প্রতিহিংসা
অবাস্তব ডায়েরী
অবশেষে কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া রহস্যময় খুনের সমাধানের নিস্পত্তি হলো আজ। না ! পুলিশ এর কোনো সমাধান করতে পারেনি। এই সমাধানের পিছনে রয়েছে আমি আর। ...
না গোড়া থেকেই সব শুরু
করা যাক।
আমি..., নাহ আমি নাম টা এখনই বলবো না। কলকাতার নামী একটা বহুজাতিক সংস্থা উইলসন ইনফরমাটিকা এর একজন টেকনিক্যাল এজেন্ট। বিগত সাত বছর ধরে এই কোম্পানি তে কাজ করছি।
সেক্টর ফাইভ এর
প্রায় ২১ একর জায়গা জুড়ে অফিস। আমাদের অফিস মেইনলি
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ওপর কাজ করে। দেশে বিদেশে প্রধানত রোবোটিক্স
হিউম্যানয়েড আর রোবোটিক্স মেশিনারী এক্সপোর্ট করা হয়। মূলতঃ পূর্ব এশিয়ার দেশ
গুলোর সাথেই আমাদের ব্যবসা চলে।
তবে সাম্প্রতিক কালে
জার্মানিতে আমাদের নতুন ব্রাঞ্চ অফিস খুলছে।আমার মনের মতো একটা প্রোফাইল।আমার সহকর্মী বলতে অর্ঘ্য। ও যদিও
আমার আন্ডার এ কাজ করে। বেশ করিৎকর্মা ছেলে।
বেশিদিন হয়নি জয়েন করেছে তবুও কর্মদক্ষতার জন্য কোম্পানির
সুনজরে এসেছে। এছাড়া আরেকজন আছে রাহুল। একটু নিজের
স্বার্থ নিয়ে চলে বলে ওর সাথে আমার বেশি বনে না।
আর ছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টাল
হেড রেহান। ও ছিল আমাদের থেকে অনেক বছরের সিনিয়র। বিদেশে কাজ করার জন্য ওর জন্য
কমিউনিকেশন ছিল দুর্দান্ত। আর রোবোটিক্স এর জন্য ছিল অগাধ জ্ঞান। মূলত বেশ কিছু সফলতার জন্যই ওকে ডিপার্টমেন্টাল হেড করা
হয়েছে। আর একজন অসাধারণ টীম লিডার। চারিত্রিক দিক থেকে যেমন খুব ভালোমানুষ ছিল,
তেমনি কর্মদক্ষতা ছিল।
আমাদের সাথে সম্পর্ক
এতটাই ভালো ছিল যে মাঝে মাঝে ওর বাড়ির
হাউস পার্টিতে আমাদের ইনভাইট করতো। ওর বাড়িতে ওর নিজস্ব বানানো একটা রোবট আছে।
আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো।
ওর নাম ছিল মোমো। ওর বাড়ির লোক অন্য শহরে থাকতো , তাই টুকটাক কাজের জন্যই নাকি এইসব বানিয়েছিলো। প্রায় ১৬ রকম ভাষা জানতো মোমো। আমাদের কোম্পানির বানানো রোবটের তুলনায় অনেকটাই আলাদা ছিল মোমো। ওর সমস্ত ইনফরমেশন নখদর্পনে ছিল। সব থেকে আশ্চর্য ছিল ও
প্রত্যেক তা মানুষ কে আলাদা ভাবে চিনতে পারতো।
আর ওকে বানানো হয়েছিল অবিকল একটা
মানুষ এর মতো। আর যখন ই কেউ রেহানের বাড়ি আসত
তারা মোমো কে দেখে ঘাবড়ে যেত।
২
রিসেন্টলি আমাদের অফিস থেকে দুজন কে জার্মানি পাঠাবার প্রস্তাব উঠেছে। আমরা সবাই নিশ্চিত রেহানের এর সাথে আরেকজন কে পাঠানো হবে। প্রত্যেকেই ফরেন ট্যুরের লোভ সামলাতে পারছি না। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে আমাকে আর
অর্ঘ্যকে সিলেক্ট করা হয়েছে এই মিটিং এর জন্য। আমরা তো যারপরনাই খুশি।জীবনে প্রথম
বার সুযোগ পেয়ে অর্ঘ্য তো পুরো পাগল।
আবার রেহান কে জন্য বেশ
খারাপ ও লাগছে। এরকম একজন সিনিয়রকে কেন সিলেক্ট করলো না তা আমার মাথায় ঢুকলো না।
