অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Wednesday, October 21, 2020

অধিবাস পর্ব- গল্প- বুদবুদ -বনবীথি পাত্র

 

বুদবুদ
বনবীথি পাত্র

 

গত কয়েকদিন ধরে যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছে, অথচ গরম এতটুকুও কমছে না। আজও আকাশে মেঘ রয়েছে। তাই বোধহয় একটু বেশি অন্ধকার। প্রভাত যখন বাড়ি ফিরছে রাস্তার কুকুর আর লাইটপোস্টের আলোগুলো ছাড়া সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে। এত বছরের চেনা রাস্তাটাকেও কেমন যেন থমথমে লাগছে। ট্রেন থেকে নেমে একটা রিক্সা করবে ভেবেছিল, কিন্তু ত্রিশটাকা ভাড়া চাওয়াতে আর সেটা সম্ভব হয়নি। মাধবী জেগেই ছিল, একবার ডাকতেই দরজা খুলে দিল  ওর চোখদুটো অনেক কথা জানতে চাইছিল। কিন্তু প্রভাত কোন কথা না বলে সোজা বাথরুমে ঢুকে যায়।
শাওয়ারটা খুলে দিতেই সারাটা দিনের ক্লান্তি ধুয়ে যায় ঠান্ডা জলের ছোঁয়ায়। সেই কাল রাত থেকে হাসপাতাল চত্বরে ছোটাছুটি করতে করতে শরীরটা যেন অবশ হয়ে পড়েছিল। কয়েক কাপ চা আর বিস্কুট ছাড়া কিছুই পেটে পড়েনি। ক্ষিদে কি মানুষের সব চিন্তাকে আবছা করে দেয়? এত চিন্তার মাঝেও আগে যেন কিছু খাবার চাইছে শরীরটা।
ভাত খেতে খেতেই মাধবীকে জানায়,  ডাক্তার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে নিতে বলেছেন। নাহলে পেশেন্টের কন্ডিশন ওনাদের হাতের বাইরে চলে যাবে।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা হলেও ওষুধপত্র, রক্ত নিয়ে হাজার পঞ্চাশের ধাক্কা। গত চারমাস ধরে কোম্পানীর চাকরিটাও নেই প্রভাতের। কোম্পানীর প্রফিট কম হচ্ছিল বলে কিছু কর্মী ছাঁটাই করেছে , আর সেই তালিকাতে প্রভাতের নামটাও থাকায় ওর কাজটা গেছে। অল্প মাইনের চাকরিতে কোনরকমে সংসারটা চলে যেত , সঞ্চয় বলে তো কিছুই করতে পারেনি। এই চারমাসে অভাব তার করুণ চেহারা নিয়ে প্রবেশ করেছে সংসারে। দুমাসের বাড়ি ভাড়া বাকি , মুদির দোকানে ধার। গোয়ালার দুধের রোজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দেড়বছরের মেয়েটাকেও শুধু ভাত, মুড়ি খাওয়াতে হচ্ছে । সেটুকুও আর কতদিন টানতে পারবে তার কোন ভরসা পাচ্ছে না প্রভাত। মাধবীর যে সামান্য সোনার গয়না ছিল গত পুজোর আগে প্রভাতের হার্নিয়া অপারেশনের সময় সোনার দোকানে বাধা দিয়েছিল। সে গয়না আর কখনও ছাড়াতে পারবে বলে মনে হয়না। তারপর এই বিপদ!
গতকাল সন্ধেবেলা হঠাৎ মায়ের বুকে যন্ত্রণা । সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরেরদিন সকালে সেখান থেকে সদর হাসপাতাল । আপাতত একটু ভালো থাকলেও আটচল্লিশ  ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে , হার্টের কনডিশন সুবিধার নয়। এই মুহূর্তে পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড়ের কোনো দিশা পাচ্ছে না দুজনে । মাধবী দাদাকে খবর দেওয়ার কথা বলছে।

-যতই হোক দাদারও তো মা। একবার বলেই দেখো না! মনে হয় এই বিপদের সময়েও মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবেন না।

