মহালয়ার গান
সমাজ বসু
পাখির শিস আর মহালয়ার মিষ্টি গানের সুরে উত্তর কলকাতার শুকিয়া স্ট্রিটের
বস্তিটার ঘুম ভাঙে। সাত বছরের ছোট্ট মেয়ে মহালয়া থাকে এই বস্তিতে। তাদের ঘর
ছাড়াও আরও সাতটা ঘর পাশাপাশি। এই আট ঘরের মানুষজন সবাই মিলেমিশে থাকে। পরষ্পরের
প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ভুলে,সুখে
দুঃখে সবাই সবার পাশে থাকার চেষ্টা করে। উপরন্তু, মহালয়ার
গান যেন সবাইকে আত্মীয়তায় বেঁধে রাখে।
সাত ঘরের বাসিন্দারা সকলেই জানে, মহালয়ার দিন ভোরে মেয়েটার জন্ম হয়েছিল বলে দাদু তার মায়ের নাম,
মহামায়ার সঙ্গে মিল রেখে নাতনির ওই নাম রেখেছিলেন। নামের মধ্যেই
বেশ একটা পুজো পুজো গন্ধ আছে। তাই সে সবার চোখের মণি।
আর পাঁচটা ছোট ছেলে মেয়ের মত তার খেলাধুলোয় মন নেই। গান শুনতে সে খুব
ভালবাসে। গানের গলাও খুব মিষ্টি। মহালয়ার দুঃখ, তাদের ঘরে টিভি নেই। পড়শিদের অনেকের টিভি আছে। তাদের ঘরে
গিয়ে গান শোনে। শুনে শুনে গানগুলো সে শিখেও নেয়। কি আশ্চর্য ক্ষমতা। তারপর সেই
গান যখন সে গাইতে শুরু করে,সবাই অবাক হয়ে তার গান শোনে।
দেখতে দেখতে মহালয়ার আগের দিন এসে গেল। আজ রাত পোহালেই মহালয়া। কাল আবার
মেয়েটার জন্মদিনও বটে। সাত পেরিয়ে আটে পা রাখবে। কাল সারাটা দিন মহালয়ার হৈ
হুল্লোড়েই কাটবে। এইসব ভেবে তার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ
করতে করতে কখন যেন সে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন কাকভোরে সবার ঘুম ভাঙতেই একি বিপর্যয়! গতকাল মাঝরাতেই এলাকার
ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে। ভয়ানক অন্ধকারে ডুবে আছে এলাকা। সবার চোখে দুশ্চিন্তার
ছাপ। কারো ঘরেই যে রেডিও কিংবা ট্রানজিস্টর নেই। টিভিতে মহালয়ার অনুষ্ঠানও দেখা
হবে না। দু চার ঘরের কিছু কমবয়সী ছেলে
ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই, হঠাৎ তাদের
কানে ভেসে এলো, মহালয়ার সেই গান- বাজল
তোমার আলোর বেণু,মাতল রে ভুবন.... সবাইকে অবাক করে মহালয়ার
গান ধরেছে ছোট্ট মহালয়া। একে একে সবাই ঘরের ভেতর থেকে উঠোনে নেমে এল। বেজে উঠল
শঙ্খ। মহালয়ার মা, মহামায়া ধুপধুনো জ্বালিয়ে দিতেই এক
মোহময়ী মায়াজাল সৃষ্টি করল। সবাই স্তম্ভিত,বিষ্মিত।
মহালয়া আপন মনে গেয়ে চলেছে। আর তার সেই গানের পরশে জেগে উঠছে ভোরের সূর্য।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post