ভুল ঠিকানা
পারমিতা রাহা হালদার
(বিজয়া)
অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে আসা ছোট্ট শিশুটির আজ নামকরণ ।
দেবিকা
আর রাজের বিয়ে হয়েছে বারো বছর। চাকরি সূত্রে দুজনকেই বিদেশে যেতে হয়। বিয়ের পর
একজন দেশে ফিরলে অন্যজন চলে যায় । আফটার অল চাকরি তো নতুন বিয়ে হয়েছে বলে তো আর
অফিস ছাড় দেবে না। এই দিকে দুজনেই অ্যাম্বিশাস নিজেদের কেরিয়ার নিয়ে ।
কেরিয়ারে মগ্ন দম্পতির সন্তান
নিয়ে ভাবার সময় নেই। এদিকে দুবছর যেতেই পরিবারের সদস্য, পাড়া
প্রতিবেশীদের টিপ্পনী ,কানাঘুষো কানে আসতে শুরু হলো দেবিকার।
সবাই তকমা দিল দেবিকা বন্ধ্যা তাই মা হতে পাচ্ছে না । প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে ভাবতে বাধ্য করলো সবাই ।
"রাজ আমাদের এবার সন্তান নেওয়ার কথা সিরিয়াসলি ভাবা দরকার । আমিও আরো পাঁচজন
মেয়ের মতো মা হতে চাই "।
"শোনো দেবিকা মাত্র দুবছর বিয়ে হয়েছে। কাজের চাপে নিজেদের মতো করে সময়
কাটাতে পারি নি । এখনি বাচ্চা নিলে বাচ্চার পিছনে সময় চলে যাবে। তাই আরো বছর খানেক
যাক, ওসব কথায় কষ্ট পেওনা।"
"আমি জানি রাজ, তবু পরিবারের সবাই, পাড়া প্রতিবেশীরা আমাকেই ভুল বুঝছে। তাছাড়া এতো দেরি করলে যদি কোন বিপদ হয়
কে সামলাবে?"
"এতো ভেবো না তো দেবিকা,
লোকেদের খেয়ে কাজ নেই তাই পরের সংসারে নাক গলায়। এতো ভাবলে বাঁচতে
পারবে না”। দেবিকা নিরুপায় হয়ে চুপ করে যায় ।
চাকরি, ঘোরাঘুরি, ব্যস্ততার মধ্যে কেটে গেল আরো দুই বছর
। সুখী দম্পতি এবার সিরিয়াসলি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবলো। কিন্তু বিধাতার অদ্ভুত পরিহাস, কোনোভাবেই দেবিকা মা হতে পারলো না! ডাক্তারের রিপোর্টে স্পষ্ট হলো দেবিকা মা হতে পারবে না । অবশেষে বাঁজার তকমা জুটেই
গেল কপালে!
অনেক রকম চেষ্টার মধ্যেই কেটে গেল বারো বছর। কোন উপায়েই আশার আলো জ্বললো না।
দেবিকা ঠিক করলো অনাথ আশ্রমের থেকেই দত্তক নেবে সন্তান । কিন্তু বাড়িতে সবার আপত্তি,
শাশুড়ি বললেন,'নিজের পেটের সন্তানই আপন হয় না এতো কার না কার রক্ত সে কি করে আপন
হবে?"
রক্তের সম্পর্ক ছাড়া কেউ আপন হতে পারে না এই কথা অস্বীকার করে সমস্ত আইন মেনে
দেবিকা অনাথ আশ্রমের থেকে নিয়ে এলো সদ্য ফুটফুটে মেয়ে ।
নামকরণের দিন সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিল এমন কি রাজও। শ্বশুরমশাই স্পষ্ট জানালেন, "যেখান থেকে এই মেয়ে এনেছো সেখানেই
রেখে এসো না হলে তোমারও এই বাড়িতে জায়গা হবে না "।
সবার আপত্তি দেখে দেবিকা রাজের কাছে জানতে চাইলো সেকি চায়। রাজও চুপ। দেবিকা
সেদিন সবাই কে জানালো দোষ তার মধ্যে নেই দোষ রাজের মধ্যে তাই সে মা হতে পারে নি।
এতোদিন চুপ করে সব অপবাদ সহ্য করেছে যাতে রাজের পুরুষত্বে কোন আঘাত না লাগে। এখন
চুপ করে অন্যায় কে প্রশয় দেবে না। অনাথ আশ্রম ভুল ঠিকানা নয় ভুল ঠিকানা এই বাড়ি ।
দেবিকা মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল শান্তির ঠিকানার খোঁজে ।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post