অফিস শেষে আমরা দুজন তাই গেলাম রেহান এর বাড়ি। দেখি ও ল্যাপটপের সামনে বসে ডায়রি নিয়ে কিছু একটা করছে। আমাদের দেখতে পেয়ে চট
করে ডায়েরি আর ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দিলো। আমাদের দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো
“এই কিছু না, আচ্ছা, তোরা যেন কবে যাচ্ছিস ? ”
“আমাদের তো সব ঠিক করে
আছে। শুধু অফিস থেকে টিকেট আসলেই হবে। কিন্তু যাই বল তোকে কেন সিলেক্ট করলো ঠিক
বুঝলাম না। তুই আমাদের সিনিয়র, তার ওপর আবার বাইরের প্রজেক্ট
কমপ্লিট করার এক্সপেরিয়েন্স আছে”।
মুখটা নামিয়ে কথাটা
বললো রেহান। অর্ঘ্য বললো “তুই কি খুব আপসেট ?” “আরে দূর আপসেট হতে যাবো কেনো?” তোদের ওপর কোম্পানি কত বড় দায়িত্ব
দিয়েছে। টিম লিডার হিসেবে আমারও খুব ভালো লেগেছে। তোরা ভালো ভাবে প্রজেক্ট সামলা।
একদিন না একদিন টিম লিডার সবাইকেই হতে হবে।
আজ আমি আছি,কাল তোদের মধ্যেই কেউ হবি”।
বলতে বলতে দেখি সামনে
হাজির মোমো।
আমাদের সামনে দাড়াতেই
ওর চোখে দুটো সবুজ আলো জ্বলে উঠলো।
তার পর বললো “ওয়েলকম দীপন। ওয়েলকম অর্ঘ্য। মোমো তোমাদের
স্বাগত জানায়।“ তারপর সামনের টেবিলে কাপ গুলো রেখে চলে গেলো।
আমি বললাম “ল্যাপটপের
সামনে বসে অত মনোযোগ দিয়ে কি করছিলি?”
“আর বলিস না মোমো কে
আরেকটু অ্যাডভান্স বানাবো ভাবছিলাম। সামনের মাসে রোব সাইন্স এক্সিবিশন এর জন্য ওকে
নিয়ে যাবো। তোরা যাওয়ার পরেই এই এক্সিবিশন টা”।
তার পরে আবার ডাইরি টা
খুলে লিখতে বসে গেলো।
ওর হাব ভাবে বুঝলাম , ও বলতে চাইছে তোরা এবার মানে মানে কেটে পড়।
কফির শেষ চুমুক টা দিয়ে
আমি অর্ঘ্য কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
গাড়িতে যেতে যেতে
অর্ঘ্য চুপ করে বসে। আমি বললাম , “আজ
গাড়িতে যাচ্ছিস কাল আবার ফ্লাইটে চড়বি”।
আমার স্বপ্নের ক্লাব
বায়ার্ন মিউনিখ। একবার হলেও ইচ্ছে ছিলো আলিয়াঁজ এরিনা র সামনে দাড়াব। ছোটো
বেলায় জার্মানী কে ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপেই দেখেছি। আর
কদিন বাদে জার্মানী তে পা রাখবো।"
অর্ঘ্য এতক্ষণ চুপ ছিল।
এবার ও মুখ খুললো, " তুই
মোমো র হাব ভাব পরিবর্তন দেখলি?"
আমি বললাম “রেহান
ওকে কত অ্যাডভান্স বানাচ্ছে। একটু তো পরিবর্তন হবেই। এমনিতেই ওকে আবার সামনের মাসে হ্যাকথনে পাঠাবে। কত ভালো রেহান দা।
আমাদের কত করে উইশ করলো।
নিজে যাচ্ছে না তাও কোনো আফসোস নেই”
অর্ঘ্য শুধু বললো “সেইই”।
তারপর তিন দিন কেটে গেল।
পরের সপ্তাহে আমাদের যাওয়া। রাতের ডিনার করছি, দেখি অর্ঘ্যর বাড়ি থেকে কল করছে। ফোন ধরতেই বলল,
"ওর পিসির একটা
অ্যাকসিডেন্ট হইছে। ইমিডিয়েটলি হসপিটাল যেতে হবে ।
কোনো রকমে খাবার ফেলেই
হসপিটাল এ পৌঁছলাম। হসপিটালে গিয়ে দেখি আইসিউ এর সামনে অর্ঘ্য আর ওর কয়েকজন আত্মীয়
দাঁড়িয়ে, একরকম বিধ্স্ত হয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম
“এসব হল কি করে ?”
