শীতকাল
এবং আমার হারিয়ে যাওয়া
আবু
সৈয়দ ফিরোজ
অলঙ্করণঃ বর্ণালী গাঙ্গুলী |
ঋতুর হিসেবে এখন হেমন্ত। তাই এর মধ্যেই
অল্পস্বল্প শীতের আভাস। শীত আমাদের দেশে
অনেক সুন্দর। তবে দেশে শীত এখন আগের তুলনাই অনেক কম পড়ে। তাই আমার মনে হয় এদেশের
শীতও বসন্ত, আবার বসন্তও বসন্ত। ঋতুর
কবি রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে বর্ষা চিনিয়েছেন,
বসন্ত চিনিয়েছেন
বহুবিচিত্র ভাবে। কেবল তিনি নিজেই নন,
তাঁর কবি সত্তা, তাঁর
বাগগেয় (Music Composing) সত্তা,
সর্বোপরি তাঁর মহৎ শিল্পী
সত্তা আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেছে বর্ষার গভীরতায়,
একই সঙ্গে বসন্তের রূপ, রস
এবং গন্ধে ভরা মাতাল করা প্রাকৃতিক আবহে।
এই দুই ঋতুর সঙ্গে শরতেরও জয়গান গেয়েছেন তিনি সবসময়, সবখানে।
বর্ষার প্রতি তাঁর একান্ত ভালবাসা,
বর্ষা কেন্দ্রিক তাঁর গান, তাঁর
কবিতা, তাঁর সাহিত্য এসব কিছু কেবল তাঁকেই মহৎ করেনি বরং একই সঙ্গে
মহৎ থেকে মহত্তর করেছে সুদূরকালের আর একজন কবি(মেঘদূতের কবি কালিদাস)কে এবং তাঁর কবিকীর্তিকেও। তবে এই মহৎ প্রয়াসের
তর্পণে বর্ষা, বসন্ত এবং শরত যতই মহৎ রূপ
লাভ করুক না কেন শীত হয়েছে তাঁর গানে সঙ্কুচিত,
আড়ষ্ট এবং অবহেলিত। তা
নইলে মাত্র গোটা দশেক গান দিয়ে তাঁর শীত বন্দনা (বন্দনা না বলে ভীতি বলাই
ভাল) শেষ হবে কেন? “শীতের বনে কোন সে কঠিন আসবে ব’লে/ শিউলিগুলি ভয়ে মলিন বনের কোলে।“ এই গান কী শীতের আগমনে শিউলি ফুলের ভয়ে মলিন
হবার বর্ণনাতেই শেষ হয়েছে, একটা ভয়ের আবহে আমাদের
মধ্যে কী “শীত ভীতি” সৃষ্টি করা হয়নি এই গানে?
যে ভাবে যতটা বলা হয় আসলে
শীত কী সেইভাবে ততটা বিবর্ণ করে প্রকৃতিকে?
সবুজ কী থাকেনা দিগন্ত
বিস্তৃত ফসলের মাঠে? আমার তো মনে হয় বর্ষাতে নয়
বরং শীতেই প্রকৃতির মধ্যে অবগাহন করা যায় “প্রচুর” ভাবে। কারণ শীতের বাতাস শুষ্ক, জলীয়বাষ্প
থাকেনা শীতের বাতাসে, ঘেমে নেয়ে ওঠার মত
বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা হয় না শীতে। তাই শীতে আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে
গ্রামের পথে বিমুগ্ধ বিস্ময়ে প্রকৃতির মধ্য দিয়ে হাঁটতে।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post