়ে বিদেশেই থাকেন। ছোট ছেলে হল অমলের বাবা শহরের
অভিজাত ফ্লাটে বাস করেন। অমলের বাবা গ্রামে একদমই আসতে পছন্দ করেন না। নরনারায়ণ
রায়চৌধুরী ছোটছেলে ও বৌমার সঙ্গে যেতে চাননি শহরে। শহরের জীবন তার ভালো লাগে না ,কোলাহল কল কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওই
যান্ত্রিক পরিবেশে। গ্রামের খোলামেলা মুক্ত বাতাসেই তাঁর স্বচ্ছন্দ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তাই স্ত্রী অনুরোধে ও বাবার কথা ভেবে
মা এর কাজে নিজের ছেলে অমল আমাকে পাঠিয়ে দেন। জমিদারের স্ত্রী গৌরিদেবী ও হরেন (ভৃত্য) থাকতেন এই জমিদার বাড়িতে।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর বড্ড একা হয়ে গেছেন। বড্ড ভালবাসতেন তাঁকে, সেই কোন ছেলে বেলায় বউ হয়ে এসেছিলেন গৌরী। হাতের রান্নাও চমৎকার ছিল,
নরনারায়ন বাবু চেটেপুটে খেতেন। স্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যু হয় ।
জমিদারবাবু তারপর থেকেই অনেক সময়় অন্যমনস্ক থাকেন । হয়তো স্ত্রীর মৃত্যুকে মন
থেকে মেনে নিতে পারেননি। রান্নার মাসি রান্না
করে দেয় বটে কিন্তু সে রান্না তার মুখে রুচেনা। হরেন কে বারবার করে বলেন একজন ভাল
পক্ক রাঁধুনী দেখতে। গ্রামের দু-একজন মহিলা এসেছিল বটে কিন্তু তাঁদের রান্না ভাল
লাগেনি । স্ত্রীর মৃত্যুর দিন
ঘটা করে গ্রামের লোক খাওয়ান। গৌরী দেবীর স্মৃতিতে গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় নির্মাণ করেছেন। গ্রামের কোন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না,
কে খেতে পারছে না এসব খোঁজ-খবর রাখেন। সাধ্যমত দান ধ্যান করেন।
সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন বই পড়া, গানশোনা , বিকেলে বাগানে পায়চারি করা ইত্যাদি । গত দিনে নাতি এসেছে। অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে। স্ত্রীর মৃত্যু
বার্ষিকী দিন নর নারায়ণ বাবুর মন বিষন্ন। স্ত্রীর কথা ভাবছেন । তাঁর নানা স্মৃতি
মনে পড়ছে। কি ভালো গান করতো গৌরি , শাশুড়ি মৃত্যুর পর একা
হাতে নিপুণভাবে সংসার সামলেছে । সেই গৌরী আজ নেই এইসব ভাবছেন বসে বসে। দুপুরে
গ্রামের লোক বার্ষিকীর ভোজ খেয়ে গেছে পরম তৃপ্তিতে। বর্ষাকাল মাঝে মাঝেই দেখা
বৃষ্টির। রাত্রি এখন দশটা অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে।
মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে আকাশে। নাতি কিছুক্ষণ আগে খেয়ে ঘুমিয়েে
পড়েছে। সারাদিন তার অনেক ধকল গেছে। বাজার যাওয়া , ভোজ
কাজের তদারকি করা ইত্যাদি। হাজার ঝক্কি সামলিয়ে বড়ই ক্লান্ত। তাই খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়েছে। লন্ঠন জলছে
টিমটিম করে। ঘরে আরাম কেদারায়
নরনারায়ন বাবু অন্যমনস্ক তার শোবার ঘরে। খাবারটা দিয়ে গেলাম খেয়ে নেবেন,
মহিলা কন্ঠে ভেসে ওঠে। নয়ননারায়ণ বাবু কোন উত্তর দেন না। কিছুক্ষণ
পর তিনি খেতে বসলে লক্ষ্য করেন পঞ্চ
ব্যঞ্জন ও তার প্রিয় মোচার ঘন্ট রয়েছে
পাতে। একটু আশ্চর্য হলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মোচার ঘন্ট তাঁর পাতে দেখেন নি
কোনদিন। যাইহোক সাতপাঁচ ভেবে তিনি খাওয়া শুরু করলেন। মোচার ঘণ্টর স্বাদ যেন তার
খুব চেনা। তিনি চিৎকার করে ডাকলেন ।
হরেন , হরেন ! ওদিকে নাতি পাশের ঘরে দাদু চিৎকার শুনে ছুটে
পড়িমড়ি করে ছুটে এসে বাবুর সামনে দাঁড়ায় । কি হয়েছে বাবু? ইতিমধ্যে অমলের চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতেেে
দাদুর ঘরে আসে। দাদু জানো হরেন কে বকাবকি করছে। অমল প্রশ্ন করে কি কি হয়েছে দাদু? দাদু
বলে এই দেখ কি কান্ড। হরেন এই মোচার ঘন্ট কে রান্না করেছে? নতুন রাধুনী কাউকে জুটিয়েছিস? হরেন থতমত খেয়ে বলে না বাবু আমি রান্না করেছি। কিন্তু মোচার ঘন্ট তো আমি
রান্না করিনি। বলিস কি ?তাহলে আমার পাতে এটা কি? হরেন ফ্যালফ্যাল চোখে দেখে মোচার ঘন্ট কাঁসার বাটিতে রয়েছে। সবাই বেশ অবাক। নর
নারায়ণ প্রশ্ন করেন ,আমাকে কে খাবার দিতে এলো? হরেন চুপ করে থাকে। এবার নরনারায়ন বাবু ভয়ে আঁতকে উঠলেন। তুই খাবার দিস নি হরেন।
মনে করতে শুরু করলেন । ইজি চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন । ঘরে কে ঢুকেছিল খেয়াল
করেননি । খাবার দিতে এল তাহলে কে ? যে
ডেকেছিল সেটাতো মহিলা কণ্ঠ ছিল।
হরেন কে বলেন : হরেন, আমি ভাবলাম তুই নতুন কোন রাধুনী মাসি
দেখেছিস । তাহলে কে এল? কেইবা মোচার ঘন্ট রান্না করলো?
ভৌতিক ব্যাপার! তিনজনেই ভীমরি খাবার যোগাড়! নরনারায়ন ভাবতে থাকেন ,তাহলে কি তিনি এসেছিলেন? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? বুঝে ঠাউর করতে পারেন না.. এর রহস্য...
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post