অর্ঘ্য বলল “জানি না , টিউশন পড়িয়ে ফিরছিল , ডাক্তার বলছে কিছুতে হেভিলি শক খেয়েছে। ইন্টারনাল অর্গান অনেক ড্যামেজ
খেয়েছে। বাঁচার সম্ভাবনা নেই একদম।”
পরদিনই অর্ঘ্যর কথা সত্যি প্রমাণিত হল। ওর পিসি মারা গেল।
এরম অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য পুলিশে তদন্ত শুরু করলো। আর এদিকে গোটা অফিস
চাউর হয়ে গেছে এই ঘটনাটা। বস থেকে শুরু
করে এমপ্লয়ী সব্বাই ফোন করছে। ঘটনা শুনে রেহানও দুঃখ প্রকাশ করলো। আমাকে
অফিসে ডেকে বলল “আরে ভাই বসের মুখে শুনলাম , অর্ঘ্যর
ইনসিডেন্টটা...। তোরা এতো বড়ো একটা প্রজেক্টে যাবি ,আর ঠিক সেই সময়েই এরকম
একটা আকস্মিক ঘটনা। আচ্ছা চল
একবার ওদের বাড়ি যাই।”
“হুমমম চল, এমনিতে ছেলেটা
ভেঙে পড়েছে, এই সময়ে মানসিক
শক্তি খুব দরকার”। আমি সম্মতি জানিয়ে বললাম।
এই ঘটনার পর অর্ঘ্য
জানিয়ে দিল ওর পক্ষে আর প্রজেক্টে জার্মানি যাওয়া সম্ভব না। ওর কথায় আমি চমকে
উঠলাম আর বললাম “আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি আছে ,লাইফ এর এতো বড়ো একটা অপরচুনিটি কি করে ছাড়বি তুই ?” অর্ঘ্য এর কোনো
উত্তর দিল না। আমি আবার বললাম “দেখ ভাই,
আমি চাই না তুই এই প্রজেক্ট থেকে সরে যাস। ঠান্ডা মাথায় ভেবে সব ডিসিশন নে। “ কিন্তু
এই মৃত্যু যেহেতু অস্বাভাবিক সন্দেহের আওতায় অর্ঘ্য আছে। তাই অর্ঘ্যকে শহর ছাড়তে বারণ করেছে লোকাল
পুলিশ। ফলে আর কিছু করার থাকলো না। অবশ্য পুলিশ এখনো কোনো রহস্য উদ্ধার করতে
পারেনি। কারণ এরম ইলেকট্রিক শক হঠাৎ রাস্তায় লাগার কোনো স্বাভাবিক কারণ নেই। আর
যদি কেউ খুন করে থাকে ,তবে এভাবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুন
করবেই বা কেন আর এটা করা সম্ভব না।
নেক্সট দিন আমি কেবিনে
বসে কাজ করছি। অর্ঘ্য স্যার কে বললো ওর না যেতে পারার কারণ।
স্যার সবটাই জানতো, তাই মেনে নিলো। আমাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য
আমাদের জুনিয়র রাহুলকে নেওয়া হলো।
স্যার বললেন ও যেন আমার থেকে সব কিছু বুঝে নেয়।
রাহুল আমাদের সাথে বেশি
মেলামেশা করতো না। নরমাল মুখ দেখা হলে শুধু কথা বলতো।
কিন্তু ওই দিন দেখি স্যারের কেবিনে স্যার আর রেহানদা র কি একটা বিষয়
নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে। কিছুক্ষন পর রেহান গোমড়া মুখ করে বেরিয়ে এল। আমরা জিজ্ঞেস
করতে ও আমাদের এড়িয়ে চলে গেল। কিন্তু এসব খবর হাওয়ায় ভাসে। পরে জানলাম অর্ঘ্য
যাবেনা তাই জন্য ও জানতে চেয়েছিল ওর জায়গায় রাহুল কে কেন পাঠানো হচ্ছে।তো বস বলেছে “তুমি হোল্ড এ
থাকো ,যদি ওদের কেউ না যেতে পারে, তাহলেই
