গড়পড়তা
নাসিমা ইয়াসমিন
এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই, তোজো ভীষণ দুষ্টু;
পড়াশোনাতে গড়পড়তা, কিন্তু বেশ বাকপটু!
স্কুল ও মায়ের সাঁড়াশি চাপে, চিবোতে হয় সিলেবাস;
গতে বাঁধার বাইরে তোজোর, উপচে পড়ে উচ্ছ্বাস!
দশ বছরের জীবনে নেই, ফারাক বোঝার দায়;
তোজোর মতে, সবাই তার, নিজের আপন ভাই!
বোঝেনি সে এই বয়সে, জীবন খাতার রঙ্গ;
স্বর্গসুখ তাই তার কাছে, ভাই বোনেদের সঙ্গ!
একদিন তার ইচ্ছে হলো, দাদার সাথে খেলবে;
ফোন করে জেঠুকে তার, মনের কথা বলবে!
প্রকাশ্যে জেঠু সাবলীল বড়ো, ডাকে ভাইপোকে সাদরে;
তোজোর আকাশে হাজার তারা, জেঠু-জেঠির আদরে!
জেঠুর সাজানো ড্রয়িং রুমে, তোজো আত্মহারা;
মন তার মানছে না যে, দাদার সঙ্গ ছাড়া!
মিডিয়ামটা ইংলিশ আর ক্লাসটা দাদার এইট;
পাঠে মনোযোগী দাদাভাইয়ের, ফিউচারটা ব্রাইট!
তোজো ছ'মাসে একবার যায়, অরিত্র দাদার কাছে;
পড়া ফেলে যদি একটু খেলে, দাদাভাই তার পাছে!
কিন্তু দাদা মেধাবী ছেলে, করে না সময় নষ্ট;
দশ বছরের তোজো বোঝেনা, মেধার স্বরূপ স্পষ্ট!
অপেক্ষার প্রহর কাটে, তোজো ক্রমশঃ বিরস;
অরিত্রর যে অভিধানে নেই, পড়ার সাথে আপোস!
খেলতে রাজি তোজোর জেঠি, সে যে বুদ্ধিমতী;
মন্থর শুধু হয় না যেন, ছেলের পড়ার গতি!
ভাবেনি তোজো শেষকালে জেঠি, হবে খেলার পার্টনার;
কেন, কি কারণ, বুঝতে তোজোর বড়ো হওয়া দরকার!
ড্রয়িং রুমে অরিত্র আসে, এক ঘন্টা পেরিয়ে;
তোজোর আশা পাড়ি দেয় যেন, সব তালগাছ ছাড়িয়ে!
কিন্তু হায়! জেঠির আদেশ, মিনিট দশেক হাতে;
ওতেই না হয় জমবে খুশি,তোজোর মনের খাতে!
দাদার কাছে চাহিদা বলতে, ঘন্টা খানেক সময়;
ছোট ভাইকে সঙ্গ দেওয়া, দাদার আসলে ছিল দায়!
অঙ্কে তোজো বেশ কাঁচা, বোঝেনা সমীকরণ;
জীবনের এসব ধাঁধা তার কাছে, জটিল এক রসায়ন!
সবাই কি আর বোঝে সবকিছু, যেমন তোজো সোনা;
অমলকান্তির সংখ্যা তো, চিরদিন হাতে গোণা!
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post