অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, October 20, 2020

শিশির পর্ব- অনুগল্প-সুন্দরী অ্যাডেনিয়ামের খোঁজে- সম্পা দত্ত দে

 

সুন্দরী অ্যাডেনিয়ামের খোঁজে

সম্পা দত্ত দে






"তুমি একদিন শিউলি গন্ধ হয়ে, আমার মনে শরৎ ঢেলে দিও" আমি তোমার শিউলি শরৎ হয়ে ফুটব।

অপূর্ব সুন্দর কথায় দুটো লাইন। এবার শরৎ এসেও আসছে না। আকাশের মুখ ভার। ভাদ্রের কড়া রোদ শিউলির গন্ধ, কাশফুলের ঢল , মায়ের মর্ত্যে আসা সবকিছুই মন কেমন করা। করোনা ভাইরাসের কারণে কিছু ভালো লাগেনা সুমি'র। প্রতিদিনের মতো আজও সুমি অভ্যাস মত সুপ্রভাত জানাতে-

সকালে মোবাইল খুলে সবাই কে সুপ্রভাত জানাল।  "গাছের কথা" গ্ৰুপের সাথে যুক্ত হবার পর থেকে মনটাই ভালো হয়ে যায় সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ দেখে। প্রতিদিন নতুন নতুন ফুল গাছ গুলো দেখে ভীষন ভালো লাগে সুমি'র। গ্ৰুপে একটা ডাবল পাপড়ি'র অ্যাডেনিয়াম গাছ ফুল ফুটে ভরে আছে দেখে ওর ও মনে মনে ইচ্ছে হল বাড়িতে একটা অ্যাডেনিয়াম আনবে। লকডাউনের সময় কলকাতায় ছিল সুমির মেজ'জা ছেলের কাছে । মেজ'জা কে হোয়্যাট'সঅ্যাপে  অ্যাডেনিয়াম ফুলের ছবি দেখিয়ে বলেছিলো,

-দেখো দিদি এই ফুল গুলো কি সুন্দর তাইনা?

-হ্যাঁ গো ভীষণ সুন্দর।

অপর প্রান্ত থেকে মেসেজ এল।

রান্না করতে করতে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো মনে মনে ভাবতে লাগল অনেক কিছু। গতকাল সারা রাত ধরে বৃষ্টি পড়ছিল। অ্যডেনিয়াম মানে মরুগোলাপের ডালটা ঠিকঠাক আছে তো। মেজ'জা শুভ্রা আর মেজদি সাথি (ননাস) দুজনে কলকাতা থেকে অ্যাডেনিয়ামের একটা ছোট্ট ডাল এনেছিল। বৃষ্টির জন্য দশ পনেরো দিন দোতলায় ছাদের কার্নিশে ছিল। গতকাল টব নিয়ে উপর  ছাদে রেখে এসেছে সুমি একটু রোদ হাওয়া গাছে লাগানোর জন্য। গাছের স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য।

রান্নাঘরে কাজে দিদি কে সাহায্য করে জামা কাপড় নিয়ে ছাদে শুকোতে দিয়ে রোজ ফুল গাছগুলো একবার দেখা অভ্যাস সুমি'র। শরৎ এসে গেল তবু শিউলি গাছের কুঁড়ির দেখা নেই। একগুচ্ছ কাশ টবে লাগানো সেখানে ও ফুল ফোটে নি। রেইন লিলি গুলো বৃষ্টির জলে হেলে পড়েছে। ঝাউগাছ দুটো কি সুন্দর হয়েছে।সব ডালের মাথায় ফুল এসেছে। সব দেখে সুমি'র চোখ অ্যাডেনিয়ামের টবে পড়তেই বুকের ভেতরটা খালি হয়ে গেল। অ্যাডেনিয়ামের ডালটি নেই খালি টব পড়ে আছে। সুমি'র মন খারাপে কেঁদে ফেলল। এক অপরাধ বোধ চেপে ধরল। সুমির নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। ও নিজেই উপরের ছাদে রেখে এসেছে।না নিলেই ভালো হতো। কি সুন্দর কচি কচি পাতা গজিয়েছিল। নিজেকে সংযত রাখতে পারলনা সুমি। ছাদ থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে  দৌড়ে নীচে নেমে দিদি'কে বলল,

-দিদি তোমার আনা অ্যাডেনিয়ামের ডালটা নেই।

-ওমা সেকি কথা, এতোদূর থেকে নিয়ে এলাম কি হল? কে বা নিয়ে গেল?