তুমি যাবে।” এইরকম শর্ত শুনে রেহান গিয়েছে ক্ষেপে। তবে এ ব্যাপার নিয়ে আমরা রেহানদা কে খুব
একটা ঘাটালাম না। রাহুল আমার থেকে সমস্ত কাজ বুঝে নিল।
৩
আমার যাওয়ার ঠিক তিন দিন
আগেই ঘটলো সেই ঘটনা। আমার একজন নিকট আত্মীয়ের এক্সিডেন্ট হলো। এক্সিডেন্টের কারণ
অর্ঘ্যর পিসির মতোই ইলেকট্রিক শক খেয়ে। তবে আমার
আত্মীয় যে আমার সম্পর্কে দাদা হয় প্রাণে বেঁচে গেছে। কিন্তু পুরো প্যারালাইসিস হয়ে
গেছে। কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। আমাদের কেমন যেন সন্দেহ হল দুটো মৃত্যুই কোনো এক
ব্যক্তির জন্য হয়েছে। আর সেই ব্যক্তিটি একজনই। মন সায় দিচ্ছিল না যে প্রজেক্ট থেকে
ইস্তফা দি। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
অর্ঘ্য কেন জানি না
সেদিনের পর থেকে বারবার রেহান দাকে সন্দেহ
করছিল। তবে ওর মত লোককে সন্দেহ করা অমূলক। কিন্তু অর্ঘ্য বারবার বলছিল এর পেছনে
রেহানের হাত আছে। তাই অর্ঘ্য বলল একবার “রেহানের বাড়ি যাবি “? অর্ঘ্য ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান ও যা বলে বেশ ভেবেচিন্তে বলে ,তাই ওর কথা ফেলতে পারলাম না। আমি বললাম “চল”। পরদিন একটা কাজের অজুহাতে
রেহানের বাড়ি গেলাম আমরা দুজন। আমাদের কে দেখে অবাক হয়ে রেহান বলল ,” আরে তোরা এখানে?”
আমি বললাম “হ্যাঁ রে ওই
প্রজেক্টের বিষয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে তাই জন্যই তোর কাছে আসা।”
ও হাসিমুখে বলল “ও বা
ভালোই করেছিস এসে। বল কি সমস্যা হচ্ছে।”
অর্ঘ্য বলল “রেহান তুই
এত কাজে হেল্প করেছিস। আজ আমাদের তরফ থেকে একটা গিফট এনেছি তোমার জন্য। “ বলেই ও হুইস্কি বোতলটা টেবিলে রাখলো। আমি
ব্যাপারটা কিছুই বুঝলাম না। রেহান বোতলটা হাতে নিয়ে হাসিমুখে বলল “আরে এসবের কি
দরকার ছিল। তা এনেছিস যখন আজ এইটা হাতে নিয়েই কথা হোক। দাঁড়া আমি গ্লাস আর বরফ
নিয়ে আসি”। এরপর তিনজন হুইস্কি হাতে কথা বলতে থাকলাম ,আস্তে
আস্তে দেখলাম রেহান কেমন নেশার ঘোরে ভুলভাল বকা শুরু করেছে। ও বলছে “ভাই তোরা
জানিস আমি তোদের মধ্যে সব চেয়ে সেরা এমপ্লয়ী । তোরা সব আমার কাছে চুনোপুঁটি রে।
আমি জানিস আইআইটি বোম্বে র স্টুডেন্ট ছিলাম। তোদের আমার সাথে কথা বলার ও যোগ্যতা
নেই। সেইখানে বস তোদের কে প্রজেক্ট এ নিয়েছে বলে কি সাপের পাঁচ পা দেখেছিস? তোদের যোগ্যতা কি ওখানে যাওয়ার। আরে তোদের থেকে তো আমার রোবট অনেক বেশি
কাজ করে দেবে। ওকে আমি ডিজাইন করেছি আমার স্বার্থসিদ্ধির জন্য। আমার একটা ইশারায়
ও সব কিছু করে দেবে। ” শেষের কথাটা যেন
আমার মাথায় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে দিয়ে গেল। স্বার্থসিদ্ধি মানে , কিসের স্বার্থ ,তবে কি ...?
