অণুগল্প মালায় শারদ অর্ঘ্য
জ্যোতিকা পোদ্দার
অণুগল্প ১
পুজোর উপহার
স্বামী স্ত্রীর ছোট্ট সংসার বেশ চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কারখানাটা লক আউট হয়ে
গিয়েই গন্ডগোল শুরু হয়ে গেল। কিভাবে সংসার চলবে!
শেষ পর্যন্ত লোকাল
ট্রেনে হরেক রকম মাল ফেরি করা শুরু করল স্বামী, আর বউটিও শুরু করল শাড়িতে ফলস বসানোর কাজ। টুকটুক করে চলতে লাগলো সংসার।
পুজো আসন্ন। বহুকষ্টে
স্বামী বউয়ের জন্য কিনলো একটা লাল ছাপা শাড়ি, এক কৌটো সিঁদুর আর আলতা।
রাতে
বাড়ি ফিরে বউয়ের হাতে ঐ ক্ষুদ্র উপহার তুলে দিয়ে বলল- "আলতাটা পরিস বউ, তোর
রাঙা চরণ দেখতে আমার বড় ভালো লাগে"। "তোমার যত ঢং"... এই বলে বউ ও
কাপড়ের ফলস বসিয়ে যেটুকু টাকা রোজগার করেছিল, সেই টাকায়
কেনা একটা সাদামাটা পাঞ্জাবী এগিয়ে দেয় স্বামীর দিকে।।
অণুগল্প ২
চক্ষুদয়
নিলোফার বানু কে ভালোবেসে বিয়ে করে অনুপম চট্টোপাধ্যায়। শ্বশুরবাড়ি নিলোফার
কে সাদরে বধু রূপে বরণ করলেও, নিলোফারের
বাবা মেয়েকে ত্যাজ্য করেন।
চট্টোপাধ্যায় বাড়ির ঠাকুরদালানে তৈরি হচ্ছে মায়ের মূর্তি। শান্তিনিকেতন
থেকে চিত্রকলা বিদ্যায় পারদর্শী নিলোফার প্রতিদিন বসে মূর্তি নির্মাণ দেখে । মূর্তি
নির্মাণ শেষ । এবার রংতুলির পালা। "চক্ষুদান" করে মৃন্ময়ীকে এবার
চিন্ময়ী তে রূপান্তরিতা করার পালা। হাত নিশপিশ করে নিলোফারের । পটুয়ার সাথে কথা
বলে শ্বশুর মশাই স্বয়ং রং-তুলি তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে। আপ্লুত নিলোফার।
শুভলগ্নে
দেবী মায়ের "চক্ষুদান" করে নিলোফার সামনে তাকিয়ে দেখে আম্মি আর আব্বু দাঁড়িয়ে। আব্বুর চোখে জল।
মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে আব্বু বলেন- "ছোটবেলায় আমিই
তোকে শিখিয়ে ছিলাম যে, যিনি ঈশ্বর তিনি আল্লাহ। আর আমি
নিজেই কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম। আমাকে ক্ষমা করিস মা। দেবী মায়ের "চক্ষু
দানের" সাথে সাথে তুই আমারও
চক্ষুদয় ঘটালি।
অণু গল্প ৩
চক্ষুদান
মায়ের মূর্তি ক্লাবেরই ঠাকুরদালানে তৈরি হবে,মূর্তি গড়বেন পাড়ার বিখ্যাত
মৃৎশিল্পী এবং পটুয়া গণেশ বাবু। এটাই নিয়ম ৩৪ নং কলোনির।
গনেশ বাবু বৃদ্ধ হয়েছেন কিন্তু তিনি চক্ষুদান না করলে সেই মূর্তি যেন
ম্রিয়মাণ লাগে। মূর্তি গড়ার সমাপ্ত এবার চক্ষুদানের পালা।
একি..! গণেশবাবুর হাত কাঁপছে... পারছেন না তিনি। মনে মনে বললেন, "মা কেন চোখ মেলতে চাইছো না?”...
আজ তিনদিন হল উমার জ্ঞান ফেরেনি। গণধর্ষিতা হয়ে হাসপাতালে বাঁচার লড়াই করছে
সে। বিল্টু কিশোরের দল এই দুষ্কর্মে জড়িত। পুলিশ সব জেনেও তাদের ধরছেনা। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট তারা।
বহু চাপান-উতোরের পর ধরা পরল দুষ্কৃতীরা। জ্ঞান ফিরল উমার। পাড়ায় ফিরল
শান্তি।
পটুয়ার তুলির ছোঁয়ায় চোখ মেললেন মা ,সে চোখে বরাভয়ের ভাষা।।
অণু গল্প ৪
নতুন জামা
কাজের বাড়ি থেকে পুজোর বোনাস পেয়ে
পারুল হিসেব করে দেখলো স্বামী হারানের অসুখ এর সময় আর নেওয়া টাকা পরিশোধ করে
মাত্র ৩০০ টাকা অবশিষ্ট থাকবে।
ওই টাকায় মেয়ে পুতুলের জন্য নতুন জামা কিনতে দোকানে গেল সে। মনে পড়ে গেল
পাশের বাড়ির অনাথা কমলার কথা। পুতুলের বয়সী বৃদ্ধা দিদিমার সাথে থাকে। ওর তো কেউ
নেই,পুজোতে একটাও নতুন জামা হবে না ওর, ‘আচ্ছা ওকে একটা নতুন জামা দিলে হয় না...!’
কিন্তু টাকা কম। একই রঙের দুটো জামা নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পারুল।
অভিজ্ঞ দোকানদার বুঝতে পেরে বলে-"নিয়ে যান দিদি, পরে টাকা দেবেন। বাচ্চারা পুজোয় নতুন জামা পরবে না তা কি
হয়!"
পরম মমতায় জামার প্যাকেট বুকে নিয়ে বেরিয়ে আসে পারুল। চারিদিক তখন মায়ের আগমনীর
আবাহনে মুখরিত।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post