খেজুর রস
সৌমেন চক্রবর্তী
অলংকরণঃ বর্ণালী গাঙ্গুলী |
শীতকাল মানেই হাবলকাকার কাছে খেজুর রস সংগ্রহের মাস। মাটির
হাঁড়িগুলো সব পরিস্কার করে রোদে শুকোতে দেওয়া আছে। উঁচু উঁচু খেজুর গাছে এক
নিমেষে উঠে পড়ে হাবলকাকা। প্রতি বছরের মতো এই বছর শীতের আগমনের শুরুতেই হাবলকাকা
তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে।
আজ এই বছরের মতো প্রথম হাবলকাকা খেজুর গাছে উঠবে। সকাল থেকে
শরীরটা হাবলকাকার ভালো নেই। অত উঁচু গাছে উঠে হাঁড়ি বাধা, সে তো চাট্টিখানি কথা নয়। তবে আজ তো হাঁড়ি তাকে বাঁধতেই হবে।
তাই সকাল সকাল গাছে উঠে পাকাপোক্ত ভাবে গোটা তিনেক হাঁড়ি বেঁধে হাবলকাকা খেজুর গাছ
থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসে। এবার অপেক্ষার পালা। পরের দিন সকালে হাঁড়ির রস সংগ্রহ
করতে হবে। এদিকে প্রতি বছরের মতো গ্রামের ছেলে কালু আর ভুলু খেজুর গাছগুলোর নীচে
হাঁ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবারের
মতো হাবলকাকার হাঁড়ি বসানোর ভুলে রসের ধারা
সবটুকু হাঁড়িতে না পড়ে, কিছুটা গড়িয়ে নীচে
পড়ে। সেই রসাস্বাদনের উদ্দেশ্যেই কালু ভুলুর দীর্ঘ অপেক্ষা। এবারেও তাই হলো। কালু
ভুলুর দীর্ঘ অপেক্ষা সাফল্যমন্ডিত হলো।
এদিকে আজকে হাবলকাকার শরীরের অবস্থা একটু বেশিই খারাপ। তা
সত্ত্বেও তিনি কষ্ট করে গাছে উঠলেন। রস সংগ্রহ করে নীচে নামার সময় শরীর সাথ দিল
না। হঠাৎ মাথা ঘুরে গিয়ে হাবলকাকা নীচে পড়ে যান। খেজুর গাছের পাশে ছিল ছোট একটি
তালগাছ। সেই তালপাতার ধারালো অংশে হাবলকাকার শরীরটা প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মৃত্যু হয়।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post