অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, October 20, 2020

শিশির পর্ব- গল্প- অভিলিনের গরমের ছুটি - সোহম ঘোষ

 

অভিলিনের গরমের ছুটি

সোহম ঘোষ

গরমের ছুটি পড়েছে স্কুলে। অভিলিন মামার বাড়ি গেছে ঘুরতে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল। কাছেই কলাইকুন্ডার এয়ারবেস। এবার ক্লাশ এইট থেকে নাইন হল ওর। একে ছুটি, এখন পড়ার চাপটাও কম, তার উপর মা বাবা আসেনি, ফলে সে আনন্দেই আছে। অভিলিনের একটা ডাকনামও আছে, ফটিকচাঁদ। তবে সেটা কেবল মামাবাড়িতেই। কিন্তু যেমন ভেবেছিল, তেমনটা হল কই! এবার রনিরা ঘুরতে গেছে নৈনিতাল। তাল মানে তো হ্রদ, নৈনি গিয়ে খুব মজা করছে নিশ্চয়। মামাবাড়ির পাশেই রনিদের বাড়ি। মামাবাড়ি এলে এই রনির সাথেই খেলাটা চলে। ফলে,দু-তিন দিন ধরে খুব একঘেয়েই কাটছে সময়টা। ছোটমামার ঘরে সারাটা দিন কাটাচ্ছে হয় একা একা দাবার চাল দিয়ে বা চাঁদমামা পড়ে। দিদা ভালমন্দ রান্না করে খাওয়াচ্ছে, কিন্তু সময় আর কাটতে চাইছে না।

 

সাঁকরাইলের অন্য দিকটাই আছে লালগড়, পিড়াকাটার জঙ্গল আর এই পুরোটা মিলিয়ে খড়্গপুর ফরেস্ট রেঞ্জ। এবার মামাবাড়ি গিয়েই শুনল, হাতিদের একটা দল নাকি এসেছে। গোরামামা একদিন দাদুকে বলছিল, প্রায় আশি -নব্বই  টা নাকি হাতি হবে, তার মধ্যে আবার খান পনের বাচ্চাও আছে। ওরা থাকে নাকি দলমা ফরেস্ট রেঞ্জে; সাধরনত কংসাবতী নদী পেরিয়ে খাবারের খোঁজে এদিকটায় চলে আসে।

 

চারদিনের মাথায় গোরামামা যখন কাজ করতে এল সাথে করে নিয়ে এল বুধুয়াকে। বাচ্চা ছেলে, বছর বার বয়স। দেখে তো দাদু গোরা মামাকে এই মারে, সেই মারে। " কোন আক্কেলে তুই ওকে কাজ করাতে নিয়ে এসেছিস? ওর পড়া নেই?"

"ইস্কুল তো ছুটি বুড়োবাবু"

"হলেই বা। ওর কি কাজের বয়স!"

"উ কি সায়েব হবে গো! কামকাজ করবে, বিয়া দিব।"

" তুই ওর স্কুল ছাড়িয়েছিস তো পিটিয়ে চামড়া গুটিয়ে দেব ব্যাটা রাস্ক্যাল!" ধমকে দিল দাদু। ফলে বুধুয়া হয়ে গেল অভলিনের খেলার সাথী। কিন্ত ছেলেটা না ব্যাট করতে পারে না বল করতে। বলে দিলেও শুধু দাঁত বের করে হাসে। 

"ই বুল হবি নাক ফটিক দাদা।"

"আরে, তুই মনে কর রাবাদা। এইখান থেকে এসে বলটা ছুঁড়ে দিবি আমার দিকে। আর আমি বিরাটের মত মারব। বুঝলি?"

দাঁত বের করে, কিন্তু বল আর করতে পারে না। খেলায় মজা আসে না।

দাবা খেলাটা শিখিয়ে দিতে গেল, তাও পারে না ছেলেটা।

 

তবে একটা জিনিস হয়, গল্প জানে অনেক বুধুয়া।  বাহা পরবের গল্প বলে, বলে মারাং বুড়ো আর চাঁদ বুড়োর গল্প। একদিন বলল, "তুই হাতি দেখতি যাবি ফটিক দাদা?"

"হাতি! কোথায়?"

"উ বুনে এয়েছে উয়ারা। রেতের ব্যালা। অনেক গুলা। একটা বুড়া হাতিও আছে, বাকো আতাংলেদিয়া।"

"মানে?" উত্তেজনায় সাঁওতালি বলছিল বুধুয়া।

উরা উকে দলে লেইলি কো”।

হাতি দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে অভিলিন। এর আগে সার্কাসে হাতি দেখেছে, তারা খেলা দেখাচ্ছিল কিন্তু একবারে এত হাতি! ও আর বুধুয়া, ওরা দুজনে শালের জঙ্গলের মুখটাতে দাড়িয়ে আছে। এরপর কিছুটা খালি জায়গা, তারপর ক্ষেতিজমি।ওখানেই আছে দলটা, আশি- নব্বই  টা তো হবেই সব মিলিয়ে।এমনিতে এই সময়টাই হাতির দল ফেরত চলে যায় দলমার দিকে, কিন্তু এই বছরটায় কেন জানিনা ওরা রয়ে গেছে। পিড়াকাটার দিকে নাকি ছিল দলটা, কাল রাতেই সাঁকরাইলের দিকে এসেছে।

 

আজ দুপুরে এসে যখন বুধুয়া বলছিল হাতি দেখতে যাবার কথা, সাথে সাথে প্ল্যান করে ফেলেছিল অভিলিন। ডঃ ইয়ান ডগলাস হ্যামিল্টন আর ফ্র্যাঙ্ক পোপের কথা পড়েছে বইতে; আফ্রিকাতে এই দুই ভদ্রলোক হাতিদের বাঁচাতে কাজ করে চলেছেন। প্রতি বছর প্রায় তেত্রিশ হাজার হাতি মারা হয় আফ্রিকাতে। ও পড়েছে, দাভিদ সেলদ্রিকের কথা। ওয়েন লোটেরের কথা, তাঞ্জানিয়ার মাসাকি জেলায় গত বছরই তাকে মেরে ফেলেছিল চোরা কারবারির দল। আসলে ক্লাসে প্রথম না হলেও বরাবরই বাইরের বইএর দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ অভিলিনের। দুপুরবেলা দাদু থাকে লাইব্রেরীতে, দিদা ঘুমোয়। মামা তো সেই কোন সকালে বেরিয়ে পড়ে ডাক্তারি করতে খড়্গপুর । ওই সময়টাতেই দুজনে বেরিয়ে পল। একটা পিঠব্যাগ নিয়েছে। দড়ি, জল, বিস্কুট আর টুকটাক কিছু ফার্স্ট এইডের জিনিস আছে ওর মধ্যে।

 

মামাবাড়ির পিছন থেকেই জঙ্গল শুরু। খুব ঘন নয়, বেশিরভাগ শাল গাছ। পলাশ, মহুয়া আর আম গাছও আছে কিছু। বুধুয়া শর্টকাট গুলো জানে সব। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আধঘণ্টা হেঁটে ওরা জায়গাটায় পৌঁছাল তখন প্রায় চারটে। পশ্চিম দিকের মাঠটায় দাড়িয়ে আছে হাতিগুলো। সার দিয়ে, মাঝখানে বাচ্চাগুলো। পশ্চিমের আকাশটা কালচে ছাইরঙা হয়ে উঠেছে এর মধ্যেই, ঝড় হবে হয়ত। গাছগুলোর মাথার সবুজটা আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে অদ্ভুতুড়ে রঙ নিয়েছে, যেমনটা হয় আর কি। কাছাকাছি লোকজন নেই কোনও। ওদিক থেকে হাওয়া বয়ে আসছে এপাশটায়। অভিলিন পড়েছে, হাতিদের ঘ্রাণশক্তি প্রবল, বাঁচোয়া এটাই হাওয়াটা ওদিক থেকে বইছে। এই ঘ্রাণশক্তির জন্যই কোনও হাতি মানুষের সংস্পর্শে এলে হাতির দল তাকে দলে নেয় না।

 

বুধুয়া কনুই দিয়ে ঠেলে একটা হাতির দিকে ইশারা করল। এটা একটু আলাদা করে রয়েছে দলটা থেকে। অন্যগুলোর চেয়ে চেহারা অনেক বড়, কুচকুচে কালো গা। বেশ দাঁতাল। হাতিটা দাড়িয়ে আছে মাঠের উত্তরদিকে। একটু বিচলিত যেন, বড় কানগুলো ঘন ঘন নাড়ছে।

 

তখনই লোকটাকে দেখতে পেল ওরা। জংলাছাপ জামা গায়ে। বড় হাতিটার পিছনদিকের তছনছ হওয়া ক্ষেত থেকে বেরিয়ে এসেছে। হাতে একটা লাঠি, মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের করছে। সাথের ব্যাগ থেকে চকোলেট বোম ছুঁড়ে মারল দলটার দিকে। অভিলিন দেখল ঘাড় ঘুরিয়ে, বুধুয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে দেখছে। হাতটা চেপে ধরেছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। আওয়াজে দলটা নড়েচড়ে উঠল। সরে যেতে লাগলো বাচ্চাগুলো নিয়ে। কিন্তু বড় দাঁতালটা অনড়। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, দূর থেকে দেখে লাগছে পাথর। ঝড়টা জোরে উঠল। লোকটা হাতির বাকি দল আর বড় হাতিটার মাঝখানে, বড় হাতিটাকে পিছনে রেখে। দলটা দক্ষিণ পশ্চিমের জঙ্গলটার দিকে ঢুকে যাচ্ছে। এমন সময় হাতিটা ঘুরে দাঁড়াল লোকটার দিকে। কিন্তু লোকটার যে খেয়ালই নেই, যে ওর পিছনে হাতিটা দাঁড়িয়ে।

