মেয়ে দেখা
রুচিরা দাস
একরাশ বিরক্তি নিয়ে
বেরিয়ে পুরো ব্যানার্জী পরিবার। পুরো পরিবার বলতে মা আর ছেলে অভীক ব্যানার্জী। আজ
মাসের শেষ রবিবার। তাই এটা ওনাদের মেয়ে দেখার দিন। সারা মাস ধরে এরা নানান পত্র
পত্রিকা, খবরের কাগজ, অনলাইন
ম্যাট্রিমনি সাইট ঘাঁটে আর এই দিনটায় অভিযানে বেরয়। গত দেড় বছর ধরে এই-ই চলছে।
প্রতিবারই কলকাতার বাইরে গেলে ওদের সঙ্গী হয় সুবীর। পাড়ারই ছেলে।
একসময় ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা চাকরিতে ঢুকেছিল। তারপর, মাস
ছয়েকের মধ্যেই ওসবের পাঠ চুকিয়ে গাড়ী ভাড়ার বিজনেস খুলেছে। পসার ভালোই আছে।
প্রাইভেট কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকলে এতোটা কামাই হয়তো হতো না।
ওরা বেড়িয়ে আসতেই সুবীর গাড়ীতে স্টার্ট দিলো। দুই মায়ে ব্যাটায়
নিঃশব্দে উঠে আসতেই সে জিজ্ঞেস করলো-
"কি কাকিমা কেমন দেখলেন?"
ভালো মন্দ কোনো উত্তরই এলো না দেখে বুঝতে পারলো, এটা হলো না। গাড়ীর স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
"এবার তাহলে পরেরটা?
" হ্যাঁ, আর কি? চল।
দেখা যাক পরেরটা কি হয়।" বলল অভীক।
অভীকের বয়স কত? এই চৌত্রিশ-পয়ত্রিশ হবে। বড়
একটা কোম্পানিতে ম্যানেজারের পদে রয়েছে। টাকা পয়সাও বেশ ভালোই আছে বলে তো মনে হয়।
থাকার মধ্যে ওই একটা বৌয়েরই অভাব। রাস্তাঘাটে দেখা হলে মাঝে মাঝে সুবীরের সাথে কথা
হয় অভীকের। বিয়ে নিয়ে বেশ চিন্তাতেই থাকে। একবার সে ভেবেছিল ওর শালীর কথা বলে
দেখবে, কিন্তু কি রকম রেসপন্স পাবে সেটা আঁচ করতে না পেরে আর
বলে ওঠা হয়নি। যতই হোক একটা তফাৎ তাদের মধ্যে রয়েই গেছে। সুবীর এসব ভাবছে তখনই-
-"এই সুবীর, তুই এখানে আগে এসেছিস?"
জিজ্ঞেস করলো অভীকের মা।
-"হ্যাঁ কাকিমা, দুএকবারবার। আগে যখন আমি
একাই গাড়ি নিয়ে বেরোতাম তখন এসেছি।"
-"তাহলে এখানে কোনো ভালো মন্দির আছে কি না একটু বল না, বাবা।
-"সে বোধহয় একটা আছে। মানে ছিল। তাও বোধহয় বছর তিনেক আগের কথা।
একটু জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে। কিন্তু, কাকিমা আজ হঠাৎ মন্দির…?"
জিজ্ঞেস করলো সুবীর।
"আর বলিস না রে। ছবিতে যেমন দেখেছিলাম, একেবারেই
তা নয়। আজকাল কি সব টেকনোলজি এলো, মানুষের ছবিও পাল্টে দিচ্ছে।
মেয়েটা বেশ কালো। আমার এতো সুন্দর ফর্সা ফুটফুটে ছেলের সাথে একটা ওরকম মেয়ের বিয়ে
দেওয়া যায় বল?"
-"কিন্তু কাকিমা, এতো কিছু ভাবতে ভাবতে
তো অভীকদার বয়সও বেড়ে যাচ্ছে। আর আজকাল ওসব কেউ দেখে নাকি? আমার
বৌটাও তো কালো। তাতে কি হয়েছে… আমার বা বাবা মায়ের যত্ন-আত্তি কি কিছু কম করে?"
আরও কিছু বলতে হয়তো যাচ্ছিল, হঠাৎ মিররে
তাকিয়ে পেছনের মুখগুলো দেখে মনে হলো হয়তো এসব অপাত্রে দান। তাই থেমে গেলো।
সঙ্গে সঙ্গে অভীকের মা বললো- "তাড়াতাড়ি চালা সুবীর। আমাদের তো
আবার বাড়ীও পৌছতে হবে। আর ঠাকুরের দয়ায় যদি এবারেরটা একটু দেখতে শুনতে ভালো হয়
তাহলে তো কথাবার্তা বলতে একটু টাইমও লাগবে। দেখ না, কাছাকাছির
মধ্যে যদি কোনো কালি মায়ের মন্দির থাকে তাহলে ভালো হয়। আমি আবার কালি মাকে খুব
মানি। তবে একটু পুজো দিয়ে যাই।"
সুবীর, আচমকা ব্রেকটা কষে দিলো। আপনা আপনিই
বোধহয় পা টা পড়ে গেল। নাকি এই সময়ই একটা এরকম ঝাঁকুনির দরকার ছিলো। কে জানে?
কিন্তু, পেছনে তাকিয়ে বুঝলো, না তেমন ঝাঁকুনি আর দিতে পারলো কই? কালি মন্দিরে
পুজো দিয়ে ছেলের জন্য ফর্সা মেয়ের প্রার্থনা করা পরিবারের একজন তো ফুরফুরে হাওয়া
পেয়ে প্রায় এলিয়েই পড়েছে আর অন্যজন আকুল নয়ন বাইরে তাকিয়ে তাদের ত্রাতা কৃষ্ণাঙ্গী
দেবীর বাসস্থান খুঁজেই চলেছে। অতএব, সুবীর স্টিয়ারিংটা শক্ত
করে ধরে আবার ড্রাইভিংয়ে মন দিলো।
Download ALEEK PATA Mobile APP
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
|ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post