একটু পরেই রেহান নেশায়
ঝিমিয়ে গেল আমরা দৌড়ে মোমোর খোঁজ করলাম। আর পেয়েও গেলাম, চার্জে লাগানো ছিল। আমি কিছু ভাবার আগেই
অর্ঘ্য মাথার দিকটা খুলতে শুরু করলো। আমি বললাম “এসব কি করছিস ?’ অর্ঘ্য বলল “তুই আগামী একঘন্টা যা হচ্ছে চুপচাপ দেখে যা। একটা কোথাও বলবি
না। আমাকে আমার কাজ করতে দে “ তারপর ল্যাপটপ খুলে রোবটের মাথার মেমোরিটা স্ক্যান
করলো। তাতে অনেক ডেটা দেখাচ্ছিল তারপর আরো কিছুক্ষুণ নাড়াচাড়া করে বলল “ইউরেকা! যা
ভেবেছি ঠিক তাই”। আমি বললাম “কি ভেবেছিলি”? ও
আমার সামনে ল্যাপটপ দিয়ে বলল “নিজেই দ্যাখ”। আমার দেখে চক্ষু চড়কগাছ ল্যাপটপ আমার
দাদা আর অর্ঘ্যর পিসির ছবিসহ সমস্ত ডিটেলস আছে। আমি বললাম যাদের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাদের ডিটেলস রেহানের কাছে
কি করে এল ,আর কেনই বা এল। অর্ঘ্য শুধু বলল “খুনটা করেছে
রেহান। তবে নিজে না মোমোকে দিয়ে। তুই জানিস মোমো রোবট। ও নিজের শরীর থেকে ২০০ ভোল্ট বের করতে পারে যা একটা মানুষের
মৃত্যুর কারণ, আমার পিসির ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ওকে দেখতে
যেহেতু মানুষের মত তাই কেউ বুঝতেই পারেনি। ও নাভির মাধ্যমে এই শক শরীরে দিত। তোর
দাদাও মারা যেতে পারত কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। রোবটের ডেটাবেস এ ভিকটিমের
সমস্ত ডিটেইলস রাখা আছে। আর স্ক্যানের সাহায্যে ও কাউকে আইডেন্টিফাই করতে পারে। আর
সমস্ত তথ্যই কোনো না কোনো সোশাল মিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা। আমাদের ফ্যামিলিকে এভাবে মারা হয়েছে যাতে এই ঘটনায় দুঃখ পেয়ে
আমরা যাওয়া ক্যানসেল করে দি। আর এটাই ওর স্বার্থসিদ্ধি ”
আমার মানতে কষ্ট হচ্ছে
রেহান এরম করবে ভাবিনি। আমি বললাম “তবে চল সমস্ত ডিটেলস পুলিশকে দি। “ অর্ঘ্য বলল
“লাভ নেই , পুলিশ আসতে আসতে ও
মোমোকে বদলে ফেলবে। প্রমান কিছুই হবে না। অন্য উপায় করতে হবে। আমার মাথায় একটা
আইডিয়া আছে”।
আমি বললাম “কি করবি তবে”?
অর্ঘ্য বলল “যেমনভাবে ও
আমাদের যাওয়া নষ্ট করেছে শুধুমাত্র নিজে যেতে পারবে না বলে । এবার আমরা ওর যাওয়া
নষ্ট করবো “
আমি বললাম “কি ভাবে “
অর্ঘ্য কিছুক্ষণ চুপ করে
থেকে মুখে শুধু বলল “না থাকবে বাঁশ ,না বাজবে বাঁশি। তুই খালি দেখতে থাক”।
দেখতে দেখতে তিন দিন কেটে গেছে আমিও দাদার জন্য যাওয়া ক্যানসেল করেছি। আমার বদলে
রেহান যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। খুব রাগ আর ঘৃণা হচ্ছিল ওর প্রতি। কিন্তু কি আর করা যাবে। আমরা
বুঝতে দিইনি যে আমরা সব বুঝে গেছি। যদিও এটা অর্ঘ্যর প্ল্যান। পরদিন ও আর রাহুল যাবে। কিন্তু
পরদিন অফিসে গিয়ে একটা খবর শুনে চমকে উঠলাম। রেহানের কাল অফিস থেকে ফেরার পথে
অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ খুবই চেনা , ইলেকট্রিক শকের জন্য। বুঝতে বাকি রইলো না
অর্ঘ্যর আসল প্ল্যান ঠিক কি ছিল সত্যি “না থাকবে বাঁশ ,না
বাজবে বাঁশি”।
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post