ছোট থেকেই প্রভাত শুনে আসছে দাদার লেখাপড়ায় মাথা আছে আর ওর নাকি মাথা মোটা। পড়াশুনো হবে না ওর দ্বারা। ছোটবেলাতে খুব হিংসা হত, যখন অঙ্কে ছাব্বিশ পাওয়ার জন্য ও বাবার কাছে মার খেত আর ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার জন্য দাদার ভাগে জুটত অনেক আদর । নিজেকে মা বাবার খারাপ ছেলে ভেবে অন্ধকারে কত কাঁদত কিন্তু পড়াশুনোটা কিছুতেই মাথাতে ঢুকত না। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  বুঝেছে পড়াশুনোটা সত্যি ওর জন্য নয় । কোনরকমে উচ্চমাধ্যমিকের গেরোটা পার হয়ে মা সরস্বতীকে প্রণাম জানিয়ে কাজের ধান্দায় লেগে পড়েছিল। দাদা স্কলারশিপের টাকাতে তখন ব্যাঙ্গালোরে আইটি পড়ছে । বাবা চলে যাওয়াতে সংসারে তখন পয়সার বড় দরকার ছিল। তবু দাঁতে দাঁত চেপে মা আর প্রভাত লড়াই করেছিল অভাবের সঙ্গে। মনে একটাই আশা ছিল, দাদা ভালো চাকরী পেয়ে গেলে তাদের আর কোন কষ্ট থাকবে না। কিন্তু তারপরের ঘটনা ঠিক সিনেমাতে যেমন হয়। দাদা তার প্রফেসারের আদুরে মেয়েকে বিয়ে করে ব্যাঙ্গালোরেই থেকে গেল। একবার বৌকে নিয়ে এসেছিল মায়ের কাছে , কিন্তু এই ডার্টি প্লেসে একরাত ও কাটাতে পারেনি নবাবনন্দিনী। সেই রাতেই বৌকে নিয়ে হোটেলে চলে যেতে হয়েছিল মায়ের আদরের বড় ছেলেকে। তারপর কেটে গেছে প্রায় পনেরটা বছর, একদিন ফোন করেও খোঁজ নেয় না মা কেমন আছে। শুধু বিজয়ার পর পাড়ায় এক বড়লোক বন্ধুর বাড়িতে ফোন করে মাকে ডেকে দিতে বলে। মা গেলে একটা প্রণাম অবশ্য জানায় , তবে জানতেও চায়না কেমন আছে। প্রভাত মোবাইল কেনার পর অবশ্য আর বন্ধুর বাড়িতে ফোনটা করে না। প্রভাতের মোবাইলেই ফোন করে।

ছেলেটা নতুন ক্লাসে উঠেছে বই কিনতে হবে । হাজার অভাবেও পাঁচশ টাকা বাঁচিয়ে রেখেছিল মাধবী। সেই বাঁচানো টাকাটুকু স্বামীর হাতে তুলে দেয় আপাতত কিছু ওষুধ যদি কেনা যায় ! অভিমানী সুরেই বলে,

-তুমি যতই বারণ করো, আমি আজ দাদাকে ফোন করব। মাকে বাঁচাতে না হয় দাদার কাছে ভিক্ষা চাইব। দাদার নম্বরটা আমাকে দিয়ে যাও, আমি টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করব আজ। আমার মন বলছে দাদা নিশ্চয় সাহায্য করবেন ম। দাদার সঙ্গে কথা বলে আমি তোমাকে জানাবো। তুমি মায়ের অপারেশনের ব্যবস্থা কর।

গতকাল সন্ধেতেও আসার সময় মায়ের হাতটা ধরে মাকে বলে এসেছিল প্রভাত। মা হাতের আলতো চাপে সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু আজ মায়ের এ কি অবস্থা! সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়েছে। অক্সিজেনের মাস্ক পড়ানো রয়েছে মুখে । অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে গ্যাস একটা তরলপূর্ণ পাত্রের মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢুকছে । সেই তরলপূর্ণ পাত্রের বুদবুদ টুকু জানান দিচ্ছে মানুষটা এখনও বেঁচে আছে । ডাক্তারবাবু রাউন্ডে এসে এতটুকু ভরসাও দিতে পারলেন না। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। চোখের সামনে বসে এত কাছের মানুষকে চলে যেতে দেখা যে কি কষ্টের প্রভাত জীবনে প্রথমবার বুঝতে পারল। যদি গতকাল অপারেশনটা হয়ে যেত, মা হয়তো বেঁচে যেত। সত্যি সে মায়ের অধম সন্তান।
তরল পাত্রে বুদবুদটা করছে তো! নাকি থেমে গেল চিরতরে! চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছো , যেও না মা। ক্রমশ যেন ধীর হয়ে আসছে বুদবুদের গতি ।
মোবাইলটা বাজছে। অজানা একটা নম্বর । মাধবী ফোন করেছে টেলিফোন বুথ থেকে। দাদাকে ফোন করেছিল। দাদা বাইশ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন , ওনার হাত এখন একদম ফাঁকা। এখনই উনি কিছু সাহায্য করতে পারবেন না ।
পৃথিবী যেন থমকে গেছে প্রভাতের কাছে । ততক্ষণে থেমে গেছে তরল পাত্রের বুদবুদ 
ওদিকে মাধবী ফোনে বলে চলেছে ,

-টাকার কি করবে তাহলে? সরকার বাবু সুদে টাকা ধার দেন ; ওনার সাথে কথা বলব আমি ?
প্রভাত ডুকরে কেঁদে ওঠে ,

-মাধবী মা আর নেই...

 Download ALEEK PATA Mobile APP

DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP


| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Puja Issue, 2020 | October-November 2020 | শারদ সংখ্যা -১৪২৭।
| Fourth Year Third Issue |24 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |
পড়া শেষ? পত্রিকা বন্ধ করুন


1 comment:

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান