আলোয় ফেরা
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
"বাগিচা এ অতফাল হ্যায় দুনিয়া মেরে আগে/হোতা হ্যায়
শব-ও-রোজ তামাশা মেরে আগে।"শিশুদের খেলাধুলার এ জগৎ আমার চোখে।কত যে দৃশ্য
আসে যায় দিনরাত আমার চোখে !গুলজারের শায়েরী যেন অভীকের বর্তমান জীবনের বর্ণনা।
নিরপরাধ চোখমুখ,এক আকাশ
আনন্দ যেন সব। বাচ্চাগুলোকে সত্যিই যেন মনে হয় এক একটা ঈশ্বর ! শিক্ষকতার চাকরিতে
এসে একটা অন্তর্লীন টান অনুভব করে ও এদের জন্য মনের গহীনে। ঠিক যেন বাগানের মালি।
সবুজ ছোট ছোট গাছগুলোকে ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ করে সুস্থ ভাবে বড়ো করে তোলা।
চাকরির প্রথম দিন প্রথম ক্লাস। ক্লাস ফাইভের ইংরাজি
গ্রামারের ক্লাস।ছোট ছোট অপাপবিদ্ধ মুখগুলো সামনে। দুষ্টুমিভরা চোখ। ছটফটে শৈশব।
সামনের বেঞ্চের কোণের ছেলেটা একটু অন্যরকম।গোলগাল চেহারা। মাথায় একরাশ
চুল।মায়াময় দুটো চোখ। দেখলেই গাল টিপে আদর করতে ইচ্ছে করে। কৌতূহলী অভীক ওর নাম
জিজ্ঞাসা করতেই চমক-কাজল রং।বাঃ বেশ মজাদার নাম তো ! এদিকে রং পদবিটা আছে ও জানতো।
কিন্তু তা নামের সাথে এতো সুন্দর মিলে যাবে...।সেই থেকেই কাজল ওর মনের খুব কাছাকাছি।ওর সাথে সখ্যতা আরও
বাড়ল বিকেলে খেলার মাঠে। ফুটবল-পাগল অভীক বিকেলে স্কুলের মাঠে খেলাধুলা-
শরীরচর্চা করেই তবে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে যাওয়ার তাড়া নেই।স্কুলের মাঠে সাইয়ের
একটা কোচিং ক্যাম্প চলে।কোচ পার্থদা খুব ভালো মানুষ। প্রায় তিরিশ জন ছেলে থাকে
ওনার ট্রেনিং এ। অভীককে পেয়ে তো উনি খুব খুশি। ড্রিল, ওয়ার্ম আপটা অভীকই করায় ওদের।ম্যাচ প্র্যাকটিসে অভীক
দেখেছে কাজলের ফুটবল বোধ প্রবল। ড্রিবলিং ও ভালো।ছেলেটার একটা চোরা গতি আছে।
বিপক্ষের বক্সে ওটা ওর খুব কাজে লাগে ডিফেন্ডারদের বোকা বানাতে। শটেও অসম্ভব জোর।
ছেলেরা ওকে তাই 'চিমা' বলে ডাকে। ও তখন খুব গর্ব অনুভব
করে, বুঝতে পারে
অভীক।কাজল একদম হেডে পটু নয়। বাস্তবিকপক্ষে ও হেড দিতেই চায় না। উঁচু বল সব
চেস্ট ট্র্যাপ করে।ফলে অনেক সহজ গোল মিসও করে।পার্থদা ও অভীক অনেক বুঝিয়েছে।
শেষমেষ অভীক ওর জীবনের শিশির ঘোষের কাছে শেখা হেডিং প্র্যাকটিসটা কাজে
লাগাল।রিষড়ার লেলিন মাঠে স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলে ও।শিশির ঘোষ যখন কোচিং
করাতেন তখন হেডিংটা ওনার কাছ থেকে রপ্ত করেছে। পেনাল্টি বক্সে কখন স্পট জাম্প
দিয়ে মাথার কোন অংশ কাজে লাগাতে হবে-সর্বোপরি ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে বোকা
বানিয়ে কিভাবে বল জালে পাঠাতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছুদিন প্র্যাকটিসের পর হেডিংও কাজলের
ধাতে এল।এখন আর বক্সে আটকে যায় না।নিচু বল বা উঁচু বল, দুটোতেই ও দক্ষ। পার্থদার আশা ও সামনের বছর জুনিয়র বেঙ্গলে
খেলবে।
কাজল পড়াশোনাতেও ভাল। বাড়িতে পড়ার পরিবেশ ছিল।মা
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা।বাবা কোলাঘাট থার্মাল প্ল্যান্টের ইঞ্জিনিয়ার।
একমাত্র দিদি মিলি একাদশে বিজ্ঞান বিভাগে। বেশ স্বচ্ছল ও পড়াশোনা জানা
পরিবার।ওদের বাড়িতে অভীক একবার গিয়েছিল ওর জন্মদিনের নিমন্ত্রণে। খুব খাইয়েছিল
সেদিন।ওর মায়ের রান্নার হাত বেশ ভালো।ওর বাবার সাথেও পরিচয় হয়েছিল সেদিন। খুব
হাসিখুশি সামাজিক পরিবেশ।খুব পাকাও ছিল কাজল। একবার ওদের গাছের কটা পাকা আম অভীককে
দিয়েছিল।হলুদ হয়ে যাওয়া- বোঁটার কাছটা লাল।গোলাপখাস হবে হয়তো। ভালোবাসা মাখানো
উপহার পরম আনন্দে ও বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। একটা আম মুখে দিয়েই ও বুঝেছিল
প্যাকেটটা দেওয়ার সময় কেন ওরকমভাবে হাসছিল কাজল। প্রচন্ড টক ! মুখে দিতেই সবকিছু
মাথায়!পরদিন স্কুলে ধরতেই পাজিটা হেসে উঠল।স্যারকে ঠকাতেই নাকি ওর এই কান্ড।ওর
বাবা গোলাপ খাস ভেবেই আমচারাটা বসিয়েছিলেন।যখন প্রথম ফল হল দেখা গেল,গোলাপখাস নয়-কামরাঙ্গাখাস। চাইল্ড
ইজ দি এলডার ব্রাদার অফ্ হিজ ফাদার।শিশুরা আস্ত অকালপক্ব!
চলছিল ভালোই। পঞ্চমের বাৎসরিক পরীক্ষায় ও চতুর্থ হল।পরের
বছরও ভালো ফল করল।একধাপ এগিয়ে হল তৃতীয়। মনে আছে, লুকিয়ে লুকিয়ে অভীককে একটা ক্যাডবেরি দিয়েছিল কাজল।ওর
জন্মদিনের পাওয়া টাকা থেকে কেনা।অভীক কিছুতেই নেবে না। শেষে জোর করে ওর প্যান্টের
পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েই ছুট। চোখে জল এসেছিল সেদিন !মাঝে অভীক বি এড পড়তে চলে গেল
এক বছর।কাজল তখন সপ্তম শ্রেণী। স্কুলে মাঝে মাঝে গেলে কাজল ছুটে এসে দেখা করত।
সহকর্মীরা মজা করে বলত,কাজল বাতাসে অভীকের গন্ধ পায়।কবছর পর ও স্কুলে এসে দেখল
কাজল বি সেকশানে। খোঁজ নিয়ে জানল একদম পড়াশোনা করেনি আগের বছর।সব বিষয়ে খারাপ
করেছে। বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেও কিছু হয়নি। সকলে এক সময় ভেবেছিল ,ও বোধহয় পাশই করতে পারবে না।আরও
এক মনখারাপের খবর দিল পার্থ দা। কাজল নাকি আর বিকেলে ফুটবল প্র্যাকটিসে আসে না।
জিজ্ঞাসা করলে বলে, বিকেলে
পড়া থাকে।অথচ পার্থ দা খবর নিয়ে জেনেছে বিকেলে পড়তে যায় না ও। ওদের পাড়ার
বখাটে কয়েকটা ছেলের সাথে গঙ্গার ধারে বসে আড্ডা দেয়। অনেকে ওকে সিগারেট খেতেও
দেখেছে।
কাজলের বাবা মার সাথে কথা বলে যেটা বোঝা গেল, নির্দিষ্ট কোন কারণ ওরাও বুঝতে
পারছেন না। মিলির জয়েন্টে প্রস্তুতির জন্য
ওকে একটু বেশি সময় দেওয়া হতো। মিলি রাত জেগে পড়ে।তাই ওর মা মিলির কাছে
শুতো। বাবার সাথে কাজল পাশের ঘরে। এতে ও মাঝে মাঝে অনুযোগ করতো।দিদির পড়ার কারণ
বুঝিয়ে বললে ও বুঝত। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার আগের মতই নটরাজ মূর্তি।মাঝে মাঝে
কয়েকবার ওর মাকে জলের বোতল ছুঁড়েছে। গায়ে লাগেনি। ঘটনাটা ভয়ের। মাঝে ওর এক পিসতুতো দিদি মেদিনীপুর থেকে বালিতে বেড়াতে
আসে। কদিন ছিল ওদের বাড়িতে। রাত্রে কাজল ঐ দিদির কাছে শুতো। দিদি চলে যেতেই যেন
ক্ষেপে গেল আরও। মিলিকে কথায় কথায় মারধর করে। একদিন কাজল দিদির হাত কামড়ে রক্ত
বার করে দিয়েছে। মোবাইল ফোন আছড়ে ভেঙ্গেছে দুটো।বাবা খুব মেরেছে। কিন্ত মা ফলেষু
!
বিহেভিয়ারাল ডিসঅর্ডার। ব্যবহারের অস্বাভাবিকতা।অভীক ওর
বাবা মাকে বোঝাতে থাকল।রাগ বা ক্রোধ একটা স্বাভাবিক ইমোশন। কিন্তু তার
বহিঃপ্রকাশের ধরণ যখন চারপাশের ভারসাম্যকে বিপর্যস্ত করে তখন তা জটিল সমস্যা হয়ে
দাঁড়ায়।ছোটো শিশু তখনই রেগে যায় যখন সে তার চাহিদাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে
না। তার সেই চাহিদা বা অস্বস্তি দিয়ে বড়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টাটাই রাগ
হিসেবে বেরিয়ে আসে। এটাকে 'অ্যাটেনসান সিকার সিনড্রোম' বা সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ' মিনখিউহাস সিনড্রোম ' বলে। অর্থাৎ আকর্ষণ সবসময় নিজের দিকে নিয়ে যাওয়ার মরিয়া
চেষ্টা।অভীক অ্যাঙগার ম্যানেজমেন্ট অর্থাৎ
রাগ নিয়ন্ত্রনের কথাও বলল। ছেলের রাগ প্রকাশের সময় বাবা মার শান্ত থাকাটা
বিশেষভাবে জরুরি।এর থেকেই বাচ্চা বুঝতে পারবে যে কোনও কিছু চাওয়ার ব্যাপারে
ঝঞ্ঝাট পাকিয়ে কোনও লাভ নেই।রাগ তখন আস্তে আস্তে নিজের কেন্দ্রেই থেকে যাবে। রাতে
ফিরে কাজলের ব্যাপারটাই ভাবতে লাগলো ও। বুকের ভেতর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ যেন।এক
সমুদ্র মনখারাপের ঢেউ সারা হৃদয় জুড়ে। পরদিন স্কুল ছুটির পর বাইকে চাপিয়ে
কাজলকে নিয়ে বাজারের দিকে গেল।ওর ভালোলাগার কর্নেটো আইসক্রিম কিনে দুজনে গিয়ে
বসল রবীন্দ্র ভবন সংলগ্ন গঙ্গার ঘাটে।একটু নিরিবিলি এই ঘাটটা। জোয়ারের জল যেন
ঝাঁপিয়ে পড়ছে গঙ্গার ঘাটে। ভাঙ্গনের আওয়াজ জলের দামালপনায়।অভীক বুঝতে পারছে, কাজলের বুকেও এখন ভাঙ্গনের জোয়ার।
যে করেই হোক আসল সত্যিটা আজ জানবেই অভীক।ওর প্রাণের প্রিয় কাজলকে বার করতেই হবে সমস্যার
নাগপাশ থেকে।
কাজল আজ প্রথম থেকেই খুব সতর্ক। ওকে এভাবে নিয়ে আসা ও
পছন্দ করেনি।নেহাৎ অভীক স্যার বলে কিছু বলেনি।অভীক আজ ধীরে চলো নীতি নিয়েছে।
কাজলের পিঠে হাত রেখে হাসাহাসি করছে অপ্রয়োজনে।সিটিয়ে থাকা কাজল অনেকটা ওর হাতে
ধরে থাকা আইসক্রিমের মতো গলছে একটু একটু করে।অভীক কাল রাত্রে দেখা ডি সিকারের বহু
আলোচিত সিনেমা 'বাই সাইকেল
থিভস্' এর গল্প
বলতে লাগল। এক বাবার চেষ্টা ছেলেকে ভালো রাখার জন্য । শেষমেষ সাইকেল চুরি করতে
গিয়ে ধরা পড়া।গল্পটা শেষ হতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল কাজল। জড়িয়ে ধরল প্রিয়
স্যারকে শেষ আশ্রয়ের মত। আস্তে আস্তে বলতে লাগল মনের জমে থাকা কথা।এক সময়
পিসতুতো দিদির প্রসঙ্গ এল।সব বলল কাজল। শুনে অভীক
থ !
পারভারসান ! সেক্সচুয়াল বিহেভিয়ারাল ডিসঅর্ডার ! চূড়ান্ত
যৌন বিকৃতি ! ছোট্ট কাজল ওর পিসতুতো দিদির যৌন বিকৃতির শিকার। যৌন চাহিদা
মিটিয়েছে বিকৃত মানসিকতার ঐ পূর্ণ বয়স্কা মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক কাজলকে
দিয়ে।এত অল্প বয়সে এক ভালোলাগার ঘোরে সব কিছু করেছে কাজল। কিন্তু রেশটা রয়ে
গেছে মারাত্মক। নেশার মত।তাই চাহিদা মিটছে না বলে রেগে যাচ্ছে। ক্ষোভে ফেটে
পড়ছে।হা ভগবান ! একে কি করে স্বাভাবিক ছন্দে নিয়ে আসবে অভীক? এই ধরণের আকর্ষণ থেকে চূড়ান্ত
খারাপ কিছু করে বসতে পারে এই ছোট্ট তাজা প্রাণ ! ভেতর থেকে গুমরে ওঠা এক কান্না
যেন ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছে অভীকের।আস্তে আস্তে নিজেকে সংযত করে কাজলকে নিয়ে
চলল ওদের বাড়ির দিকে।
পরবর্তী পদক্ষেপগুলো চলল খুব ধীরে ধীরে।ও কাজলের বাবা-মাকে
পিসতুতো দিদির কান্ড জানাল। অভীক বুদ্ধ দর্শনের কথা বলল। যেখানে মানুষ আঘাত পায়
সেই জায়গাতেই আরোগ্য খুঁজতে যাওয়া বৃথা।জায়গা বদল প্রয়োজন।খুব শীঘ্রই এই চেনা
পরিবেশ ছেড়ে ছেলেকে এক অচেনা পরিবেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। সেটা হোস্টেল হলেই ভালো।সবসময়
সমবয়সীদের মাঝে থাকবে।একা হয়ে পড়বে না। স্মৃতির জ্বালাতন সহ্য করতে হবে
না।কাজলের বাবা মা বুঝলেন। কোলাঘাট থার্মাল প্ল্যান্টের স্কুলেই কাজলকে ভর্তি করা
হল। হোস্টেল নয়- ওর বাবা কোয়ার্টার নিলেন।ভয়, আবার যদি বাজে খপ্পরে পড়ে ছেলেটা। বাবা ছেলে একসঙ্গে থাকা।
নতুন অধ্যায় শুরু হল কাজলের। মুক্তির আলো খোঁজা জীবনের নতুন পথে চলতে চলতে।মা
দিদিকে নিয়ে বালিতেই রয়ে গেলেন। ছুটিতে সকলে মিলে জড়ো হতো কোয়ার্টারে। কাজলের
ইচ্ছায় অভীকও একবার গিয়েছিল ওদের কোয়ার্টারে। ওর মায়ের হাতের ইলিশ ভাপার স্বাদ
এখনো জিভে অভীকের।
আস্তে আস্তে কাজল ছন্দ ফিরে পেতে লাগল। পড়াশোনায় আবার
আগের জায়গায়।বাবা নিজের হাতে হাল ধরেছিল। বিকেলে কোয়ার্টার সংলগ্ন মাঠে
ফুটবল।ফুটবলেও আবার চেনা ছন্দে।বোঝা গেল,পিছন ফিরে আর তাকাতে চায় না ও।অভীক এই কথাটাই কাজলের মনে
গেঁথে দিতে চেয়েছিল। অতীত হোক বর্তমানের শিক্ষক। চেষ্টা থাকলেই সমস্যাকে ড্রিবল
করে এগোনো যায়।এক বছর অর্থাৎ তিনশো পঁয়ষট্টিটি সুযোগ। কাজলের ভেতরের আগুন জ্বালা
দেখে অভীকের মনে আনন্দের আলো মাখা সকাল।ফাইট, কাজল ফাইট! কাজলের
বাবা-মার জলভরা চোখে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অভীককে লজ্জায় ফেলল।ছেলের পুনর্জন্ম
হয়েছে যেন। স্কুলের সহকর্মীরাও খুশি। সুখী মানুষ এখন অভীক। বাবার কথাটা মনে পড়ে
ওর-"ন পুণ্যং সুখতঃ পরং"। অর্থাৎ সুখের চেয়ে পুণ্য আর কিছু নেই।এর বেশ
কয়েক বছর পরের ঘটনা।অভীক উত্তরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে
এখন। রিটায়ার্ড মাকে নিয়েই সংসার ওর। সঞ্চিতা জীবন ছেড়ে চলে যাবার পর কাউকে আর
বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি।তাই আজও অভীক 'ইলিজিবল ব্যাচেলর '। লেখালেখি, স্কুল নিয়েই দিন কাটে ওর। নিরুত্তাপ নিস্তরঙ্গ !
সেদিন ক্লাস ফাইভের ভর্তি চলছে। স্কুলের নিয়মশৃঙখলা, লেখাপড়ার মান খুব উঁচু দিকে থাকার
কারণে অভিভাবকদের বেশ লম্বা লাইন। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ পায়ে হাত দিয়ে এক অভিভাবকের
প্রণামে চমকে মুখ তুলে তাকাতেই আর এক চমক।কাজল ! কত্তো বড়ো হয়ে গেছে। রীতিমত
ভদ্রলোক। পাশে হাত ধরে দাঁড়িয়ে কে ও?আর এক ছোট্ট কাজল না ? দু'হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিল শিশুটিকে। সেই চেনা মিটিমিটি
হাসি।গাল টিপে নাম জিজ্ঞাসা করতেই হোঁচট খেল অভীক-'সবুজ রং '। কাজলের দিকে তাকাতেই বলে উঠল -"স্যার, চারাগাছটাকে আপনার হাতে রেখে
দিচ্ছি। দেখবেন, গাছটা যেন
সত্যিই সবুজ হয়-প্রকৃত মানুষ হয়।"একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল অভীক কাজলের দিকে।
চোখের কোণটা ভিজে গেল আবেগের ঝর্ণা ধারায়।
No comments:
Post a Comment
Please put your comment here about this post