-ছাদে বড় বানরটা মনে তুলে নিয়ে গেছে।

-বানর কেন নেবে? ছাদে বানর আসে তাই মা কিছু হারিয়ে যায় দোষটা তার ঘাড়েই চাপে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল সুমির।

সুমি সহ বাড়ির সবাই খুঁজে চলছে রোজ। বাড়ির কোণ,ছাদের কার্ণিশ, চারপাশে। ছাদে পাখি, কাক, বানরের উৎপাত লেগেই আছে। ফুলের কুঁড়ি আসতেই পাখি ঠুকরে ছিঁড়ে দেয়। এসব দেখে ভীষন মন খারাপ হয়ে যায় সুমি'র।



 কাকতালীয় ভাবে পরদিন সকালে সুপ্রভাত জানাল সমাপ্তি দিদিয়া। কলকাতায় যোধপুর পার্কে থাকে। খুব সুন্দর আবৃত্তি করেন তিনি। দিদিয়া অ্যাডেনিয়াম ফুলের সাথে দিদিয়ার নাতনির ছবি দিয়ে সেদিন সুপ্রভাত জানাল। সুমি'র মনটা খুশিতে ভরে উঠল। এত সুন্দর একটা ছবি দেখে। খুব মিষ্টি দেখতে নাতনী। নাম সানভী, যেমন মিষ্টি দেখতে তেমনি মিষ্টি মিষ্টি কথা। সবাইকে মাতিয়ে রাখে সানভী ওর ঠাম্মিকে তো নাম ধরেই তারা বলে ডাকে, কত শাসন বারণ আদর আব্দার সব নিয়ে মাতামাতি রোজদিন ।  দিদিভাই ও সুমিকে খুব আদর করে ভালবাসে সুপ্রভাত, শুভরাত্রি জানায় রোজ নিয়ম ক'রে। দিনে একবার ফোন করা চাই ওদের দুজনের। ছবিটি পেয়ে  আনন্দিত হয় সুমি। একটু হলেও হারিয়ে যাওয়া অ্যাডেনিয়াম ডালের শোক ভুলে যায়।

মন খারাপ নিয়ে পাওয়ার আশায় ছাদে উঠে  রোজদিন খুঁজে চলে চারদিকে। সুমির মন খারাপ তবুও পিছু ছাড়ে না। 

তৃতীয় দিনের দিন সব গাছ দেখে খুঁজে নেমে আসে নীচে। হঠাৎ মেজদা মানে ভাসুর বলেন, ‘পাওয়া গেছে পাওয়া গেছে’। সুমি আনন্দে ছাদে ওঠে,

-কোথায় পেলেন মেজদা

-ঐ পশ্চিম দিকের ছাদের কার্নিশের নীচে পড়ে আছে।

-এখনো বেঁচে আছে দেখছি।

-টবে পুঁতে দি, হবে কচি পাতা দেখা যাচ্ছে।

সুমি পশ্চিম দিকে ছাদের কার্ণিশে তাকিয়ে দেখল কতগুলো কাক কা কা করছে। উঁচু আমগাছের মগডালে বাসা বাঁধছে আর খড়কূটো জোগাড় করছে। অ্যাডেনিয়ামের ডালটার পাতা ঝরে পড়ছিল। দেখতে শুকনো ডালের মত লাগছিল বলেই হয়ত বাসা বাঁধার জন্য তুলে নিয়ে গেছিল। বাসা পর্যন্ত নিতে হয়তো আর পারেনি তার আগেই পড়ে গেছিল। 

শেষ পর্যন্ত ডালটি আর বাঁচেনি। মরে পচে গেছে। 

কোলকাতা থেকে মেজদি আবার পাঠিয়ে দিয়েছে আমাদের ভাসুরপোর কাছে। ডালটি এখন বহাল তবিয়তে আছে। কাক আর নিতে পারেনি। সুমির কাঙ্খিত মন এখন ও রোজ খুঁজে চলে ফুলে ভরা সাজানো একটা সুন্দর অ্যাডেনিয়াম গাছ।

 

সম্পা দত্ত-দে'র গল্পের সঙ্গের ছবিঋণ সমাপ্তি রায়

Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান