ফেনাভাত
অনিন্দ্য পাল
তখন আমরা এক ভাই দুই বোন
তখন আমরা এলেবেলে,
আমার তখন গোপনে বড় হওয়া
আমার তখন বিকেলফেরা মাঠে খেলে ;
ক্লাস ফাইভের গেঞ্জিটা তখনো ঠিক হয় ,
পড়তে বসে বাবার গাঁট্টা খাবার ভয়
আমার তখন পড়ার ভয়ে পেটব্যাথা
আমার তখন শুধু খিদে, বাড়ছি
বোধহয় ;
ছোট দুই বোন, ওরাও
তখন এফ পি তে রোজ যায়
মনে নেই আর, সকাল
বেলা, ভাত খায় কি না খায়?
শুধু মনে পড়ে, স্টিলের
গ্লাসে গা বেয়ে আসে
সদ্য গরম ফেন
গোটা দুই ভাত, নুন তেল
দিয়ে, ঢকঢক করে পান
বেশ লাগতো, এক গ্লাস ভরা গরম
ভাতের গন্ধ
ওটাও খাবার, জানেনা
এখন, ফেনভাত তাই বন্ধ,
পেটে রোদ্দুর,গ্রীষ্মের
তাপ, কষাই এর মত চিতা
অভাবের ঘরে, ঠাকুরের পরে ভাতই ছিল গীতা ।
ছোট দুই বোন, আমি এক
জন, পাঁচ-পাঁচটা পেট
ধারে সংসার, দোকান
বাজার, খিদে রোজ রুমমেট
কিছু নেই তবু পেটটুকু আছে, খিদের
আঁতুড়ঘর
সেই পাকশালে একটাই গ্লাসে ফেনভাতে পেটভর ।
পাশের খুড়ি ফেন নিয়ে যেত - গরুর জাবনা ভালো
আমাদের বাড়ি নিতনা কখনও ভিখারী নিতনা চালও,
ভেঙে পড়া ছাদ, বাঁশের
খুঁটিতে বৃষ্টির ভালোবাসা
কেরোসিন কুপি যতটুকু জ্বলে, তাতেই
স্বপ্ন ঠাসা ।
এত নেই তবু শরীরতো আছে, গাছের
মত বাড়ে
লজ্জা ঢাকার ছালবল্কল, লোকের
নজর কাড়ে
চেয়েচিন্তে জামা জুতো আর পুরোনো পোষাক কেনা ,
জানতাম রাত শেষ হবে একদিন, মিটে
যাবে সব দেনা।
গরম ভাতের ধোঁয়াও গরম, ফোস্কা
পড়ার ভয়
তাই ভাত সারা দিনরাতে একবারই খেতে হয় ,
ভাঙাচোরা মুখ বাবার তখন চল্লিশ আর ছয়,
তখনই মাথার চুল সব সাদা, শরীরে
অজানা ক্ষয় ;
রাতের পাহারা ফেরিওলা ট্রেনে দিন আনা দিন খাওয়া
সেটুকুও প্রায় বন্ধ যখন, মা কাজ
নিল, হল আয়া
আমার তখন ফেনভাত বেলা, বোনেরাও
হচ্ছে বড়
কিছু নেই তবু কিসের বাঁধনে সব অভাব জড়সড়।
একগ্লাস ফেন, একটু
লবণ, বুদ্ধির গাছে পোকা
এবারে একটা চায়ের দোকানে, পড়াশুনা
ছাড় খোকা
এমনি কত দ্বেষ-উপদেশ, এমনি কত
নকল আদর
হাসি মস্করা, অপমানে
ভরা ছোটবেলা কালো চাদর
এখন যখন এককাপ ভাত, অথবা দু'টো রুটি
কোথা থেকে যেন একগ্লাস ফেন, উৎসুক
হয়ে উঠি
সেই গন্ধ, সেই স্বাদ খুঁজি
ডায়েট চার্টের খাবারে
খিদে নেই আর, এখন
আমার রুচি নেই আর আহারে।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post