অণুগল্প মালা
তাপসকিরণ রায়
মহুয়া
মহুয়া আমার জীবন ছুঁয়ে ছিল।
জাতপাত, রহন-সহনে সে যে ছিল অন্য ধারার নারী
!
বস্তারের মনঝোলী আদিবাসী গ্রামে কিছুদিন ছিলাম। রিপোর্টার হয়ে নকশাল গতিবিধির
রিপোর্ট দিতে হত।
অরণ্যঘন জায়গা। লোকালয় থেকে দূরান্তে, শাল-মহুলের
অরণ্যঘেরা এক আদিবাসী গ্রামের ঝোপড়ি ঘরে থাকতাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মহুয়াকে বারবার দেখেছি। ও নিশ্চয় আমাকেও দেখেছে। কুচকুচে কালোর মাঝে তেলাল শরীর, আবেদনে ভরে থাকা চকমকি চেহারা তার।
রোজ মহুয়ার তাড়ি খেতে যেতাম। আদিবাসীদের নিজস্ব চোলাই, গলায় পড়লেই ছলাং দিয়ে
উঠত শরীর ! বউ, বেটি, মরদ সবাই এসে ভিড় করত ভাটিতে। মেয়েরা আমায় দেখে হাসত। সেদিন মহুয়া আমার সামনে এসে বলে ছিল, আজ তুর ঘর যাব, বাবু ! ও নেশায় মত্ত ছিল, উচ্ছল হাসছিল।
-চল, বলে নেশামত্ত আমি ওকে
আমার আস্তানায় নিয়ে আসলাম।
মহুয়া এসেই আমার ঘরের খাটিয়ায় ধপ করে শুয়ে পড়ল।
-এই কি করছিস তুই!
হিহি, হাহা করে খানিক হেসে আমার দিকে তাকিয়ে ও
বলল, তু খুব সৌন্দর বাবু ! তুকে আমি ভালবাসি রে বাবু ! হেঁচকা টান মেরে ও আমায়
ওর শরীরের ওপর টেনে নিলো।
আমি তখন নেশায় বিভোর, বললাম, এই, কি
হচ্ছে মহু ?
মহুয়া আমায় আদর-চুম্বনে ভরিয়ে দিতে দিতে বলে উঠেছিল, তু চলে যাবি জানি
বাবু-আমি তুর মত সৌন্দর একটা বেটা মুর পেটে ধরতে চাই!
মা
সেদিন সবকিছু হারিয়ে গেল। জানি মা বহুদিন হল মারা গেছে। তবু শোকে দুঃখে আজও, মা, বলে ডেকে উঠি কেন ?
আসলে আকাশে বাতাসে অনির্বার লেগে আছে অনেক মায়ের চীৎকার। আজও বুঝি মায়ের পাহারায় ঘিরে আছি আমরা। কখনও
মাঝরাত ভেঙে জেগে উঠে দেখি, আমার পাহারায় তবু মরা চাঁদ জেগে আছে! আজও বুঝি আমার কপালে এসে মা’ই টুক দিয়ে
ঘুম পাড়িয়ে যাবে।
ক্ষমা
জীবন তো সময়ের পরিমাপ। তবু কি বিন্যাসে তোমার চাতুর্যতায় শরীরের বলিরেখা ঢাকা থাকে। উদাসী হাওয়ায় তখনও তুমি বসন্ত খোঁজো। সেই নায়কের ফেলে আসা স্মৃতিটুকু তোমার অতীত ফিরিয়ে দেয়:
এখনও ফুল ভাল লাগে তোমার। একটি লাল গোলাপ হাতে দিয়ে সেও তো একদিন বলে ছিল-ভালবাসি, ভালোবাসি তোমায়-
সে দিন কঠোরতায় তাকে তুমি ফিরিয়ে দিয়ে ছিলে। আজ মনে হয়- সে ক্ষণকাল হারিয়ে যায়নি। আবার তা
ফিরে আসতে পারে। আর সে সময় যখন ফিরে আসবে তুমি ক্ষমা চেয়ে নেবে তার কাছে-সে ব্যর্থ নায়ক ও চুমুটির কাছে।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post