লোকটা বড় হাতিটাকে পিছনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছিল দলটার দিকে। ঝড়টা উঠে এল তখনই। হাতিটা হঠাৎ করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মতিগতি ভালো ঠেকল না। চেহারাটা ওর বিশাল। হাতিটাকে নাম দিয়েছে ও ব্রক, এই হাতিটাকে দেখে ওর ব্রক লেস্নারের কথা মনে হচ্ছিল। লোকটা একটুও কিছু বুঝতে পারছে না। হাতে যে খুব বেশি সময় নেই সেটা অভিলিন বুঝতে পারছিল। চীৎকার করে সাবধান করতে হবে লোকটাকে। বড়োজোর পাঁচশো মিটার দুরেই হচ্ছে এসব। হাতিটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠল।ধু  লো উড়ে একটা কুয়াশা কুয়াশা স্তর করে দিয়েছে। কানের পাশে বুধুয়ার নিশ্বাস পড়ছে, সেটা টের পাচ্ছে ভালোই।

 

হাতিটা কেমন যেন কাঁধ উঁচু করে আবার গা ঝাড়া দিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্ষেপে উঠেছে। চীৎকার করে উঠল অভিলিন। লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব টের পেল। পড়িমরি করে ছুটে এদিকেই আসতে লাগলো। হাতিটাও অত বড় চেহারা নিয়ে কি বিশাল জোরে তাড়া করে আসছে। 

বুধুয়া বলল," ফটিক দাদা, পালা।"

দুজনে পড়িমরি করে পিছন ঘুরে দৌর লাগাল।

 

এমন সময় লোকটা হোঁচট খেয়ে পড়ল। অভিলিন মানে আমাদের ফটিকচাঁদ আর বুধুয়া দুজনেই থমকে গেল। লোকটা যেখানে পড়েছে সেখানটা পাতা ডাঁই হয়ে আছে,অসমান। কালবৈশাখীর জোর বেড়েছে, মুখে চোখে পাতা, বালি এসে লাগছে। হাতিটা দৌড়ে এসে দুটো পা একসাথে তুলে পিষে দিল। 

" ই বনবাবুটা মরি গেল রে।"

খুব জোরে চীৎকার করে হাতিটা ফেরত যেতে লাগলো ওই দক্ষিণপশ্চিমের বনের দিকে। এক থেকে দু মিনিট হবে বড়োজোর। ফটিক এগিয়ে দেখতে গেল লোকটাকে। হঠাৎ  লোকটা উঠে দাঁড়াল। লোকটাকে উঠতে দেখে বুধুয়া চীৎকার করে উঠল ভয়ে।

" জিন এয়েচে।" বলেই ছুটে পালাল।

 

ফটিক কিন্তু ভয় পায়নি একটুও, বরং বেশ অবাক হয়েছে। লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। কাদা টাদা মেখে একশা। ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে লোকটা। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক। ঝড়ের প্রাথমিক দমকা কেটে ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তোড়ে। অন্ধকার করে সন্ধ্যা নেমে আসছে। লোকটা অভিলিনকে দেখেই বিড়বিড় করতে লাগলো, " ভেবেছিলাম মরেই যাব। গুণ্ডাটা তেড়ে আসলো, আমিও পাথরে লেগে পড়ে গেলাম। ভয়ে চোখ বুজে ফেলি। চোখ যখন খুলি, দেখি ওটা ফিরে যাচ্ছে। ধুলো ঝড়ে দেখতে পায়নি হাতিটা হয়ত। বড্ড বেঁচে গেছি। বাড়ি ফিরে কালীপুজো দেব। আচ্ছা তুমি কি করছ এখানে?"

"হাতি দেখতে এসেছিলাম।"

" একা?"

"না, আমার বন্ধুও ছিল। ও আপনাকে ভুত ভেবে পালিয়েছে।" হাসল অভিলিন।

"ভূতই বটে। তুমি বুঝি খুব সাহসী?"

লজ্জা পেল শুনে।

" যা হোক, অন্ধকার হয়ে গেছে। চল তোমায় বাড়ি ছেড়ে আসি। তুমি থাক কোথায়? দেখিনি তো আগে।"

" আমি কলকাতা থাকি। এখানে মামাবাড়ি এসেছি বেড়াতে। অমিত রায়চৌধুরী আমার মামা হন।"

"ওহ। ডাক্তার বাবুর ভাগ্নে তুমি?"

 

কথা বলতে বলতে পা চালাচ্ছিল দুজনেই। ভিজে নেয়ে চুপসে গেছে। হঠাৎ   শুনল দূর থেকে 

গোরামামা ওর নাম ধরে ডাকছে। অনেকদুরে কে যেন টর্চ হাতে আসছে।



Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান