অলীক পাতার অন্যান্য সংখ্যা- পড়তে হলে ক্লিক করুন Library ট্যাব টি



। । "অলীক পাতা শারদ সংখ্যা ১৪৩১ আসছে এই মহালয়াতে। । লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ ই আগস্ট রাত ১২ টা ।.."বিশদে জানতে ক্লিক করুন " Notice Board ট্যাব টিতে"

Tuesday, January 5, 2021

গল্প-এক টুকরো সুখ -কৌশিকী বল

 

এক টুকরো সুখ
কৌশিকী বল

অলংকরণঃ বর্ণালী গাঙ্গুলী


ওহ্ মাম্মা, এটা কেমন সোয়েটার এনেছ? কি বাজে ডিজাইনটা আর কালারটাও খুব কমন। আমার একটুও পছন্দ হচ্ছে না এটা।”

ওহ মাই প্রিন্সেস, প্লীজ আজ একটু কষ্ট করে নাও কাল আমি তোমাকে নতুন আরও অনেকগুলো সোয়েটার কিনে দেব।”

বছর এগারোর মেয়েটার উদাস মুখটা এবার হাসিতে ভরে ওঠে তার মায়ের কথা শুনে। উৎসাহিত হয়ে সে বলে,

সত্যি? প্রমিস করছো?”

গড প্রমিস আমার প্রিন্সেস।”

এরপর ট্রাফিক লাইটের পরির্বতন হতেই তাদের সুইফ্ট গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে তীব্র গতিতে সেখান থেকে চলে গেল। কাছে দাঁড়িয়েই সেই গাড়িতে থাকা মা আর মেয়ের সব কথোপকথন শুনছিল সিগন্যালে ফুলের মালা বিক্রি করা বছর ষোলোর হিয়া। আজ ডিসেম্বরের একত্রিশ তারিখ। চারিদিকে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনন্দে সকলে মাতোয়ারা। দিকে দিকে মানুষের ঢল। ঠান্ডা পড়েছে জাঁকিয়ে আর তারই মাঝে একটা পুরনো ছেঁড়া পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মালা বিক্রি করছে হিয়া। গাড়িতে থাকা দুজনের কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছিল তার। এমন ভাগ্য তো তারও হতে পারত, তবে ওর, ওর মা বিন্দু আর ওর ভাইয়ের কোনো কষ্ট থাকতো না।

সারাদিনে হিয়ার যে কটা মালা বিক্রি হয়েছে সব মায়ের ওষুধ আর একটু সবজি চাল কিনতেই খরচা হয়ে গেল। তার মা বিন্দু লোকের বাড়ি কাজ করে কিন্তু তিনদিন ধরে তার জ্বর হওয়ায় কাজে যেতে পারছে না। বাড়িতে ঢুকেই হিয়া দেখে তার মা ঘরের এক কোণায় বসে ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে। জ্বরটা আবার বেড়েছে তার। তাড়াতাড়ি নিজের গায়ের পাতলা চাদরটা খুলেই মায়ের গায়ে জড়িয়ে দেয় হিয়া। তবু শীত মানছেনা কিছুতেই। হিয়ার চোখে জল এসে যায়। একটা কম্বল কেনারও যে সামর্থ্য নেই এখন তাদের। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সে গিয়ে ঢোকে তাদের ছোট্ট একচিলতে রান্নাঘরটায় রাতের খাবার বানাতে।

রান্না করতে করতে চোখের কোণায় জল চিকচিক করে ওঠে হিয়ার। পাঁচ ছয় বছর আগেও তো সব কিছু ঠিকঠাক ছিল তাদের জীবনে। ওর বাবা রিক্সা চালাতো আর মা লোকের বাড়ি কাজ করতো। দুজনের আয়েতে সংসার মোটামুটি চলে যেত। হিয়াও স্কুলে যেত। কিন্তু তারপর হঠাৎ বাবাকে রাস্তার ধারে একটা ট্রাক এসে পিষে চলে যায়। ভাইটা তখন দুই বছরের। সেই থেকে শুরু তাদের অভিশপ্ত জীবন। মায়ের একার আয়ে কিছুতেই সংসার ঠিক করে চলছিল না। তাই বাধ্য হয়ে হিয়াকেও পড়াশোনা ছেড়ে কাজে নামতে হয়। খুব ভালো লাগতো হিয়ার পড়তে। এখনো সময় পেলেই স্কুলের সামনের রাস্তাটায় গিয়ে দাঁড়ায় হিয়া। স্কুলড্রেস পরা আর পিঠে বইয়ের ব্যাগ নেওয়া ছেলেমেয়েদের দেখে মনটা আনন্দ আর বেদনা দুটিতেই ভরে ওঠে। তবে ছোট ভাইটাকে ও স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। মেহুল এখন আট বছরের। তার পড়াশোনার খরচ জোগাতেও হিমসিম অবস্থা তাদের কিন্তু তবু হিয়ার জেদ মেহুলকে ও যেভাবেই হোক পড়াবে।

চোখের জল মুছে সবজির তরকারি নাড়তে থাকে হিয়া আর ঠিক তখনই পিছনে ভাই মেহুলের গলার আওয়াজ শুনতে পায় সে।

এই দিদি খুব ঠাণ্ডা লাগে রে। খুব কষ্ট হয়।”

হিয়া দেখে মেহুলের পরনের পুরনো সোয়েটারটা জায়গায় জায়গায় ফেটে গেছে। এতে এখন আর শীত মানে না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে হিয়ার বুক চিরে। মেহুলকে বলে,

ঠিক আছে ভাই। আমি দেখছি কি করা যায়।”

সারারাত জেগে মালা তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করতে পরদিন আবার সিগন্যালে যায় হিয়া। চারিদিকে সকলে রঙ-বেরঙের সুন্দর সুন্দর সোয়েটার পরে ঘুরছে। এক শীতল হাওয়ার স্পর্শে গায়ের পাতলা ছেঁড়া চাদরটা আরও ভালো করে মুড়িয়ে নেয় হিয়া কিন্তু শীত যেন কিছুতেই মানে না।

হঠাৎ এক জায়গায় হিয়া দেখে অনেক দুস্থ দরিদ্র মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে হিয়া দেখতে পায় একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে দুস্থ দরিদ্র মানুষদের শীতের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন কম্বল, গায়ের চাদর আর বাচ্চাদের জন্য সোয়েটার দেওয়া হচ্ছে। হাতে যেন চাঁদ পায় হিয়া। তাড়াতাড়ি গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে সে। তার হাতে তুলে দেওয়া হয় দুটো বড় সাইজের কম্বল, একটা চাদর আর ভাইয়ের কথা বলাতে একটা সোয়েটারও।

সেগুলো হাতে নিয়ে আনন্দে চোখে জল চলে আসে হিয়ার। নতুন বছরটা কখন যেন খুব আনন্দময় হয়ে উঠলো হিয়ার জন্য। দৌড়ে সেগুলো নিয়ে বাড়ি গেল সে। বিন্দুর জ্বরটা ওষুধ খেয়ে অনেক কমেছে এখন। সব কথা বিন্দুকে আর মেহুলকে বলার পর ওরাও খুশিতে দিশেহারা। মেহুল তো নতুন সোয়েটারটা সাথে সাথেই পরে নিল। খুব পছন্দ হয়েছে ওটা ওর। বিন্দু সেই স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্দেশ্যে বললো,

সেই মানুষগুলো নিশ্চিত ভগবানের আর এক রূপ। নইলে আমাদের কথা কে আর ভাবে।”

হিয়াও বললো,

ঠিক বলেছ মা। আমাদের নববর্ষটা তারা আনন্দে ভরিয়ে দিয়ে গেল।”

শীতের রাতে তিনজনই নতুন কম্বল গায়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে নানা গল্পে ডুবে গেল। কি ভালোই না লাগছে কম্বলটা গায়ে দিয়ে। এতদিন ধরে ঠান্ডায় কষ্ট পাওয়া থেকে আজ মুক্তি অবশেষে। মায়ের আর ভাইয়ের হাসি মুখটা দেখে হিয়ার মন আরও বেশি খুশিতে ভরে গেল। হিয়ার মনে পড়লো গাড়িতে বসা সেই মেয়েটার কথা যে অনেক দামি একটা সোয়েটার পেয়েও খুশি ছিল না। আরও ভালো পাওয়ার চাহিদা ছিল তার। অথচ তার ভাইও তো ছোট কিন্তু কত অল্পেই সে খুশি। আর সত্যি এই জিনিসগুলো পেয়ে তারা তিনজনই খুব খুশি। এটা যেন তাদের নববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার।

কেউ কেউ নিজের ভাঙা ঘরে দুটো পান্তা ভাত খেয়েও সুখে দিন কাটায় আর কেউ নিজের অট্টালিকায় বসে সমস্ত বিলাসিতা উপভোগ করেও জীবনে সুখী হয় না। কারণ সুখ শান্তি টাকা দিয়ে কেনা যায় না তার জন্য জীবনের ছোট ছোট পাওনা আর মুহূর্তগুলোতে সুখ খুঁজে নিতে জানতে হয়। যে সবকিছু পেয়েও আরও কেন পাওয়া গেল না সেই নিয়ে আপসোস করে সে জীবনে বিলাসিতা উপভোগ করলেও সুখী হতে পারেনা। সুখী তো সেই হয় যে নিজের এক চিলতে ঘরটাকে অট্টালিকার সমান ভালোবেসে নিশ্চিন্ত মনে সেখানে ঘুমোতে পারে।

Download ALEEK PATA Mobile APP
DOWNLOAD ALEEK PATA ANDROID APP
| শিশির সংখ্যা -১৪২৭।
| Aleekpatamagazine.blogspot.com |
  |ALEEK PATA- Your Expressive World |Online Magazine |
| Editor: Swarup Chakraborty | Publisher: Debasree Chakraborty |
| Special Winter Issue, 2020 | December-February 2020 -21| 
| Fourth Year  Fourth Issue |25 th Edition|
|© All Rights Reserved By The Editor and The Publisher |
|a DISHA-The Dreamer Initiative |

















No comments:

Post a Comment

Please put your comment here about this post

Main Menu Bar



অলীকপাতার শারদ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত, পড়তে ক্লিক করুন "Current Issue" ট্যাব টিতে , সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা

Signature Video



অলীকপাতার সংখ্যা পড়ার জন্য ক্লিক করুন 'Current Issue' Tab এ, পুরাতন সংখ্যা পড়ার জন্য 'লাইব্রেরী' ট্যাব ক্লিক করুন। লেখা পাঠান aleekpata@gmail.com এই ঠিকানায়, অকারণেও প্রশ্ন করতে পারেন responsealeekpata@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।

অলীক পাতায় লেখা পাঠান